রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়

সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ

Posted On: 20 JUN 2019 5:35PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২০ জুন, ২০১৯

 

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের পরে সংসদের প্রথম যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছি। এ বছরে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। লোকসভার সকল নতুন নির্বাচিত সদস্যকে জানাই অভিনন্দন।

 

৬১ কোটিরও বেশি ভোট দিয়ে এবার দেশে নতুন রেকর্ড করেছে। বিশ্বে ভারতের গণতন্ত্রের মান বাড়িয়েছে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। পূর্বেকার নির্বাচনের তুলনায় এবার অনেক বেশি সংখ্যায় মহিলা ভোট দিয়েছেন। প্রায় পুরুষদের সমান। কয়েক কোটি যুবা এই প্রথম ভোট দিলেন যাঁরা ভারতের ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। নির্বাচনে সাফল্যের জন্য সমস্ত ভোটদাতারই প্রশংসা প্রাপ্য।

 

লোকসভার নতুন অধ্যক্ষকেও তাঁর নতুন দায়িত্বের জন্য শুভেচ্ছা জানাই।

 

বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচন পর্ব সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের পুরো দলকে অভিনন্দন জানাই। প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তর এবং বিভিন্ন সংস্থার কর্মী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অবদানের ফলেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সফল করা গেছে, যা অভিনন্দনযোগ্য।

 

বর্তমান লোকসভার প্রায় অর্ধেক সাংসদই এই প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন। লোকসভার ইতিহাসে ৭৮ জন মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, যা রেকর্ড। এর ফলে নতুন ভারতের ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

 

যৌথ অধিবেশনে ভারতের বৈচিত্র্যের প্রতিফলন আনন্দদায়ক। গ্রাম, শহর, বিভিন্ন পেশার নানা বয়সের মানুষ দুই কক্ষের সদস্য। অনেক সদস্যই সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। অনেকেই এসেছেন কৃষি পরিবার থেকে, বাণিজ্য এবং আর্থিক পরিমণ্ডল থেকে। আবার অন্য সদস্যরা অনেকেই এসেছেন শিক্ষা জগৎ, চিকিৎসা জগৎ এবং আইনি পেশা থেকে। সিনেমা, শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে যে সমস্ত সাংসদ ছাপ রেখেছেন, তাঁরাও উপস্থিত আছেন এখানে। আমার বিশ্বাস, আপনাদের অভিনব অভিজ্ঞতা সংসদের আলোচনার মান বাড়াবে।

 

মাননীয় সাংসদগণ,

 

দেশের মানুষ এবারের নির্বাচনে স্পষ্ট মত প্রকাশ করেছেন। প্রথম দফায় সরকারের কাজকর্মের বিচার করে মানুষে দ্বিতীয়বারের জন্য আরও জোরদারভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের মানুষ ২০১৪-য় যে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আরও গতিময় এবং অব্যাহত করার পক্ষেই মত দিয়েছেন।

 

২০১৪-র আগে দেশে যে পরিবেশের সঙ্গে সমগ্র দেশবাসী পরিচিত ছিলেন, হতাশা এবং অস্থিরতা থেকে দেশকে বার করে আনতে দেশবাসী পূর্ণ গরিষ্ঠতা দিয়ে একটি সরকারকে নির্বাচিত করলেন প্রায় তিন দশক পর। সেই জনমতকে সম্মান জানিয়ে আমার সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্রে নতুন ভারত গড়ার পথে কোনরকম বৈষম্য না করে অগ্রসর হওয়া শুরু করে।

 

এ বছর ৩১শে জানুয়ারি, এই সেন্ট্রাল হল-এই আমি বলেছিলাম যে আমার সরকার একদম প্রথম দিন থেকে অপশাসনের যে সমস্যা, তার মোকাবিলা করে এবং প্রান্তিক প্রতিটি মানুষকে ন্যূনতম সুবিধা দিয়ে সমস্ত নাগরিকের জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে উৎসর্গীকৃত।

 

গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পেরেছে যে সরকার তাঁদের সঙ্গে আছে। কাজ করছে তাঁদের জীবনের উন্নতির জন্য এবং তাঁদের জীবনযাপন যাতে সুস্থভাবে সম্পন্ন হয় তার লক্ষ্যে। মানুষের আস্থায় ভর করে নতুন জনমত চাওয়া হয়েছে।

 

দেশের মানুষ বহুদিন ধরে জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। আমার সরকার চায় যে মানুষ সচেতন হোক, সক্ষম হোক, সকল সুবিধা পাক, এমন অবস্থার সৃষ্টি হোক যাতে না তাঁদের বোঝা ভাবা হয়। সরকারের মূল লক্ষ্য দেশের প্রতিটি মানুষের স্বশক্তিকরণ করা।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

আমার সরকার দেশ গঠনে নিবেদিতপ্রাণ যার ভিত গড়া হয়েছিল ২০১৪-য়। দেশের মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর পর এখন সরকার এগিয়ে চলেছে শক্তিশালী, সুরক্ষিত, উন্নতিশীল এবং সকলের জন্য ভারত গড়ার প্রত্যাশা মেটানোর লক্ষ্যে। এই যাত্রার মূল মন্ত্র হল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ অউর সবকা বিশ্বাস’। নতুন ভারতের স্বপ্নের অনুপ্রেরণা পাওয়া গেছে কেরলের মহান আধ্যাত্মিক নেতা, সমাজ সংস্কারক এবং কবি শ্রী নারায়ণা গুরুর মহান চিন্তা থেকে।

 

“জাতি-ভেদম্‌ মত-দ্বেশম্‌ আড়ুমিল্লাড়ি সার্ভরাম

সোদার-ত্বাইন ভাদুন মাত্রুকাস্থান মানিত”

তার মানে হল – সেটাই আদর্শ স্থান যেখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ভাইয়ের মতো বাস করতে পারেন।

 

তিন সপ্তাহ আগে, ৩০শে মে, শপথ গ্রহণের পরে পরেই সরকার নতুন ভারত গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। এক নতুন ভারত :

 

-   যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি উন্নতির জন্য সমান সুবিধা পাবে;

-   যেখানে প্রতিটি মানুষের জীবন আরও ভালো হবে এবং তাঁদের আত্মসম্মান বৃদ্ধি পাবে;

-   যেখানে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্য মানুষকে একে অপরের সঙ্গে বেঁধে রাখবে;

