প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রিয়াধে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ উদ্যোগ ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য ভাষণ

Posted On: 31 OCT 2019 4:29PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯

 

 

 

মাননীয় রয়্যাল হাইনেস, মহামহিম, ভদ্রমহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ, বন্ধুগণ, নমস্কার, শুভ সন্ধ্যা।

 

আমি মহামহিম রাজা এবং দুটি পবিত্র মসজিদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী এবং আমার ভাই মহামহিম যুবরাজকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ, আমাকে এই ফোরামে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সৌদি আরব এবং এখানকার পবিত্র মসজিদ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের আস্থার কেন্দ্র। এই দেশ বিশ্ব অর্থনীতিকেও প্রাণশক্তি যোগায়। আজ এই প্রাণশক্তিময় রিয়াধ শহরে আপনাদের মাঝে এসে ইতিবাচক শক্তি অনুভব করছি।

 

বন্ধুগণ,

 

ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ফোরামের বিষয় স্পষ্ট করে যে, এই ফোরামের উদ্দেশ্য শুধুই এখানকার অর্থ ব্যবস্থার চর্চা নয়, বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ঝোঁকগুলিকে বোঝা এবং এগুলির মাধ্যমে বিশ্ব কল্যাণের পথের সন্ধান। সেজন্য এই গতিশীল মঞ্চ বাণিজ্য বিশ্বের ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। মাত্র তিন বছরের কম সময়ে এই ফোরাম দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে এসেছে। আমার বন্ধু এবং ভাই যুবরাজ এই সাফল্যের জন্য অনেক ধন্যবাদার্হ। তাঁর এই ফোরামকে ‘মরুভূমির দাভোস’ বলা হয়, বিগত শতাব্দীতে সৌদি আরবের জনগণের পরিশ্রম এবং প্রকৃতির আশীর্বাদে মরুভূমির বালুকারাশিকে সোনায় পরিণত করেছেন। চাইলে এই সাফল্য নিয়ে সৌদি আরবের নেতৃত্ব আরামে বসতে পারতেন, কিন্তু তাঁরা অনেক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথাও ভেবেছেন, সমগ্র মানবতার কথা ভেবেছেন। আমি মাননীয় যুবরাজকে এজন্য শুভেচ্ছা জানাই, তিনি শুধু ফোরামের নামে ‘ফিউচার’ উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি, এর সম্পূর্ণ পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতের প্রতি উন্মুখ। এক্ষেত্রে তাঁর ভাই ও প্রতিবেশী হওয়ার ফলে, এই অসাধারণ উদ্যোগে বিশ্বের সর্বাধিক উন্নয়নশীল অর্থ ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য খুব স্বাভাবিক।

 

 

বন্ধুগণ,

 

আমি আপনাদের কাছে ভারতের জনগণের শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছিআমাদের সঙ্গে সৌদি আরবের হাজার হাজার বছর পুরনো সম্পর্ক রয়েছে। এমন বন্ধুত্ব ছিল, যেটাকে আপনারা বলেন, ‘সদকতুম’, অর্থাৎ একে অপরের কাছে গেলে আমাদের পরস্পরকে আপন বলে মনে হয়। আমাদের ঐতিহাসিক সম্বন্ধ ও সম্পর্ক আমাদের ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’ – এর মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে। আর আজ আমরা যুবরাজের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল’ স্থাপন করে নিজেদের সম্পর্ককে আরও নিবিড় করেছিমহামান্য রাজা এবং মহামান্য রাজপুত্রের প্রদর্শিত আলোকবর্তিতা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কে অপ্রত্যাশিত প্রগতি এবং আপনত্ব আনতে পেরেছেআমি তাঁদের এই প্রচেষ্টার জন্য ভারতের প্রতি তাঁদের আপনত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

বন্ধুগণ,

 

ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ উদ্যোগ অনুষ্ঠানে আজ আমি ‘বিশ্ব বাণিজ্যে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে’? এবং তাতে ভারতের ক্রমবর্ধমান সুযোগ ও সম্ভাবনা, আমাদের প্রত্যাশা এবং লক্ষ্যসমূহ নিয়ে আমার বক্তব্য রাখার সৌভাগ্য হয়েছে। ভারত আগামী পাঁচ বছরে নিজেদের অর্থ ব্যবস্থাকে দ্বিগুণ করে ৫ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্য রেখেছে। এমন সময়ে এই বিষয় আরও প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ যখন আমরা ভারতে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে চাই, তখন আমাদের ক্রম-বিকাশমান গতিপ্রকৃতিগুলিকে ভালো করে বুঝতে হবে। সেজন্য আজ আমি আপনাদের সামনে বিশ্ব বাণিজ্যকে প্রভাবিত করা পাঁচটি বড় প্রবণতা নিয়ে কথা বলতে চাইবো। প্রথমটি হ’ল – প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রভাব; দ্বিতীয়টি হ’ল – বিশ্ব অগ্রগতির ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর গুরুত্ব; তৃতীয়টি হ’ল – মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ; চতুর্থটি হ’ল – পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা; পঞ্চমটি হ’ল – বাণিজ্য-বান্ধব প্রশাসন।

 

বন্ধুগণ,

 

আমরা প্রত্যেকেই প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সাক্ষী। রূপান্তরণযোগ্য প্রযুক্তির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রজনন বিদ্যা এবং ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে আজ প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির এই বিবর্তনে সমাজের সেই অংশের মানুষ সবচাইতে বেশি উপকৃত হয়েছেন, যাঁরা নতুন প্রযুক্তি আয়ও করে নিয়ে সেগুলির মধ্যে পরবর্তী উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ভারতে আমরা এই সংস্কৃতি গড়ে তুলে একে শক্তিশালী করে তুলতে অনেক স্তরে কাজ করেছে। যুবসম্প্রদায়ের জন্য স্টার্ট আপ চ্যালেঞ্জেস থেকে শুরু করে, হ্যাকাথন, বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস’, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের আবিষ্কারের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। আজ ভারতে গবেষণা ও উন্নয়ন থেকে শুরু করে প্রযুক্তির সাহায্যে নতুন বাণিজ্য গড়ে তোলার একটি ব্যাপক পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। আমাদের এই প্রচেষ্টার ফলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। আজ ভারতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট আপ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ভারতের টিয়ার-২ এবং টিয়ার–৩ শহরগুলিতে অসংখ্য স্টার্ট আপ গড়ে উঠেছে। ভারতে ১ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারেরও বেশি ইউনিকর্নের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের অনেক স্টার্ট আপ বিশ্বস্তরে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

 

ভারতীয় স্টার্ট আপগুলির ক্রম উন্নয়ন হচ্ছে – খাদ্য সরবরাহ থেকে পরিবহণ, হসপিটালিটি থেকে আরোগ্য থেকে পর্যটন। সেজন্য বিশ্বের সমস্ত বিনিয়োগকারী এবং বিশেষ করে যাঁরা ‘ভেঞ্চার ফান্ড’ – এর ব্যবসা করেন, তাঁদেরকে আমার অনুরোধ, আপনারা আমাদের স্টার্ট আপ বাস্তু-ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে লাভবান হন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে, ভারতের নতুন নতুন উদ্ভাবনের পেছনে বিনিয়োগ করলে সবচাইতে বেশি লাভবান হবে। আর এই লাভ শুধু ভৌতিক লাভ নয়, এটি যুবসম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ বিশ্বে ভৌতিক পরিকাঠামোর সুযোগ সর্বাধিক দ্রুতগতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। এশিয়াতে প্রতি বছর পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ৭০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। ভারতে আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। আর আজকাল আমরা পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে ভাবি না। আমাদের পদ্ধতি সুসংহত। এক জাতি, এক পাওয়ার গ্রিড, এক জাতি, এক গ্রিড, এক জাতি, এক ওয়াটার গ্রিড, এক জাতি একটি মোবিলিটি কার্ড, এক জাতি একটি অপটিক্যাল ফাইভার নেটওয়ার্ক – এর মতো অনেক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ভারতে পরিকাঠামোকে সংহত করছি। আমরা প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য গৃহ, আর প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ, নল-জল ও রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য রেখেছি। আমাদের পরিকাঠামো নির্মাণের গতি ও পরিমাণকেও আমরা অভূতপূর্ব রূপে বৃদ্ধি করেছি। আর সেজন্য ভারতে পরিকাঠামোর উন্নয়নের হার দুই সংখ্যা থাকবে আর এতে ‘ক্যাপাসিটি স্যাচুরেশন’ – এর কোনও সম্ভবনা নেই। ফলে, বিনিয়োগকারীদের লাভও সুনিশ্চিত।

