রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়

সংসদের উভয় কক্ষে যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ

Posted On: 31 JAN 2020 7:51PM by PIB Kolkata

 নয়াদিল্লি, ৩১ জানুয়ারি, ২০২০

 

 

মাননীয় সদস্যগণ,

একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের সূচনায় সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আরও একবার নববর্ষের শুভেচ্ছা এবং নতুন দশকের সূচনায় যৌথ অধিবেশনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে উপস্থিত সাংসদদের অভিনন্দন জানাই।

ভারতের কাছে এই দশকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দশকে আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্ণ করব। এই দশকে নতুন ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে আরও গতি সঞ্চার করতে আমরা নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে একযোগে কাজ করব। আমার সরকারের একাধিক প্রয়াসের ফলে বিগত পাঁচ বছরে এক মজবুত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য, এই দশকটিকে ভারতের দশকে পরিণত করা এবং এই শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দীতে রূপান্তরিত করা।

পূজ্য বাপু’র গ্রাম স্বরাজের স্বপ্নই হোক, বাবাসাহেব আম্বেদকরের সামাজিক ন্যায়-বিচারের নীতিই হোক, এক আধুনিক ভারত গঠনে নেহরুজির স্বপ্নই হোক, এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারতের লক্ষ্যে সর্দার প্যাটেলের অঙ্গীকারই হোক, অন্ত্যোদয়ের উদ্দেশ্য পূরণে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের প্রচেষ্টাই হোক, অথবা সামাজিক সমতার ক্ষেত্রে লোহিয়াজির দূরদৃষ্টিই হোক – সব ক্ষেত্রেই আমরা, ভারতবাসীরা এই স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করব।

মাননীয় সদস্যগণ,

ভারতীয় সংবিধান ঐ স্বপ্নগুলি পূরণের ক্ষেত্রে আলোকদিশারী। কয়েক সপ্তাহ আগে গত ২৬শে নভেম্বর, সংবিধানের ৭০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। ঐ দিন দেশের ১২ কোটি মানুষ সংবিধানের মুখবন্ধ পাঠ করেছেন এবং সংবিধানের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করেছেন।

দেশের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি, আমাদের সংবিধান নাগরিকদেরকে তাঁদের কর্তব্যের প্রতিও সচেতন করেছে। এছাড়াও আমাদের সংবিধানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি দেশবাসী গ্রহণ করবেন বলেও উল্লেখ রয়েছে। একইসঙ্গে, আমাদের সংবিধানে এই প্রত্যাশাও রয়েছে যে সংসদ এবং তার প্রতিটি সদস্য দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন। সেইসঙ্গে, দেশের স্বার্থ সবার ওপরে রেখে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবেন।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বিগত সাত মাসে সংসদের কাজকর্ম এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিগত সাত দশকে এই লোকসভার প্রথম অধিবেশনে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।

আমার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের জন্যই মুসলিম মহিলাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে এবং তিন তালাক প্রথা রদ করে ন্যায়-বিচার দেওয়া হয়েছে। গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষায় নাগরিকদের নতুন অধিকার দেওয়া হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত আমানত প্রকল্পগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যাতে দরিদ্র মানুষের কষ্টার্জিত সঞ্চয়কে সুরক্ষা দেওয়া যায়। চিট ফান্ডগুলি থেকে দরিদ্র মানুষের সুরক্ষার জন্য চিট ফান্ড সংশোধনী আইন প্রণয়ন হয়েছে। শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে সাজা আরও কঠোর করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে মোটর গাড়ি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এমনকি, রূপান্তরকামীদের অধিকারের আইনি সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরকম একাধিক ঐতিহাসিক আইন দেশে কার্যকর হয়েছে।

সাংবিধানিক এই কর্তব্য পূরণ করার জন্য আমি সংসদের প্রত্যেক সদস্যকে অভিনন্দন জানাই।

মাননীয় সদস্যগণ,

দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছেন, তার ফলে আমাদের গণতান্ত্রিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। রাম জন্মভূমি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর দেশবাসী যে বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। আমার সরকার একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সুস্থ তর্ক-বিতর্ক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মজবুত করে। একইসঙ্গে, বিরোধিতা ও বিক্ষোভের নামে যে কোন ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা সমাজ ও জাতিকে দুর্বল করে তোলে।

মাননীয় সদস্যগণ,

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষে যে জনাদেশ দিয়েছেন, তার থেকে বড় কিছু হতে পারে না। দেশের মানুষ আমার সরকারকে এক নতুন ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনাদেশ দিয়েছেন।

এক নতুন ভারত যেখানে আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতির ঐতিহ্য গর্ব করে এবং এই ঐতিহ্যই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বকে সমৃদ্ধ করে তার জ্ঞানের শক্তি দিয়ে।  

এক নতুন ভারত যেখানে পুরনো সমস্যাগুলির সমাধানসূত্র খুঁজে বের করার পাশাপাশি উন্নয়নের নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে।

এক নতুন ভারত যেখানে দরিদ্র মানুষ, দলিত, মহিলা, যুবসম্প্রদায়, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের সার্বিক কল্যাণে ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।

এক নতুন ভারত যেখানে প্রতিটি অঞ্চলের অগ্রগতি ঘটছে, কোন অঞ্চলই পিছিয়ে নেই এবং যেখানে সমাজের শেষতম প্রান্তে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে যাচ্ছে।

এক নতুন ভারত যে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই ভারতই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতা অর্জন করেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

