অর্থমন্ত্রক

বর্ষশেষ পর্যালোচনা ২০১৮ – অর্থ মন্ত্রক

Posted On: 16 JAN 2019 3:25PM by PIB Kolkata

কেন্দ্রীয় সরকার গত চার বছরে নাগরিকদের কল্যাণে, সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তনে এবং প্রগতিশীল বিশ্ব শক্তি হিসেবে এক মজবুত পরিচিতি গড়ে তুলে দেশকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে একাধিক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে।

 

এই লক্ষ্যে গৃহিত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে সরকার আর্থ-সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে একাধিক সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রান্তিক ও আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা চালু হয়েছে। উদ্দেশ্য, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে এসে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের লক্ষ্য পূরণ করা। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প হিসেবে অটল পেনশন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা চালু হয়েছে।

 

উপেক্ষিত ও বঞ্চিত মানুষের উন্নয়নে সরকার কল্যাণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদ্দেশ্য, সমাজের নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের বিশেষ চাহিদা পূরণ করা। এই লক্ষ্যে সরকার প্রধানমন্ত্রী সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করেছে। শিশুকন্যাদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানই এই যোজনার উদ্দেশ্য।

 

কেবল আর্থিক সুরক্ষাই নয়, স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভর করে তুলতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মহিলাদের সুবিধা প্রদানে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোগ গঠনের মানসিকতার প্রসারে ঋণে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।

 

সম্ভাবনাময় শিল্পোদ্যোগী সহ কঠোর পরিশ্রমী কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের আর্থিক চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর অন্যতম একটি হল প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা। যোজনায় ২ কোটি ৮১ লক্ষ ৮ হাজার ৮১৪ জন ব্যক্তির জন্য ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫০৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ঋণ বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৯ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা মূল্যের ঋণ দেওয়া হয়েছে।

 

কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, সুদখোর মহাজনদের কবল থেকে কৃষকদের রক্ষা করে সহজ শর্তে তাঁদের ঋণ সহায়তা দেওয়া। ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও সুদক্ষ ও স্বচ্ছ করে তুলতে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর, বিমুদ্রাকরণ, অপারেশন ক্লিন মানি সহ ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা ও দেউলিয়া বিধির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলির স্বীকৃতিদানের ফলে আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগগুলির সাফল্য সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই সংস্থাগুলি ভারতকে দ্রুততম বিকাশশীল উদীয়মান অর্থনীতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেইসঙ্গে, ভারতের সুস্থায়ী ও নমনীয় আর্থিক নীতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে।

 

বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচকে ক্রমতালিকায় ভারত ১৪২তম স্থান থেকে ৬৫তম স্থানে উঠে এসেছে।

 

বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতীয় অর্থনীতির অবদান ২০১৪-র ২.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৭-তে ৩.২ শতাংশে পৌঁছেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৬০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের গড় অবদান ছিল ১.৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবদান গড় ৭.৩ শতাংশ এই অবদানের জন্যই ভারতকে বিশ্বের দ্রুততম প্রধান অর্থনীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০-তে ভারতকে দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতির দেশ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। ২০১৮-১৯-এর প্রথমার্ধে ৭.৬ শতাংশ হারে জিডিপি বিকাশের দরুণই এই সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।

 

‘রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্বব্যাপী আর্থিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ২০১৮-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতকে ইতিবাচক অর্থনীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশে মাথাপিছু ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সরকারি বিনিয়োগ তথা কাঠামোগত সংস্কারের ফলে এই সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।

 

বিগত ছ’বছরের মধ্যে ২০১৭-১৮-তে মুদ্রাস্ফীতির গড় হার দাঁড়িয়েছে ৩.৩ শতাংশে। সরকারের একাধিক উদ্যোগ ও সংস্কারমূলক পদক্ষেপের দরুণ মুদ্রাস্ফীতির গড় হার বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কালো টাকা রোধ, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা, বিপুল সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তিদের শাস্তিমূলক কর প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত সম্পদ ও অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া প্রভৃতি।

 

বেনামি সম্পত্তির হদিশ পেতে আয়কর দপ্তর বেনামি সম্পত্তি লেনদেন বর্জন আইন আরও কঠোরভাবে রূপায়ণে সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করেছে। ৯০০টির বেশি বেনামি সম্পত্তির মামলায় ৩,৫০০ কোটি টাকার বেশি বেনামি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বেনামি সম্পত্তির হদিশ দিতে আয়কর বিভাগ ২০১৮-তে পুরস্কার প্রদান শুরু করেছে। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিলে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত পুরস্কারের সংস্থান রয়েছে।