 

 

 

 

বন্ধুগণ,

 

তৃতীয় প্রবণতা হ’ল - মানবসম্পদ এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। আজ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত দক্ষ কর্মীদল পাওয়ার ওপর নির্ভর করে। পাশাপাশি, যে কোনও কোম্পানির জন্য দক্ষ কর্মীবৃন্দ মূল্যায়নের মানদন্ড হয়ে উঠেছে। সেজন্য আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হ’ল – দ্রুতগতিতে যুবসম্প্রদায়কে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা। প্রতিনিয়ত তাঁদেরকে সময়োপযোগী দক্ষ করে তোলার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শেখা – ভুলে যাওয়া এবং আবার শেখার এই বৃত্তে অভ্যস্থ হয়ে ওঠা প্রয়োজন দেখা দেবে।

 

বন্ধুগণ,

 

ভারতের দক্ষ মানবসম্পদ বরাবরই গোটা বিশ্বে সমাদৃত ও প্রতিষ্ঠিত। এখানে সৌদি আরবেও মেধাবী ভারতীয়রা অনুশাসন প্রিয়, আইন পালনকারী, পরিশ্রমী এবং দক্ষ কর্মশক্তি দ্বারা নিজেদের অতুলনীয় পরিচয় গড়ে তুলেছে। ভারতে দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা একটি সংহত লক্ষ্য গড়ে তুলেছি। আর তা নিয়ে নিয়মিত কাজ করছি। দক্ষ ভারত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা আগামী তিন-চার বছরে ৪০০ মিলিয়ন মানুষকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত করবো। এর ফলে, ভারতে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলি সুনিশ্চিতভাবে দক্ষ কর্মীদল পাবে।

 

বন্ধুগণ,

 

দক্ষ মানবসম্পদ আদান-প্রদান সহজ করতে গোটা বিশ্বের অর্থ-ব্যবস্থায় বৃদ্ধি হবে। আমাই স্বীকার করি যে, আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলি শুধুই পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ না রেখে মেধা আদান-প্রদানকেও এর অভিন্ন অঙ্গ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা নিছকই একটি প্রবণতা নয়, আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তায় পর্যবসিত হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব আর নির্মল শক্তি ও জ্বালানির গুরুত্ব এত ব্যাপক যে তা এড়িয়ে গেলে চলবে না। আগামী বছরগুলিতে আমরা শক্তি ও জ্বালানি ব্যবহারের পদ্ধতি বদলাবে। কয়লা থেকে তেল, আর তেল থেকে গ্যাস এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির অগ্রাধিকার বাড়তে থাকবে। শক্তির ব্যবহার এবং শক্তি সাশ্রয় উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আর শক্তি সংরক্ষণ ও পরিবেশ দূষণের প্রতিস্পর্ধাও বৃদ্ধি পাবে। একথা মাথায় রেখে ভারতে আমরা গ্যাস এবং তেলের পরিকাঠামোয় বড় মাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথে হেঁটেছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের তৈল শোধন, পাইপলাইন এবং গ্যাস টার্মিনাল বাবদ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। আমি খুশি যে, সৌদি আরবও ভারতে এশিয়ার বৃহত্তম তৈল শোধনাগার প্রকল্প ‘পশ্চিম উপকূল তৈল শোধনাগার প্রকল্প নির্মাণে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি আমরা ডাউনস্ট্রিম ক্ষেত্রে, বিশেষ করে রিটেলিং – এ বিনিয়োগের নিয়ম-কানুন সহজ করেছি। এছাড়া, আমরা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে ১৭৫ গিগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্য রেখেছি। আগামী দিনে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫০ গিগাওয়াট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের দ্রুতগতিসম্পন্ন অর্থ ব্যবস্থার জন্য শক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। আর আমরা এক্ষেত্রে চালু শক্তি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলিকে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে অনুরোধ করছি।