এধরনের নতুন ভারত গড়ে তোলার জন্য এবং সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণে আমার সরকার দ্রুতগতিতে প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার ঘটাতে নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ব ক্রমতালিকায় ভারতের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচকে ভারত ৭৯ ধাপ অগ্রগতি করে ৬৩তম স্থানে উঠে এসেছে। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতাজনিত সমস্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রে ভারত ১০৮তম স্থান থেকে ৫২তম স্থানে পৌঁছেছে। এমনকি, বিশ্ব উদ্ভাবন সূচকে ভারত ৭৪তম স্থান থেকে ৫২তম স্থানে উঠে এসেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভ্রমণ ও পর্যটন সংক্রান্ত প্রতিযোগিতার সূচকে ভারত ৫২তম স্থান থেকে ৩৪তম স্থানে এসেছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সংস্কার, বিগত ৫-৬ বছরে ভারতের মৌলিক ভিত্তি কতটা শক্তিশালী হয়েছে তা আন্তর্জাতিক সমুদায়কে দেখানোর এক আহ্বান। এক নতুন ভারত গঠনে ভারতবাসী কতটা আগ্রহী, এই সংস্কার তারই প্রতিফলন।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাসের মন্ত্র অনুসরণ করছে। আমার সরকার পূর্ণ অঙ্গীকার ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে। ৮ কোটি দরিদ্র মানুষকে নিখরচায় রান্নার গ্যাস সংযোগ, ২ কোটি গরিব মানুষকে গৃহ, প্রায় ৩৮ কোটি দরিদ্রকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সুযোগ-সুবিধা, ৫০ কোটি মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা, ২৪ কোটি মানুষকে বিমার সুবিধা এবং ২ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিখরচায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিপুল এই কর্মযজ্ঞ সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে এবং বৈষম্যমুক্ত হয়ে করা হয়েছে। আমার সরকার বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির সুযোগ-সুবিধা সামঞ্জস্য বজায় রেখে দরিদ্র মানুষ, সব ধর্ম, সব অঞ্চলে পৌঁছে দিয়েছে। এভাবেই আমার সরকার দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

বাংলার মহান সন্তান এবং জওহরলাল নেহরুজির নেতৃত্বাধীন সরকারের শিল্পমন্ত্রী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লোকসভায় বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার অন্য একটি অঞ্চলের নাগরিকদের অধিকারের থেকে ভিন্নতর হতে পারে না। তাই, আমরা ভারতবাসীকে যে মৌলিক অধিকার দিয়েছি তা কি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ পেতে পারেন না?

আজ সাত দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পর সমগ্র দেশ আনন্দিত যে ডঃ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্ন সহ কোটি কোটি স্বাধীনতা সংগ্রামীর মনস্কামনা পূর্ণতা পেয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষ এবং সেখানকার দলিত শ্রেণীর মানুষ ও মহিলারাও সম-অধিকার পেয়েছেন, যে অধিকার দেশের বাকি অংশের মানুষ উপভোগ করেন। সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠায় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বাতিল হওয়া না কেবল ঐতিহাসিক ঘটনা, সেইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পথও প্রশস্ত করেছে। সংসদের এই সভাকক্ষ থেকে আমি উন্নয়নের মূলস্রোতে সামিল হওয়ার জন্য জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

মাননীয় সদস্যগণ,

জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের দ্রুত উন্নয়ন, এই অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, স্বচ্ছ ও সৎ প্রশাসন এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায়ন আমার সরকারের অগ্রাধিকার। রাষ্ট্রপতি শাসনের সময় এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হওয়ার সময় থেকে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে সমস্ত উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলিতে গতি এসেছে।

২০১৮-র শেষের দিকে জম্মু ও কাশ্মীরে ৪,৪০০-রও বেশি পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার ৩০০-র বেশি ব্লক উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচন সফলভাবে হয়েছে। এখানকার মানুষ স্বচ্ছ ভারত অভিযান, উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান যোজনা, উজালা যোজনা, প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর ও খাদ্যশস্যে ভর্তুকির মতো সুবিধা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ২০১৮-র মার্চ পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় ৩,৫০০ গৃহ নির্মিত হয়েছে। ২০১৮-র পর দু’বছরের কম সময়ে ২৪ হাজারেরও বেশি বাড়ি নির্মিত হয়েছে।

এই সমস্ত প্রকল্প ও কর্মসূচি রূপায়ণের পাশাপাশি, যোগাযোগ, কৃষি-সেচ, হাসপাতাল ও পর্যটন সংক্রান্ত একাধিক কর্মসূচির কাজ পুরোদমে চলছে। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে আইআইটি, আআইএম, এইমস-এর মতো উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকে সরাসরি আপেল সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নাফেডকে। এর ফলে, কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলির সাফল্য এবং সরকারের ঐতিহাসিক পদক্ষেপের দরুণ দেশবাসীর প্রত্যাশা বহুগুণ বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে সরকারের দায়িত্বও।

বহু বছর ধরে দেশের মানুষের ইচ্ছা ছিল তাঁরা সহজেই কর্তারপুর সাহিবে গিয়ে তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। আমার সরকার রেকর্ড সময়ে কর্তারপুর সাহিব করিডর নির্মাণের কাজ শেষ করেছে এবং এই করিডরটি গুরুনানক দেবজির ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশবাসীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় গুরুনানক দেবজির ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ পাওয়ায় আমার সরকার অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। দেশে এবং বিদেশে গুরুনানক দেবজির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। একইসঙ্গে, শ্রীগুরু তেগ বাহাদুরজির ৪০০তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হবে বলে স্থির হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

রাজধানী শহর দিল্লিতে ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বহু বছর ধরে এই আশা নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন যে একদিন তাঁরা নিজেদের বাড়ির মালিকানার অধিকার পাবেন এবং তাঁরা মর্যাদার সঙ্গেও জীবনযাপন করতে পারবেন। আমার সরকার দিল্লির ১,৭০০-রও বেশি কলোনিতে বসবাসকারী মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে সমর্থ হয়েছে।