 

রাষ্ট্রপতির সম্মতিদানের মধ্য দিয়ে ফেরার অর্থনৈতিক অপরাধী অধ্যাদেশ, ২০১৮ দেশে বলবৎ হয়েছে। আইন অনুযায়ী ভারতীয় কর্তৃপক্ষগুলিকে ফেরার অর্থনৈতিক অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ফেরার অর্থনৈতিক অপরাধী বিল, ২০১৮ সংসদে পেশ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

 

ভুয়ো সংস্থাগুলির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে এক টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্স ভুয়ো সংস্থা সম্পর্কিত এক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। সংগৃহীত তথ্য তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘কনফার্মড’ তালিকায় মোট ১৬,৫৩৭টি ভুয়ো সংস্থা রয়েছে। আইন বলবৎকারী সংস্থাগুলি ভুয়ো সংস্থার অনৈতিক কাজকর্মের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছে।

 

অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির প্রসারে প্রধানমন্ত্রী এক ঐতিহাসিক সহায়তামূলক উদ্যোগের সূচনা করেছেন। এ ধরণের সংস্থাগুলিকে সহজে ঋণ সহায়তা দিতে একটি পোর্টাল চালু করা হয়েছে, যেখানে আবেদনের ৫৯ মিনিটের মধ্যে ঋণ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে তাদের ২৫ শতাংশ সংগ্রহ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি থেকে করতে হবে বলে স্থির করে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি আইনের আওতায় ছোটখাট অভিযোগগুলির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যবস্থা সহজ ও সরল করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। ঋণ সংক্রান্ত ঐ পোর্টালের মাধ্যমে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের নৈতিক অনুমোদন পাওয়া যাবে। জিএসটি পোর্টালের মাধ্যমে এই পোর্টালের একটি লিঙ্ক দেওয়া হবে। জিএসটি নথিভুক্ত সমস্ত অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলির জন্য নতুন ঋণ গ্রহণে ২ শতাংশ সুদ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এই ধরণের শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রপ্তানিকারকদের জন্য ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ঋণ গ্রহণ ও সুদ ছাড়ে এ ধরণের সুযোগ-সুবিধার ফলে আর্থিক সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

প্রধানমন্ত্রী মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের স্বার্থে ঘোষণা করেছেন যে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসংস্থাগুলি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র থেকে যে ২৫ শতাংশ সামগ্রী সংগ্রহ করবে, তার ৬ শতাংশ মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত শিল্প সংস্থাগুলি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সংগ্রহ করতে হবেএখনও পর্যন্ত গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটে দেড় লক্ষেরও বেশি সরবরাহকারী নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার  সঙ্গে যুক্ত। গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

 

অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থার বিকাশে প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি, এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যনিধি তহবিল ও বিমা ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে২৮টি রাজ্যের ১১৫টি উন্নয়নে আগ্রহী জেলার প্রায় ১৫ হাজার যুবকের জন্য জাতীয় স্তরের শিল্পোদ্যোগ সংক্রান্ত সচেতনতা অভিযান ‘উদ্যম অভিলাষা’ চালু করা হয়েছে। এছাড়াও, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার সভারেন গোল্ড বন্ড প্রকল্প চালু করেছে। এ ধরণের বন্ড ২০১৮-র অক্টোবর থেকে ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে জারি করা হবে। এশিয়া পরিকাঠামো উন্নয়ন ব্যাঙ্ক ভারতের গ্রামাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, গ্রামাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটবে এবং আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটবে

 

