প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
ওডিশায় সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম সমাবর্তনে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব ডঃ প্রমোদ কুমার মিশ্র
Posted On:
02 DEC 2019 5:35PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯
প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব ডঃ প্রমোদ কুমার মিশ্র আজ সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এই উপলক্ষে তিনি ওডিশার রাজ্যপাল অধ্যাপক গণেশি লাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দীপক বেহরা, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক মণ্ডলী, কর্মচারী, ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান।
ডঃ মিশ্র বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আন্তরিকতার সঙ্গে লালন-পালন করে চলেছে। সম্বলপুর এলাকার পূজ্য দেবী মা সম্বলেশ্বরীর উপাসনালয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খুব দূরে নয়, সম্বলপুরের এই ভূমি বীর সুরেন্দ্র সাঁই – এর কর্মক্ষেত্র, যিনি ১৮৫৭ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বহু আগেই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিলেন। অদূরেই গড়ে ওঠা হীরাকুদ বাঁধ আধুনিক ভারতের প্রতীক বহন করছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ডঃ মিশ্র জানান, স্নাতক পর্যন্ত তিনটি পরীক্ষার সঙ্গেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ রয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হ’ল তিনি ছিলেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রথম ব্যাচের একজন, যাঁদের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার পর প্রকাশিত হয়েছিল। ছাত্রবস্থায় সেইসব দিনের কথা আজও তাঁর খুব মনে পড়ে বলে ডঃ মিশ্র উল্লেখ করেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডিগ্রি অর্জনকারী ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে ডঃ মিশ্র বলেন, এই সাফল্য জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক, যার কথা সারা জীবন মনে থাকবে। অবশ্য, একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের বিষয়ও ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে আরও অনেক সাফল্য আসবে। কিন্তু, সব সাফল্যই কলেজ জীবনে সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কোনও ব্যক্তি অপরের সহায়তা ছাড়া সাফল্য লাভ করতে পারে না। আজ যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, তাদের কাছে সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধার একাধিক উপায় রয়েছে। দেশ আজ সজাগ হয়েছে এবং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে সমগ্র ব্যবস্থার ওপর নজর রাখছে বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
নতুন ভারত গঠনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ডঃ মিশ্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশকে আরও মজবুত করে তুলতে ২০২৪ সাল নাগাদ ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার লক্ষ্য স্থির হয়েছে। দেশের আর্থিক বুনিয়াদ অত্যন্ত মজবুত বলে মন্তব্য করে তিনি জানান, ২০১৪ – ১৯ সময়কালে জিডিপি বিকাশ হার ছিল ৭.৫ শতাংশ, যা স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ। জিডিপি-র এই বিকাশ হার জি-২০ দেশগুলির মধ্যেও সর্বাধিক। বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের দরুণ বিগত পাঁচ বছরে ম্যাক্রো অর্থনীতি আরও মজবুত হয়েছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার কম রাখা সম্ভব হয়েছে, রাজস্ব ঘাটতি আয়ত্তে রাখা গেছে এবং চলতি খাতে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০০৯-১৪ এবং ২০১৪ – ১৯ – এই সময়কালে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০.৩ শতাংশ থেকে কমে ৪.৫ শতাংশ, রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি-র হিসাবে ৫.৩ শতাংশ থেকে কমে ৩.৪ শতাংশ এবং চলতি খাতে ঘাটতি ৩.৩ শতাংশ থেকে কমে জিডিপি-র ১.৪ শতাংশ হয়েছে।
ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা সংস্কারে দেউলিয়া বিধি ও ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা আইন, ২০১৬ চালু করা হয়েছে। দেশে অর্থ-ব্যবস্থাকে মজবুত ও স্বচ্ছ করতে এ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে ডঃ মিশ্র অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ৪ – ৫ বছর আগে কেউ ভাবতেই পারেননি যে, বড় মাপের কর্পোরেট সংস্থাগুলিকেও এই আইনভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর রূপায়ণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি জানান, এর ফলে, সমগ্র দেশ এক অভিন্ন বাজারে পরিণত হয়েছে। অর্থ-ব্যবস্থায় নিয়মিত সংস্কার ও উদারীকরণের দরুণ দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে।
