বিজ্ঞানওপ্রযুক্তিমন্ত্রক
কাউন্সিল অফ সায়িন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক) বর্ষশেষ পর্যালোচনা- ২০১৮
Posted On:
08 JAN 2019 6:55PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৮ জানুয়ারী, ২০১৯
কাউন্সিল অফ সায়িন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)-কে পৃথিবীর বৃহত্তম সরকারি গবেষনা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। বিজ্ঞানের নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেমন- শক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং, খনি ও খনিজ, জেনেরিক ড্রাগ ও রাসায়নিক, উড়ান বিজ্ঞান ও কৌশলগত গুরুত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষনার ওপর জোর দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, স্বাধীন ভারতে তৈরি ১৪টি নতুন ড্রাগের মধ্যে ১১টি সিএসআইআর-এর গবেষনাগার থেকে এসেছে। সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির ৩৮টি জাতীয় গবেষনাগার, ৩৯টি প্রচারকেন্দ্র ও পাঁচটি কেন্দ্রতে চার হাজার জন সক্রিয় বিজ্ঞানীর সঙ্গে ৭ হাজার জন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রের কর্মী বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে চলেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সিএসআইআর পর্ষদের প্রধান। ২০১৭-১৮তে সিএসআইআর ১৭১টি ভারতীয় ও ৩৭৬টি বিদেশী সত্ত্বাধিকার লাভ করেছে।
সিএসআইআর ও দেরাদুনের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউন অফ পেট্রোলিয়ামের স্বত্ত্বাধিকারে থাকা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উড়ানের জৈব জ্বালানি তৈরি হয়েছে, যার সাহায্যে ইতিহাসে নজির রেখে গত ২৭শে আগস্ট, দেরাদুন থেকে দিল্লী একটি উড়ান চালানো হয়। উড়ানে জৈব জ্বালানি ব্যবহার হলে তা সৃষ্টিকারি গ্যাসের নির্গমন প্রায় ১৫ শতাংশ এবং সালফার অক্সাইডের নির্গমন প্রায় ৯৯ শতাংশ হ্রাস করবে। বিশ্বমানের গবেষনার ভিত্তিতে উদ্যোগগ্রহনের ক্ষেত্রকে বিশেষজ্ঞ তথ্য প্রদানের জন্য সিএসআইআর বেশ কয়েকটি ‘ইনকিউবেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করছে, যেখানে কয়েকটি বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে গবেষনার কাজ চালানো হবে। সিএসআইআর এবং সিএফটিআরআই হল খাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের একটি দিক নির্দেশক দুই প্রতিষ্ঠান। কর্ণাটক সরকারের সঙ্গে এই দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রয়াসে ‘নিউট্রা-ফাইটো ইনকিউবেশন সেন্টার’ খোলা হয়েছে। ঐ কেন্দ্র থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উদ্যোগগুলিকে বিশেষজ্ঞ তথ্য ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। একইভাবে হায়দ্রাবাদে সিএসআইআর-এর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি কেন্দ্রেও একইরকম ব্যবস্হা চালু করা হয়েছে, যেখান থেকে স্টার্টআপ সংস্হাগুলিকে বৈজ্ঞানিক পরামর্শ, পরিকাঠামো ও ব্যবস্হা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়।
সিএসআইআর-এর উড়ান সংক্রান্ত গবেষনাগারে তৈরি নকশা অনুযায়ী নির্মিত একটি ১৪ সিটের সরস-পিটিওয়ানএন উড়ান ২০১৮-র ফেব্রুয়ারী মাসে সফলভাবে যাত্রা করে। এই উড়ান যানটির ২০টি পরীক্ষামূলক উড়ান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে সরস-এমকে২ নামক ১৯ সিটের উড়ান যানের নকশা তৈরি করা হবে। এছাড়া, তেজস উড়ানযানের যন্ত্রাংশ উৎপাদনের জন্য সিএসআইআর- ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এনএএল) হিন্দুস্হান অ্যারোনটিক্সের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার বরাত পেয়েছে। প্রতিরক্ষা ও আধা-সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিন টার্গেট সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য বিইএল-এর সঙ্গে সিএসআইআর-এনএএল একটি প্রযুক্তিগত সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিমানবন্দরগুলিতে পাইলটদের রানওয়েতে দৃশ্যমানতা সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য ‘দৃষ্টি’ নামক দেশীয় পদ্ধতিতে সাশ্রয়ী প্রযুক্তিগত ব্যবস্হা গড়ে তুলেছে এনএএল। এই প্রযুক্তি দেশের বহু বিমানবন্দরে কাজে লাগানো হচ্ছে। চন্ডিগড়ে সিএসআইআর- সিএসআইও কেন্দ্রে আর্টিফিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা দ্বারা চালিত একটি সংকেত ব্যবস্হা তৈরি করা হয়েছে, যা সীমান্ত এলাকায় সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহন ও গবাদি পশুর চলাচল এবং আলাদাভাবে মানুষজনের চলাচল সনাক্ত করা যায় ও সন্ত্রাস, মাদকপাচার রোধ করে সীমান্ত এলাকায় সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হয়।
এছাড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্হানগুলিতে সুরক্ষা ব্যবস্হা জন্য সম্প্রতি একটি অভিযান চালু হয়েছে। ভূকম্প জনিত দুরবস্তার সমাধান, পাহাড়ের ধসপ্রবণ এলাকা ও উত্তরাখন্ডে পাহাড়ের ঢালে যথাযথ ব্যবস্হা নিয়ে ধস এড়ানোর প্রযুক্তিগত ব্যবস্হা গ্রহনের জন্যই এই ব্যবস্হা গৃহীত হয়েছে।
সিকেল সেল রক্তাল্পতা সংক্রান্ত গবেষনা সংক্রান্ত অভিযানও চালাচ্ছে সিএসআইআর। এই ধরনের অ্যানিমিয়ার কারণ অনুসন্ধান, ওষুধ নির্বাচন ও জিন সংক্রান্ত নানান দিক চিহ্নিত করাই এর উদ্দেশ্য। এছাড়া স্ট্রোকের জন্য ক্লট ব্লাস্টার চিকিৎসা ব্যবস্হার একটি স্বত্ত্বাধিকার পেয়েছে সিএসআইআর। সিএসআইআর ডঃ লাল প্যাথ ল্যাবস-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে জিনগত অসুখ চিহ্নিত করার বিষয়ে। একটি স্টার্টআপ সংস্হার সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে সিএসআইআর কম মূল্যে স্টেন্ট তৈরি করেছে। বর্তমানে এই প্রযুক্তির স্বত্ত্ব দুটি সংস্হাকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। সিএসআইআর-এর উদ্যোগে দৃষ্টিশক্তিহীনদের জন্য ব্যক্তিগত রিডিং মেশিন- দিব্যনয়ন তৈরি হয়েছে। সিএসআইআর-এর একটি কেন্দ্রে শারীরিকভাবে অক্ষম ও বয়স্ক জনসংখ্যার জন্য প্রযুক্তির মাধ্যমে চালিত হুইলচেয়ার নির্মিত হয়েছে। ভারতের শিল্প জগতকে পাঁচ বছর সময়কালের জন্য ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য এই প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক গবেষনা কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে গ্লুকোকর্টিকয়েড থেকে অস্ট্রিওপরোসিস ও মাসকুলার অ্যাট্রপির চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরি হয়েছে। প্রস্তুতির প্রযুক্তি গুজরাট ফরমান্জা হার্বালস্ প্রাইভেট লিমিটেডকে আরো গবেষনা ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে।
পরিকাঠামো গঠনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনা পর্ষদ ২০১৮তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই প্রতিষ্ঠান দ্রুত, দীর্ঘস্হায়ী ও শক্তির যথাযথ ব্যবহারের ভিত্তিতে গণ আবাসন নির্মাণের একটি অভিযান চালু করেছে। এই অভিযানের পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে দেশজুড়ে বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্হান ও আবহাওয়ার মধ্যে স্বল্প মূল্যের আবাসন নির্মাণ করা যায়। এছাড়া ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়ি ও নির্মিত স্হানগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে গুরুত্ব সহকারে পুরনো বাড়িগুলির কাঠামোর অবস্হা নজরদারির প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। এছাড়া, চন্ডীগড়স্হিত সিএসআইও-র গবেষনাগারে স্মার্ট ইলেকট্রিক মিটার তৈরি করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি মুম্বাইস্হিত সংস্হা আটসুয়া টেকনোলজিসকে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুরসভা অঞ্চলগুলিতে কঠিন বর্জ্য নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় প্লাজমা ব্যবহারের প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, সিএসআইআর-সিএমইআরআই সোলার পাওয়ার ট্রি প্রযুক্তি এনেছে যাতে স্বল্প এলাকার মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
