ইস্পাতমন্ত্রক

বিশ্বমানের নিরাপত্তা ও গুণমানের কথা মাথায় রেখে প্রতিযোগিতামূলক, দক্ষ এবং পরিবেশ-বান্ধব ইস্পাত শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রকের একাধিক পদক্ষেপ

Posted On: 24 DEC 2019 6:44PM by PIB Kolkata

২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই লক্ষ্য পূরণে ইস্পাত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক পরিকাঠামো ক্ষেত্র যেমন সকলের জন্য গৃহ নির্মাণ, ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। ইস্পাত হল এমন এক ক্ষেত্র যা টেকসই, সময়োপযোগী এবং পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলে। অর্থনীতির বিকাশেও এই ক্ষেত্র সাহায্য করে থাকে। ভারতের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইস্পাত শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ইস্পাত মন্ত্রকের পাঁচ বছরের পরিকল্পনা

ভারতের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যেতে ইস্পাত শিল্পের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রক ভারতের ইস্পাত ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সমস্ত অংশীদারদের প্রত্যাশা পূরণে মন্ত্রক প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল –

·        জাতীয় ইস্পাত নীতি (এনএসপি) ২০১৭ : কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রক ২০১৭ সালে এই জাতীয় ইস্পাত নীতি গ্রহণ করেছে। ঐ বছরেরই ৮ই মে এই নীতি বিজ্ঞাপিত করা হয়েছে। আধুনিক ভারতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং এই ক্ষেত্রের স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে এই জাতীয় নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

·        নীতি আয়োগের মাধ্যমে নতুন ইস্পাত নীতি-২০১৬-র প্রয়োজনীয়তা ও ছাঁট মালের পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার মাধ্যমে ইস্পাত ক্ষেত্রে সম্পদের ব্যবহারের ওপর স্ট্র্যাটেজি পেপার প্রকাশ করা হয়েছে।

·        ইস্পাত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত যেমন কাঁচামাল সরবরাহকারী, প্রাথমিক, মধ্যমপ্রকার ও প্রান্তিক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৯০টিরও বেশি অংশীদারদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করা হয়েছে।

·        ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৯০০-রও বেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে চিন্তন শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।

·        সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও রাজ্য সরকারের সঙ্গেও পর্যালোচনা করা হয়েছে।

বিশ্বমানের নিরাপত্তা ও গুণমানের কথা মাথায় রেখে প্রতিযোগিতামূলক, দক্ষ এবং পরিবেশ-বান্ধব ইস্পাত শিল্প গড়ে তুলে ১৬০ মিলিয়ন টন ইস্পাতের চাহিদা মেটাতে পারলে তবেই ভারতের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

৫ বছরের লক্ষ্যপূরণে পরিকল্পনা

কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রক আগামী পাঁচ বছরের লক্ষ্যপূরণে পাঁচটি বৃহত্তর ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যার মধ্যে রয়েছে – ইস্পাতের চাহিদা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে উৎপাদন, ইস্পাত ক্ষেত্রে বাণিজ্যের সমতা বৃদ্ধি, ইস্পাত ক্লাস্টারের ওপর বিশেষ নজর, কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশে ইস্পাতের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি, ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান, শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন প্রভৃতি।

এর পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রক সহজে ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের ওপরও বিশেষ জোর দিয়েছে।

১০০ দিনের উদ্যোগ

কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রক চারটি ক্ষেত্রের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এগুলি হল – ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইস্পাত ক্লাস্টার গঠনের পরিকাঠামোর নীতি গ্রহণ, ইস্পাতের ছাঁটমালগুলি পুনরায় ব্যবহার করার মাধ্যমে ইস্পাতের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘স্টিল স্ক্র্যাপ পলিসি’ গ্রহণ, লোহা এবং ইস্পাত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান ও ইস্পাত আমদানির ক্ষেত্রে নজরদারি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, ইস্পাত ক্ষেত্রে আরও ছয়টি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলি হল – কাঁচামাল খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা, রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পের খনিগুলির ডিজিটাইজেশন, ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলায় নোয়ামুন্ডি লৌহ আকরিক ব্লকের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পের কর্মীদের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পের হাসপাতালগুলিতে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু ও ইস্পাতের ব্যবহার বৃদ্ধি।

ভারতের শিল্পোন্নয়নের অন্যতম ভিত হল ইস্পাত শিল্প। স্বাধীনতার সময় এ দেশে ১ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন হত। এখন ভারতে ১৪২ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদিত হয়। দেশের ইস্পাত শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে যাতে পরিকাঠামো ও নির্মাণ শিল্পে উন্নতি ঘটে। একইসঙ্গে এই উৎপাদিত ইস্পাত সেনাবাহিনী ও রেল ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে ইস্পাত উৎপাদন  ৬.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮-১৯-এ যেখানে প্রতি বছর ৯৯ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছে, সেখানে এখন প্রতি বছর ১৪২ মিলিয়ন টন উৎপাদিত হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে যেখানে অশোধিত ইস্পাতের উৎপাদন ছিল ৮৯.৭৯১ মিলিয়ন টন, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বেড়ে হয়েছে ১১০.৯২১ মিলিয়ন টন। একইসঙ্গে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে এর ব্যবহারও বেড়েছে ৭৮ শতাংশ।

বিশ্বে অশোধিত ইস্পাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রয়েছে। ইস্পাত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে রয়েছে। ডব্লিউএসএ-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৯-এ ভারত এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে।

বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস, ইলেক্ট্রিক আর্ক ফার্নেস এবং ইন্ডাকশন ফার্নেসের মধ্যে ভারতে শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক মাধ্যমে ৫৬ শতাংশ অশোধিত ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ভারতে যেখানে পরিশোধিত ইস্পাতের ব্যবহার ছিল ৬০.৮ কেজি, তা ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বেড়ে হয়েছে ৭৫.১ কেজি।

২০০৩ সাল থেকে স্পঞ্জ আয়রন উৎপাদনে বিশ্বে ভারত অগ্রগণ্য স্থান অধিকার করে রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দেশে স্পঞ্জ আয়রন উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪৬.৫৬ মিলিয়ন টন। ভারতে মোট পিগ আয়রন উৎপাদনের ৯১ শতাংশই আসে বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে।

ভারতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং দ্রুত উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে অশোধিত ইস্পাত থেকে পরিশোধিত ইস্পাতের উৎপাদন গত পাঁচ বছরে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি, বিদেশ থেকে ইস্পাত আমদানির পরিমাণ গত পাঁচ বছরে ৯.৩২ মিলিয়ন টন থেকে কমে হয়েছে ৭.৮৩ মিলিয়ন টন। এর পাশাপাশি, ইস্পাত ক্ষেত্রে ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারত যেখানে রপ্তানিকারক দেশ ছিল, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে সেখানে ভারত আমদানিকারক দেশ হয়ে ওঠে। ২০২০ অর্থবর্ষে পরিশোধিত ইস্পাতের রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠবে ভারত।

২০১৭-র জাতীয় ইস্পাত নীতি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্যই হল ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন টন অশোধিত ইস্পাত উৎপাদন এবং পরিশোধিত ইস্পাতের ব্যবহার ১৬০ কেজিতে নিয়ে যাওয়া।

 

 

CG/SS/DM



(Release ID: 1597469) Visitor Counter : 510


Read this release in: English