সামাজিক উন্নয়ন ও সমতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ডঃ মিশ্র দরিদ্র মানুষের কাছে সুলভে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচি চালু হয়েছে। কৃষক সমাজের উপার্জন বাড়াতে পিএম-কিষাণ প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে। দেশে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার আদল পরিবর্তনে এক নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব রয়েছে।
ডঃ মিশ্র বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে দেশে জিডিপি হার কমেছে। জিডিপি-র সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিষয়কে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। বিশ্ব জুড়ে বিকাশে মন্দা চলছে। বিগত পাঁচ বছরে যে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তার ফলে অর্থ-ব্যবস্থায় সাময়িক গতি-মন্থরতা দেখা দিলেও অর্থ-ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি ফিরে আসা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সরকার অর্থ-ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সচেতন ও সক্রিয় রয়েছে। অর্থ-ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন ও সংস্কারে একাধিক প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই প্রয়াসগুলির ফলে দেশে আগামী মাস ও বছরগুলিতে অর্থ ব্যবস্থায় আরও গতি সঞ্চারিত হবে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার রাস্তা খুলে যাবে।
ডঃ মিশ্র বলেন, স্মার্ট ফোন ক্ষেত্রে বিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স, ত্রিমাতৃক মুদ্রণ, রবোটিক্স এবং ব্লক চেন টেকনোলজি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। এর ফলে, অপ্রত্যাশিত গতিতে জীবনযাপনে পরিবর্তন আসছে। যোগাযোগ থেকে সম্পর্ক স্থাপন, এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়া, অর্থ প্রেরণ ও তা সংগ্রহ এমনকি খাবারের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির প্রয়োগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির প্রয়োগ একদিকে যেমন মানুষের সামনে সুযোগ-সুবিধা এনে দিয়েছে। অন্যদিকে, বহু চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা। বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি-চালিত বিশ্বে পরম্পরা ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানের বড় প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি প্রাচীন গ্রন্থ হিতোপদেশ থেকে একটি শ্লোক উল্লেখ করেন। তিনি শুভাষিতানী থেকেও প্রাচীন জ্ঞানের কথা মনে রাখার পরামর্শ দেন।
মহাত্মা গান্ধী সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপনের কথা উল্লেখ করে ডঃ মিশ্র বলেন, আমাদের কর্তব্য বোধগুলির প্রতি সচেতন থাকা এবং মৌলিক শিক্ষা অনুসরণ করার মধ্য দিয়েই তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদন করা সম্ভব। তিনি সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘কর্তব্য বোধ’ – এর নীতিগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২২ – ২০৪৭ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন থেকে ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনের কথা উল্লেখ করেন।
নতুন ভারত গঠনের কথা উল্লেখ করে ডঃ মিশ্র ছাত্রছাত্রীদের নতুন জীবনে প্রবেশের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, এই ভারত হবে এমন এক দেশ, যেখানে সকলের জন্যই থাকবে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি। এই ভারতে প্রত্যেকের জন্য থাকবে অসীম সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য সম্পর্কে উদাসীন হলে চলবে না। কর্তব্য বোধ ও অনুশাসন – এই দুটিই হ’ল আমাদের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ। আজ আমরা যে ভারতীয় তার পেছনে প্রোথিত রয়েছে এই ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ। তিনি ছাত্রছাত্রীদের শেখার মানসিকতা, জানার মানসিকতা এবং আধুনিক জ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখার পরামর্শ দেন।
ডঃ মিশ্র আরও একবার উপস্থিত সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে আসন্ন ইংরাজি নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানান।
CG/BD/SB
(Release ID: 1594538)
Visitor Counter : 113