নারীওশিশুবিকাশমন্ত্রক
নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক : ২০১৮-র পর্যালোচনা
পোষণ অভিযান, সার্বিক পুষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প দেশ জুড়ে চালু
বাড়ল অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়কদের ভাতা
প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনায় ৬৫ লক্ষের বেশি উপকৃত নথিভুক্ত
বেশ কিছু জেলায় বেড়েছে কন্যাশিশুর অনুপাত
Posted On:
28 JAN 2019 1:07PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯
বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও
বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও সরকারের এক অগ্রণী কর্মসূচি। এই কর্মসূচি রূপায়ণে হাত মিলিয়েছে তিনটি মন্ত্রক – নারী ও শিশু উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য, কিছু কালের মধ্যে কন্যাশিশু জন্মের অনুপাত বাড়ানো। আর ভবিষ্যতে উন্নত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষায় ছেলেমেয়ের সমতা, আরও উন্নত অনাময় (স্যানিটেশন), নারী-পুরুষের অসাম্য দূরীকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়ন। কন্যাশিশু জন্মের হার কম এমন ৪০৫টি জেলার ওপর সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।
এই কর্মসূচির চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও – এর জোরালো ডাক। জাতীয় কর্মসূচি হিসাবে কন্যাশিশুর জন্মের হার বাড়ানোয় এই কর্মসূচি সফল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সরকার সহ জাতির চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছে এই কর্মসূচি। কেন্দ্রের পাশাপাশি, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলিও উদ্যোগ নিয়েছে এ ব্যাপারে। বাছাই করা জেলাগুলিতে বেশ কিছু উদ্ভাবনী বা নতুন ধরণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। লোকজনের মধ্যে কন্যাশিশুর জন্ম হার কমের বিষয়টি নিয়ে বেড়েছে সচেতনতা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ১৬১টি জেলার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল – মার্চ, ২০১৫ – ১৬ এবং ২০১৬ – ১৭’র মধ্যে উৎসাহজনক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। ১০৪টি জেলায় বেড়েছে কন্যাশিশুর জন্মের অনুপাত। হাসপাতাল, মাতৃসদন, নার্সিং হোম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে প্রসব হার বৃদ্ধির রিপোর্ট দিয়েছে ১৪৬টি জেলা। ২০১৫ – ১৬’তে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমে ছাত্রী ভর্তির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৮০।৯৭ শতাংশ। এই হার ২০১৩ – ১৪’য় ছিল ৭৬ শতাংশ। বাছাই করা জেলাগুলিতে প্রতিটি স্কুলে মেয়েদের জন্য শৌচালয় তৈরির লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।
১৬১টি জেলায় সফল রূপায়ণের ভিত্তিতে, সরকার বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্পের আওতায় এনেছে আরও ২৪৪টি জেলা। এই প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে জেলাশাসকের নেতৃত্বে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন রাজ্য টাস্ক ফোর্স প্রকল্প কার্যকর করার বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশ থাকে। সচেতনতা বাড়ানোর মারফত মাধ্যমে ঢোকানো হবে আরও ২৩৫টি জেলা। সুতরাং, কন্যাশিশুর অনুপাত আরও বাড়াতে দেশের সব অর্থাৎ ৬৪০টি জেলাই (২০১১-র সেন্সাস মোতাবেক) বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্পের আওতায় আসবে।
২) নারী কল্যাণ
ক) ওয়ান স্টপ সেন্টার – জোরজুলুমের মুখে পড়া অনেক মহিলাই জানেন না সহায়তার জন্য যেতে হবে কোথায়! তাঁদের জন্য দেশ জুরে গড়া হয়েছে এই কেন্দ্র। ওয়ান স্টপ সেন্টার প্রকল্পের গোড়াপত্তন ২০১৫-র মার্চে। পুলিশ, চিকিৎসা, আইন সহায়তা এবং জবরদস্তিতে নিপীড়িত মেয়েদের আপাতত আশ্রয় সহ বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ করে দেয় এসব কেন্দ্র। এই প্রকল্পে টাকাকড়ি যোগান হয় নির্ভয়া তহবিল মারফত।
দেশের সবকটি জেলায় পর্যায়ক্রমে খোলা হচ্ছে এই কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক ইতিমধ্যে ৭১৮টি জেলাতেই ওয়ান স্টপ সেন্টার গড়ার অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে। এ যাবৎ, কাজ শুরু হয়েছে ২৭৯টি কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্র সহায়তা করেছে ১.৯৩ লক্ষের বেশি মহিলাকে।
