যুবওক্রীড়াবিষয়কমন্ত্রক
বর্ষশেষ পর্যালোচনা ২০১৮ – ক্রীড়া দপ্তর
Posted On:
11 DEC 2018 5:29PM by PIB Kolkata
ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্যের দিক থেকে ২০১৮ ভারতের কাছে এক স্মরণীয় বছর হিসেবে পরিগণিত হবে। প্রতিভাবান এবং সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদদের সঠিক দেখভাল ও সেইসঙ্গে তৃণমূলস্তর থেকে ভবিষ্যৎ তারকাদের খুঁজে বের করা – সরকারের এই দ্বিমুখী নীতির ফলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে আয়োজিত কমনওয়েল্থ গেম্স, জাকার্তায় আয়োজিত এশিয়ান গেম্স এবং প্যারা-এশিয়ান গেম্স-এ ভারত পদক জয়ে রেকর্ড সাফল্য পেয়েছে। কমনওয়েল্থ গেম্স-এ ৬৬টি পদক, এশিয়ান গেম্স-এ ৬৯টি পদক এবং প্যারা-এশিয়ান গেম্স-এ ৭২টি পদক ভারতের ঝুলিতে এসেছে। এ বছরে ক্রীড়া দপ্তরের সাফল্য নিম্নরূপ:
খেলো ইন্ডিয়া বিদ্যালয় ক্রীড়া, ২০১৮ :
- প্রথম খেলো ইন্ডিয়া বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়।
· ২৯টি রাজ্য ও সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি খেলোয়াড় এতে অংশ নেয়।
· মোট পদক সংখ্যা ছিল ১৯৯টি সোনা, ১৯৯টি রূপো এবং ২৭৫টি ব্রোঞ্জ।
· সবথেকে বেশি হরিয়ানা রাজ্য থেকে ৩৮৮ জন খেলোয়াড় অংশ নেন। এরপর, মহারাষ্ট্র থেকে ৩৩১ জন এবং দিল্লি থেকে ৩৫৯ জন খেলোয়াড় এতে অংশ নেন।
· এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রশিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৮৭৫ এবং ম্যানেজার ছিলেন ৫৭৮ জন।
· জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৫৭৮ জন টেকনিক্যাল বিষয়ক আধিকারিক এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
· একাধিক হোটেলে খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক ও অন্যান্যদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
· ৮৬৮ জন স্বেচ্ছাসেবক এই প্রতিযোগিতা আয়োজনে সাহায্য করেন।
· উদ্দেশ্য ছিল, ৫৫০-এর বেশি প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় খুঁজে বের করা।
· মোট ১১১টি পদক পেয়ে মহারাষ্ট্র প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে। হরিয়ানা ১০২টি পদক পেয়ে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পায়। দিল্লি ৯৪টি পদক নিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করে।
খেলো ইন্ডিয়া বিদ্যালয় ক্রীড়ায় গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য :
- এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ১১৭৮ জন তরুণ প্রতিভাকে চিহ্নিত করা হয়। এদের প্রত্যেককে আগামী আট বছর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা করে মাথাপিছু খরচ করা হবে।
· প্রতিযোগিতায় সাঁতার বিভাগে কর্ণাটকের শ্রীহরি নটরাজ মোট ছ’টি সোনা ও একটি রৌপ্য পদক পান। তিনি ১০০ মিটার ব্যাক-স্ট্রোক বিভাগে সিনিয়র পর্যায়ে যে জাতীয় রেকর্ড রয়েছে তা ভেঙে দেন। এই সাফল্য অর্জন করে শ্রীহরি বয়স-ভিত্তিক মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় এবং যুব অলিম্পিক গেম্স-এর জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন।
· হরিয়ানার শ্যুটার মনু ভাকের প্রতিযোগিতায় মহিলাদের এয়ার পিস্তল যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে ৩৮৭ স্কোর করে নতুন জাতীয় রেকর্ড তৈরি করেন। এই বিভাগের ফাইনালে মনু ২৪১.১ স্কোর করে ২০১৭-র জাতীয় রেকর্ড ভেঙে নতুন কৃতিত্ব স্থাপন করেন। ২০১৮-র যুব অলিম্পিক গেম্স-এ সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ সে আগেই অর্জন করেছিল।
· অ্যাথলেটিক্সে উত্তরপ্রদেশের অভিষেক সিং শট-পুট থ্রো-এ ১৮.৭৩ মিটার দূরত্বে লোহার বল ছুঁড়ে বালক বিভাগে সেরা অ্যাথলিটের সম্মান পান। কেরলের মেয়ে অপর্ণা রায় ১০০ মিটার হার্ডেল্স ১৪.০২ সেকেন্ডে অতিক্রম করে সেরা বালিকা অ্যাথলিটের সম্মান পান।
২০১৮-র কমনওয়েল্থ গেম্স-এ ভারতের সাফল্য :
অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে গত ৪ থেকে ১৫ এপ্রিল আয়োজিত অষ্টাদশ কমনওয়েল্থ গেম্স-এ ভারত মোট ৬৬টি পদক নিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এর মধ্যে ২৬টি সোনা, ২০টি রূপো ও ২০টি ব্রোঞ্জ পদক ছিল। ২০১০-এর কমনওয়েল্থ গেম্স-এর পর এটি ভারতের সেরা সাফল্য।
২০১৮-র এশিয়ান গেম্স এবং প্যারা-এশিয়ান গেম্স-এ ভারতের প্রশংসনীয় সাফল্য :
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা এবং পালেমব্যাঙ শহরে গত ১৮ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয়োজিত ত্রয়োদশ এশিয়াম গেম্স-এ ভারতীয় খেলোয়াড়রা প্রশংসনীয় ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখায়। প্রতিযোগিতায় ভারত মোট ৬৯টি পদক নিয়ে পদক তালিকায় অষ্টম স্থান অর্জন করে। ভারতের সংগ্রহে ছিল ১৫টি সোনা, ২৪টি রূপো এবং ৩০টি ব্রোঞ্জ।