-   যেখানে আমাদের আদর্শ এবং মূল্যবোধের ওপর গড়ে ওঠা ভিত আরও দৃঢ় হবে; এবং

-   যেখানে উন্নয়নের সুফল প্রতিটি অঞ্চলে এবং পংক্তির শেষে দাঁড়ানোর মানুষটির কাছেও পৌঁছেবে।

 

এই নতুন ভারত গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শের রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে এগোবে যেখানে, মানুষের চিত্ত ভয়হীন, যেখানে মাথা উঁচু করে থাকা যায়। গুরুদেবের কথায় :

“চিত্ত যেথা ভয়-শূন্য, উচ্চ যেথা শির”

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

প্রত্যেক ভারতীয়র পক্ষে এটা গর্বের যে আমাদের দেশ ২০২২-এ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ করবে। তার মধ্যে নতুন ভারত গড়ার জাতীয় লক্ষ্য অনেকগুলিই পূরণ হবে। নতুন ভারতের সোনালী ভবিষ্যৎ গড়ার পথে আমার সরকার শপথ নিয়েছে :

 

·        নতুন ভারতের এই পথে গ্রামীণ ভারত আরও শক্তিশালী হবে এবং নগর ভারত আরও শক্তিসম্পন্ন হবে;

·        নতুন ভারতের এই পথে ভারতের উদ্যোগপতিরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে, যুব ভারতের স্বপ্ন সফল হবে;

·        নতুন ভারতের এই পথে সব ব্যবস্থাই হবে স্বচ্ছ এবং সৎ দেশবাসীর গরিমা আরও বৃদ্ধি পাবে;

·        নতুন ভারত গড়ার এই পথে একবিংশ শতাব্দীর পরিকাঠামো তৈরি হবে এবং শক্তিশালী ভারত গড়ার জন্য সমস্ত সম্পদকে কাজে লাগানো হবে।

 

এই সঙ্কল্পের আলোকে, মাত্র একুশ দিনের মধ্যে আমার সরকার কৃষক, সেনা জওয়ান, ছাত্রছাত্রী, উদ্যোগপতি, মহিলা এবং সমাজের অন্য শ্রেণীর জন্য কল্যাণে অনেকগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেগুলির রূপায়ণ শুরু করেছে। বেশ কিছু নতুন আইনও তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

কৃষক, যাঁরা আমাদের অন্নদাতা তাঁদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের আনা হচ্ছে ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’র আওতায়। কৃষক ভাই-বোন, যাঁরা মাঠে দিন-রাত খাটে, তাঁরা যাতে সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন ৬০ বছর বয়সের পর, তাঁদের জন্য একটি পেনশন স্কিম অনুমোদিত হয়েছে।

 

গবাদি পশু কৃষকদের কাছে অতি মূল্যবান। এই প্রাণীর নানা অসুখের চিকিৎসার জন্য কৃষকদের অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এই খরচ কমাতে সরকার একটি নতুন কর্মসূচি নিয়েছে, তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা।

 

এবারই প্রথম সরকার ছোট দোকানদারদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দিকে নজর দিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই একটি আলাদা পেনশন স্কিম অনুমোদিত হয়েছে ছোট দোকানদার এবং খুচরো বিক্রেতাদের জন্য। দেশের প্রায় ৩ কোটি ছোট দোকানদার এই কর্মসূচি থেকে লাভবান হবেন।

 

আমরা সকলে কৃতজ্ঞ জওয়ানদের কাছে যাঁরা তাঁদের সুখ, আনন্দ এবং উৎসব বিসর্জন দিয়ে দেশের মানুষের রক্ষার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। আমাদের কর্তব্য, সেইসব মানুষ, যাঁরা আমাদের সীমান্ত পাহারা দেন, যাঁরা আমাদের প্রত্যেকের জন্য শান্তি এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেন, তাঁদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা। এই ধারণা থেকেই ন্যাশনাল ডিফেন্স ফান্ডের আওতায় বৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এই প্রথম রাজ্য পুলিশকর্মীদের ছেলে-মেয়েরাও এই বৃত্তি পাবে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল জল সমস্যা বৃদ্ধি। দেশে জল সংরক্ষণের পুরনো পদ্ধতি ক্রমশই উঠে যাচ্ছে। পুকুর, হ্রদের জায়গায় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। ফলে, দরিদ্রদের জন্য তৈরি হচ্ছে জলের সঙ্কট। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে জল সঙ্কট আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ সময়ের দাবি যে দেশ স্বচ্ছ ভারত অভিযান সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। সেই সচেতনতাই প্রয়োজন জল সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে।

 

আমাদের ছেলে-মেয়েদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জল সংরক্ষণ করা উচিৎ। এই লক্ষ্যে জলশক্তি মন্ত্রক তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যার ফলে, সুদূরপ্রসারী ফল পাওয়া যাবে। এই নতুন মন্ত্রকের মাধ্যমে জল সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকরী হবে।

 

খরাপ্রবণ এলাকার সঙ্কট সম্পর্কে আমার সরকার পুরো সচেতন এবং প্রতিটি নাগরিকের পাশে আছে সরকার। রাজ্য সরকার এবং গ্রামস্তরের প্রধানদের সহায়তায় এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে যাতে কৃষকদের সাহায্য করা যায় এবং পানীয় জলের অভাব মেটানো যায়।

 

সমবায় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে আমার সরকার রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় লক্ষ্য পূরণে অগ্রসর হয়েছে। গত সপ্তাহে, গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক বিষয়গুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীদের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কমিটি কৃষিক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়টি দেখভাল করবে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

শক্তিশালী গ্রামীণ অর্থনীতির ভিতের ওপরই একমাত্র শক্তিশালী জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের কৃষকরা গ্রামীণ অর্থনীতির স্তম্ভ। কৃষির উন্নয়নের জন্য রাজ্যগুলিকে যথোপযুক্ত সহায়তা দিতে যথাসাধ্য প্রয়াস চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।

 

গ্রামীণ ভারতকে শক্তিশালী করতে বৃহৎ পরিমাণে লগ্নি করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আগামী বছরগুলিতে ২৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।

 

২০২২-এর মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করতে গত পাঁচ বছরে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন, দীর্ঘদিন ধরে পরে থাকা সেচ প্রকল্পের রূপায়ণ অথবা শস্য বিমা কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধি। যেমন, সয়েল হেল্‌থ কার্ড অথবা ১০০ শতাংশ নিমের প্রলেপ দেওয়া ইউরিয়া। আমার সরকার এরকম নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষকদের ছোট-বড় বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে। সরকারের কৃষিনীতির লক্ষ্য উৎপাদন-কেন্দ্রিকের পাশাপাশি, রোজগার-কেন্দ্রিক।

