কয়লামন্ত্রক

বর্ষশেষ পর্যালোচনা, ২০১৮ – কয়লা মন্ত্রকের উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্য ও উদ্যোগ

Posted On: 02 JAN 2019 5:27PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০২ জানুয়ারি, ২০১৯

 

দেশে ২০১৮–১৯ - এর এপ্রিল-নভেম্বর সময়ে কাঁচা কয়লার উৎপাদন পরিমাণ ৪৩৩.৮৯৬ মিলিয়ন টন। গত বছরের ঐ একই সময়ে উৎপাদন পরিমাণ পৌঁছায় ৩৯৪.৯১০ মিলিয়ন টনে। উৎপাদনের দিক থেকে এবার কয়লার সামগ্রিক উত্তোলন ৯.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের এপ্রিল – নভেম্বর সময়ে কয়লা উৎপাদন ও কয়লা প্রেরণের পরিমান ছিল যথাক্রমে ৩৫৮.৩২২ মিলিয়ন টন এবং ৩৯২.০৯১ মিলিয়ন টন। আলোচ্য সময়ে কোল ইন্ডিয়ার উৎপাদন ও সরবরাহ যথাক্রমে ৮.৮ শতাংশ এবং ৬.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায়ই দেখা যায় যে, জুন – সেপ্টেম্বর সময়ে কয়লার উৎপাদন লক্ষ্যণীয় হারে হ্রাস পেয়ে থাকে।

 

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে কয়লা সরবরাহের ওপর নজরদারি রাখার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রক, কয়লা মন্ত্রক এবং রেল মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রক উপগোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে। এই গোষ্ঠী বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কয়লা সরবরাহ ও যোগান সংক্রান্ত যে কোনও জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

 

কয়লা মন্ত্রক ২০১৭-তে ‘শক্তি’ (স্বচ্ছতা বজায় রেখে দেশে কয়লা সরবরাহ ও যোগান) নামে নতুন একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্প অনুযায়ী প্রায় ৬৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রগুলিতে কয়লার নিরবচ্ছিন্ন যোগান বজায় রাখা হয়। বাৎসরিক চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও, জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্ব হওয়ায় ১৯ হাজার ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির ২০২২ সালের মার্চ মাস নাগাদ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

শক্তি প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৬টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কারাখানাকে জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। অন্য ১৮টি উৎপাদন কেন্দ্রকে কয়লা সরবরাহের যোগসূত্র গড়ে তোলার আওতায় নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিমেন্ট, স্পঞ্জ আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম এবং ইউরিয়া সারের মতো অনিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্রগুলিতে কয়লা সরবরাহের জন্য যোগসূত্র গড়ে তুলতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড এ ধরণের ক্ষেত্রগুলিতে ৭১.২ মিলিয়ন টন কয়লা সরবরাহের বরাত পেয়েছে।

 

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে সরবরাহকৃত কয়লার পূর্ণ সদ্ব্যহারে ব্রিজ লিঙ্কেজ বা এক উৎপাদন কেন্দ্র থেকে অন্যত্র সরবরাহের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে, একটি উৎপাদন কেন্দ্রের উদ্বৃত্ত কয়লা অন্য কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

 

তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে কয়লার গুণমান যাচাই করার জন্য মন্ত্রক ২০১৫ সালে আদর্শ কার্যপরিচালন প্রণালীর জন্য নীতি-নির্দেশিকা জারি করে। এই নীতি-নির্দেশিকা অনুযায়ী, কয়লা বোঝাইয়ের সময় এবং সরবরাহকৃত সেই কয়লা যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার সময়ে, তার গুণমান বজায় রয়েদছে কিনা, তৃতীয় পক্ষ তা খতিয়ে দেখে।

 

২০১৮-১৯ – এ বিলগ্নিকরণ – কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটি ২০১৫-র নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া ১০ শতাংশ পেড আপ ইক্যুইটি মূলধন বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে সংস্থার ৩.১৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রয় প্রস্তাবের মাধ্যমে বিলগ্নিকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির স্বীকৃতি অনুসারে একটি নতুন এক্সচেঞ্জ ট্রেড ফান্ড বা ভারত-২২ ইটিএফ গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলের মাধ্যমে কোল ইন্ডিয়ার ০.২২৫ শতাংশ এবং এই সংস্থার সহযোগী সংস্থা এনএলসিআইএল – এর ০.১০ শতাংশ শেয়ার বিলগ্নিকরণ করা হয়েছে।

 

কয়লা খনি আইন, ২০১৫ অনুযায়ী কয়লা ব্লকের বন্টন – আইন অনুযায়ী এ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ৮৫টি কয়লা ব্লক বন্টন করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রাথমিকভাবে ৯২টি কয়লা ব্লক বন্টন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে কয়লা খনি উন্নয়ন ও উৎপাদন চুক্তি অনুযায়ী ৭টি কয়লা ব্লক বন্টন বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। বর্তমান কয়লা ব্লক নিলাম ব্যবস্থাকে আরও সুদক্ষ করে তুলতে এবং এই ব্যবস্থায় যে ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করতে এক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গত ১২ই জুলাই কয়লা ব্লক বন্টনে পরিবর্তন সংক্রান্ত পরামর্শ ও প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