এবারের এশিয়ান গেম্স-এ পদকজয়ী ভারতীয় অ্যাথলিটদের প্রধানমন্ত্রী গত ৫ সেপ্টেম্বর বিশেষ সংবর্ধনা দেন। ক্রীড়া দপ্তরের পক্ষ থেকে আয়োজিত পৃথক এক অনুষ্ঠানে গত ৪ সেপ্টেম্বর পদকজয়ী ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা এবং নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদকজয়ী ক্রীড়াবিদদের ৩০ লক্ষ টাকা, রৌপ্য পদকজয়ীদের ২০ লক্ষ টাকা এবং ব্রোঞ্জ পদকজয়ীদের ১০ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়।
একইভাবে, এশিয়ান প্যারা-গেম্স-এ ভারত পদক তালিকায় নবম স্থান অর্জন করে। ভারতের খেলোয়াড়রা এই প্রতিযোগিতা থেকে ৭২টি পদক পান। এর মধ্যে ১৫টি সোনা, ২৪টি রূপো এবং ৩৩টি ব্রোঞ্জ পদক ছিল।
যুব অলিম্পিক গেম্স :
আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এয়ার্স-এ আয়োজিত এবারের যুব অলিম্পিক গেম্স-এ ভারত রেকর্ড সাফল্য পেয়েছে। মোট ১৩টি পদক নিয়ে পদক তালিকায় চতুর্দশ স্থান পায়। এর মধ্যে তিনটি সোনা, ন’টি রূপো ও একটি ব্রোঞ্জ পদক ছিল।
বিশ্ব মহিলা বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৮ :
বিশ্ব বক্সিং-এর সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা এআইবিএ পরিচালিত বিশ্ব মহিলা বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ১৫ থেকে ২৪ নভেম্বর নতুন দিল্লির কে ডি যাদব ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়। এই প্রতিযোগিতার লাইট ফ্লাইওয়েট বিভাগের ফাইনালে ভারতের মেরি কম ইউক্রেনের বক্সার হানা অখোতাকে হারিয়ে স্বর্ণ পদক পান। এনিয়ে মেরি কম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ষষ্ঠবার স্বর্ণ পদক পেলেন। তাঁর এই সাফল্য বিশ্ব বক্সিং-এর ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। প্রতিযোগিতায় ভারত একটি সোনা, একটি রূপো ও একটি ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে পদক তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে মন্ত্রকের ট্যাব্লোকে বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে সেরা ট্যাব্লোর পুরস্কার :
এবারের সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রকের ট্যাব্লোকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে সেরা ট্যাব্লোর পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি নতুন দিল্লিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রকের সচিব প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছ থেকে সেরা হওয়ার ট্রফি ও শংসাপত্র গ্রহণ করেন। মন্ত্রকের ট্যাব্লোর মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘খেলো ইন্ডিয়া’।
খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় বৃত্তি প্রদান :
প্রথম খেলো ইন্ডিয়া বিদ্যালয় ক্রীড়ার সাফল্যের পর ক্রীড়া দপ্তর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অঙ্গ হিসাবে খেলো ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা থেকে চিহ্নিত সম্ভাবনাময় ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের যথাযথ পরিচর্যার জন্য ১,১৭৮ জন খেলোয়াড়কে বৃত্তি প্রদান কর্মসূচির আওতায় মনোনীত করে। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে প্রতিভাবান যুবা খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া নৈপুণ্যে মানোন্নয়ন সহ তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। মনোনীত প্রত্যেক খেলোয়াড়কে বার্ষিক ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এই অর্থ খেলোয়াড়রা তাঁদের নিজেদের খরচ, চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যবহার করতে পারবেন।
জাতীয় ক্রীড়া এবং রোমাঞ্চকর ক্রীড়া পুরস্কার, ২০১৮ :
রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২০১৮-র জাতীয় ক্রীড়া ও রোমাঞ্চকর ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান করেন।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিভাগে সবথেকে মর্যাদাপূর্ণ রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার যৌথভাবে ভারত্তোলক এস মীরাবাঈ চানু এবং ক্রিকেটার বিরাট কোহলিকে প্রদান করা হয়। দ্রোণাচার্য, অর্জুন এবং ধ্যানচাঁদ পুরস্কার বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন ক্রীড়াবিদ এবং প্রশিক্ষকদের দেওয়া হয়।
