প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ইন্দোরে ইমাম হুসেইনের আত্মবলিদানের আশারা মুবারকা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 17 SEP 2018 4:22PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১

হিজ হোলিনেস, ডঃ সৈয়দনা মুফদ্দল সৈফুদ্দীন সাহেব, মধ্যপ্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং এখানে উপস্থিত দাউদী বোহরা সমাজে আমার পরিবারের সমস্ত মানুষেরা।

 

আপনাদের সকলের মাঝে এলে আমি সর্বদাই নতুন প্রেরণা পাই, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি।

 

আশারা মুবারকের এই পবিত্র অনুষ্ঠানে আপনারা আমাকে এখানে আসার সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

 

আমাকে বলা হয়েছে যে, প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রে বসে দাউদি  বোহরা সমাজের মানুষ এখন আমাদের অনুষ্ঠান দেখছেন। সেজন্য প্রযুক্তির মাধ্যমেই দূর-দূরান্তে বসে থাকা সকল দর্শক ও শ্রোতাদের আমি এখান থেকে প্রণাম জানাই।

 

বন্ধুগণ, ইমাম হুসেইনের পবিত্র বার্তাকে আপনারা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করেছেন, আর কয়েক শতাব্দী ধরে দেশ ও বিশ্বের নানা প্রান্তে সেই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। ইমাম হুসেইন শান্তি ও সুবিচারের জন্য লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিলেন। তিনি অন্যায় ও অহঙ্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন। তাঁর এই দৃষ্টান্ত তখন যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তারচেয়ে আজকের বিশ্বের জন্য অনেক বেশি অর্থবহ। এই ঐতিহ্যকে ব্যাখ্যা সহ প্রচারিত ও প্রসারিত করার প্রয়োজন রয়েছে। আর আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, সৈয়দনা সাহেব, বোহরা সমাজের প্রত্যেককে এই আন্দোলনে সামিল করেছেন।

 

বন্ধুগণ, আজ বিশ্বকে একটি পরিবার বলে মনে করা ভারতীয় পরম্পরা অনুসরণ করে, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্‌’ মন্ত্র নিয়ে আমরা বিশ্ববাসীর প্রতি দু’হাত প্রসারিত করে রেখেছি, আমাদের সমাজের, আমাদের ঐতিহ্যের এই শক্তিই আমাদের বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছে

 

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বোহরা সমাজ গোটা বিশ্বকে ভারতের এই শক্তির সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছে। বিশ্বের যেখানেই যাই না কেন, তাঁরা এসে আমাকে গুজরাটি ভাষায় জিজ্ঞেস করেন, ‘কেমন আছেন’?

 

আমরা নিজের অতীত নিয়ে গর্বিত। বর্তমানকে আমরা বিশ্বাস করি আর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি সংকল্পও রয়েছে। আমি পৃথিবীর যে দেশেই যাই না কেন, বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের জন্য আমাদের সমাজের অবদানের কথা অবশ্যই তুলে ধরি।

 

বন্ধুগণ, শান্তি সদ্ভাব, সত্যাগ্রহ এবং রাষ্ট্রভক্তির প্রতি বোহরা সমাজের ভূমিকা সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বয়ং সৈয়দনা সাহেব নিয়মিত তাঁর প্রবচনের মাধ্যমে নিজের দেশে মাতৃভূমির প্রতি প্রেম ও সমর্পনের শিক্ষা দিতে থাকেন। একটু আগেও তিনি নিজের সংক্ষিপ্ত ভাষণে যা বললেন, দেশ, সমাজ, আইন-কানুনের প্রতি আমাদের কতটা উৎসর্গীকৃত থাকা উচিৎ - তা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ভারতবাসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

 

তার আগে পূজনীয় সৈয়দনা তাহির সৈফুদ্দিন সাহেবও গান্ধীজির পাশে দাঁড়িয়ে এই সমস্ত আদর্শ স্থাপনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছেন।

 