কৃষক সহ কৃষিকাজে যুক্ত শ্রমিক, অসংগঠির ক্ষেত্রের শ্রমিক এবং ছোট ব্যবসায়ীদের বহুদিনের প্রত্যাশা ছিল যে তাঁরাও বৃদ্ধ বয়সে পেনশন প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। আমার সরকার না কেবল তাঁদের প্রত্যাশাই পূরণ করেছে, সেইসঙ্গে পেনশন প্রকল্পগুলির আওতায় প্রায় ৬০ লক্ষ সুবিধাভোগীকে নিয়ে এসেছে।

পূজ্য বাপু সর্বদাই একথা বিবেচনা করতেন যে, পরিচ্ছন্নতা ঈশ্বরের সমতুল। গান্ধীজির জন্ম সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গত বছর দোসরা অক্টোবর দেশের গ্রামাঞ্চলগুলি নিজেদের প্রকাশ্য স্থানে শৌচকর্মমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে জাতির জনককে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

এখনও পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রায় ১৫ কোটি পরিবার রয়েছে যেখানে পাইপবাহিত পানীয় জলের সুবিধা নেই। আমাদের বোন ও কন্যারা বাড়িতে অপর্যাপ্ত জল সরবরাহের জন্য সবথেকে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এমনকি, দূষিত জল সমগ্র পরিবারের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। দেশের গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে সহজে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলের যোগান সুনিশ্চিত করতে আমার সরকার জল জীবন মিশন চালু করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারগুলি, স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি এই মিশনকে এক গণ-আন্দোলনের রূপ দিতে একযোগে কাজ করে চলেছে। আগামী দিনগুলিতে এই কর্মসূচি রূপায়ণে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি খরচ করা হবে। এছাড়াও আমার সরকার দেশের সবথেকে সঙ্কটগ্রস্থ সাতটি রাজ্য যেখানে দ্রুতগতিতে ভূগর্ভস্থ জলস্তর হ্রাস পাচ্ছে সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অটল ভূ-জল যোজনা শুরু করেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকারের সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস – এই মন্ত্রের উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক অঞ্চল এবং দেশের প্রতিটি রাজ্য। আমার সরকার বিশ্বাস করে যে, সমাজের প্রান্তিক মানুষটিরও উন্নতি ও কল্যাণে সমান অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেইসঙ্গে, যে অঞ্চলগুলি উন্নয়নের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে, সেগুলিও সমান গুরুত্ব পাবে।

দেশের ১১২টি জেলাকে উন্নয়নে আগ্রহী জেলার মর্যাদা দিয়ে আমার সরকার এই জেলাগুলির দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন ও সার্বিক কল্যাণের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি প্রকল্পে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলশ্রুতিস্বরূপ, এই জেলাগুলিতে একাধিক উন্নয়নমূলক সূচকে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। এমনকি, অনেক জেলাও উন্নয়নের নিরিখে রাজ্য গড় উন্নয়নের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। আমি সংসদের এই কক্ষ থেকে উন্নয়নে আগ্রহী প্রতিটি জেলায় কর্মসূচি রূপায়ণে নিযুক্ত দলকে আমার শুভকামনা জানাই।

মাননীয় সদস্যগণ,

দিল্লি থেকে উত্তর-পূর্বের ভৌগোলিক দূরত্বের চেয়েও বেশি যে বিষয়টি এই অঞ্চলের মানুষকে আশাহত করে তা হল আবেগের যথাযথ বহিঃপ্রকাশ না পাওয়া। আমার সরকার বিগত পাঁচ বছর নিরলস কাজ করে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন এনেছে। উত্তর-পূর্বে অভূতপূর্ব গতিতে কাজ হচ্ছে। উদ্দেশ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ানো, পরিকাঠামো মজবুত ও সম্প্রসারণ, যাতে করে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় মানোন্নয়ন ঘটানো যায়। সরকারের এই নিরলস প্রচেষ্টার ফলে ২০২২-এর মধ্যে উত্তর-পূর্বের সিকিম, মিজোরাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ডের রাজধানী রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই আগরতলা থেকে আখাউরা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এছাড়াও, অরুণাচল প্রদেশের হলঙ্গিতে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শেষ হবে।

উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম রূপায়ণের পাশাপাশি, গুয়াহাটিতে এইমস-এর ধাঁচে প্রতিষ্ঠান, নুমালিগড়ে জৈব-শোধনাগার এবং মণিপুরে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সম্প্রতি সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চল গ্যাস গ্রিড প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এই কর্মসূচি উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করবে।

কেন্দ্রীয় সরকার এবং অসম সরকার পাঁচ দশকের বেশি পুরনো বোড়ো সমস্যা সমাধানে বোড়ো সংগঠনগুলির সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে জটিল বোড়ো সমস্যা, যার দরুণ ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবনহানি ঘটেছে, তার সমাধান হয়েছে। চুক্তির পর সরকার বোড়ো সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নতির জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা খরচ করবে। একইভাবে, কয়েক দশক পুরনো ব্রু সম্প্রদায়ের সমস্যার সমাধানে ত্রিপুরা, মিজোরাম ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভাই-বোনেদের উন্নয়নের মূলস্রোতে নিয়ে আসতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই প্রথমবার সরকার বনজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চালু করেছে। আমার সরকার আদিবাসীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই সরকার দেশে ৪০০-র বেশি একলব্য আদর্শ আবাসিক স্কুল চালু করার অনুমতি দিয়েছে। সম্প্রতি লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের মেয়াদ আরও দশ বছর বাড়ানো হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। হুনার হাট কর্মসূচির মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২ লক্ষ ৬৫ হাজার দক্ষ শিল্পীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারেন তার জন্য বিপুল সংখ্যায় বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