খ) মহিলা হেল্প লাইন – এই প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে ২০১৫’র পয়লা এপ্রিল থেকে। মেয়েদের উপর জুলুম বা নির্যাতনের অভিযোগে ২৪ ঘন্টা সাড়া দেওয়াই এর লক্ষ্য। সারা দেশে ১৮১ টেলিফোন নম্বরের মাধ্যমে অভিযোগ জানানো যায়। এ পর্যন্ত মহিলা হেল্প লাইন চালু হয়েছে ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। এই হেল্প লাইনগুলির মাধ্যমে পাওয়া গেছে ২০ লক্ষেরও বেশি টেলিফোন কল। এই প্রকল্পে টাকা আসে নির্ভয়া তহবিল থেকে।
গ) কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা – কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা আইন, ২০১৩ – এ সংগঠিত বা অসংগঠিত সব কর্মস্থানে যৌন লাঞ্ছনা থেকে মেয়েদের রক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। এই আইনের আওতায় রয়েছেন সব বয়স বা ধরণের মহিলা কর্মী। পড়ুয়া, শিক্ষানবিশ, শ্রমিক ঘরগেরস্থালির পরিচারক মায় কোনও আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া মহিলাও এই আইনের সংস্থানের সুযোগ পাবেন।
আইনটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক কর্মস্থলে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর এক অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি সহ সব মহিলা কর্মী এর সুযোগ নিতে পারেন।
দেশ জুড়ে সংগঠিত ও অসংগঠিত দু’ক্ষেত্রেই আইনটি সম্বন্ধে ব্যাপক সচেতনতা গড়ার জন্য মন্ত্রক ২২৩টি প্রতিষ্ঠান বাছাই করেছে। সংস্থাগুলি কর্মস্থলে যৌন লাঞ্ছনার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজন করে থাকে।
ঘ) বাল্য বিয়ে – বাল্য বিয়ে প্রথা বন্ধ করতে মন্ত্রক সক্রিয়। এ বিয়ে যে দেয় বা তাতে মদত যোগায় তাঁদের সাজা দেওয়ার সংস্থান আছে বাল্য বিবাহ নিষেধ আইন, ২০০৬ – এ। সরকার আইনটি সংশোধনের কথা ভাবছে। প্রস্তাবিত সংশোধনে বাল্য বিয়ে শুরু থেকেই খারিজ বলে ঘোষণা করা হবে।
ঙ) নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ – মন্ত্রক পঞ্চায়েতে নির্বাচিত মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। গ্রামে শাসন কাজে এবং নীচের তলায় পরিবর্তনকারী রূপে এসব প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়নই এর লক্ষ্য।
চ) অভিযোগ নিষ্পত্তি সেল - মহিলা ও শিশুদের বিষয়ে পাওয়া অনলাইন অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আছে মন্ত্রকের অভিযোগ নিষ্পত্তি সেল। চটজলদি সুরাহা পাওয়ার জন্য নাগরিকরা অভিযোগ পাঠাতে পারেন min_wcd[at]nic[dot]in এ। চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই সেলটি হাজার চল্লিশেক নালিশের মীমাংসা করেছে।
৩) লিঙ্গ বাজেট (জেন্ডার বাজেটিং)
ক) সারা জীবন মেয়েরা নানা রকম বৈষম্য অসহয়তার শিকার হন। এই ভোগান্তি কমাতে বাজেট এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় বলে স্বীকৃত। লিঙ্গ বাজেটের প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিতে নীতি তৈরি থেকে ফল লাভ – সবেতেই এই বাজেটকে ঠাঁই দেওয়া সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। মন্ত্রক এই প্রকল্প মারফৎ লিঙ্গ বাজেট প্রক্রিয়া জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে অর্থ সাহায্য দেয়। গত তিন অর্থ বছরে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক ১৮০টিরও বেশি কর্মসূচিতে সহায়তা যুগিয়েছে।
খ) মন্ত্রকের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে ৫৭টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও দপ্তর লিঙ্গ বাজেট সেল গঠন করেছে। লিঙ্গ বাজেট সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ২১টি রাজ্য সরকার রাজ্য নোডাল কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছে।
গ) বাজেটের একটা পর্যাপ্ত অংশ মহিলাদের জন্য নিশ্চিত করতে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক সক্রিয়। ২০১৮ – ১৯ – এ ৩৩টি মন্ত্রক/দপ্তর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এ বাবদ ১,২১,৯৬১.৩২ কোটি টাকার হিসাব দিয়েছে। এই অঙ্ক মোট কেন্দ্রীয় বাজেটের ৪.৯৯ শতাংশ।
ঘ) মন্ত্রক কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিতে লিঙ্গ বাজেট তৈরির ক্ষমতা জোরদার করার জন্য অর্থ মন্ত্রক, নীতি আয়োগ এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট – এর সহযোগিতা নিচ্ছে।
৪) কিশোরীদের জন্য প্রকল্প – ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী স্কুলছুট মেয়েদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং দক্ষতা বাড়াতে সরকার এই প্রকল্প রূপায়ণ করছে। পুষ্টির জন্য তাঁদের সহায়তা যোগান ছাড়াও এই প্রকল্পের লক্ষ্য স্কুলছুটদের ফের বিদ্যালয় যেতে উৎসাহ দেওয়া। ২০১৮-র পয়লা এপ্রিল থেকে এই প্রকল্প দেশের সব জেলায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য ২০১৮-১৯ – এ বাজেট বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ১৩৬.২৫ কোটি টাকা। উপকৃত প্রায় ৬.৯ লক্ষ কিশোরী।
