পরিবেশওঅরণ্যমন্ত্রক

কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের বর্ষশেষ পর্যালোচনা

Posted On: 28 DEC 2018 5:44PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

 

      পরিবেশগত ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্হানীয় ভূমিকা এবং অঙ্গীকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সাহসী ভূমিকার জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে সর্বোচ্চ পরিবেশ সম্মান চ্যাম্পিয়ন্স অফ দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সৌর জোর গঠনে ভারতের অগ্রণী ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৮ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রকের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সাফল্য।

      বিশ্ব পরিবেশ দিবস- পরিবেশের সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে ভারতের অগ্রণী ভূমিকার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্হা ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের জন্য ভারতকে মনোনীত করে। এই উপলক্ষ্যে নতুন দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে সভা ও বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনে মূল ভাবনা ছিল প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিক দূষণের বিষয়টি সমগ্র বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

      গ্রীণ গুড ডিডস ক্যাম্পেন- দেশে পরিবেশের সুরক্ষা এবং জীবন-যাবনের মান বাড়াতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ডঃ হর্ষবর্ধন সামাজিক আন্দোলন গ্রীণ গুড ডিডস বা সবুজায়নের লক্ষ্যে কিছু করা শীর্ষক অভিযানের সূচনা করেন। এ ধরনের অভিযান চালানোর উদ্দেশ্য পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করে সুরক্ষার স্বার্থে তাদেরকে সামিল করা। সমগ্র বিশ্বজুড়ে ভারতের এই প্রয়াস প্রশংসিত হয়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশির উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদেরও সামিল করা হয়। সবুজায়নের লক্ষ্যে সামাজিক কর্তব্য পালনে পরিবেশের প্রতি সুবিচারের মানসিকতা গড়ে তোলার ওপর অভিযানে জোর দেওয়া হয়।

      সবুজায়নের লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়ন কর্সসূচি- পরিবেশ, বন এবং বন্যপ্রাণ ক্ষেত্রে যুব সম্প্রদায়কে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি এই ক্ষেত্রগুলির সুরক্ষায় তাদেরকে দক্ষ করে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্সূচিটি পরীক্ষামলূক ভিত্তিতে ২০১৭-র জুন মাসে গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে সারা দেশে এই কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়েছে।

      সবুজ দেওয়ালি বা সুস্হ দেওয়ালি অভিযান গত ২২শে অক্টোবর শুরু হয়। অভিযানে দিল্লী ও জাতীয় রাজধানি অঞ্চলে প্রায় ৫০০ বিদ্যালয় পড়ুয়াকে সামিল করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, পরিবেশবান্ধব দীপাবলীর উদযাপন।

      জাতীয় বাঁশ মিশন- দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঁশের চাষযোগ্য জমি বাড়াতে এবং চাষাবাদ বাড়াতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করার জন্য ১২৯০ কোটি টাকার বাজেট সংস্হান রেখেছে। উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে, যেসমস্ত রাজ্যে অতিরিক্ত বাঁশ চাষ হয়, সেখান থেকে বাঁশের ঘাটতি রয়েছে এমন রাজ্যগুলিতে তা সরবরাহ করা যাবে। এরফলে বাঁশ উপাদক এবং গ্রাহক উভয় পক্ষই উপকৃত হবে।

      জলবায়ু পরিবর্তন- মন্ত্রকের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ভারত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাঠামো কনভেনশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্যারিস চুক্তি এবং কিয়োটো প্রোটোকলেও ভারতের গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মন্ত্রক জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে জাতীয় স্তরে একাধিক কর্মপরিকল্পনা, কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকেও পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে উসাহ দেওয়া হয়। দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৈজ্ঞানিক এবং বিশ্লেষণমূলক ভিত্তিকে মূল্যায়ণের জন্য একাধিক সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। চলতি বছরে আন্তর্জাতিক স্তরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক তথা বোঝাপড়া হয়েছে। বৈঠকগুলিতে উন্নয়নশীল দেশগুলির অভিন্ন স্বার্থ বজায় রাখার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

