যোগাযোগওতথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রক

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রকের বর্ষশেষ পর্যালোচনা ২০১৮

Posted On: 10 JAN 2019 12:08PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৯ জানুয়ারি, ২০১

 

২০১৪ – ১৯ – এর মধ্যে টেলিযোগাযোগ পরিকাঠামো ও পরিষেবা খাতে সরকারের ব্যয় আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৪ সালের জুন মাসে ভয়েস কলের গড় মাশুল ছিল ৫১ পয়সা। পাঁচ বছরের মধ্যে মাশুল ৬৭ শতাংশ কমে ২০১৮-র জুনে ১১ পয়সা হয়েছে। একইভাবে, ডেটার গড় মাশুল ২০১৪-য় ২৬৯ টাকা প্রতি জিবি থেকে ৯৬ শতাংশ কমে ২০১৮-তে জিবি প্রতি ১২ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক ফিরিয়ে এনেছে ২০১৫ ও ২০১৬-র ঝঞ্ঝাটহীন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় স্পেকট্রাম নিলামের পদ্ধতি। ১৩৮২ মেগাহার্টজেরও বেশি স্পেকট্রাম বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকার এককালীন পাওনা বকেয়া অর্থ আদায় করেছে সরকার। ২০১৬-র অক্টোবর মাসে স্পেকট্রাম নিলামের পদ্ধতি স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনার টেলিযোগাযোগ দপ্তরকে ২০১৭-তে পুরস্কৃতও করে। এখন প্রত্যেকটি টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারীর কাছে যথেষ্ট পরিমাণে স্পেকট্রাম রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা সহজেই পরিষেবা প্রদান করতে পারে। এখন স্পেকট্রামের অভাবের কোনও কথা ওঠে না।

 

ভারত নেট প্রকল্প, যা গ্রামীণ ভারতে ব্রডব্যান্ডের যুগে অবতারণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে, আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ৫০ শতাংশকে অক্টোবর ২০১৮-র মধ্যে দ্রুতগতির অপ্টিক্যাল ফাইবার কেবলের মাধ্যমে জুড়ে দিয়েছে। জুলাই, ২০১২-তে প্রতিরক্ষার জন্য বিশেষ প্রকল্প নেটওয়ার্ক ফর স্পেকট্রাম কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত চার বছরে প্রকল্পে গতি এনে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৫১ হাজার কিলোমিটার জুড়ে অপ্টিক্যাল ফাইবার কেবল বসানো হয়েছে। ভারত নেট ও নেটওয়ার্ক ফর স্পেকট্রাম প্রকল্প রূপায়ণের কাজে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দিনে ৮০০ কিলোমিটার জুড়ে অপ্টিক্যাল ফাইবার বিছানোর কাজ হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ২০০ কিলোমিটার জুড়ে তার বিছানো হয়, যা এক রকম রেকর্ডের সৃষ্টি করেছে। ভারত নেট প্রকল্পে যুক্ত থাকার ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে আইটিআই লিমিটেড ১০২ কোটি টাকার মোট মুনাফা লাভের রিপোর্ট পেশ করেছে। ভারতে ফাইভ-জি পরিকাঠামো স্থাপনের জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম ২০১৮-র আগস্টে রিপোর্ট পেশ করেছে। শিল্প – অধ্যায়ন অংশীদারিত্বে এবং সরকারের সহায়তায় স্থাপিত হয়েছে ফাইভ-জি পরীক্ষামূলক পরিকাঠামো। আগামী বারো মাসের মধ্যে ফাইভ-জি’র পরীক্ষামূলক ব্যবহার সম্পন্ন করা হবে।

 