৬) স্বাধার ঘর
মন্ত্রক বিধবা মহিলাদের জন্য বৃন্দাবনে কৃষ্ণ কুটির নামে ১ হাজার শয্যার এক হোম তৈরি করেছে। এখানে তাঁদের জন্য আছে নিরাপদ আশ্রয়, স্বাস্থ্য ও আইনি পরিষেবা, পুষ্টিকর খাদ্য। ২০১৮-র ৩১ আগস্ট এই কৃষ্ণ কুটির উদ্বোধন করেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রীমতী মানেকা গান্ধী।
কৃষ্ণ কুটির চালানোর খরচ বাবদ ২০১৮-র ১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ – এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়কালের জন্য মন্ত্রক উত্তর প্রদেশ সরকারকে ১.৫৭ কোটি টাকা দিয়েছে।
৬) উজ্জ্বলা প্রকল্প
এই কর্মসূচিতে এ যাবৎ অনুমোদন পেয়েছে ২৭০টি প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ১৪১টি পুনর্বাসন হোম তৈরির প্রকল্প। ২০১৮-১৯ সালে প্রথম কিস্তিতে ৯টি রাজ্যকে দেওয়া হয় ৫.২ কোটি টাকা।
৭) পোষণ অভিযান
সার্বিক পুষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প, পোষণ অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৮-র ৮ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী রাজস্থানের ঝুনঝুনু থেকে চালু করেন।
ক) পোষণ অভিযানের উদ্দেশ্য দেশে পর্যায়ক্রমে অপুষ্টি কমানো। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে ০ – ৬ বছর বয়সী শিশুদের খর্বতা ৩৮.৪ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে কমিয়ে আনা। এই কর্মসূচিতে ১০ কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হবেন।
খ) ২০১৭ – ১৮ অর্থ বছরে এই কর্মসূচির আওতায় ছিল ৩১৪টি জেলা। বাদবাকি জেলায় কর্মসূচিটি চালু হয়ে যাবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে।
গ) ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ – এ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি পেয়েছে ২১২২.২৭ কোটি টাকা।
৮) প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনা
প্রধানমন্রী ২০১৬-র ৩১ ডিসেম্বর প্রসূতিদের উপকারের জন্য সারা দেশে এই প্রকল্প রূপায়ণের কথা ঘোষণা করেন।
এই প্রকল্পে কেন্দ্র মোট খরচের ৬০ শতাংশ দিয়ে থাকে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দেয় ৪০ শতাংশ। উত্তর–পূর্বাঞ্চল ও হিমালয়ের রাজ্যগুলির বেলায় ব্যয়ের ৯০ শতাংশই কেন্দ্রের। এসব রাজ্য দেয় মাত্র ১০ শতাংশ। আর বিধানসভা না থাকা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে ১০০ শতাংশই কেন্দ্র দিয়ে থাকে।
সরাসরি উপকার হস্তান্তর পদ্ধতিতে প্রসূতিদের ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর অ্যাকাউন্টে তিনটি কিস্তি মারফৎ জমা পড়ে ৫ হাজার টাকা।
এছাড়া, হাসপাতাল, নার্সিং হোম, মাতৃসদন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে বাচ্চা প্রসবের পর জননী সুরক্ষা যোজনা বাবদও মেলে নগদ টাকা। সব মিলিয়ে গড়ে একজন প্রসূতি পান ৬ হাজার টাকা।
এই অবধি প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনায় নথিভুক্ত প্রসূতি ৬৫ লক্ষেরও বেশি। এর মধ্যে টাকা পেয়ে গেছেন প্রায় ৫৬ লক্ষ জন। উপকৃতদের জন্য মোট খরচ ১৮৪৭ কোটি টাকার বেশি।
এই যোজনায় ২০১৭-১৮’তে মোট ২০১৬ কোটি টাকা মঙজুর করা হয়। ২০১৭-র ২০ নভেম্বর পর্যন্ত টাকা দেওয়া হয়েছে ১৯৯২ কোটির মতো। পশ্চিমবঙ্গ তার জন্য মঞ্জুর করা ১০২ কোটি ৪৫ লক্ষ ৩ হাজার টাকাই পেয়েছে।
৯) মাধ্যম (মিডিয়া)
সংবাদপত্র/সাময়িক পত্রিকা : মন্ত্রক সম্পর্কিত ১৪টি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে হিন্দি, ইংরাজি ও আঞ্চলিক নামী খবরের কাগজগুলিতে (২২ ডিসেম্বর অবধি)।
ভিডিও স্পট : গার্হস্থ্য হিংসা, যৌন হেনস্থা, বরপণ, বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক বিষয় এবং মন্ত্রকের প্রকল্প যেমন আইনমাফিক দত্তক, রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ ইত্যাদির ৯টি ভিডিও স্পট (প্রতিটি ৪৫ সেকেন্ডের) টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। এগুলি দেখা গেছে ডিজিটাল সিনেমা, বেসরকারি টিভি চ্যানেল, লোকসভা টিভি এবং দূরদর্শনে।
অডিও স্পট : বহুসংখ্যক শ্রোতার কাছে পৌঁছতে ৩৫ ও ৪৫ সেকেন্ডের ৪টি অডিও স্পট এফএম চ্যানেল এবং আকাশবাণী মারফৎ সম্প্রচার করা হয় ২০১৮-র নভেম্বর অবধি। এগুলি ফের প্রচারিত হবে ঐসব চ্যানেলে। অসাধারণ মহিলাদের জীবন ও কীর্তির কথা তুলে ধরে মানুষকে উৎসাহ দিতে এই প্রথম মন্ত্রক চালু করেছে স্পনসর্ড রেডিও অনুষ্ঠান। আকাশবাণীতে ৬০ পর্বের এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ২ নভেম্বর, ২০১৮-তে।
