পর্যটনমন্ত্রক
পর্যটন মন্ত্রকের বর্ষশেষ পর্যালোচনা-২০১৮
একটি ঐতিহ্যপূর্ণ স্হানের দায়িত্ব গ্রহণ প্রকল্পের আওতায় ১০টি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত
Posted On:
27 DEC 2018 5:32PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
দেশে পর্যটনের প্রসার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণের মুখ্য সংস্হা হিসাবে পর্যটন মন্ত্রক দায়িত্বপালনের জন্য অন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষ, যেমন- বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও প্রতিষ্ঠান, রাজ্যসরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন ও বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে থাকে। ভারত-সহ বহু দেশে অর্থনৈতিক বিকাশের মূল চালিকাশক্তি ও বিদেশী মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল পর্যটন ক্ষেত্র যা রোজগারেরও বহু সুযোগ এনে দিতে সমর্থ। এজন্য, দেশের পর্যটন পরিকাঠামোর উন্নতি সাধন, ভিসা ব্যবস্হাকে সহজ করা, পর্যটন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্হাগুলির পরিষেবার সঠিক মান বজায় নিশ্চিত করা ইত্যাদি পর্যটন মন্ত্রকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বর্তমানে ১৬৬টি দেশের নাগরিকদের ই-ভিসা প্রকল্পের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। দেশের ২৬টি বিমানবন্দরে ই-ভিসার মাধ্যমে ভারতে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে।
ভারতে ২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ৯৩ লক্ষ ৪২৪ জন বিদেশী পর্যটক ভারতে এসেছেন, যা ২০১৭-র একই সময়ের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া, জানুয়ারী-নভেম্বর ২০১৮ সময়কালে ২০ লক্ষ ৬১ হাজার ৫১১ জন বিদেশী পর্যটক ই-পর্যটন ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪১.৫ শতাংশ বেশি। ২০১৮-র প্রথম ১০ মাসে ১,৫৮,৮৪৬ কোটি টাকা বিদেশী মুদ্রা আয় হয়েছে। এক্ষেত্রেও পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে বহু থিম-ভিত্তিক পর্যটনের সার্কিট গড়ে তোলা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭৩টি এমন প্রকল্পের জন্য ৫৮৭৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮-১৯-এ সাতটি প্রকল্পের জন্য ৩৮৪ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা ধার্য হয়েছে। মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে স্বদেশ দর্শনের ন’টি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে এবছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। তীর্থস্হান পুনরুদ্ধার ও আধ্যাত্মিক, ঐতিহ্যবাহী স্হানে উন্নয়ন সাধনের জাতীয় অভিযানের আওতায় বিভিন্ন তীর্থস্হানকে বিকাশমূলক কাজ রূপায়ণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ এ একটি তেমন প্রকল্পের জন্য ৩৯ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়েছে। এছাড়া, কোচিন ও মুর্মুগাঁও-এর বন্দর কর্তৃপক্ষকে ২০১৮-১৯এ পরিকাঠামো গঠনের জন্য পর্যটন মন্ত্রক কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।
‘একটি ঐতিহ্যবাহী স্হানের দায়িত্বগ্রহণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সংস্কৃতি ও পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা সংস্হা সঙ্গে মিলিতভাবে পর্যটন মন্ত্রক চালু করেছে। বেসরকারি ও সরকারি সংস্হা এবং ব্যক্তি বিশেষকেও এই প্রকল্পের আওতায় এক একটি ঐতিহ্যবাহী স্হানে বা স্তম্ভের কাছে পর্যটন ব্যবস্হা গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উত্তরাখন্ডের গঙ্গোত্রী মন্দির ও গোমুখের পথ, জম্মু ও কাশ্মীরের স্টোক কাংরি শৃঙ্খ পর্যন্ত যাওয়ার পথ ও লে প্রাসাদ, লালকেল্লা, অন্ধ্রপ্রদেশের গান্ডিকোটা দুর্গ, হরিয়ানার সুরজকুন্ড, যন্তর-মন্তর, কুতুবমিনার, মহারাষ্ট্রের অজন্তা গুহ এবং কর্ণাটকের হাম্পিতে এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া, দেশ জুড়ে ১২টি ক্লাস্টারে ১৭টি স্হানকে আদর্শ পর্যটন স্হল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। তাজমহল, ফতেপুর সিকরি, অজন্তা, ইলোরা, হুমায়ুনের স্মৃতিশৌধ, কুতুবমিনার, লালকেল্লা, কুলবা সমুদ্র সৈকত, আমের দুর্গ, সোমনাথ, ঢোলাবিরা, খাজুরাহ, হাম্পি, মহাবলিপুরম, কাজিরাঙ্গা, কুমারাকোম ও মহাবলি মন্দিরের উন্নতি সাধনের জন্য এই প্রকল্প রূপায়নের মূল পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