 

এই প্রয়াসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’। এর মাধ্যমে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি কৃষকদের দেওয়া হয়েছে মাত্র তিন মাসে। এই কর্মসূচিতে বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। প্রতিটি কৃষককে আনা হয়েছে এর আওতায়।

 

কৃষি উৎপাদন গুদামজাত করার লক্ষ্যে কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করা হবে তাঁদের গ্রামের কাছেই ‘গ্রামীণ ভাণ্ডারন যোজনা’র মাধ্যমে।

 

দুধ ও দুধজাত পণ্যের ব্যবসায় কৃষিক্ষেত্রে কৃষকরা সমবায়ের সুযোগ পাচ্ছেন। কৃষকদের সুবিধা দিতে ১০ হাজার নতুন ‘ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন’ গড়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

 

বর্তমানে ভারত, মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয়। প্রথম হওয়ার সবরকম সুযোগ আছে আমাদের দেশে। সামুদ্রিক মৎস্যশিল্প এবং অভ্যন্তরীণ মৎস্য ব্যবসার মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ আছে। সেই কারণেই সরকার ‘নীল বিপ্লব’ বা ব্লু রেভোলিউশনের পক্ষে। একটি আলাদা দপ্তর তৈরি করা হয়েছে মৎস্য সংক্রান্ত সুসংহত উন্নয়নের লক্ষ্যে। একইরকমভাবে মৎস্যশিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ তহবিল গঠন করা হচ্ছে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

দেশের দরিদ্র পরিবারগুলিকে দারিদ্র্য মুক্ত করলেই একমাত্র আমাদের সাংবিধানিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারব। গত পাঁচ বছরে কৃষক, শ্রমিক, দিব্যাঙ্গ, আদিবাসী এবং মহিলাদের জন্য যে সমস্ত কর্মসূচি রূপায়িত হয়েছে, তাতে সাফল্য এসেছে। দরিদ্রদের স্বশক্তিকরণের মাধ্যমে একমাত্র তাঁদের দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করা যেতে পারে। তাই সরকার দরিদ্রদের স্বশক্তিকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে আবাসন, স্বাস্থ্য, জীবনধারণের জন্য জরুরি সুবিধা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, দক্ষতা এবং স্বরোজগার প্রকল্পের মাধ্যমে। দীনদয়াল উপাধ্যায় অন্ত্যোদয় যোজনা’র ধারণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

 

দেশের বিশেষ ১১২টি জেলার উন্নয়নের জন্য সার্বিক কাজ করা হচ্ছে। এই জেলাগুলিতে আছে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ১ লক্ষ ১৫ হাজার গ্রাম। এইসব গ্রামে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে, স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে এবং পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে কোটি কোটি দরিদ্র পরিবারের জীবনে পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

 

জন ধন যোজনার মতো বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অভিযানের সাফল্যের পর আমার সরকার মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে এবং উত্তর-পূর্বের দুর্গম এলাকাগুলিতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা নিশ্চিত করতে দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে। প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডাকঘরকে প্রস্তুত করা হয়েছে ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্ট ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার জন্য। প্রতিটি দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতে পোস্টম্যানদের মোবাইল ব্যাঙ্কের মতো ব্যবহার করাই লক্ষ্য।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

চিকিৎসার খরচ দরিদ্র পরিবারগুলিকে আর্থিক দুর্দশায় ফেলে। এই সঙ্কট থেকে তাঁদের রক্ষা করতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মসূচি ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনা রূপায়িত হয়েছে। এতে ৫০ কোটি দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ২৬ লক্ষ গরিব রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়েছেন। সুলভ মূল্যে ওষুধ দিতে ৫,৩০০ জন ঔষধি কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সুলভ মূল্যে ওষুধ যোগানোই আমাদের প্রয়াস।

 

২০২২-এর মধ্যে সব গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস গড়াই লক্ষ্য। এখনও পর্যন্ত এরকম ১৮ হাজারটি কেন্দ্র চালু হয়েছে।

 

আমাদের দেশবাসী আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনেরা পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। তাঁরা উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারেন। নতুন ভারতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্বার্থে একটি উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হবে। আদিবাসী এলাকাগুলির সার্বিক উন্নয়নের জন্য অনেক কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে। অরণ্যে বসবাসকারী যুবসম্প্রদায়ের জন্য ‘লার্নিং টু আর্নিং’ সুবিধা দিতে কাজ চলছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিশুদের জন্য একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল স্কুল তৈরি করা হচ্ছে। বন ধন কেন্দ্রের মাধ্যমে অরণ্যজাত পণ্যের বিপণন এবং তাতে মূল্যযুক্তির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

আমার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে মহিলাদের স্বশক্তিকরণ। উন্নত সমাজের পরিচয় মহিলাদের স্বশক্তিকরণ এবং সমাজ ও অর্থনৈতিক কাজে তাঁদের যুক্ত করা। সরকারের ভাবনায় শুধু মহিলাদের উন্নয়নই নয়, মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়ন রয়েছে। রাজ্যগুলির সহায়তায় মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি আরও কড়া করা হয়েছে এবং নতুন আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানে কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রবণতা কমেছে এবং দেশে অনেক জেলাতেই লিঙ্গ ভারসাম্য উন্নত হয়েছে।

 

‘উজ্জ্বলা’ যোজনার মতো ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে মূলত গ্রামীণ মহিলারাই। ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’-এর মাধ্যমে টিকাকরণ এবং ‘সৌভাগ্য’ যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগের সুবিধাও পেয়েছেন মহিলারা। গ্রাম এলাকায় ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র আওতায় আবাসনের রেজিস্ট্রেশনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মহিলাদেরই। এই কর্মসূচিতে আগামী তিন বছরে গ্রামে প্রায় ২ কোটি নতুন বাড়ি তৈরি করা হবে।

 

অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলা শ্রমিকদের সুখ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় রাষ্ট্রীয় আজীবিকা মিশন’-এর মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নের সুবিধা করা হচ্ছে। ‘রাষ্ট্রীয় আজীবিকা মিশন’-এর অধীনে গ্রাম এলাকায় ৩ কোটি মহিলাকে এ পর্যন্ত ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে।