আমি কোথাও পড়েছিলাম যে, রেলগাড়িতে সফরের সময় এই দুই মহাপুরুষ পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। তারপর থেকে উভয়ের মধ্যে আজীবন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় ছিল, যে কোনও বড় ঘটনা কিংবা আন্দোলন নিয়ে তাঁরা আলাপ-আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ঠিক করতেন।

 

আমরা সবাই জানি যে, দান্ডি যাত্রা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একটি সোনালী অধ্যায়। দান্ডী যাত্রার সময়ই পূজনীয় বাপুজি সৈয়দনা সাহেবের বাড়ি ‘সৈফি ভিলা’তে রাত্রিবাস করেছিলেন। গান্ধীজির বন্ধুত্বকে সম্মান জানিয়ে সৈয়দনা তাহির সৈফুদ্দিন সাহেব সেই ‘সৈফি ভিলা’টিকে স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রকে সমর্পণ করেছেন। আজ সেই ‘সৈফি ভিলা’ দেশের নবীন প্রজন্মকে প্রেরণা যোগায়।

 

বন্ধুগণ, বোহরা সমাজের সঙ্গে আমার সম্পর্কও অনেক পুরনো। একটু আগে সৈয়দনা সাহেব যেমন বললেন, আমি সত্যি সত্যি এই পরিবারের সদস্য হয়ে পড়েছিসর্বদা এক আত্মীয়তার অনুভব, যখন তখন চলে আসা, আর আমার দরজাও বোহরা সমাজের মানুষের জন্য সবসময় খোলা থাকে। আমার সৌভাগ্য যে আপনাদের অপার স্নেহ, সম্পূর্ণ পরিবারের ভালোবাসা আমি সবসময়ই পাই।

 

আজও এখনও আমার জন্মদিন আসেনি, কিন্তু আপনারা সবাই এই পবিত্র মঞ্চ থেকে আমাকে আশীর্বাদ করেছেন, আমাকে এই আশীর্বাদ রাষ্ট্রকল্যাণে কাজ করার জন্য অধিক শক্তি প্রদান করবে। এটা অনেক বড় কথা! সেজন্য আমি আপনাদের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

 

গুজরাটে সম্ভবত, এমন কোনও গ্রাম নেই, যেখানে বোহরা ব্যবসায়ী সমাজের কোনও প্রতিনিধি নেই। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন প্রতি পদক্ষেপে বোহরা সমাজ আমাকে সমর্থন করেছে। আপনাদের এই আত্মীয়তাই আজ আমাকে এখানে টেনে এনেছে। আমার মনে পড়ে, সৈয়দনা সাহেবের সঙ্গে আমার বিমান বন্দরে দেখা হয়েছিল। তিনি পাটনা থেকে ফিরছিলেন, সুরাটে যাবেন। তাঁর সময় ছিল না বলে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বিমান বন্দরে চলে গিয়েছিলাম। আমি ভাবলাম, খবর যখন পেয়েছি, এমনি যেতে দেব না! আর সেই সামান্য সময়ে বড়রা যেমন বাচ্চাদের আদর করেন, তিনি আমাকে সেরকমই আদর করেছিলেন। কথায় কথায় আমি তাঁর সঙ্গে গুজরাটের জলের সমস্যার কথা বলেছিলাম, চেক ড্যাম বা নিয়ন্ত্রক বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলেছিলাম, আর আজ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আপনাদের বলছি, আমার সেই ইচ্ছের কথা জেনে সৈয়দনা সাহেব সেই বয়সে, তাঁর বয়য় তখন ৯৭-৯৮ বছর হবে, ৯৫-এর অধিক তো অবশ্যই। তিনি সুরাটে ফিরেই মিশন মোডে কাজ শুরু করে নিজেদের চেষ্টায় অনেক গ্রামে সাফল্যের সঙ্গে বর্ষার আগেই অনেক চেকড্যাম নির্মাণ করে গ্রামগুলির জন্য বর্ষার জল ধারণ করতে পেরেছিলেন।

 