২০১৮-তে সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে ২৬ থেকে ৩১ জানুয়ারি ‘ভারত পর্ব’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য দেশাত্মবোধক ভাবনাচিন্তার উদ্রেক-সহ দেশের সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিক পরম্পরা সংক্রান্ত ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’, ‘নিজের দেশকে দেখ’ ও ‘সকলের জন্য পর্যটন’-এর মতো কর্মসূচির সাহায্যে জনসাধারণকে ওয়াকিবহাল করা। এই একই উদ্দেশ্য নিয়ে পর্যটন মন্ত্রক ‘পর্যটন পর্ব’ পালন করেছে। এছাড়া ২০১৮-তে ১৬-১৮ সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং পর্যটন মন্ত্রকের সহায়তায় ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েসন্স ইন ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি প্রথমবার ইন্ডিয়া ট্যুরিজম মার্টের আয়োজন করে। এটি দেশে ও বিদেশে পর্যটন ক্ষেত্রের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পক্ষকে একই মঞ্চে এসে আলাপ-আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছিল। ২০১৮-র ১৪ই জুন পর্যটন মন্ত্রক অতুল্য ভারতের ওয়েবসাইটটি পর্যটকদের সুবিধার জন্য নতুন ভাবে সাজিয়ে চালু করেছে। ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০১৮তে অতুল্য ভারত মোবাইল অ্যাপও চালু করা হয়। আধুনিক পর্যটকদের পছন্দের বিষয়গুলি মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। দেশে পর্যটন ক্ষেত্রের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে মন্ত্রক একটি অনলাইন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্হাও চালু করেছে। এরফলে, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বাসরত যুবক-যুবতীরাও পর্যটন ক্ষেত্রে কাজের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। বর্তমানে, সারা দেশে ৩৮০০টিরও বেশি অতুল্য ভারত পর্যটক ব্যবস্হাপনা প্রদানকারী শংসাপত্র প্রদানের কেন্দ্র রয়েছে।
২০১৮-র কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, পর্যটন মন্ত্রকের মহারাষ্ট্র, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ আলোচনাসভার আয়োজন। এছাড়া, বিদেশের বাজারে যেখানে যেখানে ভারতের পর্যটন প্রসারের সুযোগ রয়েছে, সেসব স্হানে সম্ভাব্য পর্যটকদের আকর্ষিত করতে মন্ত্রক একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অভিযান চালায়। বৈদ্যুতিন অনলাইন ও মুদ্রণ মাধ্যমে, বিশেষ করে ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়াকে অভিযানে ব্যবহার করা হয়। যোগ, সুস্বাস্হ্য, বণ্যপ্রাণ, বিলাসবহুল পর্যটন ও ভারতীয় রন্ধন সংস্কৃতি বিষয়ে প্রচারমূলক চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করা হয়েছে, যা টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রদর্শিত হয়। এছাড়া দিল্লী, মুম্বাই ও চেন্নাইকে গন্তব্য স্হল হিসাবে প্রচারের জন্য বিশেষ চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। এই পাঁচটি বিশেষ চলচ্চিত্র ও ‘বুদ্ধের ভূমি’ শীর্ষক একটি বিশেষ চলচ্চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৮৯ জন দর্শককে আকৃষ্ট করেছে। পাঁচটি বিশেষ চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটিই ন’টি আন্তর্জাতিক ভাষায় প্রযোজনা করা হয়েছে। ভারত পর্ব ও পর্যটন পর্ব চলাকালীন দেশীয় পর্যটকদের আকর্ষিত করতে টিভি, অনলাইন পোর্টাল ও ওয়েবসাইট, আউটডোর ডিজিটাল, প্রেক্ষাগৃহ, রেডিও, বিমানের বোর্ডিং পাস, রেলের টিকিট-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে নানা প্রচারাভিযান চালানো হয়েছে। এই বছর পর্যটন প্রসারের লক্ষ্যে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রচার কর্মসূচি রূপায়ণ করা হয়।
পর্যটন মন্ত্রক ঐতিহ্যবাহী ভিন্টেজ হোটেলে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্হা চালু করেছে। ১৯৫০-এর পূর্বে তৈরি বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ভবনে চালু করা হোটেলগুলিতে বিনোদনের জন্য ফেলে আসা দিনগুলির একটি আবহ বা বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কেটারিং টেকনোলজির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮-১৯-এ মোট ৫৭৫৯ জন ছাত্রছাত্রী আতিথেয়তা শিল্পের বিভিন্ন শাখায় স্নাতক ডিগ্রি এবং ৩৭৩৫ জন ডিপ্লোমা অর্জন করেছে। এই বছর ইন্ডিয়ান কালিনারি ইন্সটিটিউটের দুটি শাখা নয়ডা ও তিরুপতিতে চালু করা হয়েছে। আতিথেয়তা শিল্পের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে এবং রন্ধন শিল্পের ক্ষেত্রে গবেষনার লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলি চালু করা হয়েছে। নয়ডার ক্যাম্পাসে ভারতের রন্ধন শিল্পের সংক্রান্ত একটি অত্যাধুনিক সংগ্রহশালাও খোলা হয়েছে। এছাড়া, স্বচ্ছ ভারত অভিযান ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্বন্ধে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে সজাগ করতে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্হলে এই বছর স্বচ্ছতাই সেবা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
SSS/SC/NS
(Release ID: 1557483)
Visitor Counter : 920