 

দেশের উন্নয়নের প্রগতিতে মহিলাদের সমান অংশীদার করাই লক্ষ্য সরকারের। শিল্প এবং কর্পোরেট ক্ষেত্রের সঙ্গে মিলে মহিলাদের আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হবে। এছাড়াও, মহিলা পরিচালিত সংস্থাগুলি থেকেই সরকারি ক্রয়ে জোর দেওয়া হবে।

 

দেশের প্রতিটি মা-বোনের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে তিন তালাক বা নিকা-হালালার মতো সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণ অত্যাবশ্যক। আমাদের মা-বোনেদের জীবন আরও ভালো এবং সম্মানজনক করতে সব সদস্যকে সহযোগিতা করার জন্য আমি আর্জি জানাচ্ছি।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

নতুন ভারত গড়তে আমাদের যুব প্রজন্মের অর্থবহ অংশগ্রহণ প্রয়োজন। গত পাঁচ বছরে যুবকদের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ‘স্টার্ট-আপ’ এবং স্বরোজগারের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় আরও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বৃত্তির পরিমাণও ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 

সাধারণ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের যুবক-যুবতীদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সংস্থান করেছে সরকার। এতে চাকরি এবং শিক্ষায় তাঁরা আরও সুযোগ পাবেন।

 

সমাজের সমস্ত স্তরের সব যুবক-যুবতীর স্বপ্ন সফল করতে আর্থিক সম্পদের সংস্থানের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’র প্রভাব ভালোরকম অনুভূত হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ১৯ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে স্বরোজগার যোজনার জন্য। এর প্রসার ঘটিয়ে ৩০ কোটি মানুষকে এই কর্মসূচির অধীনে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। গ্যারান্টি ছাড়া ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

 

বর্তমানে ভারত সারা বিশ্বের স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যায় অগ্রবর্তী দেশগুলির সারিতে এসেছে। স্টার্ট-আপ-এর পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে সরকার আইনের সরলীকরণ করছে। ২০২৪-এর মধ্যে ৫০ হাজার স্টার্ট-আপ গড়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

 

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষণায় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে আরও গতি আনতে ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ হবে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বিজ্ঞান গবেষণাগার, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতুবন্ধন করা।

 

বিশ্বের শীর্ষে থাকা ৫০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে স্থান করে নিতে পারে তার জন্য স্বশাসন এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ২০২৪-এর মধ্যে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা দেড়গুণ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এর ফলে, ২ কোটি অতিরিক্ত আসন পাওয়া সম্ভব হবে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

আমাদের দায়িত্ব, শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে যথাযথ সুযোগ দেওয়া, পরিবেশ তৈরি করা এবং গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এর জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ লার্নিং প্রোগ্রাম’ চালু করা হবে।

 

স্কুলস্তরে কম বয়সেই প্রযুক্তির প্রতি শিশুদের যাতে আগ্রহ বাড়ে, সেজন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। ‘অটল ইনোভেশন মিশন’-এর মাধ্যমে দেশে প্রায় ৯ হাজার বিদ্যালয়ে ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাব্‌স’ গঠনের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। একইভাবে, ১০২টি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা হয়েছে ‘অটল ইনকিউবেশন সেন্টার্স’।

 

বিশ্বস্তরে ক্রীড়াক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের ফলে দেশের সম্মান যেমন বাড়ে, তেমনই ক্রীড়ার প্রতি শিশু ও যুবকদের আগ্রহও বাড়ে। একইসঙ্গে, স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতাও বাড়ে। ভারতকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী দক্ষ খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করতে হবে এবং বাছাই প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ। রাজ্য ও জেলাস্তরে খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করতে ‘খেলো ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির পরিসর বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অধীনে ২,৫০০ দক্ষ খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়েছে এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এবার থেকে প্রতি বছর এই সুবিধা দেওয়া হবে ২,৫০০ নতুন খেলোয়াড়কে।

 

দেশের বর্তমান ক্রীড়া পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ এবং পরিসর বাড়ানো হবে। আধুনিক পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা যাতে খেলোয়াড়রা পায় তার জন্য নতুন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

দেশবাসীর জীবনযাপনের মানোন্নয়নে অর্থনৈতিক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বর্তমানে ভারত বিশ্বের দ্রুততম বিকাশশীল অর্থনীতির অন্যতম। মুদ্রাস্ফীতি কম, আর্থিক ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের ফলে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

 

জিডিপি-র হিসাবে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে চলেছে। উন্নয়নের হার ধরে রাখতে সংস্কার প্রক্রিয়া চলবে। ২০২৪-এর মধ্যে ভারতের অর্থনীতির পরিমাণ ৫ লক্ষ কোটি ডলার করাই আমাদের লক্ষ্য।

 

ভারতকে গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করতে কাজ চলছে। নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করা হবে শীঘ্রই। সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরে ভারত ৬৫ ধাপ উঠে এসেছে। ২০১৪-য় ছিল ১৪২, বর্তমানে তা ৭৭। এখন আমাদের লক্ষ্য ৫০টি দেশের মধ্যে স্থান করে নেওয়ার। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে রাজ্যগুলির সহযোগিতায় আইন আরও সরল করতে হবে। কোম্পানি আইনেও প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।

 

অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনতে কর ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সংস্কার চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, কর ব্যবস্থার সরলীকরণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জনকারী ব্যক্তিকে কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য।

 

একইভাবে, অপ্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থাও সরল এবং কার্যকর করা হচ্ছে। জিএসটি রূপায়ণের মাধ্যমে ‘এক দেশ, এক কর, এক বাজার’-এর ধারণা বাস্তব রূপ পেয়েছে। জিএসটি-র আরও সরলীকরণের কাজ চলবে।

 

ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থের দিকে চোখ রেখে আমার সরকার তাঁদের জন্য একটি নতুন পেনশন স্কিম চালু করেছে। ন্যাশনাল ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন করা হবে শীঘ্রই এবং ন্যাশনাল রিটেল ট্রেড পলিসি তৈরি করা হবে। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বিমার সুযোগ পাবেন জিএসটি-তে নথিভুক্তিকারী সকল ব্যবসায়ী।

 

দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এমএসএমই)-র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কর্মসংস্থানেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ছোট উদ্যোগপতিদের আর্থিক সহায়তা দিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এমএসএমই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোগপতিরা যাতে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য বিধি-নিয়মেও পরিবর্তন করে গ্যারান্টি ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