আমার সরকারের বিশেষ অনুরোধে সৌদি আরবে ভারতের হজ কোটা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। রেকর্ড ২ লক্ষ ভারতীয় মুসলিম হজে গিয়েছেন। ভারতই হল প্রথম দেশ যেখানে হজ পূণ্যার্থীদের সমগ্র প্রক্রিয়া ডিজিটাল ও অনলাইন পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও, আমার সরকার দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির ১০০ শতাংশ ডিজিটালকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য, এ ধরনের সম্পত্তিগুলিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণমূলক কাজে সদ্ব্যবহার করা।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার দিব্যাঙ্গজনদের প্রতি সমান সহানুভূতিশীল হয়ে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করে চলেছে। বিগত পাঁচ বছরে দিব্যাঙ্গজনদের ৯০০ কোটি টাকারও বেশি সহায়ক সাজসরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। সরকার, দিব্যাঙ্গজনদের জন্য জাতীয় স্তরে একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজ করছে। এছাড়াও, ২৫ লক্ষেরও বেশি দিব্যাঙ্গজন ব্যক্তিকে ই-অভিনব পরিচিতি কার্ড প্রদান করা হয়েছে। আমার সরকারের বিগত মেয়াদে ভারতীয় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিকশনারি প্রস্তুতের কাজ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই মুক ও বধিদের জন্য বিশেষ এই অভিধানে ৬ হাজারেরও বেশি শব্দ তৈরি করা হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

ভারত সর্বদাই সমস্ত বিশ্বাসের প্রতি সম-মর্যাদার নীতিতে বিশ্বাস করে। অবশ্য, দেশ ভাগের সময় ভারত ও ভারতবাসীর এই বিশ্বাসের ওপর ব্যাপক আঘাত হানা হয়। দেশ বিভাগের পর জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, পাকিস্তানের হিন্দু ও শিখরা যাঁরা সেখানে বসবাস করতে চান না, তাঁরা ভারতে চলে আসতে পারেন। এটা ভারত সরকারের দায়িত্ব তাঁদের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাপন সুনিশ্চিত করা। গান্ধীজির জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় সংসদের উভয় কক্ষই নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বলবৎ করে তাঁর এই প্রত্যাশা পূরণ করেছে। এই আইন বলবৎ করার জন্য আমি সংসদের উভয় কক্ষ এবং সাংসদদের অভিনন্দন জানাই।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমরা বহু সময় ধরে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমবর্ধমান বর্বরোচিত আক্রমণ দেখে এসেছি। আমরা সকলেই দেখেছি সম্প্রতি নানকানা সাহিবে কি ঘটেছে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব, পাকিস্তানে ঘটা ঐ বর্বরোচিত আক্রমণগুলিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।

পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণের কঠোর নিন্দা করে আমি সমগ্র বিশ্ব সমুদায়কে এ ধরনের ঘটনার সত্যতা শিকার করার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানাই।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার আরও একবার স্পষ্টভাবে জানাতে চায় যে, বিশ্বের সব ধর্মের মানুষ যাঁরা ভারতের প্রতি আস্থা রাখেন এবং যাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে চান, তাঁদের জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া অপরিবর্তিত রয়েছে। যে কোন ধর্ম বিশ্বাসী একজন মানুষ স্বীকৃত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমাদের কৃষক, যাঁরা আমাদের অন্নদাতা, আমাদের দেশ তাঁদের কাছে ঋণী। কৃষক সম্প্রদায়, যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে দেশের স্বার্থে এবং গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের জীবনযাপনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে আমার সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমার সরকার গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে আগামী বছরগুলিতে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে চলেছে। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে সরকার উপার্জন-কেন্দ্রিক কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনার আওতায় ৮ কোটির বেশি কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মাসের দোসরা জানুয়ারি আমার সরকার একবারেই ৬ কোটি কৃষক পরিবারের অ্যাকাউন্টে ১২ হাজার কোটি টাকা হস্তান্তর করে এক রেকর্ড গড়েছে।

আমার সরকার কৃষকদের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ মূল্য প্রদানে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এই লক্ষ্যেই খরিফ ও রবিশস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য লক্ষ্যণীয় হারে বাড়ানো হয়েছে। সরকারের এই প্রচেষ্টার দরুণ বিভিন্ন ধরনের ডালশস্য ও তৈলবীজ সংগ্রহের পরিমাণ ২০ গুণেরও বেশি বেড়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার বিকল্প চাষের পদ্ধতির প্রসারেও গুরুত্ব দিচ্ছে। ক্লাস্টার-ভিত্তিক উদ্যান পালনের পাশাপাশি, জৈব চাষাবাদ প্রসারেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারের নিরলস প্রয়াসের ফলেই মধু উৎপাদন প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি, মধু রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। জাতীয় স্তরে মৌ-পালক ও মধু উৎপাদন বাড়াতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মৎস্যজীবীদের আয় ও মাছ উৎপাদন দ্বিগুণ করতে মৎস্যচাষ দপ্তর চালু করা হয়েছে। দেশে ৫০ কোটিরও বেশি গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে এক ব্যাপক অভিযানের আয়োজন করা হয়েছে। গবাদি পশুর রোগ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মসূচির আওতায় ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, গবাদি পশুর পায়ের খুর ও মুখের সংক্রমণ এড়ানো।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার, রাজ্য সরকারগুলির সহায়তায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব থেকে কৃষকদের রেহাই দিতে সহায়তা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আওতায় প্রতি বছর গড়ে ৫ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি কৃষক শস্য বিমার সুবিধা পাচ্ছেন। বিগত তিন বছরে শস্য বিমার আওতায় কৃষকদের ৫৭ হাজার কোটি টাকার দাবিদাওয়ার নিষ্পত্তি হয়েছে।

