আবাসনএবংশহরাঞ্চলেরদারিদ্র্যদূরীকরণমন্ত্রক
বর্ষশেষ সমীক্ষা : আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক
Posted On:
27 FEB 2019 6:03PM by PIB Kolkata
ভারতীয় শহরগুলির নগর পুনর্জাগরণ ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার ৭৫৮ কোটিরও বেশি টাকার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে
শ্রী হরদীপ সিং পুরি, আবাসন এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন গত ৪ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ থেকে দেশের সমস্ত পৌরসভায় স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ ২০১৯ কার্যকর হচ্ছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে মন্ত্রকের বর্ষশেষের খতিয়ান তুলে ধরে তিনি জানান, স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে শহরগুলির মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে দেশের ৭৩টি শহরে স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ সমীক্ষা চালানো হয়। ২০১৭-য় এই সমীক্ষা ৪৭৪টি শহরে করা হয়। স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ ২০১৭-র বিচারে ইন্দোর দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ২০১৮-র ৪ঠা জানুয়ারি থেকে ১০ই মার্চের মধ্যে ভারত জুড়ে ৪,২০৩টি শহরে তৃতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা চালানো হয়। ইন্দোর, ভোপাল এবং চণ্ডীগড় দেশের মধ্যে সবথেকে পরিষ্কার শহরের শিরোপা পায়। ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর আওতায় নাগরিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য একটি জাতীয় হেল্পলাইন ১৯৬৯ চালু করা সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বচ্ছতা সংক্রান্ত যে কোন অভিযোগের মীমাংসার জন্য ‘স্বচ্ছতা অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে। এছাড়া, প্রশিক্ষণের জন্য ‘এসবিএম-আর্বান’ একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে।
মন্ত্রকের সচিব শ্রী দুর্গাশঙ্কর মিশ্র ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহরাঞ্চল)’ প্রকল্পের নানা উল্লেখযোগ্য খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৬৮ লক্ষ ৭ হাজারের বেশি গৃহ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ২০২২-এর মধ্যে সবার জন্য বাসস্থানের লক্ষ্যে সরকার ১ কোটি গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহরাঞ্চল)-এর আওতায় ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার কোটি টাকা এই খাতে বিনিয়োগ করা হবে। ১,০৫,৪০৪ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সহায়তা অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বন্টন করা হয়েছে। ৩,৩৯,৭১৩ জন উপভোক্তার কাছে সুদে ভর্তুকিবাবদ ৭,৫৪৩ কোটি টাকা সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে।
শহরের মানুষদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য মন্ত্রক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এই খাতে ৬,৮৫,৭৫৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করা হয়েছে। শ্রী হরদীপ পুরি জানান, স্মার্ট সিটি মিশনের আওতায় ৫ হাজারেরও বেশি স্মার্ট সিটি তৈরি করার লক্ষ্যে স্বচ্ছ ভারত মিশন কর্মসূচিতে ২,০৫,০১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অর্থে বাড়িতে শৌচালয়ের পাশাপাশি, জন-শৌচালয় গড়ে তোলা হবে। শহরাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ৬৫ লক্ষেরও বেশি বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ৭৭,৬৪০ কোটি টাকায় ‘অম্রুত’ মিশনের আওতায় পানীয় জল এবং নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। শহরাঞ্চলের পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে। দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা-জাতীয় শহরাঞ্চলীয় জীবনজীবিকা মিশনের আওতায় শহরাঞ্চলের যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছ ভারত মিশন – শহরাঞ্চল
২০১৮-র এপ্রিল থেকে অতিরিক্ত ১,৬১২টি শহরকে প্রকাশ্য স্থানে শৌচকর্ম মুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে, ৪১২৪,৬২ লক্ষ বাড়িতে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ৫ লক্ষ জন-শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ২রা অক্টোবর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে খোলা স্থানে শৌচকর্ম বন্ধের উদ্দেশ্যে সরকার স্বচ্ছ ভারত মিশন (শহরাঞ্চল) কর্মসূচিটি চালু করেছিল। গুগ্ল ম্যাপের সাহায্যে জন-শৌচালয় চিহ্নিত করতে এবং সেগুলির হাল-হকিকৎ জানানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮৩৫টি শহরের ৩৩ হাজারেরও বেশি জন-শৌচালয় সম্পর্কিত তথ্য আপলোড করা হয়েছে। পাশাপাশি, জঞ্জাল-মুক্ত শহর গড়ার জন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ১২টি মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে একটি ‘রেটিং’ পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে।
জঞ্জাল অপসারণের লক্ষ্যে বাড়ি থেকে তা সংগ্রহের জন্য দেশের ৮৪,২২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭১,৭৯৭টি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বর্জ্য থেকে সার তৈরির লক্ষ্যে ৬৩৫টি কাজ শুরু করেছে এবং বর্জ্য থেকে ৮৮.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহরাঞ্চল)