আউটডোর বিজ্ঞাপন : রান্নার গ্যাসের বিল, এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডিং পাশ, বিদ্যুৎ বিল, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমেও মন্ত্রক সামাজিক কর্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
এসএমএস : গত জুন মাস জুড়ে এসএমএস মারফৎ মন্ত্রকের বিভিন্ন প্রকল্প সম্বন্ধে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা হয়।
সামাজিক মাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) : মন্ত্রক তার ফেসবুক, ট্যুইটার এবং ইউটিউব সামাজিক মাধ্যমকেও বেশ কাজে লাগিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে এর মাধ্যমে পৌঁছে যায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির খবরাখবর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নাগরিকদের (নেটিজেন) সঙ্গে সংযোগ রাখতে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের প্রতীক বা লোগো বাছাইয়ে তাদের মতামত জানার জন্য বহু প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
১০) উইমেন অফ ইন্ডিয়া অর্গানিক ফেসটিভ্যাল : মন্ত্রক প্রতি বছর এই উৎসবের ধরণের আয়োজন করে ফি বছর। এই উৎসবের জন্য মহিলা উদ্যোগী ও চাষীদের উৎসাহ দেওয়া এবং জৈব পণ্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। ২০১৮-র এই উৎসব আয়োজন করা হয় দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য আর্টস-এ। উৎসব ২৬ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। দেশের দূরদূরান্ত থেকে য়াসা প্রায় ৫৭০ জন অংশগ্রহণকারীর জন্য ছিল ২৮৭টি স্টল। মন্ত্রকের উদ্যোগে এই উৎসবে জৈব এবং নিরামিষ খাবারের স্টল দেওয়া হয়। স্টলে ভিড় হয় ভালোই। উৎসবের খোঁজখবর ছড়িয়ে দিতে ৪টি রেডিো জিংগল ছাড়াও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল।
২৬টি রাজ্য থেকে আসা মহিলা শিল্পোদ্যোগী ও চাষীরা রেকর্ড ২.৭৫ কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী বিক্রি করেন। দিল্লি হাটে ২০১৭-র উৎসবে এই অঙ্ক ছিল ১.৮৪ কোটি টাকা। এবারের উৎসবে এসেছিলেন ১২ লক্ষ মানুষ।
নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক চণ্ডীগড়ে ১২-১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ – এ উৎসব আয়োজন করেছিল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে উৎসব হবে হায়দরাবাদে।
১১) সাত্ত্বিক : অন্যান্য বছরের মতো এবারও মন্ত্রক সাত্ত্বিক খাদ্য উৎসবের আয়োজন করে। আমেদাবাদে ২২ – ২৫ ডিসেম্বর এই উৎসবে সহযোগিতা করে উন্নয়নমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সৃষ্টি। মন্ত্রক ৫০টি স্টলের খরচ বহন করে।
১২) তথ্য প্রযুক্তি : মন্ত্রক বেশ কিছু প্রকল্প ও উদ্যোগে বৈদ্যুতিন শাসন (ই-গভর্ন্যান্স) রূপায়ণের জন্য ব্যাপকভাবে তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। ২০১৮ সালে তথ্য প্রযুক্তিতে মন্ত্রকের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দু-একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা –
ক) বৈদ্যুতিন অফিস (ই-অফিস) http://mwcd.eoffice.gov.in
কাগজপত্রের বদলে বৈদ্যুতিন ফাইল (ই-ফাইল) – এর সংখ্যা এবং শতকরার হিসাবে মন্ত্রক সবার উপরে। প্রশাসনিক সংস্কার এবং জনঅভিযোগ দপ্তর কাগুজে ফাইলহীন মন্ত্রকগুলির মধ্যে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রককে প্ল্যাটিনাম মন্ত্রকের শ্রেণীভুক্ত করেছে। মন্ত্রকে তৈরি হয়েছে ৪৯ হাজারেরও বেশি বৈদ্যুতিন ফাইল।
খ) সাইবার নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন : ডিজিটাল পদ্ধতি মারফৎ নাগরিকদের কাছে পরিষেবা যোগানোর জন্য আরও তথ্য প্রযুক্তি বিকাশের কথা মনে রেখে মন্ত্রক সাইবার নিরাপত্তা নীতি তৈরি করছে।
গ) ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস পোর্টালে মন্ত্রকের পরিষেবা আপলোড : মন্ত্রকের তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবাগুলি ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস পোর্টালে (http://sarvices.mdia.gov.in) ঢোকানো হচ্ছে। ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস পোর্টালের লক্ষ্য কেন্দ্র এবং রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলির তথ্য ও লেনদেন পরিষেবার জন্য এক জানলা পোর্টালের ব্যবস্থা করা।
১৩) রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ : রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ হচ্ছে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে শীর্ষ ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা। গরিব মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কম সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ দেয় এই কোষ।
