শিল্পওবাণিজ্যমন্ত্রক
শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের বার্ষিক পর্যালোচনা ২০১৮
Posted On:
31 DEC 2018 12:09PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল এক অর্থনীতিতে পরিণত করার লক্ষ্যে একটি কর্মমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে পরিষেবা ক্ষেত্রে ৩ লক্ষ কোটি ডলার, উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে ১ লক্ষ কোটি ডলার এবং কৃষি ক্ষেত্র থেকে ১ লক্ষ কোটি ডলার অবদানের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়েছে।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ১২টি পরিষেবা ক্ষেত্রের ওপর বিশেষ জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলি হ’ল, তথ্য প্রযুক্তি ও তথ্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক পরিষেবা; পর্যটন ও আতিথেয়তা পরিষেবা; মেডিকেল পর্যটন; পরিবহণ; হিসাব ও আর্থিক পরিষেবা; দৃশ্য-শ্রাব্য পরিষেবা; আইন সংক্রান্ত পরিষেবা; যোগাযোগ বা সঞ্চার পরিষেবা; নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি সংক্রান্ত পরিষেবা; পরিবেশ সংক্রান্ত পরিষেবা এবং অর্থ ও শিক্ষা পরিষেবা। পরিষেবা ক্ষেত্র থেকে আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাকে কাজে পরিণত করার জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগের কথা ভাবা হয়েছে। পরিষেবা ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে ভারতের অবদানকে ২০১৫ সালের ৩.৩ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪.২ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে বাণিজ্য মন্ত্রকের উদ্যোগে স্বাধীনতার পর এই প্রথম ভারতের কৃষি রপ্তানি সংক্রান্ত নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে ভারতের কৃষি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই ঘোষিত হয়েছে এই নীতি। বাণিজ্য মন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য পর্যাপ্ত ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে চলেছে। রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের ১৫টি চিহ্নিত দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ‘বাণিজ্য উন্নয়ন সংগঠন’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভারতের রপ্তানি পরিমাণ বিগত ৬ বছর ধরে উচ্চ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭-১৮ বর্ষে (অক্টোবর – সেপ্টেম্বর) গত বছরের তুলনায় রপ্তানি ১৪.৭৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রূপায়ণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু দেশের সঙ্গে রপ্তানি ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেদেশের সঙ্গে তিন বার আন্তঃমন্ত্রক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে ২০১৮ সালে। এই ধরণের নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগের ফলে চিনে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থায়ী সহায়ক পরিকাঠামো গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রপ্তানিকারকরা যাতে সহজে ব্যবসার সুযোগ পায়, তার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চলতি বছরে ব্যবসা সংক্রান্ত বিশ্বের ক্রমতালিকায় ভারতের স্থান উন্নত হয়েছে। এ বছর ২৩ ধাপ এগিয়ে ভারত ৭৭তম স্থানে পৌঁছেছে। গত দু’বছর মিলিয়ে ভারতে এই সূচকে ৫৩ ধাপ এগিয়েছে। সূচকের ১০টি অংশের মধ্যে ৬টিতেই ভারতের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সহজে ব্যবসার সুযোগের নিরিখে ভারত প্রথম স্থান দখল করেছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সবকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ব্যবসায়িক সংস্কারের হিসাবে র্যাঙ্কিং – এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশ জুড়ে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হওয়ায় সহজে ব্যবসার সুযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রকের শিল্প নীতি এবং উৎসাহ প্রদান বিভাগ জেলাস্তরের একটি সংস্কার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেশের ৫টি রাজ্যের ৬টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতের জাতীয় আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যাতে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলি তাদের অবদান কমপক্ষে ৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করতে পারে, এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হিসাবে এমনটাই ভাবা হয়েছে।
আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের হার গত অর্থবর্ষের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ – ১৮ অর্থবর্ষে ভারতে প্রথম সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১৯৬ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে। অটো মোবাইল ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে এই হার ১৩ শতাংশ, বস্ত্রবয়ন শিল্প ক্ষেত্রে এই হার ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, ভারতকে বিশ্বের উৎপাদন হাব হিসাবে গড়ে তোলার জন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন। ভারত ২০১৫-১৬ বর্ষে বিশ্বের উদ্ভাবন সূচকে ১৫ ধাপ এগিয়েছে। পরিবহণ ক্ষেত্রে উন্নয়নের নিরিখে আমাদের দেশ ২০১৫ – ১৬ বর্ষে লজিস্টিক পারফরমেন্স ইনডেক্সে ১৯ ধাপ এগিয়েছে। অন্যদিকে, ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম প্রতি বছর যে প্রতিযোগিতামূলক সূচক প্রকাশ করে থাকে, সেই ক্ষেত্রে ২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে ভারত ৩২ ধাপ এগিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ভারতে নির্মিত বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে যাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া নামে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তাতে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়েছে। এছাড়া, এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হ’ল – সুষম অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং বিপুল হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সরকারি তথ্যানুসারে এ বছরের নভেম্বর মাসে বিভিন্ন ধরণের স্টার্ট আপের সংখ্যা ২০১৭-র অক্টোবরের ৪৬১০ থেকে বেড়ে ১৪৫৪৫ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া অ্যাকশন প্ল্যান নামে যে ১৯ দফা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তাতে সারা দেশে বেশ কয়েকটি ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়েছে। এইসব ইনকিউবেশন সেন্টার বা কেন্দ্র থেকে নতুন ধারণার ভিত্তিতে শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া, সহজে পেটেন্ট নেবার ব্যবস্থা করা, করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া, ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়াকে সহজতর করা, ১০ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গড়ে তোলা এবং কোনও স্টার্ট আপ উদ্যোগ অ-লাভজনক বলে তা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার আইনসম্মত বযবস্থা করার কথাও এই কর্মপরিকল্পনাতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রের মাধ্যমেও যাতে শিল্পোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়, সেই লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশের অর্থনীতির পক্ষে সহায়ক ভূমিকা নেওয়ার জন্য পরিবহণ ক্ষেত্রের উন্নয়নকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসাবে সরকার বিবেচনা করে থাকে। ভারত সরকার এই লক্ষ্যে নীতিগত উদ্যোগ হিসাবে মাল্টি মোডাল লজিস্টিক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এইসব উদ্যোগের ফলেই ভারতের স্থান বিশ্ব র্যাঙ্কিং –এ এক বছরের মধ্যে ১৪৬ থেকে ৮০-তে পৌঁছেছে। পরিবহণ ক্ষেত্রে সামগ্রিক তথ্য আদান-প্রদান এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে সরকারের প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলির যোগাযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার জন্য একটি ন্যাশনাল লজিস্টিক পোর্টাল গড়ে তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে লজিস্টিক ডেটা ব্যাঙ্ক প্রোজেক্ট চালু হয়েছে। আমাদের দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সংক্রান্ত যে নীতি রয়েছে, তাকে বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের নিয়ম-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পায়নের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি শিল্প করিডর গড়ে তোলার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চর্ম ও পাদুকা শিল্প ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, উত্তর – পূর্বাঞ্চলের শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে ঐ অঞ্চলের জন্য শিল্প নীতি, পরিবহণ ভর্তুকি নীতি, মাশুল ভর্তুকি নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। হিমালয় সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে শিল্পায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে ই-পাবলিক প্রকিওরমেন্ট পোর্টাল চালু করা হয়েছিল, গত এক বছরে তার কাজে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
CG/PB/SB
(Release ID: 1557857)
Visitor Counter : 4056