অনুমোদিত গৃহ নির্মাণের জন্য মন্ত্রক ২৪টি নতুন প্রযুক্তি চিহ্নিত করেছে এবং ১১টি নির্মাণ প্রযুক্তি ও ইমারতী দ্রব্যের মূল্যমান স্থির করে দিয়েছে। এই যোজনাকে দ্রুত বাস্তবায়িত করার জন্য একটি জাতীয় শহরাঞ্চল আবাসন তহবিল গঠন করা হয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত ৬০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান থাকছে। এই তহবিলে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ৫,০৫০ কোটি টাকা বন্টন করা হয়েছে।
নিজের গৃহ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের যোগান পেতে ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্কে গৃহ নির্মাণ তহবিল তৈরি করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে গত আগস্ট মাসে ২,৫০০ কোটি টাকা বন্টন করা হয়েছে। আরও ২,৫০০ কোটি টাকা খুব শীঘ্রই দেওয়া হবে। আবাসন ক্ষেত্রে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার বিপুল বিনিয়োগের ফলে আরও অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে যা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।
স্মার্ট সিটি মিশন
স্মার্ট সিটি মিশনের আওতায় দেশব্যাপী চারটি পর্যায়ের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১০০টি শহরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৫,১৫১টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে যা বাস্তবায়নে ২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ৫৩৪টি প্রকল্প ১০,১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক নির্মাণ, জল সরবরাহ, বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
সড়ক নির্মাণ খাতে চারটি শহরে ২২৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় হয়েছে। ৩৪টি শহরে ৩,৮১৯ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। ১০টি শহরের ২,০৬৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। জল সরবরাহ ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট ওয়াটার প্রকল্পে’র আওতায় ১৮টি শহরে ৯০২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ৩৫টি শহরে ৫,৯৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। ১৭টি শহরে ৯২১ কোটি টাকা প্রকল্পের দরপত্র ইতিমধ্যেই আহ্বান করা হয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে আটটি শহরে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ৪২টি শহরে ৮২৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কাজ চলছে। ন’টি শহরে এই খাতে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়ণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
মন্ত্রক শহরাঞ্চলের জীবনযাত্রার সহজতর করে তুলতে ‘ইজ অফ লিভিং’-এর সূচক নির্ধারণ করেছে। ২০১৭-র জুনে বিভিন্ন মানদণ্ডের নিরিখে ১১৬টি শহরে এ বিষয়ে কাজকর্ম হয়েছে। ২০১৮-র ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত মন্ত্রক ১১১টি শহরে এই সূচকের মাধ্যমে নানা বিষয় নির্ধারণ করেছে। প্রশাসন সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অর্থনীতি, সহজলভ্য আবাসনের মতো ১৫টি ক্ষেত্রের ওপর বিবেচনা করে এই সূচক নির্ধারণ করা হয়।
২০১৮-র ৯ই জুলাই থেকে ইন্ডিয়ান স্মার্ট সিটি ফেলোশিপ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এই ফেলোশিপের প্রথম ব্যাচে ৩০ জন তরুণ নগর পরিকল্পনা, ইঞ্জিনিয়ারিং, তথ্যপ্রযুক্তি, অর্থ ও সামাজিক ক্ষেত্র সহ নানা বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করছেন।
এজেন্সে ফ্র্যান্সিস দ্য ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারিত্বে সর্বভারতীয় স্তরে ২০১৮-র ৯ই জুলাই থেকে ‘সিটিস’ নামে একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এএফডি ১০০ মিলিয়ন ইউরোর ঋণ স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করেছে। এই উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ২০১৮-র সেপ্টেম্বর মাসে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
২০১৮-র ৯ই জুলাই থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের জন্য একটি পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৫টি শহর একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে যার মূল ভাবনা হল, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনকে উৎসাহিত করা।
রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), অ্যাক্ট, ২০১৬ (রেরা)
২০১৬-র মার্চে সংসদে এই আইন পাশ হওয়ার ফলে আবাসন ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। জম্মু-কাশ্মীর (এখানে এই আইন প্রযোজ্য হয় না), উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছ’টি রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রেরা বলবৎ হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে।
শহরাঞ্চলের পরিবহণ ব্যবস্থা