উদ্বৃত্ত ও জমানো ভাঁড়ার সহ ২০১৮-র ২৭ ডিসেম্বর এই কোষের মূলধন ছিল ২৮৪ কোটি টাকা।
কোষ প্রায় ৭.৪০ লক্ষ গরিব মহিলাকে ৩৭১.৫২ কোটি টাকা ক্রমপুঞ্জিত ঋণ মঞ্জুর করেছে। এর মধ্যে দিয়েছে ৩০৭.৭২ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় মহিলা ও মহিলা বৈদ্যুতিন হাট (ই-হাট) সংক্রান্ত ভিডিও স্যুট এবং রেডিও জিঙ্গল প্রচারিত হয়েছে আকাশবাণী, দূরদর্শন ও বেসরকারি চ্যানেলে।
মহিলা বৈদ্যুতিন হাট (ই-হাট)
নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক মহিলা উদ্যোগী/স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী/স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সহায়তা করতে এক অনলাইন বৈদ্যুতিন বিপণন মঞ্চ – ‘মহিলা বৈদ্যুতিন হাট’ চালু করে। মেয়েদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন জোরদার করতে তাঁদের জন্য এটাই এ ধরণের প্রথম সরাসরি অনলাইন বিপণন মঞ্চ। এই মঞ্চ ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ গড়ায় সহায়তা করছে। মহিলা বৈদ্যুতিন হাট সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় মোবাইল মারফৎ সম্পন্ন করা সম্ভব।
পোর্টালে পোশাক, ফ্যাশনের টুকটাক সরঞ্জাম, গয়নাগাটি, মুদিখানার জিনিস, শস্য ইত্যাদি ১৮ শ্রেণীর পণ্য তুলে ধরা হয়।
৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মহিলা উদ্যোগী/স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী/স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ৭ হাজারের বেশি পণ্য পোর্টালে প্রদর্শন করে। একে উপকৃত হচ্ছে ৩২ হাজারের বেশি মহিলা উদ্যোগী/স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী/স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ৭.৩৪ লক্ষেরও বেশি মহিলা।
১৪) মহিলা শক্তি কেন্দ্র প্রকল্প
মেয়েদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০’তে রূপায়ণের জন্য এই প্রকল্পটি কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তাপুষ্ট। এর লক্ষ্য গ্রামাঞ্চলের মহিলারা যাতে তাঁদের অধিকার পায়, তার জন্য সরকারি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। প্রকল্পটি অসম, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর সমেত ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপায়ণের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সহ রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল স্তরে মহিলাদের জন্য ২৬টি রাজ্য সম্পদ কেন্দ্র কাজ করছে। এই কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন/সমাজ কল্যাণ দপ্তরকে মহিলা সংক্রান্ত বিষয়ে কারিগরি সহায়তা যোগায়। ৬৪০টি জেলায় পর্যায়ক্রমে খোলা হচ্ছে জেলা মহিলা কেন্দ্র।
ব্লক স্তরে উদ্যোগের অঙ্গ হিসাবে ১১৫টি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলায় স্বেচ্ছাসেবী কলেজ পড়ুয়াদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা আছে। গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতা তৈরি, সরকারি প্রকল্প/কর্মসূচি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে এই স্বেচ্ছাসেবী ছাত্ররা।
১৫) সুসংহত শিশু উন্নয়ন পরিষেবা (আইসিডিএস)
দেশে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য বাড়ির তীব্র অভাব (প্রায় ৪.৫ লক্ষ) – এর কথা ভেবে চার বছরে (২০১৯ - এর) বাড়ি তৈরির লক্ষ্য ২ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৪ লক্ষ করা হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ৪ লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি ভবন বানাতে গ্রামোন্নয়ন, পঞ্চায়েতি রাজ এবং নারী ও শিশু উন্নয়ন – এই তিন মন্ত্রক এক সংশোধিত যৌথ গাইডলাইন সই করেছে।
৭০ হাজার সরকারি মালিকানার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ভবনের শৌচালয় তৈরির জন্য অঙ্গনওয়াড়ি পিছু ১২ হাজার টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছারা, ২০ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পানীয় জল যোগাতে অঙ্গনওয়াড়ি পিছু ১০ হাজার টাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে বেদান্ত ফাউন্ডেশনের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণ : বিভিন্ন রাজ্যে ৪ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ভবন তৈরি করবে বেদান্ত ফাউন্ডেশন। এজন্য ২০১৫ সালে ২১ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক এবং সংস্থাটির ইতিমধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে ইতিমধ্যে ২৬৯টি ভবন নির্মাণের কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে।