সুপ্রশাসনের ফলে কমে দুর্নীতি, বাড়ে নাগরিকদের আত্মসম্মান বোধ এবং তাঁরা তাঁদের দক্ষতা এবং ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে।

 

কোন মতেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, এটাই চায় আমার সরকার। জনজীবন এবং সরকারি পরিষেবা থেকে দুর্নীতিকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যে, ‘ন্যূনতম সরকার, অধিকতম প্রশাসন’ - এই মন্ত্রে জোর দেওয়া হবে। এছাড়া, মানুষের বদলে বাড়ানো হবে প্রযুক্তির ব্যবহার। লোকপাল নিয়োগও স্বচ্ছতার পক্ষে একটি উদাহরণ।

 

কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান আরও গতি পাবে। গত দু’বছরে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার কোম্পানি ডিরেক্টরকে বাতিল করা হয়েছে। ৩ লক্ষ ৫০ হাজার সন্দেহজনক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে।

 

দেশ ছেড়ে পলাতক আর্থিক দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ফিউজিটিভ অ্যান্ড ইকনমিক অফেন্ডার্স অ্যাক্ট’ কার্যকরী হয়েছে বলে প্রমাণিত। এ সম্পর্কে আমরা তথ্য পাচ্ছি স্যুইজারল্যান্ড সহ ১৪৬টি দেশ থেকে। এদের মধ্যে ৮০টি দেশের সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের চুক্তি হয়েছে। ফলে, যাঁরা বিদেশে কালো টাকা গচ্ছিত রেখেছেন, তাঁদের সম্পর্কে আমরা এখন তথ্য পাচ্ছি।  

 

রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে কালো টাকার লেনদেন কমাতে ‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অ্যাক্ট’ বা রেরা-র প্রভাব স্পষ্ট। ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষা হওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি বিশাল স্বস্তি পাচ্ছে।

 

দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যে ‘ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড’ সবচেয়ে বড়। এই কোড কার্যকর হওয়ায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক বা অন্য আর্থিক সংস্থাগুলি সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে মীমাংসা করতে পারবে। এই কোডের ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থাগুলি থেকে নেওয়া ঋণ না মেটানোর মনোভাবও কমেছে।

 

প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের (ডিবিটি) মাধ্যমে ৪০০টিরও বেশি কর্মসূচির টাকা সরাসরি সুবিধাপ্রাপকদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে। গত পাঁচ বছরে ডিবিটি-র মাধ্যমে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। এ পর্যন্ত ডিবিটি-র ফলে শুধুমাত্র ১ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা অন্যের হাতে পড়াই রোখা গেছে তাই নয়, বাদ পড়েছে ৮ কোটি ভুয়ো সুবিধাপ্রাপকের নাম। আগামীদিনে ডিবিটি-র পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

প্রগতির পথে এগোতে পরিকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে পরিকাঠামো নির্মাণে সরকার অনবরত প্রয়াস চালাচ্ছে। কংক্রিটের পাশাপাশি, হাইওয়ে এবং এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে সবুজও থাকছে যথেষ্ট পরিমাণে। বিদ্যুৎ সরবরাহে সৌরশক্তির পূর্ণ ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে। সড়ক নির্মাণে বাড়ি এবং শিল্পের বর্জ্যকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

 

একবিংশ শতাব্দীর অর্থনীতিতে নগরায়নের গতি বাড়বে। শহর এবং শহরতলিতে নগর পরিকাঠামোর উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নতি এবং কর্মসংস্থানের সুবিধার পথ করে দেয়। আমার সরকার নিরলসভাবে নতুন ভারত গড়ার জন্য কাজ করছে বিশ্বমানের পরিকাঠামো এবং নাগরিক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও। উত্তর-পূর্ব, পার্বত্য এবং আদিবাসী অঞ্চলের সংযোগ বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। উত্তর-পূর্বের নাগরিকদের জীবনযাপনের সুবিধা হওয়ার পাশাপাশি, সংযোগ বৃদ্ধির ফলে পর্যটন, কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিরও সুবিধা হবে। উত্তর-পূর্বে, জৈব চাষের প্রসারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

 

‘ভারতমালা’ প্রকল্পের অধীনে ২০২২-এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়কের মানোন্নয়ন ও নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হবে। এছাড়া, ‘সাগরমালা’ প্রকল্পে উপকূল অঞ্চলে এবং বন্দর সংলগ্ন অঞ্চলে উচ্চমানের সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে।

 

জাতীয় মহাসড়কের পাশাপাশি, সরকার রেলপথ, আকাশপথ এবং অভ্যন্তরীণ জলপথ ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ‘উড়ান’ কর্মসূচিতে ছোট শহরগুলির মধ্যে দ্রুত বিমান যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে।

 

বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটাতে নগর পরিবহণ পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি, নজর দেওয়া হচ্ছে দূষণের সমস্যার প্রতি। আমার সরকার একটি পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে যা শুধুমাত্র দ্রুতগতির এবং নিরাপদই নয়, এটা পরিবেশ-বান্ধব। এর জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে গণ-পরিবহণে। মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক প্রসারিত হচ্ছে দ্রুত একাধিক শহরে। ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান কার্ড’-এর সুবিধা চালু হয়েছে অব্যাহত চলাচলের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। একইভাবে, গাড়ির দূষণ কমাতে ইলেক্ট্রিক গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য ইলেক্ট্রিক চার্জিং স্টেশনগুলির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

 

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যেমন, গ্যাস গ্রিড, আই-ওয়েজ-এর উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুতগতিতে। পিএনজি-ভিত্তিক গার্হস্থ্য জ্বালানি এবং সিএনজি-ভিত্তিক পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নীতকরণ হচ্ছে। আধুনিক ভারতে জৈব জ্বালানি উৎপাদনে জোর দিচ্ছি আমরা। ২০১৪-র আগে প্রায় ৬৭ কোটি লিটার ইথানল ব্লেন্ড করা হত। এবছর ২৭০ কোটি লিটার ইথানল ব্লেন্ডিং-এর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ব্লেন্ডেড ইথানলের ব্যবহার বাড়লে শুধু কৃষকরাই উপকৃত হবেন তাই নয়, পরিবেশও সুরক্ষিত হবে। এর ফলে, পেট্রো-পণ্য আমদানি কমবে, বাঁচবে বৈদেশিক মুদ্রা।

 

