বস্ত্রমন্ত্রক
বস্ত্র মন্ত্রকের কাজের পর্যালোচনা- ২০১৮
Posted On:
10 JAN 2019 7:56PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১০ জানুয়ারী, ২০১৯
ভারতের বস্ত্র শিল্প বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম বলে বিবেচিত হয়। কারণ এখানে এই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং উৎপাদনের জন্য মানবিক শ্রমশক্তির পর্যাপ্ত সংস্হান রয়েছে। আমাদের দেশে গ্রাম ও আধা শহরাঞ্চলে তাঁত, হস্তশিল্প এবং ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে পরিচালিত যন্ত্রচালিত তাঁত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্হান হয়ে থাকে। ভারতের শিল্প উৎপাদনের ৭ শতাংশ আসে বস্ত্র শিল্প থেকে। জাতীয় আয়েরও ২ শতাংশ এবং রপ্তানীযোগ্য পণ্যের ১৫ শতাংশ আসে এই শিল্পক্ষেত্র থেকে। তাই এই শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়নের স্বাভাবিক কারণেই সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। চলতি বছরে রেশম শিল্পের উন্নয়নে এইরকমই এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ২১৬১.৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দে ৩ বছরের এই কর্মসূচি রূপায়ণে দেশে রেশমের উৎপাদন বেড়ে ৩৮ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯-২০র মধ্যে দেশে হেক্টর প্রতি রেশমের উৎপাদন ১১১ কেজি করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দেশে রেশম গুটি উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষে কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদ এক বিশেষ ধরনের রেশম পোকা বা সিল্ক ওয়ার্মের ব্যবহার চালু করার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। দেশে উৎপাদিত সিল্প ওয়ার্মের তুলনায় নতুন এই সিল্ক ওয়ার্ম থেকে উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সিল্ক ওয়ার্ম ব্যবহার শুরু হলে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা সহ ১০টি রাজ্যের উপজাতীয় কৃষকরা উপকৃত হবেন।
বস্ত্রশিল্প ক্ষেত্রে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে ‘সমর্থ’ নামে একটি কর্মসূচির সূচনা হয়েছে এ বছরের মে মাসে। ইতিমধ্যেই পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১১ লক্ষেরও বেশি কর্মী এই দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে। গত চার বছরে এই ধরনের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে যত কর্মী প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তার ৭০ শতাংশই মহিলা। বর্তমানে বস্ত্র শিল্প ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নিযুক্ত আছেন। ২০২২ সালের মধ্যে আরো ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ এই শিল্প যুক্ত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় হস্তচালিত তাঁত উন্নয়ন কর্মসূচিতে ক্লাস্টার উন্নয়নের মডেলে ৪১২টি ক্লাস্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৫ সালে চালু এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৩৪৭ জন সুবিধা পেয়েছেন। এছাড়া হস্তশিল্পের উন্নয়নে তাঁতিদের জন্য মুদ্রা ঋণের ব্যবস্হা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে ৩ বছরের জন্য ৮১ হাজারেরও বেশি মুদ্রা ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। হস্তচালিত তাঁত শিল্পীদের জন্য একটি মুদ্রা পোর্টালও চালু রয়েছে। ভারতীয় হ্যান্ডলুম ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজ অব্যাহত আছে। হস্তচালিত তাঁত শিল্পীদের জন্য একটি টোল-ফ্রি হেল্প লাইনে (১৮০০২০৮৯৯৮৮) বাংলা সহ ৭টি ভারতীয় ভাষায় বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় প্রশ্নের জবাব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সারা দেশে তাঁত শিল্পী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ২৮টি অভিন্ন পরিষেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে তাঁতিদের জন্য বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্হা করা হয়েছে। এছাড়া পাওয়ার লুম ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষেও মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে সুসংহত টেক্সটাইল পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগকে ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং মোট ৬৫টি এ ধরনের পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাওয়ার লুম ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশের হস্তশিল্প ক্ষেত্রে শিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষে পরিচিতিপত্র প্রদানের কাজ চলেছে। দেশের বেশ কয়েকটি স্হানে হস্তশিল্পীদের জন্য মেগা ক্লাস্টার প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে আম্বেদকর হস্তশিল্প বিকাশ যোজনায় ৩ লক্ষের বেশি হস্তশিল্পী উপকৃত হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ ও কাশ্মীরে চিরাচরিত পদ্ধতিতে যেসব অঞ্চলে কার্পেট বোনা হয়ে থাকে, সেই অঞ্চলের কার্পেট শিল্পীদের উন্নয়নের লক্ষে ক্লাস্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে দেশে হস্তশিল্পের রপ্তানী বৃদ্ধি পেয়ে ২২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা হয়েছে। হস্তশিল্প ক্ষেত্রে বিদেশী ডিজাইনারদের ভিসা সংক্রান্ত ছাড়ের ব্যবস্হা করা হয়েছে।
দেশের যেসব অঞ্চলে কাপাস তুলোর চাষ হয়ে থাকে সেখানকার কৃষকদের সুবিধার্থে কাপাসের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কুইন্ট্যাল প্রতি ১১৩০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। তুলো ক্ষেত্রে উন্নতির লক্ষে ভারতের কটন কর্পোরেশন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ন্যাশনাল টেক্সটাইল কর্পোরেশনকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরে উল ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষে লে এবং কার্গিলে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের পাট ক্ষেত্রের আধুনিকীকরণের লক্ষে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা ব্যয়ে গবেষনা ও উন্নয়নের কাজ চালানো হচ্ছে। পাটের বস্তায় বাধ্যতামূলকভাবে খাদ্যশস্য প্যাকেজিং-এর জন্য আইনটির কাজের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরফলে বেশ কয়েক লক্ষ পাট চাষি এবং চটকল শ্রমিক উপকৃত হয়েছেন। এছাড়াও পাট চাষিদের সহায়তারও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজির পক্ষ থেকে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে মানুষের মধ্যে পোশাক পরিধানের প্রবণতা বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়ে এই ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের কথা ভাবা হয়েছে। ভারতের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ২০২১ সালের মধ্যে ২ হাজার ৩শো কোটি ডলারে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফ্যাশন প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
CG/PB/NS
(Release ID: 1559460)
Visitor Counter : 898