স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

সংসদে নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৯ অনুমোদিত;

ধর্মীয় নির্যাতনের দরুণ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসা সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ , বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দানের কথা এই বিলে বলা হয়েছে;

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
মোদী সরকার যে ধর্ম অনুসরণ করে – তা হ’ল ভারতীয় সংবিধান : অমিত শাহ;

এই বিলে নাগরিকত্ব দানের কথা বলা হয়েছে, ছিনিয়ে নেওয়া নয় : অমিত শাহ;

বিলেসংবিধানের ৩৭১ নম্বর অনুচ্ছেদ কোনওভাবে ইলঙ্ঘিত হবে না, উত্তর-পূর্বের মানুষের সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি বিলেরয়েছে :স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী;

নাগরিকত্ব সংশোধন বিল আমাদের ইস্তাহারেছিল এবং মানুষ ২০১৯ – এ আমাদের প্রতি ব্যাপক জনাদেশ দিয়েছেন, তাই সরকারের দৃঢ় সংকল্পই হ’ল ইস্তাহারেদেওয়া অঙ্গীকার পূরণ করা :অমিতশাহ;

নরেন্দ্রমোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত তিনদশকেরও বেশি সময় ধরে আসা মচুক্তির ৬ নম্বর ধারানুযায়ী কমিটি গঠিত হয়নি :স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Posted On: 12 DEC 2019 8:32PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

 

 

রাজ্যসভায় আজ বিলটি পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৯ সংসদের অনুমোদন পেল। লোকসভায় বিলটি গত ৯ ডিসেম্বর পাশ হয়েছিল। রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ বলেন, ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের যে সমস্ত মানুষ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের জীবনে এই বিল নতুন আশার সঞ্চার করবে। তিনি আরও বলেন, এই বিল ভারতে কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়,

 

 

বরং প্রত্যেক ভারতীয়র অধিকার সমানভাবে সুরক্ষিত থাকবে। শ্রী শাহ বলেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। মোদী সরকার যে ধর্ম অনুসরণ করে, তা হ’ল ভারতের সংবিধান। ‘আমরা কেবল সরকার পরিচালনার জন্যই ক্ষমতায় নেই, বরং সাধারণ মানুষের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ক্ষমতায় রয়েছি’ বলে শ্রী শাহ মন্তব্য করেন। বিতর্কের জবাবে শ্রী শাহ বলেন, দশকের পর দশক ধরে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার মানুষজনকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার দিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের লক্ষ্যেই এই বিল। তবে, নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে এদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘু ঐ ধর্মগুলির মানুষজন যেদিন ও যে বছর থেকে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তখন থেকেই তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এমনকি, এদের বিরুদ্ধে যাবতীয় মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থকেও সুরক্ষিত রাখা হবে। শ্রী শাহ আরও বলেন, সংখ্যালঘু এই মানুষজনের পাসপোর্ট বা ভিসার মেয়াদ যদি ফুরিয়েও যায়, তা হলেও তাঁদের অবৈধ হিসাবে বিবেচনা করা হবে না।

শ্রী শাহ আরও বলেন, এই বিলে ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনোভাবেই নিশানা করা হয়নি। তবে, অনুপ্রবেশকারীদের দেশে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তিনি জানান, বিগত বছরগুলিতে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে। এই দেশ দুটিতে হয় সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হয়েছে অথবা তাঁদের ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়েছে। এই কারণেই তাঁরা ভয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ধর্মীয় কারণে ভারতবর্ষ  বিভাজন এবং ১৯৫০ সালের নেহরু – লিয়াকত চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যেই নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, ‘যদি এই বিল ৫০ বছর আগে আনা হ’ত, তা হলে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভবই হ’ত না। ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে বড় ভুল হ’ল - ধর্মীয় কারণে ভারতবর্ষের  বিভাজন। নাগরিকত্ব সংশোধন বিল আমাদের ইস্তাহারে রাখা হয়েছিল এবং সাধারণ মানুষ ২০১৯ সালে আমাদের বিপুল জনাদেশ দিয়েছেন। তাই, এই প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ’।

কেন ঐ তিনটি দেশের সংখ্যালঘুদেরকেই বিবেচনায় রাখা হয়েছে এবং কেন মুসলিমদের এই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি – এ সম্পর্কিত একাধিক প্রশ্নের জবাবে শ্রী শাহ বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময়ে উগান্ডা ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। তা হলে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দানের ব্যাপারে কেন বিবেচনা করা হবে না! তিনি আরও জানান, অতীতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক সরকার পরিস্থিতি ও ঘটনাক্রমের ভিত্তিতে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার শর্ত পূরণের বিষয়টিকে হাতিয়ার করে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান করেছে। এখন এই বিলের মধ্য দিয়ে ঐ তিনটি দেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে এদেশে চলে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্বদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। শ্রী শাহ আরও জানান, বিগত পাঁচ বছরে ঐ তিনটি দেশ থেকে চলে আসা ৫৬০ জনেরও বেশি মুসলিমকে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। এমনকি, পূর্বতন ইউপিএ সরকার কেবল ১৩ হাজার হিন্দু ও শিখ-কে নাগরিকত্ব প্রদান করেছে। কিন্তু, মোদী সরকার হিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বী-সহ ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ছয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার সুরক্ষায় নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।