      ২০১৮তে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত যে বিশেষ তহবিল রয়েছে, তা থেকে পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে চলতি প্রকল্পগুলিতে ৪২ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যকে এ ধরনের ২৭টি প্রকল্পে ৩৬৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কর্মপরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন রাজ্যকে ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।

      ২০১৮তে মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ ও নীতিসমূহ- নদনদীগুলির পরিবেশগত দূষণ এবং তার বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাব নিয়ে সংসদীয় স্হায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। পরিবেশগত ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারী মাসে ভারত-মরক্কো যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতে মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত এড়াতে ভারত-জার্মান কারিগরি সহযোগিতা কর্মসূচি গৃহিত হয়েছে। জাতীয় নদী সংরক্ষণ পরিকল্পনার আওতায় ৯৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা খরচ করার জন্য নৈতিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। ক্ষয়িষ্ণু বনাঞ্চলে বনসৃজনের জন্য সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়ে নীতি নির্দেশিকা সম্বলিত মন্ত্রিসভা কিছু প্রস্তাব আলাপ-আলোচনার জন্য বিভিন্ন পক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

      সমগ্র বিশ্বের পরিযায়ী পাখিদের বার্ষিক যাতাযাতের ক্ষেত্রে যে নয়টি আকাশপথ রয়েছে, তার অন্যতম একটি হল মধ্য এশিয়া বরাবর আকাশপথ। এই আকাশপথের সুরক্ষায় মন্ত্রক একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা শুরু করেছে। উদ্দেশ্য, পরিযায়ী পাখিদের যাতাযাতকে সুগম করা, জলাভূমি ও তার সঙ্গে যুক্ত পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা প্রভৃতি।

      বন্য জন্তুর রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশে পশু চিকিসকদের জন্য মন্ত্রক উত্তরপ্রদেশের বেরেলির ইজ্জত নগরে জাতীয় পশু চিকিসা-গবেষনা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছে।

      ফসল কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলার দরুন দিল্লীর জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে শীতের শুরুতে যে বিরুপ আবহাওয়াজনিত পরিস্হিতি সৃষ্টি হয়, তা নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকার এক বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পে আধুনিক উপায়ে ফসল কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ নষ্ট করে ফেলার উপায় রয়েছে। প্রকল্পটিকে কার্যকর করার জন্য ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ সালের জন্য কেন্দ্র ১ হাজার ১৫১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। চলতি বছরে দিল্লী বাদে পাঞ্চাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশকে সংশ্লিষ্ট খাতে ৫৯১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।

      বায়ুর গুণমান সংক্রান্ত তাক্ষনিক তথ্য প্রদানের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এছাড়াও, দৈনিক ভিত্তিতে বায়ুর গুণমান সংক্রান্ত তথ্য জারি করা হচ্ছে। দিল্লী ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চল সহ দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলিতে বায়ু দূষণ কমানোর লক্ষ্যে এক সুসংহত নীতি-নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

      জলাশয় এবং হ্রদগুলির সংরক্ষণ ও সঠিক পরিচালনার জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ৬৬ কোটি টাকার তহবিল সংস্হান করা হয়েছে। চারটি রাজ্যে ৫টি হ্রদের সংরক্ষণের জন্য মোট ৩৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকা এবং ১২টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৩৫টি জলাশয়ের সংরক্ষণ তথা দেখভালের জন্য ২৭ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। এমনকি জলাভূমি ও হ্রদগুলির সঠিক সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কর্মসূচির সম্পর্কে গবেষনা চালাতে ৪১ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

      পরিবেশগত অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অসামান্য কাজের স্বৃকীতি স্বরুপ রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচি ভারতের বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোকে ২০১৮-র এশিয়া এনভাইরনমেন্ট এনফোর্সমেন্ট পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছে। এশিয়ায় সীমান্ত পারের পরিবেশগত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অসামান্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। ভারতের বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো পরিবেশগত অপরাধ দমনে যে অনন্য পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, তার দরুন এ ধরনের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। বন্যপ্রাণ অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই-এ সাধারণ মানুষকে সামিল করতে ভারতের বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো স্বেচ্ছাসেবি হিসাবে আগ্রহী ব্যক্তিদের নাম নথিভুক্তকরণের জন্য এক বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে।

    

CG/BD/NS


(Release ID: 1557664)
Read this release in: English