তেনজিং নোরগে জাতীয় রোমাঞ্চকর ক্রীড়া পুরস্কার ১০ জন ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়েছে। সারা জীবনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অমৃতসরের গুরুনানক দেব বিশ্ববিদ্যালয়কে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ট্রফি দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় খেল প্রত্যুৎসাহ পুরস্কার তিনটি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল – রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড, জে এস ডব্লিউ স্টিল এবং ঈশা ফাউন্ডেনশন।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পদক জয়ী এবং তাঁদের প্রশিক্ষকদের বিশেষ অর্থ পুরস্কার :
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিশেষ সাফল্য অর্জনের জন্য ক্রীড়াবিদ ও তাঁদের প্রশিক্ষকদের ২০১৮-১৯-এ মোট ১১ কোটি ২ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ক্রীড়াবিদদের আর্থিক সাহায্য :
ক্রীড়ায় ভারতকে গৌরবান্বিত করেছেন অতীতের এমন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ যাঁরা বর্তমানে অত্যন্ত আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন, তাঁদের সাহায্যের জন্য যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রক পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় নামে ক্রীড়াবিদদের জন্য জাতীয় কল্যাণ তহবিল কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। এই কর্মসূচির আওতায় ২০১৮-১৯-এ অতীতের যে সমস্ত ক্রীড়াবিদ ও প্রশিক্ষকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সাহায্য করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন –
- জিমন্যাস্ট প্রশিক্ষক শ্রী এন ব্রিজকিশোর, ৬ লক্ষ টাকা (চিকিৎসাখাতে);
· প্রাক্তন ফুটবলার শ্রী সুমিত রাভার পরিবার, ৫ লক্ষ টাকা (চিকিৎসাখাতে);
· প্রখ্যাত ফেন্সিং খেলোয়াড় শ্রীমতী খাইদেম কালাম্বাই চানু, ৫ লক্ষ টাকা (চিকিৎসাখাতে);
· প্রখ্যাত তীরন্দাজ শ্রী লিম্বা রাম, ৫ লক্ষ টাকা (চিকিৎসাখাতে);
· প্রখ্যাত অ্যাথলিট শ্রীমতী গরিমা যোশী, ৫ লক্ষ টাকা (চিকিৎসাখাতে);
· প্রাক্তন কুস্তিগির শ্রী প্রেম লাল, ৫ লক্ষ টাকা (চিকিৎসাখাতে);
· প্রাক্তন জুডো খেলোয়াড় শ্রীমতী বন্দনা সূর্যবংশী, ২ লক্ষ টাকা (নিদারুণ আর্থিক দুরাবস্থা);
· বিশিষ্ট অ্যাথলিট শ্রী জি লক্ষ্মণ, ১০ লক্ষ টাকা (নিদারুণ আর্থিক দুরাবস্থা)।
জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিলে ১০ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য :
জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিলে তৃতীয় কিস্তিতে ভারত পরিকাঠামো অর্থ সহায়তা সংস্থা লিমিটেড ১০ কোটি টাকা দিয়েছে। এর আগে, ঐ সংস্থা আরও ২০ কোটি টাকা সাহায্য করেছিল। তহবিলের এই অর্থ ব্যাডমিন্টন, তীরন্দাজি এবং প্যারা-ক্রীড়াক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগের মানোন্নয়নে খরচ করা হবে। এই ক্রীড়াগুলির সঙ্গে যুক্ত খেলোয়াড়রাও তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে তহবিলের সুবিধা পাবেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, অলিম্পিক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলিতে পদক জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এমন আন্তর্জাতিক মানের দেশীয় ক্রীড়াবিদদের সহায়তা তথা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্রীড়াক্ষেত্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি কর্পোরেট ক্ষেত্র সহ আইনি প্রতিষ্ঠান যেমন, ট্রাস্ট বা সমিতি এমনকি ব্যক্তিবিশেষও এই তহবিলে অর্থ সহায়তা দিতে পারেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয় খো খো দলকে আর্থিক সহায়তা :
ভারতীয় খো খো দলকে গত ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডে আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক খো খো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী সম্মতি দেন। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক আনুকূল্যে ভারতীয় খো খো দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। উল্লেখ করা যেতে পারে, মন্ত্রকের অন্তর্বর্তী নীতি-নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে যে খো খো “অন্যান্য” বিভাগের শ্রেণীভুক্ত ক্রীড়া হওয়ায় এ ধরণের খেলাধূলায় সরকারি অর্থ সাহায্যের সংস্থান নেই। অবশ্য, ঐ নীতি-নির্দেশিকা খানিকটা শিথিল করে এই প্রথমবার খো খো দলকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অর্থ সহায়তা দেওয়া হল।
অতীতের বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের প্রদেয় পেনশন হারে সংশোধন :