পরিপূরক পুষ্টি (সংহত শিশু উন্নয়ন পরিষেবার আওতাধীন) বিধি, ২০১৭ : জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন মাফিক, মন্ত্রক এই পরিপূরক পুষ্টি বিধির বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ২০১৭-র ২০ ফেব্রুয়ারি। এই বিধি অনুসারে, গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদাত্রী মা, শিশুর জন্ম দেওয়ার পর ৬ মাস পর্যন্ত এবং ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুরা বছরে ৩০০ দিন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার বা খাদ্যশস্য পাবে। এই প্রাপ্য না মিললে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার থেকে তাঁরা খাদ্য নিরাপত্তা ভাতা পাওয়ার অধিকারী।
পরিপূরক পুষ্টির জন্য ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি : সরকার অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবায় পরিপূরক খাদ্যের জন্য ২০১৮-র অক্টোবর মাসে মাথপিছু বরাদ্দ বাড়িয়েছে। ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার টাকা। গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের ক্ষেত্রে ৭ থেকে বেড়ে ৯.৫০ টাকা। আর ৬ মাস থেকে ৬ বছরের নিদারুণ অপুষ্ট শিশুদের জন্য ৯ – এর জায়গায় ১২ টাকা।
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী/সহায়কদের সম্মান দক্ষিণা বৃদ্ধি : সরকার সম্প্রতি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাসিক ভাতা ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। মিনি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা ২ হাজার ২৫০ এর জায়গায় পাবেন ৩ হাজার ৫০০ টাকা। অঙ্গনওয়াড়ি সহায়কদের মিলবে মাসে ২ হাজার ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া, ১ অক্টোবর, ২০১৮ থেকে ভালো কাজকর্মের ভিত্তিতে সহায়কদের দেওয়া হবে মাসিক ২৫০ টাকা উৎসাহ ভাতা।
কেন্দ্রের সম্মানদক্ষিণা ছাড়াও, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার এসব কর্মীদের কিছু টাকা দিয়ে থাকে। অন্যান্য প্রকল্পের কিছু বাড়তি দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁরা এই টাকা পেয়ে থাকে।
১৬) সরাসরি উপকার হস্তান্তর (ডিবিটি) : সরাসরি উপকার হস্তান্তরের জন্য সরকারের নির্দেশমাফিক, নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক তাঁর ১৭টি প্রকল্পে আধারকে হাতিয়ার করে উপকৃতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে উপকৃতদের কাছে জিনিসপত্র পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনা, মহিলা শক্তি কেন্দ্র প্রকল্প, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়কদের সম্মানভাতা, শিশু সুরক্ষা পরিষেবা এসবের অন্যতম।
১৭) পরিসংখ্যান কার্যালয় :
ক) শিশু পরিচর্যা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য হোম সংক্রান্ত প্রতিবেদন : ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে পরিসংখ্যান কার্যালয় শিশু পরিচর্যা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য হোম নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মন্ত্রক এজন্য একটি কমিটি গড়েছিল। দেশে শিশু পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানগুলির কাজকর্মের বিষয়ে একটি জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার গড়ার দিশায় এই প্রতিবেদন একটি সার্বিক পদক্ষেপ।
১৮) স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কাজকর্মের মূল্যায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন : পরিসংখ্যান কার্যালয় এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ২০১৮-র জুনে। প্রতিবেদনটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। এই তালিকা থেকে বোঝা যাবে কোন্ সংস্থাগুলি ভালোভাবে কাজ করছে, আর কারা শুধু নামে বেঁচে আছে। রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল-ভিত্তিক এই তালিকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অনুদান মঞ্জুর বা কোনও দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রকগুলিকে সাহায্য করবে। সাধারণ মানুষও জানতে পারবেন, তাঁদের এলাকায় কোন্ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভালো কাজ করছে ও কারা তা করতে পারছে না। এই তালিকা মিলবে মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে।
গ) ইনটার্নশিপ কর্মসূচি : মন্ত্রকের বিভিন্ন প্রকল্পে গবেষণা ও সেই সম্পর্কিত কাজকর্মে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়াদের লাগাতে, পরিসংখ্যান কার্যালয় তাদের জন্য ইনটার্নশিপ কর্মসূচি পরিচালনা করে। ৯৬ জন ইনটার্নকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১২ জনের ইনটার্নশিপ চলছে এবং ২০১৮-র ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৫০ জনকে ইনটার্ন নেওয়া হয়।
