প্রতিরক্ষামন্ত্রক
বর্ষশেষ পর্যালোচনা ২০১৯ : প্রতিরক্ষা মন্ত্রক
Posted On:
01 JAN 2020 5:51PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে ২০১৯ সালটি ছিল বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে স্মরণীয় বছর। দেশে প্রতিরক্ষা পরিচালনগত ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের লক্ষ্যে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের অঙ্গ হিসাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরিতে অনুমোদন দিয়েছে। ফোর স্টার জেনারেল পদে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরির প্রস্তাব রয়েছে, যা বর্তমান সেনা প্রধানের বেতনক্রম ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মতোই হবে। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে গড়ে উঠতে চলা সামরিক বিষয়ক দপ্তরের প্রধান হবেন এবং দপ্তরের সচিবের দায়িত্বও পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রী এ বছরের ১৫ই আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে আরও সমন্বয় ও ঐক্য গড়ে তুলতে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরির কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিশ্ব জুড়ে পরিবর্তিত রণকৌশল এবং নিরাপত্তাগত আবহে সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে শীর্ষ পদে একজন আধিকারিকের উপস্থিতির অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যিনি বাহিনীর তিন শাখাকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও ঘটনাবলী : -
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশের সেবায় সর্বোচ্চ আত্মবলিদানকারী নির্ভীক সেনানীদের স্মরণে প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়া গেটে জাতীয় যুদ্ধ স্মারক জাতীর উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনীর ওপর এক মর্মান্তিক আত্মঘাতি জঙ্গীহানায় ৪০ জন জওয়ান শহীদ হন। পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন জঈশ – ই – মহম্মদ এই আত্মঘাতি হামলা চালায়। দুঃসাহসী জওয়ানদের ওপর এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার যোগ্য প্রত্যুত্তর দিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন শুরুর আগেই নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গী সংগঠন জঈশ – ই – মহম্মদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে ভারত আঘাত হানে। এই ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটির বহু সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষক, সিনিয়র কমান্ডার সহ কুখ্যাত জঙ্গী মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজহার মারা যায়।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন হিসাবে এই ঘটনা উল্লেখ থাকবে। গত অক্টোবর মাসে ফ্রান্সে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান রাফাল ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার এক অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং উপস্থিত ছিলেন। এমনকি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই যুদ্ধ বিমানের সওয়ার হন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গত ৩ আগস্ট হায়দরাবাদে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত ডায়নামিকস্ লিমিটেডে এক অনুষ্ঠানে মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দেন।
যুদ্ধ ক্ষেত্রে হতাহত সেনা জওয়ানদের নিকট এক আত্মীয়র জন্য এককালীন ক্ষতিপূরণ হিসাবে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা থেকে চার গুণ বাড়িয়ে ৮ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাবে নৈতিক সম্মতি দেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
সীমান্ত এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সেতুর উন্নয়নে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের কাথুয়া জেলায় ১ কিলোমিটার দির্ঘ উঝ সেতু এবং সাম্বা জেলায় ৬১৭ মিটার দীর্ঘ বসন্তর সেতুর উদ্বোধন করেন গত ২০ জুলাই।