স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন লোকসভায় চিন ও কয়েকটি দেশে নোভেল করোনা ভাইরাসজনিত অসুখ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত বিবৃতি দিয়েছেন

Posted On: 10 FEB 2020 6:40PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

 

 

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধন আজ লোকসভায় চিন ও কয়েকটি দেশে নোভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এবং উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে ডঃ হর্ষ বর্ধন বলেছেন, করোনা ভাইরাস হল এমন একগুচ্ছ ভাইরাসের সমাবেশ যার দরুণ মানুষ ও পশুদের দেহে অসুস্থতা দেখা দেয়। প্রাণী দেহ থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে এবং খুব দ্রুত তা অন্য মানুষের দেহে সংক্রামিত হয়। গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর চিনে নোভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর মেলে। তবে, ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে সামুদ্রিক পণ্যবাজার থেকে প্রাথমিকভাবে এই ভাইরাস ছড়ায় বলে ধারণা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই ভাইরাস চিনের সমস্ত প্রদেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৯ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিনে ৩৭,১৯৮ জন মানুষের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। মৃত্যু হয়েছে ৮১১ জনের। চিন ছাড়াও আরও ২৭টি দেশে ৩৫৪ জনের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। চিনে ভাইরাসজনিত মৃত্যুর সংখ্যা এবং আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) গত ৩০শে জানুয়ারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনাকে ‘জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জরুরি’ পরিস্থিতি বলে ঘোষণা করেছে। এই ভাইরাসের গঠন ও অন্যান্য চরিত্র নিয়ে গবেষণা চালু রয়েছে। একজন ব্যক্তির দেহে সংক্রমণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই অসুস্থতার বিভিন্ন লক্ষণ ফুটে ওঠে। মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে এই রোগ অন্য ব্যক্তির দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতে তিনজনের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এঁরা তিনজনই কেরলের। যে তিনজনের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে তাঁদের চিনের উহান শহরে যাতায়াত ছিল। এই তিনজনকে সম্পূর্ণ পৃথক রেখে চিকিৎসা চলছে, এঁদের পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ মহামারীর আকার ধারণ করার আগেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে আন্তরিক ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণের প্রয়োজন। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই ভাইরাস সংক্রমণ রোধে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি নিজেও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বলে ডঃ হর্ষ বর্ধন জানান। বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীদের নিয়ে একটি মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে। ক্যাবিনেট সচিবের পক্ষ থেকেও নিয়মিত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্য সচিব ও  অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গেও নিয়মিত পর্যালোচনা ও প্রস্তুতি বৈঠক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক পৃথকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রকের আলাপ-আলোচনা চলছে।

মন্ত্রী আরও জানান, সরকার নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভারতে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ই জানুয়ারি প্রথম উপদেশনামা জারি করে। পরিস্থিতির পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শপত্র জারি করা ও তা সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে চিন থেকে এ দেশে আসা যে কোন বিদেশি নাগরিকের বর্তমান ভিসার মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না। অত্যন্ত জরুরি কারণে ভারতে আসতে বাধ্য এমন ব্যক্তিদের বেজিং-এ ভারতীয় দূতাবাস অথবা সাংহাই ও গুয়াংঝাউ-এর বাণিজ্যিক দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে চিন সফরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই যাঁরা চিনে রয়েছেন দেশে ফিরলে তাঁদের সম্পূর্ণ পৃথক রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দেশের ২১টি বিমানবন্দরে আগত বিমানযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ গত ১৮ই জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড থেকে আসা বিমানগুলির পাশাপাশি, হংকং ও চিন থেকে আগত বিমানগুলির যাত্রীদের জন্য থার্মাল স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত ১,৮১৮টি বিমানের ১ লক্ষ ৯৭ হাজারেরও বেশি যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত একাধিক দলকে বিমানবন্দরগুলিতে পাঠানো হয়েছে। দেশের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে চিন থেকে আগত নৌ-কর্মী ও যাত্রীদের চিহ্নিত করে তাঁদের পৃথক স্থানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে।

নেপালে এই ভাইরাসে একজনের সংক্রমণের প্রমাণ মেলার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড সরকারের সহযোগিতায় নেপালের চেকপোস্টগুলিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। সশস্ত্র সীমা বল ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষগুলি স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

মন্ত্রী আরও জানান, চিনে এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে সে দেশ থেকে ৬৪৭ জন ভারতীয় সহ মোট ৬৫৪ জন যাত্রীকে দুটি বিশেষ বিমানে করে গত ৩১শে জানুয়ারি ও পয়লা ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছে। ভারতীয় সহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের দিল্লিতে ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রী রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

এই যাত্রীদের ভারতে নিয়ে আসার পর তাঁদের ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের চাওলা শিবির এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর মানেসর শিবিরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এঁদের মধ্যে ১০ জনের দেহে ভাইরাসজনিত লক্ষণ দেখতে পাওয়ায় তাঁদের পৃথক রাখা হয়। তবে, সকলের নমুনা পরীক্ষার পর এই ভাইরাসের কোন প্রমাণ মেলেনি। ভারতীয় দূতাবাস ও বাণিজ্যিক দূতাবাসগুলি চিনের অন্যান্য অংশে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে। বর্তমানে ২৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৯,৪৫২ জন ব্যক্তির ওপর ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা তা জানতে এঁদের নজরে রাখা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৩৬৯ জন ব্যক্তি যাঁরা চিন থেকে ফিরেছেন, তাঁদের দেহে কিছু লক্ষণ মেলায় পৃথকভাবে রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নজরদারি চালানো হচ্ছে।

পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউফ অফ ভাইরোলজিতে এখনও পর্যন্ত ১,৫০৭-টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি নমুনায় এই ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। অন্য ২৭টি নমুনা আরও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা জনসাধারণকে সচেতন করে তোলার কাজে যুক্ত রয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রোজ সাংবাদিক সম্মেলন করা হচ্ছে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ২৪x৭ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর হল – (০১১) ২৩৯৭-৮০৪৬।

ডঃ হর্ষ বর্ধন আরও জানান, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তর, আঞ্চলিক কার্যালয় এবং সংস্থার দেশীয় কার্যালয়গুলিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এমনকি, সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য দেশকে সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলির জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর পক্ষ থেকে নমুনা পরীক্ষার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মালদ্বীপ থেকে কিছু নমুনা পরীক্ষা করে দেখার কাজ চলছে। আফগানিস্তান থেকেও নমুনা পরীক্ষা করে দেখার অনুরোধ এসেছে। ভুটানকেও যাবতীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মন্ত্রী আরও জানান, ভারত সরকার পরিস্থিতির ওপর লাগাতার নজর রেখে চলেছে। নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে প্রয়োজনীয় সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

 

 

CG/BD/DM



(Release ID: 1602683) Visitor Counter : 106


Read this release in: English