১৮) শিশু কল্যাণ কার্যালয়
ক) শিশু সুরক্ষা পরিষেবা কেন্দ্র : এটি কেন্দ্রের অর্থ সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প। শিশুদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কেন্দ্র আর্থিক সহায়তা যোগায়/রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এই পরিষেবা নিজেরাই বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দেয়।
শিশু সুরক্ষা পরিষেবায় বিধিবদ্ধ সহায়তা পরিষেবা : রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি জানিয়েছে, এ যাবৎ গড়া হয়েছে ৭২৩টি শিশু কল্যাণ কমিটি এবং ৭০২টি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড।
শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যা : ২০১৮ – ১৯ – এ শিশু সুরক্ষা পরিষেবা প্রকল্পের আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার সুযোগ পাচ্ছে ৭৮ হাজারেরও বেশি শিশু।
শিশু পরিচর্যা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নজরদারি : শিশু পরিচর্যা প্রতিষ্ঠানে থাকা বাচ্চাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, সেগুলি পরিদর্শনের জন্য সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে অনুরোধ করে। তাঁদের বলা হয়, এ ধরণের সব প্রতিষ্ঠান যাতে নিবন্ধভুক্ত হয়, সেদিকে নজর দিতে। এ যাবৎ সারা দেশে ৮ হাজার ২০০-রও বেশি প্রতিষ্ঠান নথিভুক্ত হয়েছে। সেগুলি পরিদর্শন করে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ায়, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি ৫৩৯ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
শিশু হেলপ লাইন : শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শিশুকে সরাসরি যুক্ত এবং পরে পরিষেবা থেকে সহায়তার জন্য আছে শিশু হেলপ লাইন (১০৯৮)। এখন দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ এলাকায় মেলে এই হেলপ লাইনের সুযোগ। প্রতিদিন ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে এই লাইন।
রেল স্টেশনে শিশু হেলপ ডেস্ক : বাড়ি ছেড়ে পালানো, পরিত্যক্ত, অপহৃত ও পাচার করা শিশুদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সাহায্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনে খোলা হয়েছে শিশু হেলপ ডেস্ক। ২০১৮ – ১৯ – এ ৮৪টি স্টেশনে এই ডেস্ক রয়েছে। ২০১৭ – ১৮’তে ছিল ৬২টি স্টেশনে। চলতি বছরে এসব ডেস্ক ৬০ হাজারেরও বেশি শিশুকে সহায়তা করেছে।
হারানো – প্রাপ্তি পোর্টাল : এই পোর্টাল চালু হয়েছে ২০১৫-র জুন মাসে। এখানে নিরুদ্দিষ্ট বা ইতিউতি ঘোরাঘুরি করতে দেখা বাচ্চাদের সম্পর্কে খোঁজখবর দেওয়া যায়। এই পোর্টালে ২০১৮-র ১৯-এ ১.১০ লক্ষের বেশি এ ধরণের শিশুর খবর প্রকাশিত হয়েছে।
যৌন নির্যাতনে ভুক্তভোগী শিশুদের জন্য ই-বকস : শিশুরা অনেক সময়েই যৌন অত্যাচার নিয়ে অভিযোগ করতে অক্ষম/নিরাপদে এবং পরিচয় গোপন রেখে তাঁরা যাতে অভিযোগ জানাতে পারে, সেজন্য ইন্টারনেট-ভিত্তিক সুযোগ পসকো ই-বকস খোলা হয়েছে ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস্ - এর ওয়েবসাইটে। শিশু বা তার হয়ে যে এখানে অভিযোগ জানাতে পারেন।
পুরস্কার প্রদান – প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় শিশু পুরস্কার : নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক কৃতী শিশু এবং ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়ে আসছে বেশ কয়েক দশক যাবৎ। এই প্রকল্প ২০১৮ সালে পুনর্গঠিত হয়েছে। জাতীয় শিশু পুরস্কারকে এখন বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় শিশু পুরস্কার। এই পুরস্কার দেওয়া হবে দুটি শ্রেণীতে।
শিশু শক্তি পুরস্কার : ৫ বছরের বেশি ও ১৮ বছরের কম বয়সীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বীকৃতিতে মেলে এই পুরস্কার। প্রত্যেক পুরস্কার প্রাপক পায় নগদ ১ লক্ষ টাকা, বই কেনার জন্য ১০ হাজার টাকার ভাউচার, শংসা ও মানপত্র।
শিশু কল্যাণ পুরস্কার :
ক) ব্যক্তিগত বিভাগ : নিদেন ৭ বছর শিশু উন্নয়ন, শিশু সুরক্ষা ও শিশু মঙ্গলের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। পুরস্কার পেতে পারেন তিন জন ব্যক্তি। প্রত্যেক পুরস্কার প্রাপককে দেওয়া হয় ১ লক্ষ টাকা নগদ, শংসা ও মানপত্র।
খ) প্রতিষ্ঠানগত বিভাগ : শিশু কল্যাণে অন্তত ১০ বছর অসামান্য কাজ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। ৩টি প্রতিষ্ঠান এই পুরস্কার পেতে পারে। তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে ৫ লক্ষ টাকা, শংসা ও মানপত্র।