শুধু তাই নয়, আজ থেকে কয়েক বছর আগে আমি গুজরাটে একটি অপুষ্টি দূরীকরণ কর্মসূচিতে বোহরা সমাজের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলাম। আর সৈয়দনা সাহেবের নেতৃত্বে বোহরা সমাজে আমাদের সঙ্গে সেই অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

 

আর নিতান্ত কাকতালীয়ভাবেই এবার যখন দাউদি বোহরা সমাজ আশরা মুবারক-এর পবিত্র উৎসব পালন করছেন, গোটা দেশে তখন অপুষ্টি বিরোধী অভিযানের মাস পালন করা হচ্ছে। প্রত্যেক শিশু ও মাকে নিরাপদ করে তুলতে সারা দেশে এই অভিযান চলছে।

 

আপনারা সবাই প্রত্যেক শিশুর শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিয়ে যে কাজ করেন তা সমাজের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাকে বলা হয়েছে যে, ‘প্রোজেক্ট রাইস’-এর মাধ্যমে আপনারা মহারাষ্ট্র সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশুদের পুষ্টিবর্ধক আহার বিতরণ করছেন। আপনাদের এই প্রচেষ্টা নিশ্চিতভাবেই দেশের ভবিষ্যৎকে সুস্থ ও সবল করে তুলতে সহায়ক হবে।

 

বন্ধুগণ, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিয়ে বোহরা সমাজ সর্বদাই যথেষ্ট সচেতন। ফেজ অল মভেদ এবং থালিং; কম্যুনিটি কিচেনের মাধ্যমে সমাজের কোনও ব্যক্তি যাতে অভুক্ত না থাকে – আপনারা তা সুনিশ্চিত করেন। শুধু তাই নয়, দেশের গরিব ও মধ্যবিত্তদের স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য আপনারা কয়েক ডজন হাসপাতাল চালু করেছেন। সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতি আপনাদের এই ভাবনা দেশকে, সমাজকে শক্তি যোগায়, ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

 

আপনারা জানেন যে, এই প্রথম দেশের সরকারও স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং প্রতিরোধক স্বাস্থ্য পরিষেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। উৎকৃষ্ট মানের হাসপাতাল এবং হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস্‌ সেন্টারের সম্প্রসারণ ঘটানো হচ্ছে। সরকার হৃদ যন্ত্র এবং হাঁটু প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এখন দেশের প্রায় ৫০ কোটি দরিদ্র ভাই-বোনের জনয সঞ্জীবনী আশা সঞ্চার করেছে।

 

এটা কোনও ছোট কর্মসূচি নয়। আমেরিকা, কানাডা কিংবা মেক্সিকোর মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি মানুষের স্বার্থে ভারতে আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচি চালু করতে চলেছি। প্রায় গোটা ইউরোপের জনসংখ্যার সমান সংখ্যক মানুষের জন্য ভারতে এই প্রকল্প চালু হবে। কত বড় কাজ, কত মানুষ উপকৃত হবেন, তা আপনারা কল্পনা করতে পারেন!

 

এক বছরে প্রত্যেক পরিবারের যে কোনও সদস্যের জনয ৫ লক্ষ টাকা অর্থ ব্যয়ে চিকিৎসা; এটা ছোট সিদ্ধান্ত নয়। ৫০ কোটি মানুষের বছরে পরিবারের যে কোনও সদস্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে চিকিৎসার দায়িত্ব পালনকারী এই আয়ুষ্মান যোজনার এখন পরীক্ষামূলক সূচনা হয়েছে আর তা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সারা দেশে চালু করা হবে

 

বন্ধুগণ, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি আপনারা দরিদ্র ও অভাবী গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণের যে কাজ করে যাচ্ছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনাদের প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যেই ১১ হাজার দরিদ্র মানুষ ঘর পেয়েছেন। সরকারও ২০২২ সালের মধ্যে প্রত্যেক গৃহহীন গরিব ভাই-বোনকে পাকাঘর প্রদানের লক্ষ্য ধার্য করেছে।