ক্রীড়াবিদদের কল্যাণার্থে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অতীতের বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের প্রদেয় পেনশন হারে সংশোধনের প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছেন। সংশোধিত হার অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলিতে পদক জয়ীদের জন্য বর্তমান পেনশনের পরিমাণ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর ফলে পেনশন প্রাপক ক্রীড়াবিদরা এখন থেকে মাসিক ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেনশন পাবেন। প্যারা-অলিম্পিক গেম্স এবং প্যারা-এশিয়ান গেম্স-এর পদক জয়ীদের ক্ষেত্রেও পেনশন হার অলিম্পিক গেম্স এবং এশিয়ান গেম্স-এ পদক জয়ীদের পেনশনের সমতুল হবে। পেনশন হারে এই সংশোধন গত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।
জাতীয় ডোপ-বিরোধী সংস্থা (নাডা) :
এবছরের গোড়ায় দিল্লিতে আয়োজিত প্রথম খেলো ইন্ডিয়া বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নাডা অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্রীড়াসুলভ আচরণ বজায় রাখার জন্য ডোপ বা নিষিদ্ধ মাদক সেবন থেকে নিজেদের দূরে রাখতে যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করার কাজ করে। প্রতিযোগিতায় নাডা মোট ৩৩৭টি ক্ষেত্রে মাদক সেবন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। উদ্দেশ্য ছিল, বিদ্যলয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে ডোপ-মুক্ত রাখা। কমনওয়েল্থ গেম্স এবং এশিয়ান গেম্স-এর আগে ৪৯৮ জন ভারতীয় খেলোয়াড়ের ডোপ পরীক্ষা করা হয়। এই প্রথমবার নাডা একসঙ্গে এই বিপুল সংখ্যক খেলোয়াড়ের ডোপ পরীক্ষা করল। মাদক সেবনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত যে বিধি-নিষেধ রয়েছে, নাডা সঠিকভাবে মেনে চলছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য গত বছর বিশ্ব ডোপ-বিরোধী সংস্থা ওয়াডার একটি দল ভারতে আসে। ওয়াডার পক্ষ থেকে প্রকাশিত বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে খেলোয়াড়দের মধ্যে মাদক সেবন সংক্রান্ত নিয়মকানুন লঙ্ঘনের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে, মাদক সেবনের সংখ্যার দিক থেকে ভারত বিশ্বের ষষ্ঠ স্থান থেকে উন্নতি করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।
মণিপুরে জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় :
ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মণিপুরে জাতীয় স্তরের একটি ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গত বছরের ১০ আগস্ট লোকসভায় জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় বিল, ২০১৮ পেশ করা হয়। চলতি বছর সংসদের বাদল অধিবেশনে দুই কক্ষেই বিলটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত বিলটি রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার পর জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৮ সরকারি গেজেটে গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত হয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া বিজ্ঞান, শরীর শিক্ষা সহ বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর তথা ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ মার্চ ইম্ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করেন। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামূলক কর্মসূচি অস্থায়ীভাবে খুমান লাম্পাক স্পোর্টস কমপ্লেক্সে চালু রয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে প্রথম শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। নতুন স্নাতকোত্তর পাঠক্রম ‘ক্রীড়া মনোবিদ’ নিয়ে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে।
ক্রীড়া সংক্রান্ত বিজনেস ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা :
দেশে ক্রীড়ার অনুকূল বাতাবরণ তৈরি এবং ক্রীড়াক্ষেত্রের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে মন্ত্রক রোহতকের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দু’বছরের একটি পাঠ্যক্রম পরিচালনার জন্য তহবিল সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্সগুলির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রীড়া সংক্রান্ত বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্সে পঠনপাঠন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গোয়ালিয়রে লক্ষ্মীবাঈ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্যাল এডুকেশনকে প্রথম শ্রেণীর ডিম্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে :
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গ্রেড স্বশাসন প্রদান সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য যে শ্রেনী বিভাগ রয়েছে, সেই অনুযায়ী গোয়ালিয়রের লক্ষ্মীবাঈ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্যাল এডুকেশনকে প্রথম শ্রেণীভুক্ত ডিম্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর আগে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ন্যাক অনুমোদিত ‘এ++’ মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছিল। গত বছর একাদশ জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে গোয়ালিয়রের এই প্রতিষ্ঠানটিকে ভারতে শারীর শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ট্রফি প্রদানের নীতি-নির্দেশিকায় সংশোধন :
ক্রীড়াক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মনোনীত করার নিয়ম-নীতিকে আরও যুক্তিসঙ্গত ও সরল করে তুলতে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ট্রফি প্রদানের নিয়ম-নীতি সংশোধন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী এই সংশোধনীতে সায় দিয়েছেন। সংশোধিত নীতি-নির্দেশিকার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখন থেকে এই পুরস্কারের জন্য তাদের আবেদনপত্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংগঠনের পরিবর্তে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রক বা স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (সাই) কাছে পাঠাতে পারবে। মন্ত্রক এবং সাই প্রাপ্ত আবেদনপত্রগুলি পরীক্ষার কাজ করবে। একইসঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে তথা সাফল্য অর্জনে কত নম্বর পেয়েছে, তাও খতিয়ে দেখার কাজ করবে মন্ত্রক এবং সাই। প্রথম স্থানাধিকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পুরস্কারবাবদ অর্থের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পুরস্কারবাবদ অর্থের পরিমাণ ৫ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীর জন্য অর্থ পুরস্কারের মূল্য ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
ন্যাশনাল সেন্টার অফ স্পোর্টস সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলিকে অর্থ সাহায্য :
বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলিকে বিশিষ্ট অ্যাথলিটদের ক্রীড়া নৈপুণ্য বা পারফরম্যান্স আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে আধুনিক গবেষণা পরিচালনা ও উদ্ভাবনী পন্থা-পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য ন্যাশনাল সেন্টার অফ স্পোর্টস সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সহায়তাদানের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গ হল – পাতিয়ালার জাতীয় ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া-বিজ্ঞান তথা গবেষণা ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের একটি কেন্দ্র স্থাপন এবং সুনির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তথা মেডিকেল কলেজ, প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালগুলির ক্রীড়া-বিজ্ঞান এবং ক্রীড়া-চিকিৎসা বিভাগগুলিকে সহায়তাদান। মন্ত্রক আগামী পাঁচ বছরে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ২৫ কোটি টাকা এবং নির্দিষ্ট মেডিকেল কলেজ, প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালগুলিকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম পরিচালনার জন্য ১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা দেবে। ক্রীড়া-বিজ্ঞান এবং গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যেই এই অর্থ দেওয়া হবে। মেডিকেল কলেজগুলির ক্রীড়া-চিকিৎসা বিভাগের পক্ষ থেকে এমবিবিএস-পরবর্তী ডিগ্রি, অর্থাৎ ক্রীড়া-চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমডি বা ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া-বিজ্ঞান দপ্তর ক্রীড়া-মনোবিদ, প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, স্পোর্টস, বায়ো-কেমিস্ট্রি প্রভৃতি ক্ষেত্রে এমএসসি ডিগ্রি প্রদান করবে। ক্রীড়া-বিজ্ঞান ও ক্রীড়া-চিকিৎসা বিভাগ স্থাপনের জন্য দেশের যে ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে।
দপ্তরের এই সমস্ত উদ্যোগের ফলে অদূর ভবিষ্যতে ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের নাম আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
SC/BD/DM
(Release ID: 1555524)
Visitor Counter : 879