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গত ১৫ নভেম্বর অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সিয়াং জেলার নিম্ন দিবাং উপত্যকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিসেরি নদীর ওপর সেতুর উদ্বোধন করেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গত ৭ ডিসেম্বর দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট থেকে পক্ষকালব্যাপী স্বচ্ছতা অভিযানের অঙ্গ হিসাবে দেশ থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জনে সচেতনতা গড়ে তুলতে এক বিশেষ অভিযানের সূচনা করেন। এই অভিযানে বিদ্যালয় পড়ুয়া সহ ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্তরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও নিবিড় করার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং চলতি বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইউক্রেন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। এই সফরকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেদেশের সঙ্গে সন্ত্রাস দমন সহ ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ চীন সাগরে নিরাপত্তা সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশ মন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর গত ১৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষা ও বিদেশ সচিবের সঙ্গে ভারত – মার্কিন ২+২ আলোচনায় অংশ নেন।
ভারত – জাপান ২+২ আলোচনা গত ৩০ নভেম্বর নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। শ্রী রাজনাথ সিং ও ডঃ এস জয়শঙ্কর এই বৈঠকে জাপানের বিভাগীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত গভীরতা আরও বাড়ানোর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর জাপান সফরকালে গত ২ সেপ্টেম্বর টোকিও-তে সেদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে বার্ষিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। উভয় মন্ত্রী-ই বর্তমান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও নিবিড় করার পাশাপাশি, এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের বিভিন্ন পন্থাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন।
ষষ্ঠ আসিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে শ্রী রাজনাথ সিং গত ১৭ নভেম্বর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক সফর করেন। বৈঠকে যোগদানের পাশাপাশি, শ্রী সিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথক পৃথক দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিলিত হন।
দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে শ্রী সিং সেদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে গত ৬ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন। এছাড়াও, তিনি সিওলে কোরীয় ও ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থাগুলির সিইও-দের বৈঠকে ভাষণ দেন।
উজবেকিস্তানের তাসখন্দে সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের সরকার প্রধানদের পরিষদের অষ্টাদশ বৈঠকে শ্রী সিং গত ২ নভেম্বর অংশ নেন। এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি, শ্রী সিং ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে প্রথমবার আয়োজিত হতে চলা যৌথ মহড়া ডাস্টলিক – এর সূচনা করেন।
সামরিক ও সামরিক কারিগরি সহায়তা সংক্রান্ত ঊনবিংশতম ভারত – রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশনের বৈঠকের সহ-সভাপতিত্ব করেন শ্রী সিং। মোজাম্বিক সফরকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উচ্চ-স্তরীয় বৈঠক করেন এবং ভারতের পক্ষ থেকে দেশটিকে ৪৪টি এসইউভি উপহার দেওয়া হয়।
মায়ানমারের সেনাপ্রধান গত জুলাই –আগস্ট মাসে ভারত সফর করেন এবং দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষন, নৌ-নিরাপত্তা, দক্ষতা বৃদ্ধি, দূষণ প্রতিরোধ ও নতুন পরিকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করেন। এই উপলক্ষে ভারতের সঙ্গে সেদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক সমঝোতাপত্রের সহযোগিতা হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী
সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের বিভিন্ন ধারা প্রত্যাহারের পর জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সবরকম সহায়তা দেওয়া হয়। শত্রু পক্ষকে নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম মাঝারি পাল্লার নাগ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। সব মরশুমে ব্যবহারের উপযোগী এই ক্ষেপণাস্ত্রটি দিনের মতো রাতেও নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম।
পরিবেশের সুরক্ষায় গৃহীত সরকারি নীতি কর্মসূচিগুলির অঙ্গ হিসাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী নতুন দিল্লিতে আধিকারিকদের জন্য ই-কার বা বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। সেনা জওয়ানরা মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা কবলিত মানুষের ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলিকে সবরকম সহায়তা দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক টহলদারী ও রাজ্য পুলিশ বাহিনীর একজন অরুণাচল প্রদেশের রোয়িং জেলায় টহলদারির সময় গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ব্যবহৃত মার্কিন বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমানের ধ্বংসাবশেষের হদিশ পান। ভারত ও শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বিসপ্তাহব্যাপী সেনা মহড়া মিত্রশক্তি গত ২৬ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত হয়।
