স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

লোকসভায় নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৯ পাশ


এই বিল কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে : শ্রী অমিত শাহ্

Posted On: 10 DEC 2019 7:55PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯

 

 

লোকসভায় আজ নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৯ পাশ হয়েছে। এই বিলে ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে শরণার্থী হিসাবে চলে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য, ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভের জন্য কিছু শর্ত পূরণের কথাও বিলে উল্লেখ রয়েছে। লোকসভায় বিলটি উত্থাপন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ্‌ বলেন, এই বিলে ভারতের কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আনা হয়নি। এই বিলের উদ্দেশ্য অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারীদের কোনোভাবেই এদেশে রেয়াদ করা হবে না।

বিতর্কের জবাবে শ্রী শাহ্‌ বলেন, এই বিল বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে যে বিভ্রান্তি প্রচার করা হচ্ছে, তা অমূলক। প্রকৃতপক্ষে বিলের উদ্দেশ্য হ’ল – বিগত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে যাঁরা ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার, তাঁদের স্বার্থে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করে নাগরিকত্ব প্রদান করা। তিনি আরও বলেন, ১৯৫০ সালের নেহরু – লিয়াকত চুক্তি ব্যর্থ পর্যবসিত হওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে এই বিল আনা হয়েছে। তিনি বলেন, সে সময় কংগ্রেস দল ধর্মীয় কারণে ভারতীয় ভূখন্ডের বিভাজন মেনে নিয়েছিল। ঠিক এই কারণেই এই বিল আনার সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সভায় উপস্থিত সদস্যদের কাছে স্পষ্ট জানতে চান, প্রকৃত শরণার্থী এবং অনধিকার প্রবেশের মধ্যে পার্থক্য কোথায়। তিনি বলেন, সমস্ত ভারতীয়র নিরাপত্তা ও সমানাধিকারে এই মোদী সরকার-ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই, ধর্মীয় কারণে কোনও রকম বৈষম্য বা বিভাজন থাকবে না।

 

 

 

 

 

 

2

 

শ্রী শাহ্‌ বলেন, সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের আওতায় অন্তর্ভুক্ত এলাকা এবং ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন – এর অধীন এলাকা-সহ আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম বা ত্রিপুরার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে সংশোধিত এই আইনের ধারাগুলি বলবৎ করা হবে না। এই বিলে নাগরিকত্ব আইনের তৃতীয় তফশিলের সংশোধন করে উক্ত তিনটি দেশে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের মানুষকে ১১ বছরের পরিবর্তে ভারতে বিগত পাঁচ বছর ধরে বসবাসরত প্রমাণ বা নথিপত্র পেশের ভিত্তিতে যোগ্য নাগরিকত্ব প্রদানের সংস্থান রয়েছে। এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা ঘোষণা করে শ্রী শাহ্‌ জানান, মণিপুরকেও ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন – এর ‘দ্য ইনার লাইন’ – এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর ফলে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিভিন্ন সমস্যায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সিকিম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে গ্রেপ্তারি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিরসনের কথা এই বিলে বলা হয়েছে। ঠিক এই কারণেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি এই বিলকে সমর্থন জানাচ্ছে।

বিল সম্পর্কে বিতর্কের জবাবে শ্রী শাহ্‌ বলেন, এই বিলের পেছনে কোনও রাজনৈতিক চরিতার্থ পূরণের উদ্দেশ্য নেই, বরং বিগত সাত দশক ধরে যে সমস্ত মানুষকে তাঁদের মৌলিক নাগরিক অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানে এটি একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মাত্র। তিনি আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন ধারার কথা উল্লেখ করে জানান, এদের সংবিধানে পৃথক রাষ্ট্র ধর্মের কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে উক্ত দেশগুলিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে। কিছু কিছু মানুষের মনে এই ভীতি তৈরি হয়েছে যে, তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় আচার-আচরণ মেনে চলার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, আপত্তিও তোলা হয়েছে। এই ভীতির কারণেই বহু মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে ভারতে পালিয়ে এসেছেন এবং দীর্ঘদিন ভ্রমণ সংক্রান্ত নথিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বৈধ নথিপত্র ছাড়াই এদেশে থেকে গিয়েছেন। 

হয়রানির শিকার এ ধরনের মানুষজনকে আশ্বস্ত করে শ্রী শাহ বলেন, নাগরিকত্বের জন্য যে ব্যক্তি আবেদন জানাবেন, যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনি অভিযোগ নথিভুক্ত থাকে, তা হলেও সেই আবেদন অগ্রাহ্য হবে না। অবশ্য, আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নাগরিকত্বের প্রশ্নে সমস্ত দিক থেকে যোগ্য হতে হবে। তিনি জানান, যে ব্যক্তি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন, সেদিন থেকেই তাঁর মৌলিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধাগুলি থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত হবেন না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তিসঙ্গতভাবে সেই সমস্ত শরণার্থীদেরকেই নাগরিকত্ব প্রদানের সংস্থান এই বিলে রয়েছে, যা কোনোভাবেই ভারতীয় সংবিধান এবং সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী নয়। তিনি আরও বলেন, এই বিলে এমন কোনও ধারা নেই, যা সংবিধানের ৩৭১ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এছাড়াও, এই বিলে উত্তর-পূর্বের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিচিতিকে সংরক্ষণ দানের কথা বলা হয়েছে। এই রাজ্যগুলির সাধারণ মানুষ যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীণ হয়ে থাকেন, তার সমাধান সূত্রও বিলে সামিল করা হয়েছে। বিগত এক মাস ধরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বিশদে আলাপ-আলোচনার পর এই বিলে সংশোধনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।তাই এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে না দেখে মানবিকতার দিক থেকে দেখা উচিৎ।

 

 

3

 

সমতার অধিকার প্রসঙ্গে শ্রী শাহ্ বলেন, সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে এবং এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে অন্য দেশে অভিযুক্তদেরকেও অতীতে ভারতীয় নগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হিসাবে এদেশে আসা মানুষজনের কথা দৃষ্টান্ত-স্বরূপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময়ের সরকার উদ্বাস্তু ঐ সমস্ত মানুষজনকে নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন। এরপরও, উদ্বাস্তু মানুষের আগমন থেমে থাকেনি। উগান্ডা থেকে আগত উদ্বাস্তু মানুষজনকেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি, শ্রীলঙ্কার সঙ্কটের সময়েও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর একই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। উক্ত এই পদক্ষেপগুলি সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ মোতাবেকই গ্রহণ করা হয়েছিল।

নাগরিকত্ব বিলে অন্যান্য সংশোধন প্রসঙ্গে শ্রী শাহ্‌ জানান, বিলের ৭ (ঘ) ধারাতেও সংশোধনের কথা বলা হয়েছে, যাতে করে অনাবাসী ভারতীয় নাগরিক কার্ড হোল্ডারদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা এই বিল সংবিধানের কাঠামো ও নৈতিকতার পরিপন্থী তথা সংসদে আলোচনার নৈতিক যৌক্তিকতা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার কোনও ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, “আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এই বিল ভারতীয় সংবিধানের কোনও ধারার পরিপন্থী নয়”।

 

 

SSS/BD/SB



(Release ID: 1595812) Visitor Counter : 236


Read this release in: English