রাজস্ব দপ্তরের জিএসটি বাবদ রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ২০১৮-র নভেম্বর মাসে ৯৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মোট রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৯৭,৬৩৭ কোটি টাকা। জিএসটি পরিষদের ৩১তম বৈঠকে জিএসটি হারে পরিবর্তনের ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে রয়েছে টিভি ও কম্পিউটার মনিটর স্ক্রিনের ক্ষেত্রে জিএসটি হার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির পাওয়ার ব্যাঙ্কের জিএসটি হার কমিয়ে ১৮ শতাংশ হয়েছে। ভিডিও গেম ও অন্যান্য গেমের ক্ষেত্রে জিএসটি ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ হয়েছে। মিউজিক বুক্‌স বাবদ জিএসটি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ হয়েছে। ১০০ টাকার বেশি সিনেমার টিকিটের ক্ষেত্রে জিএসটি হার ২৮ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশ এবং ১০০ টাকার টিকিটের ক্ষেত্রে জিএসটি হার ১৮ শতাংশ থেকে কমে ১২ শতাংশ হয়েছে। পণ্যসামগ্রী পরিবহণকারী যানবাহনের ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি বিমা প্রিমিয়াম প্রদানে জিএসটির হার ১৮ শতাংশ থেকে কমে ১২ শতাংশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার আওতায় বেসিক সেভিং ব্যাঙ্ক ডিপোজিট অ্যাকাউন্টধারীদের ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে যে পরিষেবা দেওয়া হয় তা জিএসটি-র আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।

 

রিভার্স চার্জ মেকানিজম বা আরসিএম-এর আওতায় কর প্রদানের ক্ষেত্রে সাংসদ এবং বিধায়কদের একই ধরণের কর ব্যবস্থার আওতায় রাখা হয়েছে।

 

আন্তঃরাজ্য পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে দেশ জুড়ে এক অভিন্ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০১৮-র পয়লা এপ্রিল ই-ওয়ে বিল চালু হয়। এ ধরণের ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্য ছিল দেশজুড়ে আন্তঃরাজ্য চেকপোস্টগুলির অবলুপ্তি ঘটিয়ে পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থাকে সহজ ও সরল করে তোলা।

 

বিমুদ্রাকরণের উদ্দেশ্য ছিল ভারতে কর মান্যতাবিহীন ব্যবস্থার পরিবর্তে এক কর ব্যবস্থা চালু করা। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরণের ব্যবস্থার ফলে অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং কালো টাকার উৎস প্রতিহত করা গেছে বিমুদ্রাকরণের ফলে নগদ টাকার এক বিপুল পরিমাণ অংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে কাজে লাগানো হয়েছে যা আখেরে এক স্বাভাবিক আর্থিক ব্যবস্থারই অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিমুদ্রাকরণের পরিণতি ব্যক্তিগত আয়কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যক্তিগত কর সংগ্রহের পরিমাণ গতবারের তুলনায় ২০.২ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে, কর্পোরেট কর সংগ্রহ ১৯.৫ শতাংশ বেড়েছে। বিমুদ্রাকরণ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণে যারা ব্যর্থ হয়েছেন, আয়কর বিভাগ ও অন্যান্য আইন বলবৎকারী সংস্থাগুলি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কালো টাকার হদিশ দিতে এবং কর ফাঁকি এড়াতে আয়কর বিভাগের গৃহীত প্রয়াসে সাধারণ মানুষকে সামিল করতে বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৮-তে পুরস্কার প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ বা সিবিডিটি ২০১৮-র জুলাই মাসে আরও ন’টি একতরফা অগ্রিম মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিগুলি স্বাক্ষরের ফলে সিবিডিটি-র মোট আগাম মূল্য নির্ধারণ চুক্তির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩২। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আগাম মূল্য নির্ধারণ চুক্তির সংখ্যা ২০।

 

বিগত তিনটি অ্যাসেসমেন্ট বর্ষে সব শ্রেণীর করদাতাদের দাখিল করা রিটার্ন অনুযায়ী, আয়ের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০১৪-১৫-র তুলনায় ২০১৭-১৮ অ্যাসেসমেন্ট বর্ষে রিটার্ন দাখিলকারীদের মোট আয় ৬৭ শতাংশ বেড়ে ৪৪ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। কর ফাঁকির বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক উদ্যোগের দরুণ প্রত্যক্ষ কর প্রদানের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৮-র এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে করদাতাদের রিফান্ড বাবদ ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ পূর্ববর্তী বছরের আলোচ্য সময়ের তুলনায় ২০.৮ শতাংশ বেশি।

 

সিবিডিটি-র পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত তিন বছরে গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)হারে প্রত্যক্ষ কর প্রদানে ধারাবাহিক অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে জিডিপি হারের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কর প্রদানের পরিমাণ ছিল ৫.৯৮ শতাংশ যা বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবথেকে বেশি।

 