গঙ্গাকে অব্যাহত এবং দূষণমুক্ত রাখাই সরকারের লক্ষ্য। সম্প্রতি গঙ্গার বিভিন্ন স্থানে জলজ প্রাণী রক্ষায় নানা কর্মসূচি চোখে পড়েছে। এবছর প্রয়াগরাজে অর্ধ-কুম্ভের সময় গঙ্গার পরিচ্ছন্নতা এবং ভক্তদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। অর্ধ-কুম্ভ সফলভাবে পরিচালনার জন্য যাঁরা অবদান রেখেছেন, আমার সরকার তাঁদের সম্মানিত করেছে। এতে তাঁদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

‘নমামি গঙ্গে’ কর্মসূচিতে গঙ্গা নদীতে নিকাশি নালার বর্জ্য ফেলার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার হবে। শুধু গঙ্গাই নয়, কাবেরী, পেরিয়ার, নর্মদা, যমুনা, মহানদী এবং গোদাবরীর মতো অন্য নদীগুলির পরিচ্ছন্নতাতেও নজর দিয়েছে সরকার।

 

অরণ্য সংরক্ষণে বিশেষ সচেষ্ট হয়েছে আমার সরকার। গত কয়েক বছরে অরণ্য এবং বৃক্ষের সংখ্যা বেড়েছে ১ শতাংশেরও বেশি। গত পাঁচ বছরে দেশের সংরক্ষিত অঞ্চলের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪-য় এই সংখ্যা ছিল ৬৯২। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৮। বায়ু দূষণের সমস্যার মোকাবিলায় ১০২টি শহরে ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ শুরু হয়েছে।

 

জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কু-প্রভাব কমাতে সৌরশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই বিষয়ে ভারতের উৎসাহে তৈরি হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স’। এই সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বের বিকাশশীল দেশগুলিতে সৌরশক্তি উৎপাদনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

সাধারণ মানুষের জীবনে মহাকাশ প্রযুক্তি একটি বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছে। দুর্যোগের আগাম খবর দিচ্ছে, প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ দিচ্ছে, বিভিন্ন যোগাযোগের সঙ্কেত পাঠাচ্ছে এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। মানবকল্যাণে মহাকাশ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করাই আমার সরকারের উদ্দেশ্য। সড়ক, দরিদ্রদের জন্য আবাসন, কৃষি অথবা মৎস্যজীবীদের জন্য যন্ত্রপাতি – এসবই যুক্ত মহাকাশ প্রযুক্তির সঙ্গে।

 

মহাকাশ প্রযুক্তি ভূমিতে, আকাশে এবং জলে আমাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নিখুঁত আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যাচ্ছে। এটি প্রত্যক্ষ করা গেছে সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় ‘ফণী’র আগমনের সময়। আগাম পূর্বাভাসের জন্য এবং সময়মতো প্রস্তুতির জন্য বিশাল পরিমাণে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে।

 

মহাকাশ অভিযানে ভারত নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। ‘চন্দ্রযান-২’ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিতে যুক্ত আমাদের বিজ্ঞানীরা। এটাই হবে ভারতের প্রথম মহাকাশ যান যা চাঁদে পৌঁছবে। ২০২২-এর মধ্যে ‘গগনায়ন’ কর্মসূচিতে প্রথম ভারতীয়কে মহাকাশে পাঠামোর প্রস্তুতিও চলছে দ্রুতগতিতে।

 

লোকসভা নির্বাচনের সময় দেশ আরও একটি সাফল্য পেয়েছে। তবে তা তেমন নজরে আসেনি। ‘মিশন শক্তি’র সফল পরীক্ষার মাধ্যমে মহাকাশ প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা প্রস্তুতিতে ভারতের দক্ষতায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর জন্য আজ আমি আরও একবার আমাদের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।

 

নিরাপত্তা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই লক্ষ্যে মহাকাশ, সাইবার এবং বিশেষ বলের জন্য তিনটি যৌথ বাহিনী সংস্থা গঠনের কাজ এগোচ্ছে। এই সহযোগিতামূলক প্রক্রিয়া দেশের নিরাপত্তাকে আরও জোরদার করবে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

নতুন ভারত দ্রুত এগোচ্ছে বিশ্ব জগতে তার প্রাপ্য স্থানটি পাওয়ার লক্ষ্যে। বর্তমান ভারত নতুন ভাবমূর্তি অর্জন করেছে। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটা আনন্দের বিষয় যে, ২০২২-এ ভারতেই হবে জি-২০ শিখর সম্মেলন।

 

বিশ্বজগৎ ২১শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ঘোষণাকে সমর্থন জানিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। আগামীকাল ২১শে জুন, সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি।

 

জলবায়ু পরিবর্তন, আর্থিক ও সাইবার অপরাধ, দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান এবং শক্তি নিরাপত্তার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন জানাচ্ছে বিশ্বজগৎ। সন্ত্রাসের প্রশ্নে এখন গোটা বিশ্ব ভারতের পাশে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের দ্বারা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করা তার বড় প্রমাণ।

 

দক্ষিণ এশিয়া এবং সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে অবস্থিত দেশগুলির প্রতি যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা আমার সরকারের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির প্রমাণ। এই অঞ্চলের অগ্রগতিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেইমতো, এই অঞ্চলে বাণিজ্য, সংযোগ এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিমস্টেক দেশগুলির সরকারের প্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতি, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনে কিরঘিজস্তানের পৌরোহিত্য এবং নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মরিশাসের উপস্থিতি এই নীতির প্রতিফলন।

 

আমার সরকার, বিদেশে বসবাসকারী এবং কর্মরত ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারেও সচেতন। বর্তমানে, একজন ভারতীয় যদি বিদেশে কোন সঙ্কটে পড়েন, তাহলে তিনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে ঠিক সময়ে সাহায্য পাবেন। পাসপোর্ট, ভিসা থেকে বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়াও এখন সুবিধাজনক হয়ে গেছে।

 

আমার সরকারের প্রচেষ্টায় ভারতের দর্শন, সংস্কৃতি এবং সাফল্য বিশ্বের আঙিনায় বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে। এ বছরে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী বিশ্ব জুড়ে পালন করা হচ্ছে যা, ভারতের ‘থট লিডারশিপ’-এর মুকুটে পালকের মতো। একইভাবে, গুরু নানক দেবজির ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী সম্পর্কিত অনুষ্ঠান সারা বিশ্বে ভারতের আধ্যাত্মিক চেতনার আলো প্রসারিত করেছে।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