বর্তমানে দিল্লি এবং জাতীয় রাজধানী অঞ্চল, ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ, কলকাতা, চেন্নাই, জয়পুর, কোচি, লক্ষ্ণৌ, মুম্বাই এবং গুরুগ্রামের মতো ১০টি শহরে মেট্রো রেল মোট ৫৩৬ কিলোমিটার চলাচল করে। ২০১৪-র মে থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন শহরে ২৮৭ কিলোমিটার নতুন লাইন চালু হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ২৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৩টি মেট্রো প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮,০২১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ভোপাল, ইন্দোর এবং দিল্লি মেট্রোর অন্তর্গত নয়ডা সিটি সেন্টার থেকে সেক্টর-৬২ – মোট এই ৬৬ কিলোমিটার মেট্রো পথ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৬,৪০৮ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের মে মাস থেকে প্রধানমন্ত্রী নাগপুর, পুণে এবং মুম্বাইয়ে ছ’টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন শহরে মেট্রো রেল চলাচলের সূচনা করেছেন। বিভিন্ন শহরের জন্য প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার মেট্রো রেল প্রকল্প এবং ৩৭৩ কিলোমিটার দ্রুত রেল পরিবহণ ব্যবস্থাপনার নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সহ রেল পরিবহণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ‘আই-মেট্রোজ’ (ইন্ডিয়ান মেট্রো রেল অর্গানাইজেশন্স সোসাইটি) নামে একটি মঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে, দেশের বিভিন্ন মেট্রো রেল কোম্পানিগুলি তাদের অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করতে পারবে।
দিল্লির জন্য প্রকল্পসমূহ
দিল্লিতে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত করার ক্ষেত্রে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। এর ফলে, বিভিন্ন ভবনের অপব্যবহার বন্ধ করতে এবং বেআইনি নির্মাণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি, গাড়ি পার্কিং, শহরের সবুজায়ন, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা সহ পরিকাঠামোগত নানা ক্ষেত্রে এই সংশোধনী নাগরিকদের নানা সুবিধা দেবে।
ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি অফ দিল্লি ল’জ (স্পেশাল প্রভিশন্স) সেকেন্ড অ্যাক্ট, ২০১১-র বৈধতা ২০২০ অবধি করা হয়েছে। এর ফলে, জাতীয় রাজধানী অঞ্চল এলাকায় বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। পাশাপাশি, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হাতে প্রয়োজনীয় সময় পাবে।
অবৈধ নির্মাণ এবং সরকারি জমি, পার্কিং-এর জায়গায়, রাস্তা, ফুটপাথের জবরদখলের সমস্যার সমাধানে দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভাইস-চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স ২০১৮-র ২৫শে এপ্রিল গঠন করা হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্সে দিল্লি পুর নিগম, নতুন দিল্লি পুর নিগম, দিল্লি পুলিশ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকছেন।
দিল্লিতে ভবিষ্যতে অবৈধ নির্মাণ এবং নির্মাণ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন প্রতিহত করতে একটি বিশেষ পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে আধিকারিকদের নাম এবং পদমর্যাদা চিহ্নিত করা হয়েছে।
দিল্লির বাসিন্দাদের জন্য আয়ত্ত্বের মধ্যে আবাসনের সুযোগ করে দিতে জমি চিহ্নিতকরণের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রক ২০১৮-র ১১ই অক্টোবর একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। এর ফলে, শাদিপুর ডিপোর কাছে কাঠপুতলি কলোনিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের জন্য মোট ২,৮০০টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। চলতি বছরেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এর ফলে, ঐ এলাকার ঝুপড়িবাসীরা উপকৃত হবেন।
২০১৮ সালে শহরাঞ্চল উন্নয়ন তহবিলের আওতায় দিল্লিতে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে – নেহরু প্লেস, ভিকাজি কামার জেলা কেন্দ্রের উন্নয়ন। দিল্লির তিনটি পুর নিগমের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, বিমানবন্দরে কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য দ্বারকার সেক্টর-৮-এ বিশেষ প্রকল্পের জন্য ৮০ শতাংশ অর্থ এই তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা – জাতীয় শহরাঞ্চল জীবন-জীবিকা মিশন
এই যোজনায় ২০১৮ সালে ১ লক্ষ ৯০ হাজারেরও বেশি উপভোক্তা দক্ষতার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৯৪,৭৫৩ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। স্বনিযুক্তি প্রকল্পের আওতায় ৫৮,৮৭৯ জন উপভোক্তা সুদ সহ ঋণ পেয়েছেন। ৬৩,৭২০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। ৫৩,০৮৭টি এই ধরণের গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে এবং ৩১,৬৮৬টি গোষ্ঠীকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এই যোজনার আওতায় ২০১৮-র এপ্রিল থেকে দেশের বিভিন্ন শহরে দারিদ্র্য দূর করতে কেন্দ্রীয় সরকার নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর ফলে, শহরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ, যাঁরা মূলত গৃহহীন এবং শহরের ফেরিওয়ালারা উপকৃত হবেন।
‘পরস’ পদ্ধতিতে দক্ষতা প্রশিক্ষণের গুণমান সম্বন্ধে প্রশিক্ষিতরা সরাসরি মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন। এই যোজনার আওতায় সুদে ভর্তুকির অর্থ সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় ‘প্যায়সা’ নামক একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়েছে।