বিগত চারটি অর্থবর্ষে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ২০১৩-১৪-র ৩ কোটি ৭৯ লক্ষ থেকে বেড়ে ২০১৭-১৮-তে ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ হয়েছে। একইভাবে, আয়করদাতার সংখ্যা ২০১৩-১৪-র ৩ কোটি ৩১ লক্ষ থেকে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে ২০১৭-১৮-তে ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ হয়েছে।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা দূরীকরণে একাধিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে, ব্যাঙ্কগুলিকে পুনর্মূলধন যোগানো, মূলধন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী, মূলধন বাড়াতে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা প্রভৃতি।

 

আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির খরচ কমিয়ে, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং মূলধন ভিত্তি আরও মজবুত করতে সরকার এই ব্যাঙ্কগুলির সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির সংস্কারে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও সহায়তাদানকারী ব্যাঙ্কগুলির পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও, অনাদায়ী অর্থ ফেরৎ ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা ও দেউলিয়া বিধি, ২০১৬ লাগু করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ১৯৪৯ সালের ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন আইনে সংশোধন করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া বা সেবির নীতি-নির্দেশিকায় সংশোধন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি ব্যক্তি তথা কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে তারা মূলধনী বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে না পারে।

 

স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়র-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ভারত সরকারের গৃহীত সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলির প্রশংসা করে বলেছে, ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছে আরও বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের আর্থিক সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ভারত সরকার স্বীকৃতিদান, সমাধান, পুনর্মূলধন ও সংস্কারের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ভারত সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গৃহীত উদ্যোগগুলির ফলে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র আরও মজবুত হয়ে উঠবে।

 

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের অঙ্গ হিসেবে অর্থ মন্ত্রক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘জন ধন দর্শক’ চালু করেছে। আর্থিক পরিষেবা দপ্তর এবং ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার যৌথভাবে এই অ্যাপ উদ্ভাবন করেছে। এই অ্যাপ-এর সাহায্যে সাধারণ মানুষ আর্থিক পরিষেবা প্রদান কেন্দ্র কোথায় রয়েছে সহজেই তার হদিশ পাবেন।

 

প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার আওতায় ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত ৩৩ কোটি ৪ লক্ষ গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত টাকার পরিমাণ ৮৫,৪৯৪ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। প্রধানমন্ত্রী বয়ঃবন্দনা যোজনার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০-র মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। এই যোজনার আওতায় আয়ের ওপর সুদ ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও, এই যোজনায় বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে ২০১৮-র ৩০ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ৩৯ লক্ষেরও বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। শিশুকন্যাদের নামে খোলা এই অ্যাকাউন্টগুলিতে সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।

 

অটল পেনশন প্রকল্পের গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লক্ষে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবর্ষের দোসরা নভেম্বর পর্যন্ত ২৭ লক্ষেরও বেশি নতুন গ্রাহক এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। ১৮-৪০ বছর বয়সী যে কোন ভারতীয় নাগরিক ব্যাঙ্ক অথবা ডাকঘরের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে এই যোজনায় যুক্ত হতে পারেন।

 

প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনার ২০১৮-র ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৭ লক্ষ। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বিমা যোজনার গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৪৭ লক্ষ। প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় কর্পোরেট বহির্ভুত সংস্থা, ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পোদ্যোগগুলিকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ২ কোটি ৯২ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৬৫টি ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৭৮৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। মঞ্জুরিকৃত এই ঋণ সহায়তার মধ্যে ২০১৮-র ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ১১৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে।

 

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংশোধিত আর্থিক পরিকল্পনা মতো সরকারের ঋণের পরিমাণ কমিয়ে জিডিপি-র ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনতে আর্থিক সংস্কার ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশগুলি গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও, সরকারের আর্থিক ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা কমানোর ব্যাপারে অন্যান্য যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলিও গৃহীত হয়েছে।

 

প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর উদ্যোগের মাধ্যমে ৩৬৬টি কর্মসূচি বা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা সরাসরি সুফলভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়। ২০১৮-র ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প খাতে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা সুফলভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ২০১৭-১৮-তে কৃষি ঋণ বন্টনের পরিমাণ ২০১৫-১৬-র ৯ লক্ষ ১৫ হাজার ৫০৯ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ১১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা হয়েছে।

 

ক্রমপরিবর্তনশীল বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে ব্যয় সংক্রান্ত দপ্তর, আর্থিক উপদেষ্টাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্দেশ্য, ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে

 

CG/BD/DM


(Release ID: 1560097) Visitor Counter : 978


Read this release in: English