জাতীয় শিশু পুরস্কার পোর্টাল : মন্ত্রক জাতীয় শিশু পুরস্কারের আবেদন অনলাইন জমা নেওয়ার জন্য এক পোর্টাল/ওয়েবসাইট চালু করেছে ২০১৮-র ১ আগস্ট। এর মাধ্যমে পুরস্কারের জন্য সুপারিশ জানাতে পারে যে কোনও নাগরিক। সংশ্লিষ্ট বছরের জন্য সুপারিশ পাঠানোর শেষ তারিখ ৩১ আগস্ট। পুরস্কার দেওয়া হয় পরের বছর জানুয়ারি। কোনও সুপারিশ ১ আগস্টের পর জমা পড়লে তা বিবেচনা করা হবে পরের বছরের জন্য।
১৯) খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদ : বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য পুষ্টি বিষয়ক তথ্য প্রচারের জন্য, খাদ্য ও পুষ্টি পরষদ নানা উদ্যোগ নেয়। পর্ষদের সদর দপ্তর তার চারটি আঞ্চলিক কার্যালয় মারফৎ কারিগরি সহযোগিতা যোগায় এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালায়।
ক) পুষ্টিতে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (ট্রেনিং ফর ট্রেনার্স) কর্মসূচি : শিশু উন্নয়ন প্রকল্প আধিকারিক সহ শিশু উন্নয়ন প্রকল্প আধিকারিক, মেডিকেল আধিকারিক, সংহত শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের বরিষ্ঠ সুপার ভাইজার, শিক্ষক, নামকরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী, গ্রামসেবক ইত্যাদি প্রশিক্ষকদের জন্য ৫ দিন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এরা আবার, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মতো তৃণমূল স্তরের কর্মী এবং সমাজের অন্যান্য লোকজনকে তালিম দেন।
খ) ঘরগেরস্থলিতে ফল-সবজি সংরক্ষণ ও পুষ্টি প্রশিক্ষণ : নিজের ঘরবাড়িতে ফল-সবজি সংরক্ষণের জন্য উৎসাহ যোগাতে গৃহবধূ, কিশোরী ও বেকার যুবাদের জন্য আছে ৫ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এর ফলে, খাবার-দাবারে সুষম ভিটামিন ও মিনারেলের প্রয়োজন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হওয়া ছাড়াও, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা কিছু রোজগারের পথও খুঁজে পাবেন। মহিলা ও কিশোরী সমেত তপশিলি জাতি/উপজাতির উপকৃতদের জন্য এক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। মোট ১৮১টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রায় ৫ হাজার অংশগ্রহণকারী উপকৃত হয়েছেন।
পুষ্টি শিক্ষা কর্মসূচি : উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হ’ল দেশের মানুষের পুষ্টির মান। অন্যকথায়, অপুষ্টি জাতীয় উন্নয়নের পক্ষে এক বড় অন্তরায়। উপযুক্ত মানুষকে খাবার-দাবার এবং জীবনশৈলীতে উৎসাহ দিতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি শিক্ষাই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও খরচ সাশ্রয়ী কর্মসূচি। তাই গ্রাম, আদিবাসী এলাকা ও শহরাঞ্চলের বস্তিতে পুষ্টি শিক্ষা কর্মসূচি চালানো হয়। মোট ২ হাজার ২৭৫টি এই ধরণের কর্মসূচিতে উপকৃত হয়েছেন প্রায় ৮১ হাজার মানুষ।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নজরদারি : সংহত শিশু উন্নয়ন প্রকল্পে পরিপূরক পুষ্টির দিকটি যাচাই করতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনের ব্যবস্থা আছে। পরিদর্শনকালে খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদের কর্মীরা অঙ্গনওয়াড়ি পুষ্টি ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় কারিগরি সহায়তা যোগান। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পরিদর্শনের সংখ্যা ২ হাজার ৬৩৮।
খাদ্যের মান বিশ্লেষণ : খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা ও চেন্নাই – এই চারটি আঞ্চলিক মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দেওয়া পরিপূরক খাবারের মান বিচার করে দেখে। ২০১৮ – ১৯ – এর নভেম্বর অবধি এই পরীক্ষাগারগুলি ১ হাজার ৩০০-রও বেশি নমুনা বিশ্লেষণ করেছে।
খাদ্য পরীক্ষার নতুন চারটি অত্যাধুনিক পরীক্ষাগার : খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদ বর্তমানে ৪টি অত্যাধুনিক পরীক্ষাগার গড়ছে। ফরিদাবাদে হচ্ছে কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারটি। কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে তৈরি হয়েছে আঞ্চলিক পরীক্ষাগার। ফরিদাবাদ এবং কলকাতায় পরীক্ষাগার নির্মাণের কাজ শেষ। চেন্নাইতে শেষ হওয়ার মুখে। আগামী মাসের মুম্বাইয়ের কাজ সমাপ্ত হবে। ল্যাবরেটরির সাজসরঞ্জাম, আসবাব ইত্যাদি যোগাড় ও বসানোর কাজ চলছে। এসব পরীক্ষাগার চালানোর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ১১০টি নতুন পদ। এছাড়া, ২৩টি শূন্য পদও ভরা হবে।
CG/SM/SB
(Release ID: 1561759)
Visitor Counter : 224