এই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে কয়েকটি প্রযুক্তি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রকেও বিকশিত করছে। জল বিহীন ট্যানিং প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে যার সাহায্যে অপচয় হওয়া জলে প্রায় ২০ হাজার টন ক্রোমিয়াম মিশে গিয়ে দুষণ সৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা হবে। এই প্রযুক্তি সারা দেশে জনসাধারণ গ্রহণ করেছে, দেশ জুড়ে ৫০টি ট্যানারিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। সিএসআইআর ‘দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য অনুঘটন’ নামক একটি প্রকল্প তিন বছর ধরে মিশন মোডে রূপায়িত করছে যাতে ভারতের রাসায়নিক শিল্পের জন্য, প্রচলিত জ্বালানীর পরিবর্তে পুনর্নবীকরণযোগ্য সামগ্রী যেমন- জৈববস্তুপুঞ্জ, জল, কার্বন ডাই অক্সাইড ও সেলের মতো জ্বালানী ব্যবহার করে রাসায়নিক বস্তু প্রস্তুত করা যায়। দেশে ওষুধ ও কৃষি-রাসায়নিক শিল্পের জন্য নানারকম উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে চালু করা হচ্ছে। ২০১৮তে সিএসআইআর-এর তৈরি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য অন্যান্য উল্লেখনীয় প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে গ্রাফিং অক্সাইডের বৃহৎ মাত্রায় উৎপাদন, বোরিং মেশিনের মাধ্যমে ‘ট্রেঙ্চলেস’ প্রযুক্তিতে খনন, সড়ক নিরাপত্তার জন্য গ্লাস টেক্সটাইলভিত্তিক ক্র্যাশ বেরিয়ার ব্যবস্হা, মাইক্রো ফুয়েল সেল।
বিদ্যালয়স্তরে ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আগ্রহ বাড়াতে সিএসআইআর মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে একযোগে জিজ্ঞাসা নামক কর্মসূচি চালু করেছে। ২০১৮তে দেশজুড়ে ১ হাজার ১৫১টি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ২৭ হাজার ছাত্রছাত্রী ও ২৫০০ শিক্ষককে সিএসআইআর-এর ৩৮টি জাতীয় গবেষনাগারের সঙ্গে যুক্ত করতে ২০০টির ও বেশি কর্মসূচি রূপায়ণ করা হয়েছে। ২০১৮তে স্মার্ট ইন্ডিয়া হ্যাকাথনে সিএসআইআর সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় এবং দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের ছাত্রছাত্রীদেরকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব সিএসআইআর-এর পুনের এনসিএল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরপূর্ব ভারতে বিশেষভাবে সিএসআইআর-এর প্রচারানুষ্ঠান চালানো হয়েছে। উত্তরপূর্বাঞ্চলে প্রায় ১০০টি শিল্পসংস্হা ও সিএসআইআর-এর ৫০ জন বিজ্ঞানী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ভবিষ্যতে উত্তরপূর্ব থেকে শিল্পক্ষেত্র ও প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে আটটির মতো সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক স্তরেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা স্হাপনের জন্য বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সিএসআইআর আদান-প্রদানমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে। কোরিয়া, জার্মানী, চীনের তাইপেই, জাপান, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার উচ্চপদস্হ আধিকারিক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
CG/SC/NS
(Release ID: 1559168)
Visitor Counter : 216