কৃষিমন্ত্রক

বর্ষ শেষ পর্যালোচনা, ২০১৮ : কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রক

Posted On: 03 JAN 2019 2:20PM by PIB Kolkata

কেন্দ্রীয় কৃষি, সহযোগিতা ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রক দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে থাকে। ২০১৮-১৯-এ খাদ্যশস্য উৎপাদনের ধার্য লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৯ কোটি ২ লক্ষ ৫০ হাজার টন। ২০১৭-১৮-র চতুর্থ আগাম হিসাব অনুযায়ী, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে ২৮ কোটি ৪৮ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।

 

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-র জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুজনিত বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক ছিল।

 

২০১৭-১৮-র চতুর্থ আগাম হিসাব অনুযায়ী, রবি মরশুমে প্রধান কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন ২০১৬-১৭-র উৎপাদনের তুলনায় ৭৩ লক্ষ ২০ হাজার টন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রবি মরশুমে ধানের উৎপাদন রেকর্ড ১ কোটি ৫৪ লক্ষ ১০ হাজার টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইভাবে, গমের উৎপাদন রেকর্ড ৯ কোটি ৯৭ লক্ষ টনে পৌঁছবে বলে পূর্বানুমান। পুষ্টিকর ফসল এবং ডালের উৎপাদনেও রেকর্ড বৃদ্ধির সম্ভাবনা। তৈলবীজ উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৩ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছনোর সম্ভাবনা।

 

২০১৮-১৯-এর প্রথম আগাম হিসাব অনুযায়ী খরিফ মরশুমের প্রধান কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন ২০১৭-র চতুর্থ আগাম হিসাব অনুযায়ী ১৪ কোটি ৭ লক্ষ ৩০ হাজার টনের তুলনায় ১৪ কোটি ১৫ লক্ষ ৯০ হাজার টনে পৌঁছবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত সময়ে খরিফ খাদ্যশস্যের উৎপাদন গড় ১ কোটি ১৯ লক্ষ ৪০ হাজার টন করে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ নাগাদ কৃষকদের উপার্জন দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। কৃষি, সহযোগিতা ও কৃষককল্যাণ দপ্তরের অধীন জাতীয় বৃষ্টিধৌত এলাকা কর্তৃপক্ষের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কৃষকদের উপার্জন দ্বিগুণ করার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় রণকৌশল গ্রহণের প্রস্তাব করবে।

 

ইতিমধ্যেই কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় উপার্জনের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সমস্ত উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে কৃষি বিপণন ব্যবস্থার সংশোধন করে রাজ্য সরকারগুলির সহায়তায় বাজার সংস্কারের উদ্যোগ, ২২ হাজার গ্রামীণ হাট স্থাপন, অনলাইন বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য ই-ন্যাম (ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেট) ব্যবস্থার সূচনা, কৃষকদের মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান, প্রতি ফোঁটা জলসেচে আরও বেশি শস্য উৎপাদন, পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শস্য ক্ষতিতে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা প্রভৃতি।

 

দেশে দুগ্ধ উৎপাদনশীল গরুর বংশ বিস্তারে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দেশীয় প্রজনন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন রূপায়িত হচ্ছে। গবাদি পশুর উৎপাদনশীলতা এবং জিনগত মানোন্নয়নে জাতীয় গবাদি পশু মিশন রূপায়িত হচ্ছে। একইভাবে, মৎস্যক্ষেত্রের বিপুল সম্ভাবনার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে নীল বিপ্লবের লক্ষ্যে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় আটটি কর্মসূচির অন্যতম একটি হিসেবে ধারাবাহিক কৃষিকাজ সংক্রান্ত জাতীয় মিশন কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রক রূপায়ণ করছে।

 

প্রধান খাদ্যশস্য যেমন, ধান, গম, ডাল, মোটা দানাশস্য প্রভৃতির উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ২৯টি রাজ্যের ৬৩৮ জেলায় জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশন রূপায়িত হচ্ছে। জোয়ার, বাজরা, রাগির মতো প্রভৃতি পুষ্টিকর দানাশস্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ১৪টি রাজ্যের ২০২টি জেলায় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের আওতায় পুষ্টিকর দানাশস্য কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে।

 

ডাল জাতীয় দানাশস্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে উচ্চফলনশীল বীজ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ১৫০টি বীজ হাব গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্য সরকারগুলির সহায়তায় উচ্চফলনশীল বীজের উৎপাদনে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের আওতায় ১৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ডালশস্যের ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণে এ জাতীয় শস্যের অতিরিক্ত মজুতভাণ্ডার গড়ে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

 

তৃতীয় কৃষি উন্নতি মেলায় প্রধানমন্ত্রী জৈব সার ব্যবহার করে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যগুলির জন্য ই-বিপণন পোর্টালের সূচনা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে তাঁদের জীবনযাপনের মানোন্নয়ন ঘটানোই এই পোর্টাল চালু করার উদ্দেশ্য। মহিলা কিষাণ দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মহিলা কৃষক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মহিলা শিল্পোদ্যোগী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষক ও বিজ্ঞানী, কৃষক সংগঠন, ব্যাঙ্ক প্রতিনিধি ও শিল্প প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রায় ৪৫০ জন যোগ দেন। ৪৪ জন মহিলা কৃষককে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সংবর্ধিত করা হয়।

