মানবসম্পদবিকাশমন্ত্রক

সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম শহর ঢোলাবীরা-র ধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল নদী শুকিয়ে যাওয়া ও ক্ষরা জনিত পরিস্হিতি : আইআইটি খড়গপুরের সমীক্ষায় এই তথ্য প্রকাশিত

Posted On: 03 JAN 2020 11:21AM by PIB Kolkata

কলকাতা, ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

 

 

       হিমালয়ের বরফগলা জলে সমৃদ্ধ নদী সুপ্রাচীনকালে কচ্ছের রণের ওপর দিয়ে বয়ে যেত। কালের নিয়মে এই নদী ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়ার ফলেই হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম শহর ঢোলাবীরা ধ্বংস হয়ে যায়। ভারতীয় গবেষকরা ঢোলাবীরা শহর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পিছনে এই তথ্য আবিষ্কার করেছেন। গবেষকরা আরও দাবি করেছেন সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম শহর ঢোলাবীরা ওপর দিয়ে হিমালয়ের বরফগলা জলে সমৃদ্ধ কাল্পনিক নদী সরস্বতী বয়ে যেত। এই নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে শহরটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। গবেষকদের এই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য মর্যাদাপূর্ণ কোয়াটারনারি সায়েন্স জানার্লে প্রকাশিত হয়েছে।

       সমীক্ষায় কাল্পনিক এই নদীর গতিপথ, জলবায়ু ও সভ্যতার সঙ্গে এই নদীর যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়। আইআইটি খড়গপুর, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ, ডেকান কলেজ, ফিজিকাল রিসার্চ ল্যাবরেটারি এবং গুজরাটের সংস্কৃতি দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন খতিয়ে দেখার পর জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সমীক্ষায় আরও প্রকাশ, থর মরুভূমির দক্ষিণ দিকে কচ্ছের রণে সেইসময় সিন্ধু ও তার শাখা-প্রশাখা এবং অন্যান্য নদ-নদীর জল রণে এসে পড়ত এবং রণ ও অন্যান্য নদ-নদীর তীরে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সময়ের কালপ্রবাহে এগুলি সবই ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এটাই ছিল প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ যে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এবং তার প্রভাব পড়ছে হিমবাহ থেকে তৈরি হওয়া নদীর ওপর। কাল্পনিক সরস্বতী নদীর ক্ষেত্রেও জলবায়ুর প্রভাব পড়েছিল বলেই আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক এবং এই গবেষক দলের প্রধান অনিন্দ্য সরকার জানিয়েছেন।

       গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, ঢোলাবীরার বাসিন্দারাই ছিলেন ওই অঞ্চলের প্রকৃত অধিবাসী যাদের অস্তিত্ব ছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছর। তারা এমন এক উন্নতমানের শহর গড়ে তুলেছিলেন যা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ বছর টিকে ছিল। এমনকি জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও তারা অভিনব পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। এই শহর ৪ হাজার ৪০০ বছর টিকে থাকার পর প্রায় ৪ হাজার বছর আগে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই শহরের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পিছনে খরা জনিত পরিস্হিতির সৃষ্টি হয়েছিল বলেও গবেষকরা দাবি করেছেন।

       যদিও ঢোলাবীরার বাসিন্দারা জল সংরক্ষণের জন্য বাঁধ, জলাধার এবং পাইপলাইন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ব্যাপক খরা জনিত পরিস্হিতে তৈরি হওয়ার ফলে এইসব কাঠামো ভেঙে পড়ার দরুণ শহরটিও ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ঘটনা কিভাবে পরিবেশ, পরিস্হিতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হল ঢোলাবীরা শহর। গবেষকদের আরও দাবি ভারতে যাবতীয় হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শনও ঢোলাবীরা শহরটি ধ্বংসের পরপরই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এমনকি সেই সময়কার মেসোপটেমিয়া, গ্রীস, চীন ও মিশরের প্রাচীন সাম্রাজ্যে সামাজিক অবক্ষয়েরও সূচনা হয় সেইসময়। ৪ হাজার ২০০ বছর আগে ভারতীয় ও পূর্ব এশিয়ায় বর্ষার মরশুমে যে পরিবর্তন আসে তার প্রভাব সমগ্র অঞ্চলে পড়ে। এই প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে ২৫০ বছর ধরে খরা জনিত পরিস্হিতি চলতে থাকে যার ফলে ঢোলাবীরা শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বলে ওয়েল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইক ওয়াকার দাবি করেছেন।  

 

 

CG/BD/NS



(Release ID: 1598349) Visitor Counter : 726


Read this release in: English