কয়লা খনি (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন, ২০১৫ অনুযায়ী বন্টিত কয়লা ব্লকগুলির মধ্যে ৬টি ব্লকের উৎপাদন ও কাজকর্ম শুরু হয়েছে। এছাড়াও, দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত ১৫টি চালু কয়লা খনির মধ্যে ১২টি কয়লা খনির বন্টন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের বন্টন প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া গেলেই শুরু হবে।

 

কয়লা খনি বিশেষ ব্যবস্থা আইন, ২০১৫ আওতায় বন্টন হওয়া খনিগুলি থেকে গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট ৫৬.১৩ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদিত হয়েছে। কয়লা খনির বন্টন থেকে রয়্যালটি, কর ও সেস বাদ দিয়ে ৬ হাজার ৯৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হয়েছে। কয়লার অনুসন্ধানের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে মোট ২ লক্ষ ২২ হাজার মিটার এলাকা চিহ্নিত করা হয়, যা গত অর্থবর্ষের অনুসন্ধান এলাকার তুলনায় ৪৭ হাজার মিটার বেশি। একইভাবে, কোল ইন্ডিয়া বহির্ভূত কয়লা অনুসন্ধান এলাকার পরিধি ছিল ৫ লক্ষ ১২ হাজার ৫০০ মিটার, যা গতবারের তুলনায় ১৩ হাজার মিটার বেশি।

 

রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত খনি থেকে উদ্ধার সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের সহযোগী সংস্থা ডব্লিউসিএল – এর উদ্ধারকারী দল সেরা দলের স্বীকৃতি পায়। এছাড়াও, ডব্লিউসিএল নাগপুরে খনিতে থাকা পাথরের পরীক্ষা সংক্রান্ত এক গবেষণাগার গড়ে তুলেছে। কয়লা ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজকর্ম কয়লা সচিবের সভাপতিত্বে গঠিত এক স্থায়ী বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কমিটি পরিচালনা করে থাকে। বর্তমানে ৭টি গবেষণামূলক প্রকল্পের কাজ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪টি প্রকল্পের কাজ গত এপ্রিল মাসে শেষ হয়েছে। গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজকর্মের মধ্যে রয়েছে – কয়লা খনিগুলিতে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, সেই সঙ্গে, খনিগুলির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা; স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা এবং দূষণমুক্ত কয়লা প্রযুক্তি। এই ৭টি প্রকল্প খাতে খরচ ধরা ১০৪ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড  ১১৭টি প্রকল্পের রূপায়ণ করছে, যার খরচ ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে ৬৩টি প্রকল্পের কাজ সময়সীমা মেনে এবং বাকি ৫৪টি প্রকল্পের কাজ বিলম্বে চলছে। প্রকল্প রূপায়ণে বিলম্ব হওয়ার পেছনে রয়েছে - অরণ্য সংক্রান্ত ছাড়পত্র, জমি অধিগ্রহণ এবং স্থানীয় সমস্যা। সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষগুলি সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন স্তরে কথাবার্তা চালাচ্ছে।

 

২০১৭-১৮’তে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড ৫টি খোলামুখ কয়লা খনি থেকে উত্তোলনের অনুমতি দেয়। এই খনিগুলি থেকে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৪.৮৫ মিলিয়ন টন। কোল ইন্ডিয়া এই খনিগুলি থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

 

দেশের সম্ভাবনাময় তিনটি কয়লা খনি থেকে কয়লা সরবরাহের জন্য রেল পরিকাঠামো গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে ব্রডগেজ লাইন গড়ে তোলা হচ্ছে। কোথাও ডবল লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। ওভারহেড লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও, প্রয়োজনীয় সিগন্যাল ব্যবস্থার কাজ চলছে।

ইস্টার্ন কোল ফিল্ড লিমিটেড বর্ধমান জেলার ঝাঁঝরা – জামগোড়া ব্লকে ৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করেছে। এই জমিতে কয়লা ব্লক স্থাপন করা হবে।

 

কয়লা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য সেন্ট্রাল মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন ইন্সটিটিউট লিমিটেড অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ্‌ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সঙ্গে গত নভেম্বর মাসে একটি মউ স্বাক্ষরিত করেছে। এই মউ স্বাক্ষরের ফলে কয়লা খনিগুলির ২ - ডি এবং ৩ – ডি সিসমিক ডেটা বিশ্লেষণ করা হবে, কয়লা খনিতে সঞ্চিত মিথেন ভান্ডারের অনুসন্ধান করা হবে, এই গ্যাসের সদ্ব্যবহার করা হবে। এমনকি, অনলাইনে কয়লার গুণমানের ওপর নজরদারি করাও সম্ভব হবে।

 

 

CG/BD/SB


(Release ID: 1558196) Visitor Counter : 663


Read this release in: English