 

কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত উপদেশ ও পরামর্শ প্রেরণের জন্য এম-কিষাণ পোর্টালে নথিভুক্ত কৃষকের সংখ্যা ২০১৮-র ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৩৬-এ পৌঁছেছে। একইসঙ্গে, আলোচ্য বছরে কিষাণ সুবিধা মোবাইল অ্যাপে আরও চারটি নতুন পরিষেবা যুক্ত করা হয়েছে।

 

উদ্যান পালন ক্ষেত্রের উন্নয়নে জাতীয় মিশনের আওতায় অতিরিক্ত ৭৬ হাজার ১৫ হেক্টর জমিকে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৯০০-টি ক্ষেত্রে জল সঞ্চয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও, ভারত-ইজরায়েল সহযোগিতায় ৩০টি উৎকর্ষকেন্দ্র স্থাপনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে চারটি ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে।

 

কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পরিকাঠামো ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রক রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা রূপায়ণ করছে। এই যোজনার আওতায় বর্তমানে চালু কৃষি বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিকে সুসংহত করার পাশাপাশি, চাহিদা-ভিত্তিক পরিকাঠামো, সাজসরঞ্জাম ও মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা হয়।

 

স্থায়ী কৃষিকাজ সংক্রান্ত জাতীয় মিশনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখা। এই লক্ষ্যে রাসায়নিক সারের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়। মিশনের আওতায় মৃত্তিকার গুণমান পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য বিভিন্ন রাজ্যকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। দেশে কৃষকদের ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হয়ে আসছে। এ ধরণের কার্ড দেওয়ার উদ্দেশ্য হল মাটির পৌষ্টিক গুণমান সম্বন্ধে কৃষকদের তথ্য প্রদান করা। প্রতি দু’বছরে কৃষকদের এ ধরণের কার্ড দেওয়া হয়ে থাকে। রাজ্যগুলিকে এখনও পর্যন্ত মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান খাতে ১৮,৭৬৯ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।

 

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে জৈব সার-ভিত্তিক চাষাবাদ ব্যবস্থার বিকাশে মন্ত্রক কেন্দ্রীয় সহায়তাপুষ্ট একটি প্রকল্প রূপায়ণ করে আসছে। উদ্দেশ্য, রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার তথা মাটির গুণমান ও ঊর্বরতা বজায় রাখা। ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আটটি রাজ্যের জন্য ৪০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা – প্রত্যেক জলফোঁটায় আরও বেশি শস্যএই যোজনার উদ্দেশ্য হল কৃষিকাজে ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে জলের ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানো। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ২০১৮-১৯-এ ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১,৯৭৮ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর ফলে, প্রায় ৬ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমি উপকৃত হয়েছে।

 

ক্ষুদ্র কৃষি সেচ তহবিলে ২০১৭-১৮-র কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকার সংস্থান হয়েছে। তহবিলের এই অর্থ ২০১৮-১৯-এ ২ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০-তে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের সরকারি-বেসরকারি লগ্নিতে উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ।

 

বৃষ্টিধৌত এলাকা উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণের উদ্দেশ্য হল জলবায়ুর খামখেয়ালিপনায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। সেইসঙ্গে, সুসংহত কৃষিকাজ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া। এই কর্মসূচিতে ২০১৮-১৯-এ ২৩৪ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়। রাজ্যগুলিকে এখনও অবধি ১৪৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমি সুসংহত কৃষিকাজ ব্যবস্থার আওতায় এসেছে।

 

কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য প্রদানে উৎপাদন খরচের ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ মরশুমে সরকার, খরিফ ও রবি মরশুমে সমস্ত ফসলের জন্য উৎপাদন খরচের ৫০ শতাংশ কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অন্নদাতা আয় সংরক্ষণ অভিযান বা পিএম-আশা নামে নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্প কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে। ‘অন্নদাতাদের’ স্বার্থে এই কর্মসূচি সরকারের অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন। এই কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য মন্ত্রিসভা অতিরিক্ত ১৬,৫৫০ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, প্রকল্প খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৪৫,৫৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

 

কৃষকদের কাছ থেকে ফসল সংগ্রহের ব্যাপারে সরকারের অগ্রাধিকার বজায় রয়েছে। ২০১০-১৪ পর্যন্ত সময়ে সংগ্রহ খাতে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩,৫০০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৮ পর্যন্ত সময়ে এই পরিমাণ দশগুণ বেড়ে পৌঁছেছে ৩৪ হাজার কোটি টাকায়। মূল্য সহায়তা প্রকল্পে কেন্দ্রীয় নোডাল এজেন্সিগুলি রাজ্য সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন ধরণের ডালশস্য, তৈলবীজ ও শুকনো নারকেল শাঁস সংগ্রহ করে থাকে। আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, নাফেড-এর পাশাপাশি ভারতীয় খাদ্য নিগম জেলা এবং রাজ্যস্তরে মূল্য সহায়তা প্রকল্পে শস্য সংগ্রহের কাজ চালাবে।