নতুন ভারত হবে সংবেদনশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর। কিন্তু সেটি হতে গেলে দেশের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার সরকার জাতীয় নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। সেই জন্য সন্ত্রাসবাদ এবং নকশালবাদীদের মোকাবিলায় নানা কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

 

ভারত তার ক্ষমতা এবং উদ্দেশ্য নানাভাবে ব্যক্ত করেছে। প্রথমে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং পরে পুলওয়ামা হামলায় জড়িত জঙ্গিদের আস্তানা লক্ষ্য করে এয়ার স্ট্রাইকের মাধ্যমে। ভবিষ্যতেও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সবরকম সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা একটা বড় সমস্যা। এর ফলে, দেশের বিভিন্ন অংশে সামাজিক ভারসাম্য লঙ্ঘিত হচ্ছে। চাপ পড়ছে আমাদের সীমিত ক্ষমতার ওপর। আমার সরকার ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্‌স’ বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি প্রক্রিয়া রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে সেইসব এলাকায় যেখানে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক হারে। অনুপ্রবেশ রুখতে সীমান্ত বরাবর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

 

একদিকে সরকার অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে, অন্যদিকে ধর্মীয় বিশ্বাসের ঘটনায় নিপীড়িতদের নিরাপত্তা দিতেও সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই সূত্রে নাগরিক আইনে সংশোধন করার প্রয়াস নেওয়া হবে, যা হবে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক পরিচিতি রক্ষা করেই।

 

জম্মু এবং কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সুরক্ষিত এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দিতে আমার সরকার সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং লোকসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় এই প্রয়াস আরও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নে সবরকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।

 

দেশ থেকে নকশালবাদের মতো সমস্যাকে দূর করতে আমার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। গত পাঁচ বছরে এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করা গেছে। নকশাল অধ্যুষিত অঞ্চলের আয়তন কমছে। আগামী বছরগুলিতে ঐসব অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণে জোর দেওয়া হবে যার ফলে উপকৃত হবেন সেখানে বসবাসকারী আদিবাসী ভাই-বোনেরা।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজ আমার সরকার দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চলেছে। খুব শীঘ্রই রাফেল যুদ্ধবিমান এবং অ্যাপাশে হেলিকপ্টার পাওয়া যাবে।

 

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র অধীনে আধুনিক অস্ত্র তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সম্পূর্ণ দেশজ প্রযুক্তিতে আধুনিক রাইফেল, কামান, ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধবিমান তৈরির কাজ চলছে সফলভাবে। উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে ডিফেন্স করিডর এই লক্ষ্যকে আরও সফলভাবে কার্যকর করবে। নিজেদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা মেটানোর পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানিতেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

 

সেনা জওয়ান ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করে আত্মমর্যাদা এবং উদ্দীপনা। যার ফলে, শক্তিশালী হয় আমাদের সামরিক ক্ষমতা। সেজন্য, আমাদের সেনা জওয়ান এবং তাঁদের পরিবারের দেখভাল করার জন্য সবরকম প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। ‘এক পদ এক পেনশন’, প্রাক্তন সেনাকর্মীদের অবসর ভাতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রয়াস চালানো হচ্ছে।

 

দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে স্বাধীনতার সাত দশক পর আমার সরকার দ্বারা নির্মিত ‘জাতীয় যুদ্ধ স্মারক’, শহীদদের উদ্দেশে কৃতজ্ঞ জাতির শ্রদ্ধার্ঘ্য। একইভাবে, দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রাণদানকারী পুলিশকর্মীদের স্মরণে ‘জাতীয় পুলিশ স্মারক’ও তৈরি করেছে আমার সরকার।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

ইতিহাস থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণাই আমাদের দেশ গঠনের ভবিষ্যৎ পথে চালিত করে। আমাদের দেশ গঠনকারীদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা আমাদের কর্তব্য। গত পাঁচ বছরে এরকম অনেকগুলি প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। পূজ্য ‘বাপু’ এবং ঐতিহাসিক ডান্ডি অভিযানের স্মরণে তৈরি হয়েছে ‘ডান্ডি মিউজিয়াম’। লৌহমানব সর্দার প্যাটেলের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ তৈরি করা হয়েছে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যের নিদর্শন হিসেবে দিল্লির লালকেল্লায় ‘ক্রান্তি মন্দির’ নির্মিত হয়েছে। বাবাসাহেব ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের মহাপরিনির্বাণের স্থান দিল্লির ২৬ আলিপুর রোডকে জাতীয় স্মারকে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের সব প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানাতে দিল্লিতে আরেকটি সংগ্রহালয় তৈরি করা হচ্ছে।

 

সর্দার প্যাটেলের থেকে অনুপ্রাণিত আমার সরকার ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ মন্ত্রকে শক্তিশালী করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় উচ্চাশা এবং আঞ্চলিক প্রত্যাশাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া। সবরকমের আলাপ-আলোচনা এবং সহযোগিতাকে উৎসাহ দেওয়া হবে এর সাফল্যের জন্য। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ অউর সবকা বিশ্বাস’-এর নীতির দ্বারা প্রাণিত হয়ে আমার সরকার চায় যাতে ভারতের উন্নয়নের যাত্রায় কোন নাগরিক না বাদ পড়ে যান।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

ভারত এক দীর্ঘ বঞ্চনার সময়ের মধ্য দিয়ে কাল অতিক্রম করেছে। কিন্তু এই পুরো সময়ে ভারতীয়রা দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বাধীনতার জন্য লড়াই জারি রেখেছিলেন। স্বাধীনতার কামনা এবং তার জন্য আত্মবলিদানের ইচ্ছা কখনও হ্রাস পায়নি। এই স্বাধীনতার জন্য কামনা ১৯৪২-এ রূপ পেয়েছে ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ যখন গোটা জাতি স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে এবং তার জন্য প্রাণদান করতে দৃঢ় সঙ্কল্প হয়ে ওঠে। সেই সময় আমাদের দেশবাসীর প্রতিটি কাজের পিছনেই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য অবদান রাখার আকাঙ্ক্ষা। এই যৌথ উদ্দীপনার জোরেই ১৯৪৭-এ আমরা অর্জন করলাম স্বাধীনতা।

 