কৃষকদের জন্য জাতীয় স্তরে অনলাইন বাজার ব্যবস্থা ই-ন্যাম কর্মসূচির প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনলাইন এই বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ কৃষক এবং প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার ব্যবসায়ীকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ই-ন্যাম বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে। ৪০০-টিরও বেশি নতুন কৃষি মাণ্ডিকে ই-ন্যাম ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার কাজ চলছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত অবস্থা যৌথভাবে তাঁর পরিবার ও দেশের অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলে। তাই সরকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রের অগ্রগতিতে কাজ করে চলেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে রোগ প্রতিরোধের প্রয়াস গ্রহণ করা হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যগত মানোন্নয়নে একাধিক কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় ৭৫ লক্ষ দরিদ্র মানুষ নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। এছাড়াও, ২৭ হাজারের বেশি স্বাস্থ্য ও রোগী কল্যাণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের চিকিৎসা খাতে খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এক হাজারেরও বেশি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য সীমা বেঁধে দেওয়ার ফলে রোগীদের ১২,৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়াও, স্টেন্ট ও হাঁটু প্রতিস্থাপনের খরচ কমানো হয়েছে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ লক্ষ রোগী ৬ হাজারের বেশি জন ঔষধি কেন্দ্র থেকে সুলভে ওষুধপত্র সংগ্রহ করছেন।

জাতীয় মেডিকেল কমিশন স্থাপনের পাশাপাশি আমার সরকার চিকিৎসা-শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সংস্কারেও অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বছর ৭৫টি নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে, এমবিবিএস পর্যায়ে আসন সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আসন সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার বেড়েছে। এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন এলাকার জন্য এইমস-এর ধাঁচে ২২টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যেগুলি নির্মাণের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

আমার সরকার মহিলাদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশেষ প্রয়াসী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাত্রু বন্দনা যোজনার আওতায় দেশের ১ কোটি ২০ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫ কোটি টাকা হস্তান্তরিত করা হয়েছে। মিশন ইন্দ্রধনুষ কর্মসূচির আওতায় ৩ কোটি ৫০ লক্ষ নবজাতক এবং প্রায় ৯০ লক্ষ গর্ভবতী মহিলাকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমার সরকার পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ‘সুবিধা’ উৎপাদন করছে, যার দাম মাত্র ১ টাকা।

মাননীয় সদস্যগণ,

মহিলাদের মধ্যে শিল্পোদ্যোগের প্রসার ও জীবনজীবিকার উন্নয়নে আমার সরকারের প্রচেষ্টাগুলির ফলে ৬ কোটি ৬০ লক্ষেরও বেশি মহিলা ইতিমধ্যেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যুক্ত হয়েছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত এই মহিলাদের স্বল্প সুদের হারে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রথমবার সৈনিক বিদ্যালয়গুলিতে বালকদের মতো সমসংখ্যায় বালিকাদের ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সেনা পুলিশবাহিনীতে মহিলাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রথমবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান শাখায় মহিলাদের কাজে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার মহিলাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল। মহিলাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বাড়াতে দেশ জুড়ে ৬০০-রও বেশি ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণের জন্য জাতীয় স্তরের তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। মহিলাদের ওপর আক্রমণের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তিতে এক হাজারেরও বেশি ফাস্ট ট্র্যাক বিশেষ আদালত তৈরি করা হবে। দেশের প্রতিটি পুলিশ থানায় মহিলা হেল্পডেস্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার মতো চারটি বর্বরোচিত অপরাধের ক্ষেত্রে সরকার সর্বোচ্চ সাজার সংস্থান করেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

একবিংশ শতাব্দীকে জ্ঞানের শতাব্দী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে সরকার যুবসম্প্রদায়কে যথাযতভাবে গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই দশকে গবেষণা, উদ্ভাবন, ইনকুবেশন এবং স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে যুবকরাই অগ্রণী ভূমিকা নেবে। এই লক্ষ্যে আমার সরকারের নীতিগুলি থেকে যুবসম্প্রদায় লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট-আপ দেশ হয়ে উঠেছে। স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় দেশে ২৭ হাজার নতুন স্টার্ট-আপ স্বীকৃতি পেয়েছে। পেটেন্ট বা স্বত্ত্ব সংক্রান্ত আবেদনের সংখ্যাও বিগত পাঁচ বছরে চারগুণ বেড়েছে। এমনকি, ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশন পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দক্ষ ভারত মিশন এবং জাতীয় শিক্ষানবিশি কর্মসূচির মাধ্যমে স্বনিযুক্তির ক্ষেত্রে যুবাদের প্রয়োজনীয় তহবিলের যোগান দেওয়া হচ্ছে। মুদ্রা যোজনার আওতায় ৫ কোটি ৫৪ লক্ষের বেশি নতুন শিল্পোদ্যোগী ঋণ সহায়তা পেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত এই কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার গুণগত মানের শিক্ষা ও উদ্ভাবনের প্রসারে গৃহীত কর্মসূচিগুলির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। উচ্চশিক্ষা তহবিল এজেন্সির মাধ্যমে দেশে ৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণের জন্য ৩৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি মঞ্জুর করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিতে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ১২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আমার সরকার অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করতে ‘স্বয়ং-২’ কর্মসূচি চালু করেছে।

আমি আপনাদের এটা জানাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত যে দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমাদের যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতকে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্বের শক্তিধর দেশে রূপান্তরিত করার যাবতীয় সম্ভাবনা রয়েছে। খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচি এবং অলিম্পিক পোডিয়াম কর্মসূচি সহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগে গুয়াহাটিতে সফলভাবে তৃতীয় খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচি শেষ হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় ৮০টি নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে, যার মধ্যে ৫৬টি রেকর্ড গড়েছেন বালিকারা।