গত ন’বছরে দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে এসেছেন প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লক্ষ নতুন গ্রাহকমোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহারও ২০১৪-র তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৮-তে ৪৯ কোটি ১০ লক্ষ গ্রাহকের কাছে পৌঁছেছে। জুন ২০১৮-তে প্রাপ্য তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫১ কোটি ২০ লক্ষ গ্রাহক ইন্টারনেট পরিষেবার মধ্যে এসেছেন। এর ফলে, পাঁচ বছরের মধ্যে মোবাইলের বেস ট্রান্সিভার স্টেশনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মে, ২০১৮-তে দেখা গিয়েছে যে, সারা দেশ জুড়ে ১৪ লক্ষ কিলোমিটার অপ্টিক্যাল ফাইবার তার রয়েছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম দরে ভারতে ডেটা পরিষেবা দেওয়া হয়। মোবাইল ব্যবহার করে ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রেও বিকাশ এসেছে। এখন দেশের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ডিজিটাল লেনদেন করেন। ২০১৭-১৮’তে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে ৬২ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।

 

যেসব স্থানে টেলিযোগাযোগ পরিষেবা এখনও পৌঁছয়নি, সেইসব এলাকায় টেলিযোগাযোগ পরিকাঠামো স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উগ্র বামপন্থা অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে দুটি পর্যায়ে মোট ১২ হাজার ১১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭,১০৬টি মোবাইল টাওয়ার বসানো হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রের বিকাশের জন্য এ পর্যন্ত ২০১৮-তেই সর্বোচ্চ সংখ্যক টাওয়ার বসানো হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম, সীমান্ত এলাকা ও মহাসড়ক মিলিয়ে চলতি প্রকল্পগুলির জন্য ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ হয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষ্মাদ্বীপে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন ও মজবুত করার জন্য ২,২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় ওয়াইফাই পরিষেবার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে

 

টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রকে প্রতিযোগিতামূলক ও স্থায়ীভাবে সমর্থ করে তুলতে কাজের পদ্ধতিতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন – প্রতিযোগিতায় উৎসাহ যোগাতে স্পেকট্রাম বন্টন ও বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মোবাইল টাওয়ার ও ফাইবারের মতো পরিকাঠামো ব্যবস্থারও সক্রিয় ও অ-সক্রিয়ভাবেও ভাগাভাগির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মোবাইল নম্বর পোর্টাবিলিটির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রের আর্থিক বোঝা লাঘব করতে এবং সহজে বাণিজ্য করার কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে।

 

জাতীয় ডিজিটাল সংযোগ নীতি ২০১৮-র মিশন হ’ল ভারতে যোগাযোগ স্থাপন করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সুরক্ষিত করা। এই নীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্য হ’ল – ২০২২ সালের মধ্যে সকলের কাছে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়া, এই ক্ষেত্রে ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনকে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। আরেকটি বিশেষ উদ্দেশ্য হ’ল – আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের আইসিটি-র বিকাশ সূচকে ভারতের স্থানকে প্রথম ৫০-এ নিয়ে যাওয়া।

 

ডাকবিভাগের স্পীড পোস্ট পরিষেবা থেকে গড় বার্ষিক আয় গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা হয়েছে, অর্থাৎ ২০০৬ – ১৪’র মধ্যে আয় ৭৮৮ কোটি টাকার দ্বিগুণ। ই-কমার্স ক্ষেত্র থেকে ২০১৭-১৮’তে ডাকবিভাগ ৪১৫ কোটি টাকা রোজগার করেছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবর্ষের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮’তে একটি পৃথক পার্সেল নির্দেশালয় স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বাড়তি বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে ৪২টি পার্সেল কেন্দ্র ও ২৪২টি নোডাল ডেলিভারি কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলার সদর পোস্ট অফিসগুলিতে সবমিলিয়ে ৬৫০টি ইন্ডিয়া পোস্টাল পেমেন্টস্‌ ব্যাঙ্কের শাখা সহ ১,০১,১৭৩টি অ্যাক্সেস পয়েন্টে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে।

 