বর্তমানে আমরা সকলে ইতিহাসের আরও একটি সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে। নবযুগে প্রবেশের জন্য, নব-আন্দোলনের সূচনা করার জন্য আমরা আগ্রহী। ২০৪৭-এ স্বাধীনতার শতবর্ষ পূরণের সময় ভারতকে নতুন রূপে দেখবার জন্য আজ আমাদের শপথ নেওয়ার সময়।

 

স্বাধীনতার পর ৭২ বছরের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ আমাদের দেশ। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই দেশ বর্তমানে এগিয়ে চলেছে। ২০২২-এর মধ্যে নতুন ভারত গড়ার ধারণাকে রূপ দিতে আমাদের সকলকে অগ্রসর হতে হবে। ঐ বছর আমরা পালন করব ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী। তাই, স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে নতুন ভারতে :

 

-   কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে;

-   প্রত্যেক দরিদ্র ব্যক্তির মাথার ওপর পাকা ছাদ হবে;

-   প্রত্যেক দরিদ্র ব্যক্তি স্বচ্ছ জ্বালানি পাবেন;

-   প্রত্যেক দরিদ্র ব্যক্তি বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন;

-   কোন দরিদ্র ব্যক্তি প্রকাশ্যে স্থানে শৌচকর্ম করবেন না;

-   প্রত্যেক দরিদ্র ব্যক্তি চিকিৎসার সুযোগ পাবেন;

-   দেশের প্রত্যেকটি গ্রাম পাকা রাস্তার দ্বারা সংযুক্ত হবে;

-   গঙ্গা নদী বইবে অবিরত এবং দূষণহীন;

-   রাজ্যগুলির সহযোগিতায় ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত হবে;

-   বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হব আমরা;

-   সম্পূর্ণ দেশজ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাকাশে এক ভারতীয় ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা ওড়াবেন;

-   নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্বের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেব আমরা।

 

যদি জনগণ এবং সরকারের মধ্যে পার্থক্য কমানো যায় এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা সুনিশ্চিত করা যায়, তাহলে আমাদের দেশবাসী সরকারের কর্মসূচি এবং প্রকল্পগুলিকে জন-আন্দোলনে পরিণত করতে পারবেন। পরিবর্তিত জাতীয় লক্ষ্যে পৌঁছতে এটাই অগ্রসর হওয়ার পথ। এই লক্ষ্যে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ এবং ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর মতো কর্মসূচিগুলিকে জন-আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণে আমরা নতুন ভারতের লক্ষ্যগুলিও অর্জন করতে পারব।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

আমার সরকারের বিশ্বাস যে রাজনৈতিক দলগুলি, রাজ্যগুলি এবং ১৩০ কোটি দেশবাসী ভারতের সংহত এবং গতিপ্রাপ্ত উন্নয়নের লক্ষ্যে দৃঢ়সঙ্কল্প। আমাদের প্রাণবন্ত গণতন্ত্র যথেষ্ট পরিণত। গত কয়েক দশকে দেশের কোন না কোন অংশে বার বার নির্বাচন হওয়ার ফলে উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির গতি ব্যাহত হয়েছে। আমাদের দেশবাসী তাঁদের প্রজ্ঞার প্রমাণ রেখেছেন। রাজ্য এবং জাতীয় ইস্যুতে স্পষ্ট মতবাদ জানিয়ে ‘এক দেশ – একইসঙ্গে নির্বাচন’ এখন সময়ের দাবি যা আমাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে, উপকৃত হবেন দেশবাসী। ঐ নীতি রূপায়িত হলে সব রাজনৈতিক দল তাদের নিজ নিজ আদর্শ অনুযায়ী উন্নয়ন এবং জনকল্যাণে তাদের অবদান রাখতে পারবেন। সেজন্য আমি সংসদের সকল সদস্যকে অনুরোধ করছি যে তাঁরা যেন উন্নয়নকেন্দ্রিক এই ‘এক দেশ – একইসঙ্গে নির্বাচন’-এর প্রস্তাব নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন।

 

মাননীয় সদস্যগণ,

 

এ বছর ভারতীয় সংবিধানের ৭০ বছর। সংসদের সদস্য হিসেবে আপনারা সকলে আপনাদের কর্তব্য পালনের শপথ নিয়েছেন সংবিধানের প্রতি আস্থা ও মর্যাদা জানিয়ে। সংবিধান আমাদের সকলের কাছে সবচেয়ে বড়। আমাদের সংবিধানের মূল স্থপতি বাবাসাহেব ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর বলেছিলেন, “আমাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকেই অবলম্বন করতে হবে।”

 

আমাদের সংবিধান সকল নাগরিকের স্বাধীনতা ও সাম্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায় পূরণে দিশা নির্দেশ করে।

 

আমি বিশ্বাস করি যে, রাজ্যসভা, লোকসভার সকল সদস্য সাংসদ হিসেবে সংবিধানের আদর্শ রক্ষায় অমূল্য অবদান রাখবেন। সেইসঙ্গে পালন করবেন তাঁদের কর্তব্য। এইভাবে নতুন ভারত গঠনের কাজে আপনারা কার্যকরী অবদান রাখতে পারবেন।

 

জনপ্রতিনিধি এবং দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলকে কর্তব্য পালনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তখনই একমাত্র আমরা দেশবাসীকে নাগরিক হিসেবে তাঁদের কর্তব্য পালনে উৎসাহিত করতে পারব।

 

সাংসদের আমার পরামর্শ যে আপনারা গান্ধীজির মূলমন্ত্রটি সবসময় স্মরণে রাখবেন। উনি বলেছিলেন – “আমাদের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত হওয়া উচিৎ এমনই যা সমাজের দরিদ্রতম ও দুর্বলতম মানুষের ওপর কি প্রভাব ফেলে তার ওপর নির্ভর করে।” আপনাদের মনে রাখতে হবে সেইসব ভোটদাতাদের যাঁরা সব কাজ ফেলে, সব অসুবিধা অতিক্রম করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন এবং দেশের প্রতি তাঁর কর্তব্য পালন করেন। তাঁর প্রত্যাশাকেই আপনাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

 

নতুন ভারত গঠনে আপনাদের আত্মনিয়োগ করার জন্য এবং আগামী পাঁচ বছরে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে আপনাদের কর্তব্য পালনে আমি সকলকে অনুরোধ জানাই। আমি আরও একবার আপনাদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।

 

জয় হিন্দ!

 

 

CG/AP/DM

(Release ID: 1575060) Visitor Counter : 3109


Read this release in: English