অর্থমন্ত্রক

অন্তর্বর্তী বাজেট ২০১৯-২০-র প্রধান বৈশিষ্ট্য সহ সংক্ষিপ্তসার

Posted On: 02 FEB 2019 3:04PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

 

২০১৯-২০-র অন্তর্বর্তী বাজেট আজ সংসদে পেশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল এই বাজেট পেশ করেন। কৃষকদের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি ছাড়া এবারের বাজেটে করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং আগামী বছরগুলিতে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির পথরেখা চিহ্নিত করা হয়েছে।

দেশের ১২ কোটি ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রত্যক্ষভাবে আয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব ছাড়াও অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত ১০ কোটি শ্রমজীবী মানুষের জন্য পেনশনের উদ্যোগ এবারের বাজেটে রয়েছে। এছাড়া, আয়করের ক্ষেত্রে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত করযোগ্য আয়ের ওপর কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। স্ট্যাম্প ডিউটির সংস্কার, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য রেকর্ড ৫৮,১৬৬ কোটি টাকার বরাদ্দ, হরিয়ানার জন্য একটি নতুন এইম্‌স প্রভৃতিও এবারের বাজেটের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়া, বিদেশিদের মতো ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্যও ‘এক জানালা’র অনুমোদন ব্যবস্থা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উচ্চহারে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে এই অন্তর্বর্তী বাজেটে। অন্যদিকে, তপশিলি জাতি ও উপজাতি সহ সমাজের দরিদ্রতর শ্রেণীর মানুষের কল্যাণের জন্য বরাদ্দ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। দেশেরপ্রায় ১.৫০ কোটি মৎস্যজীবী মানুষের জন্য একটি পৃথক বিভাগ খোলার প্রস্তাব এবারের বাজেটে দেওয়া হয়েছে।

প্রধান প্রকল্পগুলি

‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’ (পিএম-কিষাণ) নামে একটি প্রকল্পে ২ হেক্টরের মধ্যে জমি রয়েছে এই ধরণের কৃষক পরিবারগুলির জন্য প্রতি বছর ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব রয়েছে। ২০১৯-২০-র অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, এবারের বাজেটে আমাদের সরকার পিএম-কিষাণ প্রকল্পের জন্য ২০১৯-২০-তে ৭৫,০০০ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটে ২০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ভারত সরকারের অর্থে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে দেশের ১২ কোটি ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষক পরিবারগুলির জন্য তিনটি কিস্তিতে ২,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। ২০১৮-র ১ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্প কার্যকর হবে এবং ২০১৯-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম কিস্তির অর্থ এ বছরের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে শ্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন।

দেশের মৎস্যক্ষেত্রের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ‘মৎস্য বিভাগ’ নামে একটি পৃথক দপ্তর চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সরকার দেশের ১.৪৫ কোটি মৎস্যজীবীর জীবন-জীবিকাকে উৎসাহিত করতে চায় এবং ৭ শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায়। এছাড়া, অর্থমন্ত্রী কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে পশুপালন এবং মৎস্যচাষে যেসব কৃষক সেই অর্থ কাজে লাগায়, সেক্ষেত্রে ঋণের সুদের ওপর ২ শতাংশ হারে ছাড় দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করলে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ হারে সুদে ছাড় মিলবে।

চলতি বছরেই রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশনের জন্য ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আমাদের দেশের গো-সম্পদের জিনঘটিত উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ’ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই আয়োগ গো-সম্পদের উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা, কল্যাণ ও আইন রূপায়ণের বিষয়গুলি তত্ত্বাবধান করবে।

অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত দেশের ১০ কোটি শ্রমিক ও কর্মচারীদের পেনশনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রম-যোগী মনধন’  নামে একটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটি বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম পেনশন প্রকল্প হিসেবে পরিচিত হবে। প্রকল্পটির জন্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে এই প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত তহবিলের ব্যবস্থা করা হবে।

 