মাননীয় সদস্যগণ,

এ বছর পয়লা আগস্ট মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী বাল গঙ্গাধর তিলকের প্রয়াণ শতবার্ষিকী। মহান এই স্বাধীনতা সংগ্রামী আহ্বান জানিয়েছিলেন, স্বরাজ আমাদের জন্মগত অধিকার। ‘স্বরাজ’ অর্জনের পর সমগ্র জাতি ‘সুরাজ’ বা সুপ্রশাসনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে। সুপ্রশাসনের উদ্দেশ্য অর্জনে আমার সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

ন্যূনতম সরকারি হস্তক্ষেপ, সর্বাধিক সুপ্রশাসন – মৌলিক এই নীতি অনুসরণ করে আমার সরকার একাধিক সংস্কারসাধন করেছে। সম্প্রতি ৫৮টির বেশি আইন বিলোপ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সরকার প্রায় ১,৫০০ আইন বিলোপ করেছে। প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কারসাধন করা হচ্ছে। বিশেষ করে যুবসম্প্রদায় এতে উপকৃত হচ্ছেন কারণ, গ্রুপ ‘বি’ এবং গ্রুপ ‘সি’ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

কর্মসূচিগুলির সফল রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। এই লক্ষ্যে গত অক্টোবর মাসে ২০টির বেশি সিভিল সার্ভিসেসের আধিকারিকদের জন্য অভিন্ন কোর্সের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন দপ্তরের কাজকর্মের মধ্যে সমন্বয় আনতে দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রক এবং জলশক্তি মন্ত্রক গঠন করা হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

সরকারি পরিষেবা দ্রুত ও যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সুপ্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি, প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে। স্বচ্ছতা বজায় রেখে যোগ্য সুফলভোগীদের চিহ্নিতকরণ, সুফলভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১০০ শতাংশ আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং প্রকল্পের অগ্রগতিতে নজরদারির জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দরিদ্র ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতি হয়েছে। এই প্রযুক্তি চলতি দশকে দেশবাসীর জীবনযাপনের মানোন্নয়নে সমান ভূমিকা পালন করে চলবে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমরা সকলেই অবগত যে ডিজিটাল প্রযুক্তি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূল ভিত্তি। এই লক্ষ্যে আমার সরকার ডিজিটাল অ্যাক্সেস, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং ডিজিটাল ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এই শিল্প বিপ্লবের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

বর্তমানে দেশে ১২১ কোটিরও বেশি মানুষের কাছে আধার কার্ড এবং প্রায় ৬০ কোটি মানুষের রুপে কার্ড রয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউপিআই ব্যবস্থার মাধ্যমে রেকর্ড ২ লক্ষ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এছাড়াও, সরকার সম্প্রতি ‘ভিম’ অ্যাপের নতুন সংস্করণের সূচনা করেছে।

জন ধন, আধার ও মোবাইল – এই তিন বৈদ্যুতিন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর সংক্রান্ত প্রায় ৪৫০টির বেশি কর্মসূচির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর ব্যবস্থার মাধ্যমে বিগত পাঁচ বছরে সুফলভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৯ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি হস্তান্তরিত করা হয়েছে। অপচয় হ্রাস করে আমার সরকার ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা অসাধু ব্যক্তিদের হস্তগত হওয়া থেকে সাশ্রয় করেছে।

সরকারি সংগ্রহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিয়ে আসার লক্ষ্যে সরকারি ই-বাজার ব্যবস্থা বা জিইএম চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থা চালু করার ফলে বাজারের পরিধি কেবল বেড়েছে তাই নয়, ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরাও উপকৃত হচ্ছেন কারণ, এঁদের সঙ্গে সরকারের সরাসরি যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। বিগত তিন বছরে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সামগ্রী সংগ্রহ করেছে।

প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে আমার সরকার ইন্সপেক্টর রাজ ব্যবস্থা চিরতরে বিলোপ করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আয়কর দপ্তরে এখন আমরা এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছি, যার ফলে দপ্তরের হস্তক্ষেপ কমবে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে আয়কর বিভাগের কাজকর্মে স্বচ্ছতা বাড়বে।

মাননীয় সদস্যগণ,

শহর ও গ্রামগুলিকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখনও পর্যন্ত ভারত নেট কর্মসূচির আওতায় ১ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই ব্রডব্যান্ড ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে গ্রামগুলিতে যে অভিন্ন পরিষেবা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে সেখানে ১২ লক্ষের বেশি গ্রামবাসীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ধরনের পরিষেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ৪৫টির বেশি সরকারি পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর মানসিকতাকে আরও সুদৃঢ় করতে আমার সরকার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশবাসীর জন্য এক সুসংবদ্ধ ও সংগঠিত ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।

সম্প্রতি দেশে মোটর গাড়ির যাতায়াত সুগম করতে ‘এক দেশ, এক ফাসট্যাগ’ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ‘এক দেশ, এক মোবিলিটি কার্ড’ ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রাজ্যে পরিবহণের ক্ষেত্রে অভিন্ন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ চালু হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘এক দেশ, এক কর ব্যবস্থা’ যা জিএসটি নামে পরিচিত, তা চালু হয়েছে। জিএসটি চালু হওয়ার পূর্বে দেশে দুই ডজনের বেশি ভিন্ন ভিন্ন কর ব্যবস্থা চালু ছিল। এখন সারা দেশে অভিন্ন কর ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশে দ্রুত হারে উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যগুলি উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। সেইসঙ্গে, নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতাও বিনিময় করে থাকে। এই বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখেই আমার সরকার প্রতিযোগিতামুখী সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর নিরন্তর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সরকার তাৎক্ষণিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে রাজ্যগুলির ক্রমতালিকা তৈরি করে থাকে।