এই যোজনায় নগরকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা প্রশিক্ষণ তথা বিপণন কেন্দ্রগুলি থেকে উৎপাদিত পণ্যের গুণমান নির্ধারণ করে সেগুলিকে গর্ভনমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস (জেম)-এ বিক্রির জন্য নথিবদ্ধ করা হবে।
২০১৪-র মে থেকে ২০১৮-র নভেম্বর পর্যন্ত ১২,৯৪,২৫২ জন শহরের দরিদ্র মানুষকে কাজের সুযোগ বাড়ানোর জন্য দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৪,৫৮,৮৪৯ জন কাজের সুযোগ পেয়েছেন। দেশের ২,৩৩২টি শহরের ১৬,৮৯,৫৬৪ জন শহরের ফেরিওয়ালাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে ৮,১৮,০৯৫ জনকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। শহরে ১,৭৭৬টি আশ্রয়স্থল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১,০৮৪টি আশ্রয়স্থলে গৃহহীনরা থাকা শুরু করেছেন।
অম্রুত
এই মিশনের আওতায় ৪,০৯৭টি প্রকল্পের জন্য ৭৭,৬৪০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২,৩৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,০৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
জল সরবরাহের ক্ষেত্রে ৯৬৫টি প্রকল্পের জন্য ২৯,২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১,৩২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫৪টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৪৯১টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে যার জন্য ২১,৫০৮ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ ধার্য হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে যার জন্য খরচ হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা।
শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য ৭০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪৪টি প্রকল্প অনুমোদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবুজায়ন ও উদ্যানের জন্য ১,২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৮৮১টি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৭২টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৪২১ কোটি টাকা ব্যয়ে।
গত চার বছরে ‘অম্রুত’ মিশন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৫৪টি ক্ষেত্রে ১১টি সংস্কারসাধন করেছে। এই সংস্কারগুলিকে কার্যকরী করার জন্য ২০১৮-১৯ সালে ৬০০ কোটি টাকা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে উৎসাহদানের জন্য ধার্য করা হয়েছিল, যার মধ্যে ‘অম্রুত’ প্রকল্পের আওতায় শহরগুলিতে প্রথম-আসলে-প্রথম-পাবেন – এই ভিত্তিতে পুর বন্ড ইস্যু করার জন্য ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট-এর যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ভারতের স্থান ১৮১ থেকে ৫২-তে উঠে এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছে দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের পুরসভাগুলির সংস্কারের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উদ্যোগের কারণে।
জাতীয় ঐতিহ্যবাহী শহর উন্নয়ন এবং প্রসার যোজনা (হৃদয়)
‘হৃদয়’-এর আওতায় ২০১৫ সালের ২১শে জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১শে মার্চের মধ্যে দেশের ১২টি ঐতিহ্যবাহী শহরের জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই শহরগুলি হল – আজমের, অমরাবতী, অমৃতসর, বাদামি, দ্বারকা, গয়া, কাঞ্চিপুরম, মথুরা, পুরী, বারাণসী, বেলাঙ্কান্নি এবং ওয়ারাঙ্গাল। ২০১৮ সালে আজমের, অমরাবতী, অমৃতসর, বাদামি, দ্বারকা, পুরী এবং বারাণসী শহরে ২০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এজন্য ১৪০.১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
বারাণসী, আজমের, অমৃতসর এবং অমরাবতী শহরে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থানে যাওয়ার জন্য ৫৯টি রাস্তার উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। অমৃতসরের গোল বাগ, আজমেরের সুভাষ উদ্যান এবং পুরীর বাঁকি মুহানা উদ্যানগুলির উন্নয়নের জন্য তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এবং স্থানীয় ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে পুস্কর, আজমের এবং বারাণসীতে তিনটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। অমৃতসরের রামবাগ গেট এবং বারাণসীর টাউন হল-কে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার জন্য দুটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী শহরগুলিতে অনেক জলাশয়ে কোন জল নেই। সেখানে বর্জ্য পদার্থ জমে রয়েছে। ‘হৃদয়’ প্রকল্পের কিছু ঐতিহ্যশালী জলাশয়ের সংস্কারের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই আন্নাসাগর হ্রদ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
‘হৃদয়’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত শহরগুলিকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে একটি আদর্শ নগর করে তোলার কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরগুলিতে যে উন্নয়ন করা হয়েছে, সেখান থেকে আয়ের পথ সুনিশ্চিত করার সংস্থান রাখা হয়েছে।
CG/CB/DM
(Release ID: 1566529)
Visitor Counter : 489