প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোঝিকোড়ে আয়োজিত ‘গ্লোবালাইজিং ইন্ডিয়ান থট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দিলেন

Posted On: 17 JAN 2020 11:16AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০

 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আইআইএম কোঝিকোড়ে স্বামী বিবেকানন্দের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন।

 

তিনি আইআইএম কোঝিকোড় আয়োজিত ‘গ্লোবালাইজিং ইন্ডিয়ান থট’ শীর্ষক বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দেন।

 

এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় চিন্তাভাবনা অত্যন্ত প্রগতিশীল এবং বৈচিত্র্যময়। এই চিন্তাভাবনায় নিরন্তর বিকাশ ঘটছে। তাই ভারতীয় চিন্তাভাবনার বিস্তৃতি এতটাই যে কোন বক্তৃতা বা সেমিনার এমনকি, বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ করা যায় না। তথাপি, এমন কিছু আদর্শ রয়েছে যা আজও ভারতীয় মূল্যবোধের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। এই আদর্শগুলি হল করুণা, সম্প্রীতি, ন্যায়বিচার, পরিষেবা ও উদারতা।

 

শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ব

ভারতের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রসঙ্গে প্রথমেই যে কথাটি মনে আসে তা হল, শান্তির সদগুণ, একতা ও সৌভ্রাতৃত্বের অন্তর্নিহিত শক্তি।

 

তিনি বলেন, আমাদের সভ্যতায় সম্প্রীতি ও শান্তির মূল্যবোধগুলি সমৃদ্ধ হয়েছে এবং আজও তা অমলীন। অন্যদিকে, এমন অনেক সভ্যতা রয়েছে যাদের সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা ব্যর্থ হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বহু রাজ্য, বহু ভাষা, বহু কথ্যভাষা, বহু বিশ্বাস, বহু রীতি-নীতি এবং ঐতিহ্য। বিবিধ খাদ্যাভাস, ভিন্ন ভিন্ন জীবনশৈলী, পোশাক-আশাকের বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও শতকের পর শতক ধরে আমরা শান্তিতে বসবাস করে এসেছি। শতকের পর শতক ধরে আমরা সমগ্র বিশ্বকে আমাদের এই ভূমিতে স্বাগত জানিয়েছি। আমাদের সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু অনেক সভ্যতা তা অর্জন করতে পারেনি। কেন? কারণ হল যে কোন মানুষই এখানে শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণ খুঁজে পান।”

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের শক্তিই হল আমাদের সেই সমস্ত চিন্তাভাবনা যেগুলি প্রথাগত অভ্যাসের মাধ্যমে জীবন্ত ঐতিহ্যের রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ভারত হল এমন এক ভূমি যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের উদার মানসিকতা গড়ে উঠেছে। এই পবিত্র ভূমিতেই সুফিবাদও বিকশিত হয়েছে।

 

অহিংসার মূলে এ ধরনের মানসিকতা রয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাত্মা গান্ধী ছিলেন এ ধরনের আদর্শের এক মূর্ত প্রতীক, যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে ভারতীয় রীতি-নীতি হল আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন নয়, বরং আলাপ-আলোচনার আশ্রয় নেওয়া।

 

পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন আমি বলি যে ভারত শান্তি ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাস রাখে, তখন তার সঙ্গে মাতৃস্বরূপা প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়টিও জুড়ে যায়।”

 

তিনি বলেন, এ ধরনের মানসিকতার দৃষ্টান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপে লক্ষ্য করা যেতে পারে।

 

তিনি আরও বলেন, সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সৌর জোট গঠনের মধ্য দিয়ে ভারত অবশিষ্ট বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

 

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিগত পাঁচ বছরে ৩৬ কোটি এলইডি বাতি বিতরণ করা হয়েছে এবং সড়ক আলোকিতকরণে ১ কোটি এলইডি বাতি লাগানো হয়েছে। এ ধরনের বাতি ব্যবহারের ফলে ২৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে এবং ৪ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করা গেছে।

 

বাঘ ও সিংহের সুরক্ষাদান

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে বাঘের সংখ্যা ২০০৬-এ যা ছিল এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। “আজ ভারতে বন্য পরিবেশে প্রায় ২,৯৭০টি বাঘ রয়েছে। বিশ্বে বাঘের তিন-চতুর্থাংশই এখন ভারতে। আমরা এখন বাঘের নিরাপদ বাসস্থানের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছি। ২০১০-এ সমগ্র বিশ্ব ২০২২-এর মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার ব্যাপারে সহমত হয়। আমরা বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অনেক আগেই অর্জন করেছি।”

 

একইভাবে, ভারতে সিংহের সংখ্যাও ২০১০-এর তুলনায় ২০১৫-তে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

 

বনাঞ্চলের পরিধি বৃদ্ধি

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বনাঞ্চলের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। “২০১৪-তে সংরক্ষিত এলাকার সংখ্যা ছিল ৬৯২। এখন ২০১৯-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬০-এরও বেশি। ২০১৪-তে যেখানে কমিউনিটি রিজার্ভ ফরেস্টের সংখ্যা ছিল ৪৩, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০-রও বেশি। বনাঞ্চলের পরিধি বৃদ্ধির পরিসংখ্যানই দেশে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ অনুরাগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।”

 

মহিলাদের কল্যাণ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই মাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক হল মহিলাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তাঁদের গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রদান। মহিলারা দেবত্বের প্রতীক।”

 

মহিলাদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে সাধু-সন্ত, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মহাত্মা ফুলে ও সাবিত্রীবাঈ ফুলের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।

 

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সংবিধান গ্রহণ হওয়ার প্রথমদিন থেকেই মহিলাদের ভোটাধিকারের ক্ষমতা দিয়েছে। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের দেশগুলি মহিলাদের এই অধিকার প্রদানে শতকের পর শতক সময় নিয়েছে।

 

তিনি বলেন, “আজ মুদ্রা ঋণ সহায়তায় সুফলভোগীর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মহিলা।

 

আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলিতে মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। মহিলা নাবিকদের নিয়ে একটি দল সমগ্র বিশ্ব পরিক্রমা করে এসেছে। বিশ্ব পরিক্রমার এই ঘটনা ছিল ঐতিহাসিক। আজ ভারতে সবথেকে বেশি মহিলা সাংসদ রয়েছেন। এমনকি, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও মহিলা ভোটদাতার সংখ্যা ছিল সর্বাধিক।”

 

উদার মানসিকতার প্রদর্শন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত উদার মানসিকতায় বিশ্বাসী। যেখানে উদার মানসিকতা থাকে, সেখানে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে এবং উদ্ভাবন হয় সহজাত। ভারতীয়দের উদ্ভাবনের প্রতি গভীর আগ্রহ সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ভারতীয় চিন্তাভাবনায় সমগ্র বিশ্ব উপকৃত হয়েছে এবং আরও সমৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় মূল্যবোধ ও আদর্শের সেই ক্ষমতা রয়েছে যা এই দুনিয়ার জটিল কিছু সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে দিতে পারে।

 

 

SSS/BD/DM



(Release ID: 1599638) Visitor Counter : 103


Read this release in: English