শিল্পওবাণিজ্যমন্ত্রক

ত্রয়োদশ ভারত-যুক্তরাজ্য যৌথ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য কমিটির বৈঠকের যৌথ বিবৃতি

Posted On: 18 JUL 2019 4:28PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৮ জুলাই, ২০১৯

 

 

কেন্দ্রীয় শিল্প, বাণিজ্য এবং রেলমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল এবং যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের সহকারী সচিব ডঃ লিয়াম ফক্স ১৫ই জুলাই, ২০১৯ ভারত-যুক্তরাজ্য যৌথ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য কমিটির ত্রয়োদশ বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকের শেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে।

 

ওই বিবৃতিতে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৫-১৮-র মধ্যে অর্থাৎ, গত তিন বছরে যুক্তরাজ্য এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে পণ্য বাণিজ্য বেড়েছে ২৯ শতাংশ এবং পরিষেবা বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ শতাংশ।

 

ভারত-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য অংশীদারিত্বকে নতুন দিশা দেখানোর ঘোষণা করেছিলেন দু’দেশেরই প্রধানমন্ত্রী গত বছর এপ্রিল মাসে। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা কাটাতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

 

বাণিজ্য সংক্রান্ত যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর অগ্রগতিকে স্বাগত জানানো হয়েছে এই বিবৃতিতে। যৌথ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য কমিটি (জেটকো)-র দ্বাদশ বৈঠকে যে সুপারিশগুলি করা হয়েছিল, তার সুষ্ঠু রূপায়ণ করতে পেরেছে যৌথ কর্মীগোষ্ঠী। খাদ্য, পানীয়, তথ্যপ্রযুক্তি, জীবনবিজ্ঞান এবং পরিষেবা পরিসংখ্যান নিয়ে দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

 

ভবিষ্যৎ বাণিজ্য প্রসারে যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। রসায়ন ও পরিষেবা ক্ষেত্রের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বিশেষ করে, পরিষেবা ক্ষেত্রে কারণ, দুই দেশই এই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করছে। এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, অপসারিত হবে প্রতিবন্ধকতা এবং খুলবে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ।

 

যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর অধীনে দুই দেশই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকার করেছে। বহুমুখী বাণিজ্য ব্যবস্থা; স্বচ্ছ, মুক্ত বাণিজ্যের গুরুত্ব এবং দীর্ঘকালীন উন্নয়নের প্রশ্নেও দু’দেশ সহমত হয়েছে।  যুক্তরাজ্য-ভারত বহুমুখী আলোচনার মাধ্যমে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাকেও স্বাগত জানিয়েছে দুই দেশ। পরবর্তী বৈঠক হবে ২০১৯-এর শরৎকালে। বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সংযোগ দৃঢ় করতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাতেও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একে অন্যকে সাহায্য করবে।

 

বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, আন্তর্জাতিক বহুমুখী ব্যবস্থা প্রসারণ অঙ্গীকার করেছে দুই দেশ। দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আগে, যা আগামী বছর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, দুই দেশ গঠনমূলকভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

 

পশুপালন, ডেয়ারি, মৎস্যচাষ ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার অগ্রগতিকেও স্বাগত জানানো হয়েছে দুই দেশের পক্ষ থেকে। এই চুক্তিগুলি হয়েছিল যুক্তরাজ্যের পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রাম বিষয়ক দপ্তর এবং ভারতের পশুপালন ও ডেয়ারি দপ্তরের মধ্যে। এই চুক্তি অনুযায়ী, যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের শেষ নাগাদ।

 

ভারত-যুক্তরাজ্য কারিগরি সহযোগিতার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ বছরই এই কর্মসূচি রূপায়ণের দিকে তাকিয়ে আছে দুই দেশ। ডিজিটাল, সংস্কৃতি, সংবাদমাধ্যম, ক্রীড়া এবং যোগাযোগ মন্ত্রকের মধ্যে সমঝোতাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এর ফলে ভারত-যুক্তরাজ্য ডিজিটাল বাণিজ্যকে শক্তিশালী করতে টেলিকম এবং তথ্য ও কারিগরি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