 

আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটিরও বেশি গৃহহীন ভাই-বোন নিজস্ব গৃহ পেয়েছেন। অর্থাৎ শুধু ঘোষণা নয়, তাঁরা বাড়ির চাবিও পেয়ে গেছেন। আর বাকিদের জন্য গৃহনির্মাণের কাজ দ্রুৎগতিতে এগিয়ে চলেছে। এছাড়া, শিক্ষ ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আপনাদের প্রচেষ্টা সরকারকে শক্তি যোগায়। কখনও কখনও সমাজের শক্তির সঙ্গে সরকারের শক্তি মিলিত হলে অনেক গুণ বেশি পরিমাণ লাভ করা যায়। দেশের জনগণের জীবনকে সরল করে তুলতে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের খাতিরে আমরা নিয়মিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

বন্ধুগণ, গরিব ও মধ্যবিত্তদের স্বার্থ জড়িত আরেকটি বিষয়ে সরকার জোর দিয়েছে, তা হল – পরিচ্ছন্নতা। ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ একটি সরকারি কর্মসূচি হওয়া সত্ত্বেও এখন ১২৫ কোটি জনগণের একটি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা হয়ে উঠেছে। গ্রামে গ্রামে, অলিতে গলিতে পরিচ্ছন্নতার প্রতি এক অভূতপূর্ব আগ্রহ ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।

 

চার বছর আগে দেশের মাত্র ৪০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার ছিল। আমাদের মা ও বোনেদের প্রতিদিন কত না কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা এই অভিযান শুরু করে ইতিমধ্যেই দেশের ৯০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ সুনিশ্চিত করেছি। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, নিকট ভবিষ্যতেই সারা দেশকে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্মমুক্ত বলে ঘোষণা করতে পারব!

 

আজ আমরা যে ইন্দোর শহরে মিলিত হয়েছি, এই শহর আজ দেশে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইন্দোর গোড়া থেকেই পরিচ্ছন্নতার নিরিখে দেশের মধ্যে সর্বাগ্রে থেকেছে। সেজন্য ইন্দোরের সমস্ত নাগরিককে এখানকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, এখানকার কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপকদের মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারকে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজজি ও তাঁর পুরো টিমকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

 

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালও এবার কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় যে, আমার মধ্যপ্রদেশের নবীন প্রজন্ম, প্রত্যেক মানুষ – এই আন্দোলনকে গতিপ্রদান করছেন। পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের পবিত্রতা সুনিশ্চিত করতে আপনাদের সামাজিক অবদান সম্পর্কে এখন সারা দেশের মানুষ জেনে গেছেন। সৈয়দনা সাহেবও পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের নিরাপত্তা নিয়ে আগ্রহী। আর আমার মনে আছে যে, বড় সৈয়দনা সাহেবের জন্ম শতাব্দীতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

 

জানি না মানুষ কিভাবে জন্ম শতাব্দী পালন করেন, জন্মদিন পালন করেন? সেই দিন আমরা সবাই চড়াই পাখিদের সুরক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলাম। প্রত্যেক নাগরিককে একটা করে রাজ্য দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁরা চড়াইয়ের বাসা বানাবেন। এটাও তো পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলনই। এটা আমাদের সংস্কারও বটে, আর তিনি আমাদের পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও শুদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন মনের পবিত্রতাকেও

 

আমাকে বলা হয়েছে যে, ইন্দোরের সাফল্যের কথা মাথায় রেখে আশরা মুবারকের এই সম্পূর্ণ আয়োজনকে পরিবেশ সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার বার্তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

 

এখানে প্লাস্টিক ব্যাগ সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সম্পূর্ণ আয়োজনকে বর্জ্য পদার্থ শূন্য করে তোলার সংকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে নিয়মিত ১০ টন আবর্জনা পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে জৈব সারে রূপান্তরণ করা হচ্ছে। আর এই সার বিনামূল্যে কৃষকদের বিতরণ করা হচ্ছে।

