জাহাজচলাচলমন্ত্রক
বর্ষশেষ পর্যালোচনা ২০১৯ – জাহাজ চলাচল মন্ত্রক
Posted On:
26 DEC 2019 10:21PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
জাহাজ চলাচল ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার ২০১৯ সালে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
২০১৯ – এ মন্ত্রকের সাফল্য নিম্নরূপ –
রিসাইক্লিং অফ শিপস্ অ্যাক্ট ২০১৯ কার্যকর এবং আইএমও-র হংকং আন্তর্জাতিক কনভেনশনে ভারতের সমর্থন –রিসাইক্লিং অফ শিপস্ অ্যাক্ট ২০১৯ কার্যকর হওয়ার ফলে ভারত পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে পুরনো ও অকেজো জাহাজ মেরামতির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। নতুন এই আইনের বলে হংকং কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য আইনি কাঠামোর সংস্থান তৈরি হবে। এছাড়াও, আইএমও-র হংকং আন্তর্জাতিক কনভেনশনে ভারতের সমর্থনের ফলে দেশে পুরনো জাহাজের মেরামতের কর্মকান্ডে গতি আসবে। জাহাজ মেরামতের ক্ষেত্রে বিশ্বের অগ্রণী ৫টি দেশের মধ্যে অন্যতম। ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের জাহাজ মেরামতির কর্মকান্ড দ্বিগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নাবিক ও অন্যান্য নৌ-কর্মীদের জন্য বায়োমেট্রিক পরিচিতি সংক্রান্ত নথিপত্র – নাবিক ও অন্যান্য নৌ-কর্মীদের মুখাবয়বের ছবি কাজে লাগিয়ে বায়োমেট্রিক পরিচিতি সংক্রান্ত নথিপত্র জারি করার ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থা নাবিক ও নৌ-কর্মীদের পরিচিতি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এক কার্যকর ভূমিকা নেবে। এছাড়াও, বায়োমেট্রিক ব্যবস্থার ফলে নৌ-কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে এবং বিশ্বের যে কোনও জায়গার পরিচিতি জানার ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা - বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসারে এবং নৌ-বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও নিবিড় করতে প্রতিবেশী দেশগুলি সহ দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে একাধিক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতাপত্রের ফলে কেরল থেকে মালদ্বীপ পর্যন্ত ফেরি ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের পথ সুগম হবে। এছাড়াও, নাবিক ও নৌ-কর্মীদের পারস্পরিক পরিচিতির স্বীকৃতি সংক্রান্ত শংসাপত্র আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সুইডেনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত্ হয়েছে। এই চুক্তির ফলে সুইডেনের পতাকাবাহী জাহাজগুলিতে ভারতীয় নৌ-কর্মী ও নাবিকদের কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে।
জলপথে পরিবহণের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মঙ্গলা বন্দর হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে যাত্রী ও পণ্যবাহী জলযান পরিষেবা শুরু করার লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে, উত্তর – পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে খরচ হ্রাস পাবে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়বে। অভ্যন্তরীণ জলপথ ও উপকূলবর্তী নৌ-চলাচল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তার লক্ষ্যে ভারত ও জার্মানির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণের বিকল্প একটি উপায় হিসাবে ভারত ও নেপালের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ জলপথ যোগাযোগ নিয়ে চুক্তি হয়েছে।
সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য –সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সংক্রান্ত সূচকে সীমান্ত পারের বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ৮০ থেকে কয়েক ধাপ উপরে উঠে ৬৮-তে পৌঁছেছে। মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপের দরুণ সূচকে এই অগ্রগতি। এই পদক্ষপেগুলির মধ্যে রয়েছে – পণ্যসামগ্রী সরাসরি বন্দরে পৌঁছে দেওয়া, বন্দরে পণ্য পৌঁছনোর অনুমতি, স্ক্যানার বা কন্টেনার স্ক্যানার চালু করা, নিয়মনীতি সরলীকরণ প্রভৃতি।
ক্রুজ পরিবহণ – ক্রুজ পর্যটন ও উপকূল বরাবর জাহাজ চলাচলের প্রসারে মন্ত্রক সারা বছর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ক্রুজ পর্যটনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনার দরুণ মন্ত্রক ভারতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ক্রুজ পরিষেবার প্রসারে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের প্রথম বেসরকারি প্রিমিয়াম বিলাসবাহী ক্রুজ ‘করনিকা’ ভারতে ক্রুজ পর্যটনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বিলাসবহুল এই জলযানে করে পর্যটকরা মুম্বাই – গোয়া, মুম্বাই – দিউ এবং মুম্বাই – উপসাগরীয় রুটে সমুদ্র ভ্রমণ করতে পারছেন। এ বছরই ঢাকা ও কলকাতার মধ্যেও ক্রুজ পরিষেবা শুরু হয়েছে। এই দুই শহরের মধ্যে চারটি ক্রুজ চলাচল করছে।
নৌ-কর্মী ও নাবিকদের কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা উন্নয়ন – নৌ-কর্মী ও নাবিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণদান এবং বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী সুদক্ষ করে তোলার মধ্য দিয়ে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজগুলিতে ভারতীয়দের কর্মসংস্থান বেড়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নাবিক ও নৌ-কর্মীদের বায়োমেট্রিক পরিচিতি ব্যবস্থা এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।
সাগরমালা দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনার দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কেরল ও তামিলনাডুতে বন্দর-ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও, মাল্টি স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নৌ পথে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়েছে।
সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড অ্যান্ড কোস্টাল মেরিটাইম টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের শিলান্যাস হয়েছে গত মার্চে। দেশের অগ্রণী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়্গপুরে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠবে। বন্দর ও নৌ-বাণিজ্য ক্ষেত্রে দেশীয় উদ্ভাবন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যোগানের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত এই প্রতিষ্ঠানটি সাগরমালা কর্মসূচি ও মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার লক্ষ্যে জার্মানির সঙ্গে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শিপইয়ার্ড ও বন্দর – বিমস্টেক দেশগুলির মধ্যে বন্দর নিয়ে প্রথম সম্মেলন এ বছর ভারতে আয়োজিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল – এই গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে নৌ-বাণিজ্য, বন্দর-কেন্দ্রিক যোগাযোগ এবং জ্ঞান আদান-প্রদানের লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও মজবুত করা। চলতি বছরেই দেশের সমস্ত বন্দরে কম্যুনিটি সিস্টেমের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। এর ফলে, বন্দর ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান আরও সহজ হবে। বন্দর-ভিত্তিক কাজকর্ম ব্যবস্থাকে কাগজ বিহীন করে তুলতে ই-চালান ও ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হয়েছে। চলতি বছরেই কলকাতা বন্দরে সিসিটিভি বসানো হয়েছে এবং তিনটি ট্রাক বা লরি পার্কিং টার্মিনালও চালু হয়েছে।
কান্ডলার দীনদয়াল বন্দরে দুটি বহু উদ্দেশ্যসাধক জেটির উদ্বোধন হয়েছে গত মার্চে। নবনির্মিত এই জেটি দুটির ফলে বন্দরে মালপত্র পরিবহণ ও জাহাজ থেকে পণ্য ওঠা-নামার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়াও, ওডিশার পারাদ্বীপ বন্দরে চলতি বছরেই ৪০০ রোগী শয্যাবিশিষ্ট একটি সুপার ফেসিলিটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। এই হাসপাতালটিকে সরকারি – বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজে উন্নীতকরণের প্রস্তাব রয়েছে।
উপকূল বরাবর জাহাজ চলাচল – উপকূল বরাবর জাহাজ চলাচলের অগ্রগতিতে মন্ত্রক একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। সাগরমালা কর্মসূচির আওতায় মন্ত্রক উপকূল অঞ্চলে জাহাজ পরিবহণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এই লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের সহায়তায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে উপকূল বরাবর বাণিজ্য বাড়বে এবং উপকূলবর্তী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাণিজ্যিকীকরণের মধ্য দিয়ে দূর করা যাবে।
মেরিটাইম হেরিটেজ – গুজরাটের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত লোথাল শহরে মন্ত্রক জাতীয় স্তরের একটি মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্স বা নৌ-বাণিজ্যের নিদর্শনবাহী একটি ভবন গড়ে তোলার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ভবনটি গড়ে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৪৭৯ কোটি টাকা। নৌ-বাণিজ্যের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে বিশ্বে এটি এ ধরণের প্রথম ভবন হয়ে উঠতে চলেছে। প্রস্তাবিত এই ভবনটিতে হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ভারতের সমৃদ্ধ নৌ-বাণিজ্যের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ –প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ঝাড়খন্ডের রাঁচি থেকে গত সেপ্টেম্বর মাসে সাহিবগঞ্জে নবনির্মিত একটি মাল্টিমোডাল টার্মিনাল জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। কেন্দ্রীয় সরকার ও উপকূলবর্তী রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে সপ্তদশ উপকূলীয় রাজ্য উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক গত অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক নৌ-চলাচল সংগঠনের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ভারত পুনর্নির্বাচিত হয়েছে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসাবে ব্যক্তিগত কাজে বা সরকারি কাজে জলযান সংগ্রহের ব্যাপারে সরকারি দপ্তর বা এজেন্সিগুলি থেকে দ্রুত সম্মতি আদায়ে মন্ত্রক সংশ্লিষ্ট নিয়ম-নীতি সংশোধন করেছে। এর ফলে, জলযান সংগ্রহে দ্রুত অনুমোদন মিলবে। জাহাজ নির্মাণ খাতে ভর্তুকি প্রকল্পের আওতায় ২০০২ – ২০০৭ পর্যন্ত জাহাজ নির্মাণে প্রদেয় বরাতগুলি বাবদ বকেয়া ভর্তুকি নিষ্পত্তির জন্য গত অক্টোবর মাসে একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রস্তাবের ফলে, ৫১টি জাহাজের ক্ষেত্রে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকার বাজেট সহায়তার মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ বাবদ প্রাপ্য ভর্তুকি মেটানো সম্ভব হবে। ভর্তুকি মেটানোর নীতি-নির্দেশিকা মন্ত্রক তৈরি করছে।
জাহাজ নির্মাণ (২০১৬ – ২০২৬) সংক্রান্ত চলতি আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের আওতায় চারটি ভারতীয় নির্মাণকারী সংস্থাকে ৩৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় জাহাজ নির্মাতা সংস্থাগুলিকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে তুলতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংশোধিত নীতি-নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এর ফলে, জাহাজ নির্মাণের পাশাপাশি, ১০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট নদীতে ব্যবহারযোগ্য ড্রেজার নির্মাণেও সুবিধা মিলবে।
CG/BD/SB
(Release ID: 1597765)
Visitor Counter : 352