কর সংক্রান্ত সুবিধা

৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য ব্যক্তিগত আয়ের জন্য এখন থেকে আর কোন আয়কর দিতে হবে না। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে বলেছেন, কোন ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৬.৫০ লক্ষ টাকা হলে এবং তিনি যদি প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্প এবং বিমা প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করেন, সেক্ষেত্রেও তাঁকে কোন আয়কর দিতে হবে না। ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গৃহ ঋণের সুদের জন্য অতিরিক্ত শিক্ষা ঋণের সুদ, জাতীয় পেনশন প্রকল্পে প্রদত্ত অর্থ, চিকিৎসা বিমা এবং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য চিকিৎসাবাবদ ব্যয়কে অতিরিক্ত ছাড়ের তালিকায় ধরা হবে। এবারের আয়কর সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব অনুসারে প্রায় ৩ কোটি মধ্যবিত্ত এবং ক্ষুদ্র করদাতা ১৮,৫০০ কোটি টাকার সমতুল আয়করের ছাড় পাবেন। বেতনভোগীদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৪০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০,০০০ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে, ৩ কোটিরও বেশি বেতনভোগী কর্মচারী এবং পেনশনপ্রাপক অতিরিক্ত প্রায় ৪,৭০০ কোটি টাকার আয়কর ছাড়ের সুবিধা ভোগ করবেন। নিজেদের বাস করার জন্য দ্বিতীয় বাড়ির আনুপাতিক ভাড়ার ওপর আয়কর ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে কোন একজনের একটির বেশি নিজেদের বাস করার বাড়ি থাকলে তার আনুপাতিক ভাড়ার ওপর আয়কর ধার্য হয়ে থাকে। ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের ওপর টিডিএস-এর ন্যূনতম সীমা ১০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০,০০০ টাকা করা হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার ওপর কর ছাড়ের জন্য টিডিএস-এর ন্যূনতম সীমা ১,৮০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,৪০,০০০ টাকা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাড়ি ও ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের ওপর থেকে জিএসটি-র বোঝা কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জিএসটি কাউন্সিলের কাছে একটি মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠন করে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। শ্রী গোয়েল তাঁর বাজেট ভাষণে বলেছেন, খুব শীঘ্রই ৯০ শতাংশেরও বেশি জিএসটিদাতা ব্যবসায়ীদের ত্রৈমাসিক রিটার্ন দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হবে।

মুদ্রাস্ফীতি

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকার গত পাঁচ বছরের মুদ্রাস্ফীতির হার ৪.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এই হার পূর্ববর্তী যে কোন সরকারের থেকে অনেকটাই কম। এমনকি, ২০১৮-র ডিসেম্বর মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার কমে ২.১৯ শতাংশ হয়েছিল। শ্রী গোয়েল বলেন, সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আমাদের দেশের পরিবারগুলি খাদ্য, বাসস্থান, আশ্রয়, গ্রাহক পণ্য এবং ভ্রমণের মতো মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হত। ২০০৯-১৪ – এই পাঁচ বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০.১ শতাংশ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাজকোষ ঘাটতি

২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের সংশোধিত বাজেটে রাজকোষ ঘাটতির হার ৩.৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ৭ বছর আগে এই হার ছিল প্রায় ৬ শতাংশ। তিনি বলেন, চলতি খাতে ঘাটতি এ বছর কমে জাতীয় আয়ের ২.৫ শতাংশে দাঁড়াবে। ছ’বছর আগে এই হার ছিল জাতীয় আয়ের ৫.৬ শতাংশ। করের ভাগাভাগির ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির অংশ ৩২ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ করার অর্থ কমিশনের সুপারিশ মানা সত্ত্বেও আমাদের রাজকোষ ঘাটতি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

আর্থিক বৃদ্ধি এবং প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন যে আগামী দশকগুলিতে উচ্চহারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে কারণ, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থা চালু ছাড়াও কর সংক্রান্ত অন্যান্য সংস্কারের কাজ চালিয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশ বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে দ্রুততম অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ভারত বিশ্বের মধ্যে একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল। বর্তমানে আমরা বিশ্বের মধ্যে ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি হিসাবে পরিচিতি পেয়েছি। শ্রী গোয়েল বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার স্বচ্ছতার জন্য ভারত প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে। গত পাঁচ বছরে আমাদের দেশে প্রায় ২৩,৯০০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে।