 

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সভায় বলেন, এই বিলের পেছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। সরকারের মূল লক্ষ্যই হ’ল - ঐ তিনটি দেশ থেকে বাধ্য হয়ে এদেশে চলে আসা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া। এই সরকার ২০১৫ সালেও বিলটি নিয়ে এসেছিল কিন্তু বিলটি অনুমোদিত হয়নি। তখন থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে আসন্ন নির্বাচনগুলিতে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যে সরকার এই বিল নিয়ে আসেনি। এমনকি, এই বিলের মাধ্যমে ধর্ম-নিরপেক্ষতার ব্যাপকতাকেও খাটো করে দেখানো হয়নি। মোদী সরকার সমগ্র বিষয়টিকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বিবেচনা করেছে। ঐ তিনটি দেশে ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু এমন সমস্ত সম্প্রদায়কে এই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মুসলিমদেরকে বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি কারণ, ঐ তিন ইসলামিক রাষ্ট্রে ধর্মের ভিত্তিতে তাঁদের কোনও রকম নির্যাতনের শিকার হতে হয়নি। শ্রী শাহ পুনরায় আশ্বাস দিয়ে বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত ভারতীয় নাগরিকদের ভয়ের কোনও কারণ নেই। তিনি বলেন, এই বিলের মাধ্যমে কোনোভাবেই তাঁদের নাগরিকত্বে আঁচ পড়বে না। তিনি বিরোধীদের অনুরোধ করেন, বিলটি সম্পর্কে রাজনৈতিক দ্বিচারিতা না করতে এবং সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বিভাজনের রেখা না টানতে। ‘এই বিলের উদ্দেশ্য হ’ল – নাগরিত্ব ছিনিয়ে নেওয়া নয়, পাইয়ে দেওয়া’ বলে শ্রী শাহ অভিমত প্রকাশ করেন।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের আশঙ্কা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিচিতি অক্ষুণ্ন রাখা হবে। এমনকি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মানুষ যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীণ হয়ে থাকেন, তার সমাধান-পদ্ধতি এই বিলে রয়েছে। বিলে যে সমস্ত সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা নিয়ে বিগত এক মাস ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গেই ম্যারাথন আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এমনকি, তিনি সিকিমের মানুষকেও আশ্বস্ত করে বলেন, এই বিলের ফলে কোনও ভাবেই তাঁদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে না। সমগ্র বিষয়টিকে তিনি রাজনৈতিক আদর্শগত দিক থেকে না দেখে, মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখার অনুরোধ জানান।

শ্রী শাহ্‌ বলেন, সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের আওতায় অন্তর্ভুক্ত এলাকা এবং ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন – এর অধীন এলাকা-সহ আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম বা ত্রিপুরার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে সংশোধিত এই আইনের ধারাগুলি বলবৎ করা হবে না। এই বিলে নাগরিকত্ব আইনের তৃতীয় তফশিলের সংশোধন করে উক্ত তিনটি দেশে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের মানুষকে ১১ বছরের পরিবর্তে ভারতে বিগত পাঁচ বছর ধরে বসবাসরত প্রমাণ বা নথিপত্র পেশের ভিত্তিতে যোগ্য নাগরিকত্ব প্রদানের সংস্থান রয়েছে। শ্রী শাহ্‌ জানান, আজ এক গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির মধ্য দিয়ে মণিপুরকেও ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন – এর ‘দ্য ইনার লাইন’ – এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

আসামবাসীদের আশ্বস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, তাঁদের ভাষা, ধর্ম ও সামাজিক পরিচিতি সুরক্ষিত রাখা হবে। তিনি খেদ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৮৫’র আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারানুযায়ী, বহু দশক ধরে যে কমিটি গঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত গঠিত হয়নি। ভূমিপুত্রদের অধিকার সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত রাখতে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করে শ্রী শাহ আসাম চুক্তির বিভিন্ন ধারা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঐ কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন জমা দেওয়ার অনুরোধ করেন।

 

 

এই বিলে উপরোক্ত তিনটি দেশে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে চলে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের যে প্রস্তাব রয়েছে, তা ভারতীয় সংবিধানের এমনকি, ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ কোনটিকেই লঙ্ঘন করবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এই বিলের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৭১ নম্বর অনুচ্ছেদের কোনও ধারাও লঙ্ঘিত হবে না।

নাগরিকত্ব বিলে অন্যান্য সংশোধন প্রসঙ্গে শ্রী শাহ্‌ জানান, বিলের ৭ (ঘ) ধারাতেও সংশোধনের কথা বলা হয়েছে, যাতে করে অনাবাসী ভারতীয় নাগরিক কার্ড হোল্ডারদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া যায়।

বেশকয়েকজন সংসদসদস্য এই বিলকে বিতর্কিত বলে যে দাবি তুলেছেন, তার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যয়ব্যক্ত করে বলেন, আদালতে বিলটিকে চ্যালেঞ্জ জানানো হলেও তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এমনকি, কালের পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হবে।

 

 

SSS/BD/SB



(Release ID: 1596284) Visitor Counter : 210


Read this release in: English