 

বন্ধুগণ,

 

পঞ্চম প্রবণতা, অর্থাৎ সরকারের পরিবর্তিত ভূমিকা আর দেশের ব্যবসার ভবিষ্যতে প্রভাব হবে ব্যাপক। আমি সবসময় ‘ন্যূনতম সরকার অধিকতম প্রশাসন’ – এ বিশ্বাস করি। আমি মনে করি যে, প্রতিযোগিতামূলক, উদ্ভাবক এবং গতিশীল বাণিজ্য ক্ষেত্রের জন্য একটি সক্রিয় এবং স্বচ্ছ সরকার ভালো সুবিধা প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে। স্পষ্ট নিয়ম আর বৈধ ব্যবস্থা বেসরকারি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। এই ভাবনা আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বিগত পাঁচ বছরে অনেক বড় কাঠামোগত সংস্কার-সাধন করেছি। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে সুগম এবং উন্মুক্ততর করায় আজ ভারত বিদেশি বিনিয়োগের সর্ববৃহৎ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। বিগত পাঁচ বছরে ভারতে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এটি বিগত ২০ বছরে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেক। ইনসলভেন্সি এবং ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড হোক, কিংবা দেশব্যাপী একটি অভিন্ন কর ব্যবস্থা আর আইপিআর রিজাইম বিশ্বের উন্নততম বিজনেস রিজাইমগুলির সঙ্গে তুলনীয়। এমনি সংস্কারের ফলে প্রতিটি গ্লোবাল র‍্যাঙ্কিং – এ আমরা নিরন্তর উন্নত প্রদর্শন করতে পারছি। লজিস্টিকস্‌ পারমানেন্স ইনডেক্স ১০ ধাপের উল্লম্ফন বিশ্ব উদ্ভাবন সূচকে ২৪ ধাপ উন্নতি, বিশ্ব ব্যাঙ্কের ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ – এ আমরা ২০১৪’য় ছিলাম ১৪২ নম্বর স্থানে আর ২০১৯ – এ আমরা ৬৩তম স্থানে পৌঁছেছি। লাগাতার তৃতীয় বছর আমরা বিশ্বের ‘টপ টেন রিফর্মস্‌ - এর তালিকায় রয়েছি। আমরা ১ হাজার ৫০০’রও বেশি এমন কালবাহ্য আইন বাতিল করেছি, যেগুলি উন্নয়নের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছিল।

 

বন্ধুগণ,

 