প্রধান প্রধান প্রকল্পের জন্য বর্ধিত বরাদ্দ

২০১৯-এর বাজেট প্রস্তাবে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কর্মনিশ্চয়তাকরণ প্রকল্পের জন্য ৬০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজন হলে এই খাতে আরও বরাদ্দ করা হবে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার ব্যয়বরাদ্দও গত অর্থবর্ষের তুলনায় প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৯,০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। ২০১৪-১৮ – এই চার বছরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ১.৫৩ কোটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ২০১৯-এর মার্চের মধ্যে সারা দেশের সমস্ত পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। এখনও পর্যন্ত সারা দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী ১৪৩ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে, দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের ৫০,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মসূচি ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৫০ কোটি মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষ রোগী নিঃশুল্ক চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন যার জন্য তাঁদের প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হত। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, কার্ডিয়াক স্টেন্ট এবং হাঁটু প্রতিস্থাপনের যন্ত্রাংশের দাম কমে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী জন-ঔষধি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে সুলভে সবার জন্য ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রী গোয়েল বলেন, ২০১৪ সাল থেকে যে এইম্‌স-এর ধাঁচে ২১টি হাসপাতাল স্থাপনের ঘোষণা করা হয়েছিল তার মধ্যে ১৪টি ইতিমধ্যেই কাজ করতে শুরু করেছে। তিনি তাঁর বাজেট বক্তৃতায় হরিয়ানায় দেশের ২২তম এইম্‌স স্থাপনের ঘোষণা করেন। সুসংহত শিশুবিকাশ কর্মসূচির জন্য বাজেট বরাদ্দ ২০১৮-১৯-এর সংশোধিত বাজেটের ২৩,৩৫৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০১৯-২০-র প্রস্তাবিত বাজেটে ২৭,৫৮৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তপশিলি জাতি এবং উপজাতিদের কল্যাণেও ব্যয়বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের অন্তর্বর্তী বাজেটে। ২০১৮-১৯-এর বাজেট প্রস্তাবে তপশিলি জাতির জন্য ৫৬,৬১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পরে, সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৬২,৪৭৪ কোটি টাকা করা হয়েছিল। ২০১৯-২০-র বাজেট প্রস্তাবে এই বরাদ্দ ৩৫.৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৬,৮০১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে, তপশিলি উপজাতিদের জন্য বরাদ্দও ২০১৮-১৯-এর ৩৯,১৩৫ কোটি টাকা থেকে ২৮ শতাংশ বাড়িয়ে ২০১৯-২০-র বাজেট প্রস্তাবে ৫০,০৮৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের আওতায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষের বিভিন্ন সমস্যা বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তা নিরসনের জন্য সুপারিশ করবে। দরিদ্র পরিবারগুলিতে রান্নার গ্যাসের সংযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় মোট ৮ কোটি পরিবারের কাছে নিঃশুল্ক রান্নার গ্যাসের সংযোগের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ৬ কোটি পরিবারে ইতিমধ্যেই সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যেই বাকি চিহ্নিত পরিবারগুলিতে এই সংযোগ দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে তাঁর বাজেট ভাষণে উল্লেখ করেন। মহিলাদের বিভিন্ন প্রকল্পে সুবিধা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় ৭০ শতাংশেরও বেশি সুবিধাপ্রাপকই মহিলা। তিনি বলেন যে প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনায় কর্মরত মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে একটি জাতীয় ‘কৃত্রিম মেধা’ সংক্রান্ত পোর্টাল চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ‘কৃত্রিম মেধা’ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মসূচির আওতায় এই পোর্টালটি চালু করা হবে বলে তিনি জানান। শিল্পনীতি ও উন্নয়ন বিভাগের নাম পরিবর্তন করে শিল্পোন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বিভাগ করা হবে বলে তিনি জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, দু’বছর আগে বর্তমান সরকার ‘গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস’ (জিইএম) চালু করেছিল। এর ফলে, পরিকাঠামো খাতে গড়ে প্রায় ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ সাশ্রয় হয়েছিল। এই মঞ্চটি এখন থেকে সমস্ত কেন্দ্রীয় মালিকানাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাজে লাগানো হবে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যেই এই মঞ্চের মাধ্যমে ১৭,৫০০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে মন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে জানিয়েছেন।