 

মূলধন লগ্নিতেও যুক্তরাজ্য ভারত বোঝাপড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত স্টার্ট-আপ তহবিল গড়তে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তহবিলের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি এবং প্রযুক্তি-নির্ভর স্টার্ট-আপ সংস্থা গঠনে সাহায্য করা হবে।

 

যুক্তরাজ্য-ভারত লগ্নি সংক্রান্ত সম্পর্ক জোরদার করছে দুই পক্ষই। বিদেশি লগ্নির বিষয়েও দুই দেশ তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা জানিয়েছে। ২০১০ থেকেই যুক্তরাজ্য এবং ভারত একে অন্যের অর্থনীতিতে শীর্ষস্থানীয় লগ্নিকারী পাঁচটি দেশের অন্যতম। যুক্তরাজ্যে ভারতের লগ্নি এবং ভারতে যুক্তরাজ্যের লগ্নি সহজ করতে যে ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে, তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। অদূর ভবিষ্যতেই এই লগ্নি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে প্রথম দফার আলোচনা হতে চলেছে।

 

সহজে বাণিজ্য করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে দুই দেশ যাতে বাণিজ্য ক্ষেত্রে স্থায়িত্ব আসে এবং বিধিবদ্ধ বাণিজ্য করা যায়। বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকাশিত সহজে ব্যবসা করার সুবিধা আছে এমন দেশের তালিকায় ৬৫ ধাপ উঠে ভারত ৭৭তম স্থান পাওয়ায় যুক্তরাজ্য অভিনন্দন জানিয়েছে। ২০১৬-য় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তারই সূত্র ধরে ভারতে বাণিজ্য পরিবেশের উন্নতিতে দুই দেশই কাজ করে চলেছে। এই সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতায় কয়েকটি কর্মসূচির মাধ্যমে।

 

মেধাসত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করেছে দুই দেশ। অর্থনৈতিক উন্নতিতে এবং বিশ্ব বাণিজ্যে এই মেধাসত্ত্বের বিষয়ে দুই দেশের সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে যার ফল পাওয়া যাচ্ছে বর্তমানে। এই বিষয়টিকে আরও জোরদার করতে উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায় মেধাসত্ত্বের গুরুত্ব বৃদ্ধি ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

 

আইন এবং বিচার বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে যা এই ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করেছে, একে অপরের বিশেষ জ্ঞানের ব্যবহার সুনিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে আছে আইনের বিধি, বিতর্কের সমাধান, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আইনি পরিষেবা বিধি। সমঝোতাপত্র অনুযায়ী যে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিটি গড়ার কথা হয়েছিল তা কার্যকর হয়েছে।

 

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি সংস্থাগুলির গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য-ভারত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে জেটকো-র আগামী বৈঠকে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সুবিধা আরও প্রসারিত করার দিশা খোঁজা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

গত বছর যুক্তরাজ্য ভারতকে ৫৫ হাজারেরও বেশি দক্ষ শ্রমিক ভিসা প্রদান করেছে। এর থেকে বোঝা যায়, ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের জোর। গত জেটকো বৈঠকের পর যুক্তরাজ্য তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। এতে দক্ষতা-নির্ভর অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনার কথা বিস্তারিত বিবৃত হয়। এই ব্যাপারে ভবিষ্যতে ভারতের বক্তব্য যাতে যুক্তরাজ্য বিবেচনা করে, সেই বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় যৌথ কর্মীগোষ্ঠী অতীতে প্রশংসনীয় কাজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, খাদ্য-পানীয় এবং জীবনবিজ্ঞান সংক্রান্ত যৌথ কর্মীগোষ্ঠী যাতে ভবিষ্যতে কার্যকরভাবে অগ্রসর হতে পারে তার দিকে লক্ষ্য রাখবে দুই দেশ।

 

জেটকো-র পরবর্তী হবে ২০২০-তে নয়াদিল্লিতে। দুই দেশের বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

 

 

CG/AP/DM


(Release ID: 1579342)
Read this release in: English