জনগণনার সময় সংগৃহীত তথ্য উপযুক্ত প্রকল্প প্রণয়ন ও সুনির্দিষ্ট মানুষের কাছে তার সুফল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার জনগণনার কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। উদ্দেশ্য, বিশাল এই কর্মযজ্ঞ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা।

ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের এই যুগে গোপনীয়তা বজায় রাখতে আমার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এই অঙ্গীকার পূরণে সরকার সংসদে ডেটা সুরক্ষা বিল পেশ করেছে।

 মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্য পূরণে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতির মৌলিক বুনিয়াদ অত্যন্ত সুদৃঢ়। আমাদের বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ভাণ্ডার সর্বকালীন ঐতিহাসিক উচ্চতা ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে। গত বছরের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের তুলনায় এ বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়ে এই বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে ৩ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে, ছোট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সংযুক্তিকরণের ফলে তাদের ঋণদান ক্ষমতা বেড়েছে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মুনাফা করেছে। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা ও দেউলিয়া বিধির দরুণ ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। কর্পোরেট কর হার হ্রাস এবং শ্রম আইনগুলির একত্রিতকরণের ফলে ভারতে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল বাতাবরণ ক্রমশ বাড়ছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার অর্থনীতির বিকাশ হার ত্বরান্বিত করতে উৎপাদন ক্ষেত্রে বিকাশ তথা রপ্তানি বাড়াতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশে দুটি প্রতিরক্ষা করিডর গড়ে তুলছে। ইতিমধ্যেই দেশে পাঁচটি শিল্প করিডর গড়ে তোলার কাজ চলছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

ভারত বৈদ্যুতিন সাজসরঞ্জাম উৎপাদন ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি করছে। দেশে মোবাইল ফোন, টিভি ও অন্যান্য বৈদ্যুতিন সাজসরঞ্জাম উৎপাদনে গতি সঞ্চার করতে জাতীয় ইলেক্ট্রনিক্স নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯-এ দেশে বৈদ্যুতিন সাজসরঞ্জাম উৎপাদন মূল্য ছিল ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪-তে ভারতে দুটি সংস্থা মোবাইল উৎপাদন করত। আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদনকারী দেশ। মোটর গাড়ি ক্ষেত্রেও সরকার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় নির্মাতাদের উৎসাহ যোগাচ্ছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অত্যাধুনিক বন্দে ভারত ও তেজস এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

স্বাধীনতার মৌলিক মন্ত্রই ছিল স্বনির্ভর ভারত। ভারতের স্বনির্ভরতা তখনই সম্ভব যখন প্রত্যেক ভারতীয় দেশে তৈরি প্রতিটি পণ্যের জন্য গর্ববোধ করবেন। আমার সরকার, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সামগ্রী ক্রয় করুন – এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমি পঞ্চায়েত থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে জনগণের প্রত্যেক প্রতিনিধি, দেশের প্রতিটি সরকারকে আহ্বান জানাই এই মন্ত্রে সামিল হওয়ার জন্য। আমি প্রত্যেক ভারতীয়কে স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানাই। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার এলাকার ছোট শিল্পোদ্যোগীদের উপার্জন বাড়াতে সাহায্য করেন।

মাননীয় সদস্যগণ,

দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক পরিকাঠামো প্রত্যাশা করেন। এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। বিনিয়োগে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে মহাসড়ক, জলপথ, বিমান যোগাযোগ এবং ‘আই-ওয়েজ’ বা ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর।

গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের প্রতিটি প্রান্তে বিস্তৃত হয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলিকে আরও মজবুত করতে এবং সড়কগুলির সঙ্গে বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও কৃষি বাজারগুলির যোগাযোগ গড়ে তুলতে এই কর্মসূচির তৃতীয় পর্যায়ের সূচনা হয়েছে। কর্মসূচির তৃতীয় পর্যায়ে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও তার মানোন্নয়ন করা হবে।

সরকার অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবস্থার বিকাশেও গুরুত্ব দিচ্ছে। গত ডিসেম্বরে প্রথমবার ২ নং জাতীয় জলপথ দিয়ে অসমের পাণ্ডুতে পণ্যবাহী কন্টেনার পৌঁছয়। জল মার্গ বিকাশ কর্মসূচির আওতায় হলদিয়ায় গঙ্গা নদীতে মাল্টি-মোডাল টার্মিনাল এবং ফারাক্কায় নেভিগেশন লক নির্মাণের কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের মধ্যে গঙ্গা নদী দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল আরও বাড়াতে সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।

শহরাঞ্চলে আরও উন্নত গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। দেশের ১৮টি শহরে মেট্রো পরিষেবা সম্প্রসারিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবার বিস্তৃতি ৬৭০ কিলোমিটার। এছাড়াও, মেট্রো পরিষেবা আরও ৯৩০ কিলোমিটার সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

দেশে টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শ্রেণীর শহরগুলি ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। ২০১৪ থেকে ছোট শহরগুলিতে স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রের বিকাশ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হারে। একইভাবে, ‘উড়ান’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ বিমানে যাতায়াত করেছেন। গত বছর ৩৩৫টি নতুন বিমান রুটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে আগামী বছরগুলিতে দেশের মোট ডিজিটাল লেনদেনের অর্ধেকই হবে টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শ্রেণীর শহরগুলি থেকে।

আমার সরকার ছোট শহর ও নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে চলেছে। ছোট শহরগুলির মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষরা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড়ে লাভবান হয়েছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে থমকে যাওয়া আবাসন প্রকল্পগুলির স্বার্থে সরকার ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল সংস্থান করেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