ব্যাঙ্ক পরিষেবার মধ্যে যাঁরা এসেছেন এবং এখনও যাঁরা আসেননি - তাঁদের সকলের সুবিধার্থে ইন্ডিয়া পোস্টাল পেমেন্টস্‌ ব্যাঙ্ক বিভিন্ন মাধ্যমে সবরকম আর্থিক পরিষেবা দিয়ে থাকে। গত চার মাসে পোস্টাল পেমেন্টস্‌ ব্যাঙ্কে ২০ লক্ষ ১১ হাজার খাতা খোলা হয়েছে এবং সবমিলিয়ে ৫৬১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ডাকবিভাগের ৯৯৫টি এটিএম খোলা হয়েছে।

 

২০১৮-তে সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে ১ কোটি ৫২ লক্ষ নাম নথিভুক্ত করেছেন। তার মধ্যে ১ কোটি ৩১ লক্ষটি খাতা ডাকবিভাগে খোলা হয়েছে।

 

এখনও পর্যন্ত দেশ জুড়ে ১৩,৩৫২টি ডাকঘরে আধার নথিভুক্তিকরণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলিতে সবমিলিয়ে ৮ লক্ষ মানুষ আধার সংযুক্তিকরণ করেছেন এবং ২৯ লক্ষ মানুষের আধার সংক্রান্ত তথ্য আপডেট করা হয়েছে। ২৫৪টি ডাকঘরে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে শুরু করা পোস্ট অফিস পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে এখনও পর্যন্ত ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষকে পাসপোর্টের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে। পোস্টাল জীবন বিমা এবং গ্রামীণ পোস্টাল জীবন বিমা – ডাকবিভাগের এই দুটি বিমা পরিষেবার সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে দেশের অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে সকলকে আনার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে, মার্চ ২০১৪ থেকে সেপ্টেম্বর, ২০১৮-র মধ্যে বিমা ক্ষেত্রে ডাকবিভাগের মোট সম্পদ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৩,০৬৮ কোটি টাকা হয়েছে। পোস্টাল জীবন বিমার সুবিধা এখন কেবলমাত্র সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্যই উপলব্ধ নয়, এই সুবিধা সব পেশাদার (শিক্ষক, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসক, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট) এবং শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত সংস্থার কর্মীদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সম্পূর্ণ বিমা গ্রাম যোজনার আওতায় এখনও পর্যন্ত ২,৫২৯টি গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে বিমা পরিষেবা প্রদান করা হয়েছেএই প্রকল্পের লক্ষ্য মার্চ, ২০১৯ – এর মধ্যে ১০ হাজারটি গ্রামে পৌঁছে যাওয়া।

 

নভেম্বর, ২০১৭-তে শিশুদের মধ্যে ডাকটিকিট সংগ্রহের শখের প্রসারের জন্য একটি ফিলেটেলি বৃত্তি চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতি বছর ডাকটিকিট সংগ্রহে আগ্রহী ৯২০ জন স্কুল পড়ুয়াকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ৮৩,৮৬১ জন ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

 

ডাকবিভাগ জনসাধারনের আগ্রহের বিভিন্ন বিষয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করে থাকে। এর মধ্যে রামায়ণ, মহাভারত, ভারতীয় রন্ধন, সৌরজগৎ, সফদরজং হাসপাতালের মতো বিষয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী দোসরা অক্টোবর, ২০১৮-তে বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করেছেন। ডাকবিভাগে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য গত পাঁচ বছরে ১০৮৭ কোটি টাকা (সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত তথ্য অনুসারে) বিনিয়োগ করা হয়েছে। গ্রামীণ ডাক সেবকরা সবমিলিয়ে ১ লক্ষ ২৯ হাজারেরও বেশি সিম-ভিত্তিক হস্ত-চালিত যন্ত্র ব্যবহার করছেন। ডিসেম্বর, ২০১৬ থেকে ন্যাশনাল অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউসে ৫ কোটি ৫১ লক্ষ লেনদেন বাবদ ৩,৯০৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’র মতো নির্দিষ্ট সময়ে ডাক পরিষেবা প্রদানের তথ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে পোস্টম্যান মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়েছে।

 

 

CG/SC/SB



(Release ID: 1559319) Visitor Counter : 223


Read this release in: English