শ্রী গোয়েল জানান, এই প্রথম ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়াল। গত পাঁচ বছরে দেশে বিমান যাত্রীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সিকিমের পাকিয়ং-এ বিমানবন্দর চালু হওয়ার ফলে দেশে কার্যকর বিমানবন্দরের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। খুব সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশ ভারতের বিমান মানচিত্রে এসেছে এবং মেঘালয় ত্রিপুরা ও মিজোরাম ভারতের রেল মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে তিনি জানান। ২০১৯-২০-র বাজেটে ভারতীয় রেলের জন্য মূলধনী সহায়তাবাবদ বরাদ্দ ৬৪,৫৮৭ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রেলের সার্বিক মূলধনী ব্যয়ের কর্মসূচি ধরা হয়েছে ১,৫৮,৬৫৮ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী জানান যে রেলের অপারেটিং রেশিও ৯৮.৪ শতাংশ থেকে আরও উন্নত হবে বলে সরকার আশা করে। তিনি এই বছরটিকে রেলের ইতিহাসে নিরাপদতম বছর হিসাবে চিহ্নিত করেন। ব্রডগেজ রেল নেটওয়ার্কে মনুষ্যবিহীন সমস্ত লেভেল ক্রসিং তুলে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নামে একটি নতুন অত্যাধুনিক ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

সৌরশক্তি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে জানান যে গত পাঁচ বছরে ভারতের সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা দশগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সৌর জোট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি রূপায়ণে ভারত সরকারের অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে বলে তিনি জানান। এই ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। বিনোদন শিল্পের মতো যে সমস্ত ক্ষেত্রে অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে এখন থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক শর্ত মান্যতার ক্ষেত্রে স্ব-ঘোষণার ওপর নির্ভর করা হবে। বিনোদন শিল্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলচ্চিত্রের শ্যুটিং এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুমোদনের জন্য বিদেশিদের মতো দেশীয় চলচ্চিত্রকারদেরও ‘এক জানালা’র অনুমোদন ব্যবস্থার সুবিধা দেওয়া হবে। ক্যামকোডার যন্ত্র ব্যবহার করে সিনেমা কপি করা বা পাইরেসি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন অনুসারে সিনেমাটোগ্রাফ আইনে পরিবর্তন আনা হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত হব এবং তারপর আগামী ৮ বছরে ভারত ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে। শ্রী গোয়েল বলেন, ২০১৭-১৮ থেকে এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে আমাদের দেশে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। আয়করের রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে কর ভিত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ কোটি ৬ লক্ষ নতুন আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এসবই হয়েছে সরকারের বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্তের ফলে।

শ্রী গোয়েল জানান, এবারের বাজেটের সঙ্গে অর্থ বিলে স্ট্যাম্প ডিউটি সংক্রান্ত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে। একটি লেনদেনের জন্য একবারই স্ট্যাম্প ডিউটি নেওয়া হবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এটি সংগ্রহ করা হবে। যে রাজ্যের গ্রাহকের কাছ থেকে ডিউটি সংগৃহীত হবে, তার ভিত্তিতে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে এবাবদ সংগৃহীত অর্থ ভাগাভাগি করা হবে।

অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে জানান যে সরকারের মোট ব্যয় ২০১৮-১৯-এর সংশোধতি বাজেটের ২৪,৫৭,২৩৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০১৯-২০-র বাজেট প্রস্তাবে ২৭,৮৪,২০০ কোটি টাকা হবে বলে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে আনুমানিক ১৩.৩০ শতাংশ বা ৩,২৬,৯৬৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির হার কম থাকা সত্ত্বেও ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি জাতীয় আয়ের ৩.৪ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, রাজকোষ ঘাটতি সংহতকরণ কর্মসূচি সমাপ্তির পর সরকার ঋণ সংহতিকরণের ওপর নজর দেবে। আমরা ২০২০-২১ অর্থবর্ষের মধ্যে রাজকোষ ঘাটতিকে জাতীয় আয়ের ৩ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছি। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারতের ঋণ ও জাতীয় আয়ের অনুপাত ছিল ৪৬.৫ শতাংশ। এফআরবিএম আইনে ২০২৪-২৫-এর মধ্যে এই অনুপাতকে বাধ্যতামূলকভাবে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। তাই, রাজকোষ ঘাটতি সংহতকরণ পর্ব সমাপ্তির পর সরকার ঋণ সংহতকরণের ওপর জোর দেবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

 

CG/PB/DM



(Release ID: 1562412) Visitor Counter : 1766


Read this release in: English