পরিস্রুত শক্তিক্ষেত্রে ভারত বিশ্ব জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারের প্রয়াসের ফলে দেশে রান্নার গ্যাস ব্যবহারের পরিধি ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৯৭ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশের ৪০৭টি শহরে গ্যাস বন্টন পরিষেবার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এখন আমরা গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে।

পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে আমার সরকার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ৪৫০ গিগাওয়াট করার লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-কুসুম যোজনার আওতায় দেশে ১৭ লক্ষ সৌরচালিত পাম্প কৃষকদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। একইভাবে, বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৮ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

দেশবাসীর আন্তরিক প্রয়াসের ফলেই ভারতে বনাঞ্চলের পরিধি বিগত চার বছরে ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে, দেশে বন্য পরিবেশে বাঘের সংখ্যা ২০১৪-র ২,২২৬ থেকে বেড়ে ২০১৯-এ ২,৯৬৭ হয়েছে।

বায়ু ও জলদূষণের সমস্যা দূর করতে সরকার দেশের ১০২টি শহরে জাতীয় ক্লিন এয়ার কর্মসূচি রূপায়ণ করবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, নমামি গঙ্গে মিশনের সুপ্রভাব ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৭ হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এবং আরও ২১ হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে।

সরকারের বিভিন্ন প্রয়াসের ফলে দেশে পর্যটন ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে পর্যটন পরিকাঠামোয় অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নে সম্প্রতি কলকাতা থেকে দেশব্যাপী এক কর্মসূচির সূচনা হয়েছে। সর্দার প্যাটেল নামাঙ্কিত বিশ্বের সুউচ্চ মূর্তি ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’তে আগত পর্যটকের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

মহান ব্যক্তিত্ব, যাঁরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং দেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণে অবদান যুগিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদানের কথা স্মরণ করা হচ্ছে। মহান সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের ২৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য সরকার ২০২২ সালে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির উদ্দেশ্য মানবতার সেবা। দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার দরুণ চন্দ্রযান-২ দেশের যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন আগ্রহের সঞ্চার করেছে। আমার সরকার ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-৩-এর অনুমোদন দিয়েছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) মনুষ্যবাহিত মহাকাশযান ‘গগনযান’ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

দেশের প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত নতুন ও জটিল চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় আমার সরকার প্রতিরক্ষার তিনটি শাখাকেই আরও মজবুত, কার্যকর ও আধুনিক করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই লক্ষ্যে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরি করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী বিষয়ক পৃথক দপ্তর গড়ে তোলা হয়েছে।

আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির চাহিদা পূরণের ব্যাপারে আমরা সচেতন রয়েছি। রাশিয়ার সহযোগিতায় অত্যাধুনিক একে-২০৩ রাইফেল উত্তরপ্রদেশের আমেঠিতে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সরকার মহাকাশ নিরাপত্তা বাড়াতে একাধিক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৃত্রিম উপগ্রহ এ-স্যাট সফল পরীক্ষার পর ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ যে মহাকাশে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার দেশ থেকে সন্ত্রাসের ভীতি মুক্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের পরিবর্তিত পদ্ধতির প্রেক্ষিতে নাগরিকদের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণের সহযোগিতাকে প্রতিফলিত করে। উত্তর-পূর্বের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। নকশাল অধ্যুষিত ভৌগোলিক এলাকা ক্রমশ কমে আসছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার দেশের অর্থনীতি ও কৌশলগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিদেশ নীতিকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। প্রতিবেশীরাই প্রথম – এই নীতিতে আমার সরকার অগ্রাধিকার দেয়। প্রতিবেশী দেশগুলির পাশাপাশি আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছি। এই কারণেই বিশ্বের বহু দেশ ভারতের প্রতি তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়েছে। আসিয়ান ও আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

আন্তর্জাতিক সৌর জোটের পর ভারত বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো সংক্রান্ত জোট গঠনেও বিশ্ব অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

সদ্য শুরু হওয়া এই দশক আগামীদিনগুলিতে বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থানকে স্থির করে দেবে। নতুন এই দশকে সমগ্র বিশ্ব এক সুসংবদ্ধ, সমৃদ্ধশালী, সক্ষম ও শক্তিশালী নতুন ভারতকে প্রত্যক্ষ করবে। তাই, সংসদের প্রত্যেক সদস্য এবং প্রত্যেক দেশবাসীর এটা দায়িত্ব যে এই উদ্দেশ্য পূরণের প্রচেষ্টায় কোন খামতি না রাখা।

প্রত্যেক নাগরিককে তাঁদের কর্তব্য ও জাতীয় স্বার্থের প্রতি সচেতন ও আন্তরিক করে তোলার প্রতি আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আসুন, ২০২০-র এই দশকটিকে আমরা আমাদের কর্তব্য পূরণের দশক করে তুলি।

আমাদের সর্বদাই মনে রাখতে হবে যে আমরাই এই দেশের নাগরিক। তাই, দলীয় আনুগত্যের তুলনায় দেশের মর্যাদা বজায় রাখা আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এটা আমার বিশ্বাস যে, আগামীদিনগুলিতে আমরা একসঙ্গে আমাদের গৌরবময় অতীত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সবরকম প্রয়াস নেব। আর এভাবেই আমরা আমাদের প্রয়াসগুলিতে সাফল্য লাভ করব।

আসুন, আমরা একসঙ্গে নতুন ভারতের স্বপ্ন পূরণ করি। আসুন, আমরা একসঙ্গে এক নতুন ভারত গড়ে তুলি।

জয় হিন্দ!

 

 

CG/BD/DM


(Release ID: 1601382) Visitor Counter : 426


Read this release in: English