বিগত চার – পাঁচ বছরে অতিরিক্ত ৩৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ভারতে আজ প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের কাছে ইউনিক আইডি, মোবাইল ফোন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে। এর ফলে, প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরে স্বচ্ছতা আসায় দুর্নীতির হাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। যে কোনও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হ’ল জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এক্ষেত্রে পরিষেবায় উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য ভারত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সরকারই স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ – এর মাধ্যমে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন, অর্থাৎ আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকোর মিলিত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্প চালু হওয়ার ফলে ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিনিয়োগের অপার সম্ভবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ ভারত সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রাহক এবং উৎকৃষ্ট পরিষেবা প্রদানকারীও বটে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার এক্ষেত্রে বিপ্লব এনে দিয়েছে। এর ফলে, শুধু আর্থিক সুযোগ বৃদ্ধি পায়নি, কোটি কোটি মানুষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ এই মঞ্চ থেকে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, ভারতে এই উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে। আমরা দেশের উন্নয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছি। আমাদের নীতিতে কোনও ভ্রম নেই, আমাদের লক্ষ্য নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। আমাদের ৫ ট্রিলিয়ন অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার রোডম্যাপ প্রস্তুত। এই লক্ষ্য শুধু পরিমাণগত উন্নয়নেরই নয়, প্রত্যেক ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেরও। আমরা শুধু ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ – এ নয়, ‘ইজ অফ লিভিং’ – এও উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছি। রাজনৈতিক স্থায়িত্ব; স্থির নীতি এবং বড় বৈচিত্র্যময় বাজার থাকার ফলে ভারতে বিনিয়োগ এখন সর্বাধিক লাভজনক হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের বন্ধু দেশগুলির সহযোগিতা আমাদের উন্নয়ন যাত্রার অভিন্ন অঙ্গ। সকল দেশের সঙ্গে মৈত্রীসূত্র অন্বেষণ করে আর সিনার্জি বৃদ্ধি করে, উইন উইন সল্যুয়েশন – এর লক্ষ্যে কাজ করছি। সৌদি আরবের ‘ভিসন ২০৩০’ আর অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার লক্ষ্যে আমরা পায়ে পা মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

 

বন্ধুগণ,

 

আগামী ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি হবে। আমরা সেই সময়ের মধ্যে দেশকে একটি ‘নিউ ইন্ডিয়া’ গড়ে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখেছি। সেই ‘নিউ ইন্ডিয়া’য় প্রত্যেক ভারতীয়র চোখে নতুন স্বপ্ন থাকবে, হৃদয়ে নতুন আশার সঞ্চার হবে আর পদক্ষেপে থাকবে নতুন প্রাণশক্তি। সেই নতুন ভারতে নতুন সামর্থ্য এবং নতুন ক্ষমতা হবে।

বন্ধুগণ,

 

এই সামর্থ্য এবং শক্তিমান ভারত শুধু নিজের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বর জন্য শান্তি ও উল্লাসের উৎস হয়ে উঠবে। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে, ভারত যখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ ছিল, আর সেনাবাহিনীর দিক থেকেও সবল ছিল, তখনও আমরা কারও ওপর চাপ সৃষ্টি করিনি। ভারত তার নিজস্ব ক্ষমতা আর অনুভব সমস্ত বিশ্ববাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। কারণ, আমরা গোটা বিশ্বকে একটি পরিবার বলে মনে করি – ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্‌’। নতুন ভারতে শক্তি নতুন হবে, কিন্তু তার ভাবনায় সেই সনাতন আত্মার ঝলক দেখা যাবে। আমাদের উন্নয়ন বিশ্বে আস্থার সঞ্চার করবে। আমাদের প্রগতি প্রত্যেকের সঙ্গে পারস্পরিক প্রেম বৃদ্ধি করবে। বিশ্ব কল্যাণের এই সফরে ভারতের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করার জন্য আমি আপনাদের সমগ্র বিশ্বের বাণিজ্যকে আমন্ত্রণ জানাই। আমি ও আমার টিম সর্বদাই আপনাদের সাহায্য করতে তৎপর। আপনারা আমাকে কিছু কথা বলার সু্যোগ দিয়েছেন, আর আমার কথা মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আরেকবার মাননীয় যুবরাজ এবং তাঁর রাজত্বের সকলকে হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।

 

ধন্যবাদ।

 

 

 

CG/SB/SB



(Release ID: 1589773) Visitor Counter : 105


Read this release in: English