 

জাতীয় কৃষি বাজার বা ই-ন্যাম উদ্যোগে ১৬টি রাজ্য ও দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৫৮৫টি ই-ন্যাম বা জাতীয় কৃষি বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে ১১৫টি হোলসেল রেগুলেটেড বা নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজার ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন ফসলের ঝাড়াই, গুণমান নির্ধারণ, বাছাই এবং প্যাকেজিং-এর জন্য ১৩৭ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটি ২০১৮-২০ সময়ে ই-ন্যাম ব্যবস্থার আওতায় অতিরিক্ত ৪১৫টি হোলসেল রেগুলেটেড বাজার ব্যবস্থাকে যুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

 

গ্রামীণ হাট বা বাজারগুলি কৃষি বাজার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রকের বিপণন ও নজরদারি শাখা ৯,৪৭৭টি গ্রামীণ বাজারে সমীক্ষা চালিয়েছে। উদ্দেশ্য, এই হাটগুলির পরিকাঠামো, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রভৃতির মানোন্নয়নে তহবিল প্রদান করে কৃষি বাজারে রূপান্তরিত করা। গ্রামীণ কৃষি বাজারগুলিতে বিপণনের সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলার জন্য ২ হাজার কোটি টাকার কৃষি বাজার পরিকাঠামো তহবিল গঠনের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির কাছে বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়েছে।

 

ফসলের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা চালু হয়েছে। সম্প্রতি এই যোজনা রূপায়ণের নীতি-নির্দেশিকায় সংশোধন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, কৃষকদের দাবি-দাওয়া সময়মতো প্রদানে আরও স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে আসা।

 

দেশীয় অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাই, কৃষির উৎপাদন বাড়াতে ঋণ সহায়তার প্রদানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কাছে সময়মতো সহজ ও স্বল্প সুদের হারে পর্যাপ্ত ঋণ পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ধারাবাহিক ও লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ঋণ সহায়তা প্রদানের বড় ভূমিকা রয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, সুলভে আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে যাওয়ার ফলে উৎপাদনশীলতা, চাষিদের আয় ও খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

 

কেন্দ্রীয় সরকার প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সহায়তার সুবিধা আরও বেশি সংখ্যক কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে চাষিরা উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি তথা সমাজের দুর্বলতর শ্রেণীর মানুষ কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারছেন। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ বাজেটে কৃষি ক্ষেত্রের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ সহায়তা স্থির করে থাকে। একটি আর্থিক বছরের মধ্যেই ব্যাঙ্কগুলিকে কৃষি ঋণ প্রদানের ঐ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়। ২০১৭-১৮ সালে ১০ লক্ষ কোটি ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল। অবশ্য, আলোচ্য বর্ষে ১১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকার বেশি কৃষি ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

 

কৃষি ঋণে সুদ ছাড় সহায়তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্ক ও আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে কৃষক প্রতি ৩ লক্ষ টাকার স্বল্পমেয়াদি শস্য ঋণ প্রদানে বার্ষিক ২ শতাংশ হারে সুদ ছাড় দিয়ে থাকে। সুদ ছাড় সহায়তার এই কর্মসূচিটি ছাড়াও ২০০৯-১০ সাল থেকে সরকার দ্রুত ঋণ পরিশোধকারী কৃষকদের অতিরিক্ত সুদ ছাড় সহায়তা দিয়ে আসছে। বর্তমানে, এই সুদ ছাড় সহায়তার পরিমাণ ৩ শতাংশ। দ্রুত ঋণ পরিশোধকারী কৃষকরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে বার্ষিক ৪ শতাংশ হারে স্বল্পমেয়াদি শস্য ঋণ পেয়ে থাকেন।

 

উন্নত কৃষি ব্যবস্থা এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মন্ত্রক বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মউ স্বাক্ষর করে থাকে। ২০১৮-তে উজবেকিস্তানের সঙ্গে এ ধরণের একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এছাড়াও, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ কর্মীগোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে ভারত ও নেপালের মধ্যে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতায় ভারত, এশিয়া ও আফ্রিকার ২০টি দেশের আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই দেশগুলির ৫৬৫ জন আধিকারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের কৃষি সংক্রান্ত যে স্থায়ী কর্মীগোষ্ঠী রয়েছে তার বৈঠকে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রক অংশ নিয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের সদস্য রাষ্ট্রগুলির সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি রূপায়ণের জন্য ২০১৮-১৯-এ সাত দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মউ স্বাক্ষরের পাশাপাশি, মন্ত্রক দেশে ও বিদেশে কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান, সভা-সমিতি, কর্মশিবির, সম্মেলন প্রভৃতি আয়োজন করেছে। ২০২৩ সালটিকে ‘আন্তর্জাতিক ভুট্টা বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংগঠনের (এফএও) কাছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার অধিবেশনে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার আগে ২০১৯-এর জুন মাসে সংগঠনের যে সম্মেলন আয়োজিত হবে, সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য এই প্রস্তাব পেশ করা হবে।

 

 

CG/BD/DM


(Release ID: 1558403) Visitor Counter : 1968


Read this release in: English