ভারতীয় নৌ-বাহিনী
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং গত ২৮ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ে স্করপেন শ্রেণীর দ্বিতীয় ডুবো জাহাজ খান্ডেরী এবং ক্র্যাফট কেরিয়ার ডক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। গত ২৪ জানুয়ারি নৌ এয়ার স্টেশন শিবপুর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। ভারতীয় নৌ-বাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১২টি নতুন ডর্নিয়ার শ্রেণীর যুদ্ধ বিমানের মধ্যে প্রথম দুটি গত ২৮ জানুয়ারি সামিল করা হয়েছে। অত্যাধুনিক এই যুদ্ধ বিমানগুলিতে এমন সেন্সর ব্যবস্থা রয়েছে, যা সমুদ্রে ও মহাসাগরে নজরদারি বাড়াবে।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে ভারতীয় নৌ-বাহিনী মিশন বেসড্ ডিপ্লয়মেন্টের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য হ’ল – জাতীয় নৌ-নিরাপত্তার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিরন্তর নজরদারি বজায় রাখা।
ভারতের উপকূল বরাবর প্রতিরক্ষা মহড়া ‘সি – ভিজিল – ২০১৯’ গত ২২-২৩ জানুয়ারি আয়োজিত হয়। এই মহড়ায় ভারতীয় নৌ-বাহিনীর পাশাপাশি, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও জাতীয় উপকূলীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সামিল করা হয়। এই ধরণের মহড়া আয়োজনের উদ্দেশ্য হ’ল – নিরাপত্তাগত ক্ষেত্রে যে সমস্ত ফাঁকফোকর রয়েছে, তা দূর করতে সবপক্ষের মধ্যে আরও বেশি সমন্বয় গড়ে তোলা।
ভারতীয় বিমান বাহিনী
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আকাশ সীমানায় নিরাপত্তা বজায় রাখার বিষয়টি বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শান্তি পরিস্থিতি বজায় থাকার সময়েও যথেচ্ছ দ্রোণ ব্যবহারের ফলে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। এই প্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশ নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ সরবরাহের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাহিনী মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিআরডিও-র কাছ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সংগ্রহ করা হবে। আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বাহিনীর কাছে আসবে।
বাহিনীর সার্বিক ক্ষমতা আরও বাড়তে এবং ফাইটার স্কোয়াড্রনগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে রাফাল যুদ্ধ বিমান সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এ ধরণের যুদ্ধ বিমান হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং বাহিনীর কর্মীদের প্রশিক্ষণ পুরোদমে চলছে। এছাড়াও, বাহিনীর পক্ষ থেকে ২৭২টি সুখোই – ৩০ যুদ্ধ বিমান সরবরাহের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাহিনীর হাতে ১৭টি অ্যাপাশে হেলিকপ্টার এসে পৌঁছেছে। সব মরশুমের উপযোগী দিন ও রাতে পরিচালনায় সক্ষম এই অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারগুলিতে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে।
সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধ বিমান থেকে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বাহিনীতে সামিল করা হলে শত্রু পক্ষের আক্রমণ মোকাবিলার ক্ষেত্রে রণকৌশলগত ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়বে।
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল ব্যবস্থার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এছাড়াও, ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম বাহিনীতে সামিল করা হয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব – বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার শাখায় মহিলা পাইলটরা দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। এমনকি, বাহিনীর যুদ্ধ বিমান শাখাতে মহিলা পাইলট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ৬ জন পাইলট ফাইটার স্কোয়াড্রনে রয়েছেন এবং ২ জনের প্রশিক্ষণ চলছে। গত ১৯ ডিসেম্বর আরও একজন মহিলা প্রশিক্ষণাধীন পাইলটকে যুদ্ধ বিমান শাখায় সামিল করা হয়েছে। উইং কমান্ডার শৈলজা ধামি বিমান বাহিনীর প্রথম মহিলা হেলিকপ্টার কমান্ডার হয়েছেন। এর আগে তিনি বাহিনীর একটি শখার প্রথম মহিলা ফ্লাইট কমান্ডার ছিলেন।
ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গত ২৫ সেপ্টেম্বর চেন্নাইতে এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ ‘বরাহ’ আনুষ্ঠানিকভাবে জলে ভাসান। বাহিনীতে এই জাহাজটি সামিল হওয়ার ফলে উপকূল অঞ্চলে নিরাপত্তা আরও জোরার হবে। অন্যান্য দেশের উপকূল রক্ষী বাহিনীগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়াতে ভারতীয় বাহিনীর বিভিন্ন যুদ্ধ জাহাজ বিদেশে মোতায়েন করা হয়। চলতি বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর ৬টি জাহাজ ১৫টি দেশ সফর করেছে।
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নিমেষে দৃষ্টিশক্তির অগোচর হয়ে যাওয়া আকাশ থেকে আকাশ নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ওডিশার চাঁদিপুরে গত ১৬ – ১৯ সেপ্টেম্বর এই পরীক্ষা চালানো হয়।
ডিআরডিও-র পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম ভারতীয় বিমান বাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওডিশার চাঁদিপুর ইন্টিগ্রেটেড উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য অত্যাধুনিক দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়েছে। পরীক্ষার সময় ডিআরডিও-র পক্ষ থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পূর্ব নির্ধারিত দুটি বস্তুতে সঠিক নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়েছে। মিশন শক্তি নামে এই অভিযানে ডিআরডিও-র পক্ষ থেকে গত ২৭ মার্চ ওডিশার ডঃ আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা একটি সক্রিয় ভারতীয় উপগ্রহকে আঘাত হানতে ও নিমেষের মধ্যে তা ধ্বংস করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।
ডিআরডিও এবং ভারতীয় বিমানবাহিনী যৌথভাবে দুটি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এর একটি পরীক্ষা চালানো হয় ভূমি থেকে এবং অন্যটি সুখোই-৩০ যুদ্ধ বিমান থেকে। এছাড়াও, ডিআরডিও গত ১৭ ডিসেম্বর পিনাকা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক সফল উৎক্ষেপণ চালিয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর ওডিশার চাঁদিপুর ইন্টিগ্রেটেড উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়।
সীমান্ত সড়ক সংস্থা – সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক, ৫১ হাজার মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, ১৯টি এয়ার ফিল্ড এবং ২টি সূড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ককে আরও নিবিড়তর করতে বিআরও প্রতিবেশী বন্ধু মনোভাবাপন্ন কয়েকটি দেশে সড়ক পরিকাঠামো মানোন্নয়নে সহায়তা করেছে।
এই সংস্থাকে ভারত – চীন সীমান্ত বরাবর ৩ হাজার ৩৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬১টি সড়ক নির্মাণ বা মানোন্নয়নের কাজ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই ৩৬টি সড়কের ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটারের বেশি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও, ব্রহ্মপুত্র নদের নীচ দিয়ে ভূগর্ভস্থ সূড়ঙ্গ নির্মাণের অনুমতি মিলেছে। বিআরও এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে এই নদের নীচ দিয়ে দুটি সড়কপথ ও একটি রেলপথ নির্মাণ করবে।
জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনী
দেশের প্রত্যন্ত, নকশাল অধ্যুষিত, উপকূল বা সীমান্ত এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি আরও জোরদার করতে জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনী (এনসিসি) নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিসি’র প্রায় ৫৪ হাজার ক্যাডেট এই এলাকাগুলি থেকে এসেছে। বাহিনীর ১০ লক্ষেরও বেশি ক্যাডেট এ বছর ৮ আগস্ট থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত স্বচ্ছ ভারত অভিযানে অংশ নেয়। এছাড়াও, দূষণ প্রতিরোধে বাহিনীর প্রায় ৫ লক্ষ ক্যাডেট সারা দেশ জুড়ে সচেতনতামূলক শিবিরের আয়োজন করে। মাদক অপব্যবহার ও অবৈধ চোরাচালান প্রতিরোধ দিবস পালনের অঙ্গ হিসাবে বাহিনীর প্রায় ৯৫ হাজার ক্যাডেট বিভিন্ন শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এছাড়াও, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে ক্যাডেটরা সারা দেশে প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার বৃক্ষ রোপণ করেন। ১৯ নভেম্বর এনসিসি-র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রায় ১ লক্ষ ইউনিট রক্তদান করা হয়েছে। ২০১৮’র মতো ২০১৯-এও ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাহিনীর ৭ লক্ষেরও বেশি ক্যাডেট প্রায় সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এছাড়াও, বাহিনীর ক্যাডেটরা বিহার, কেরল ও মহারাষ্ট্রে বন্যার সময় দুর্যোগপীড়িত মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।
SSS/BD/SB
(Release ID: 1598183)
Visitor Counter : 208