 

এসব কাজের মাধ্যমে আপনারা পরিবেশের সেবা তো করছেনই, সরকারের বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যকেও শক্তি প্রদান করছেন। পাশাপাশি, আপনাদের এই পদক্ষেপ দ্বারা কৃষক ভাই-বোনেরাও উপকৃত হচ্ছেন। আমি সারা দেশের স্বচ্ছাগ্রহীদের অনুরোধ জানাই যে, তাঁরাও এই ধরণের অনুষ্ঠানেও বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য সচেষ্ট হোন।

 

আগামীকাল ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ শীর্ষক পরিচ্ছন্নতা পক্ষ শুরু হচ্ছে, যা আগামী গান্ধী জয়ন্তী দোশরা অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এই সময়ে আমরা সারা দেশে এরকম প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি।

 

আমি নিজে আগামীকাল সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের বিভিন্ন ধর্মের গুরু, শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী ও সমাজের অগ্রগণ্য মানুষদের সঙ্গে কথা বলব। আর তারপর একটি বিশ্ব রেকর্ড স্থাপিত হবে। এক সঙ্গে ১ কোটি মানুষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সামিল হবেন।

 

শুধু তাই নয়, দোশরা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান শুরু হবে। এই উপলক্ষে সৈয়দনা সাহেব আমাকে জাতির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, আসুন আমরা একই সঙ্গে দু’বছর ধরে বাপুজির প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে দেশ ও বিশ্বকে উৎসাহ যোগাই।

 

আজ এখানে ইন্দোরে, আপনাদের সকলের মাঝে দাউদি বোহরা সমাজকে এবং আমার মধ্যপ্রদেশের ভাইবোনদের আমি এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই।

 

বন্ধুগণ, আজ এই উপলক্ষে আমি আপনাদের আরেকটি কারণে প্রশংসা করতে চাই। আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই হলেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। দেশের আইন-কানুন মেনে কিভাবে অনুশাসন রক্ষা করে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় – এক্ষেত্রেও আপনারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একটু আগে সৈয়দনা সাহেবও তাঁর অনুশাসনপ্রিয়তার কথা বলছিলেন। এটা সামান্য কথা নয়। দাউদি বোহরা সমাজ, বিশ্বে যে যেখানে রয়েছেন; এই মূল্যবোধের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় স্থাপন করেছেন; সম্মান অর্জন করেছেন।

 

সততা, সত্য ও নিষ্ঠা নিয়ে কিভাবে ব্যবসায় উন্নতি করা যায়, তা আপনারা নিজেদের আচরণের মাধ্যমে স্থাপন করেছেন। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা দেশের অর্থ ব্যবস্থার মেরুদন্ড। তাঁরাই দেশে কর্মসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেজন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এবং যে যে রাজ্যে আমার দল ক্ষমতাসীন রয়েছে, সর্বত্র আমরা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের যতটা সম্ভব আনুকূল্য প্রদান করছি।

 

কিন্তু এটাও সত্য যে, ৫ হাতের ৫ আঙুল এক সমান হয় না। আমাদের মধ্যেই কেউ কেউ হয়তো ব্যবসায় ছলচাতুরিকে প্রশ্রয় দেন। বিগত চার বছরে সরকার স্পষ্ট বার্তা প্রদানে সফল হয়েছে যে, সবাইকে দেশের আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। জিএসটি, ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোডের মতো অনেক আইনের মাধ্যমে সৎ ব্যবসায়ীদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। এর দ্বারা সর্বাধিক উপকৃত হচ্ছেন আমার বোহরা সমাজ।

 

এজন্যই বিগত চার বছরে ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীর বিশ্বাস বেড়েছে। আজ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে গাড়ি উৎপাদনে ভারত রেকর্ড স্থাপন করেছে। ফলস্বরূপ, গত কোয়ার্টারে দেশের বিকাশের হার ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। ১২৫ কোটি মানুষের পরিশ্রমে দেশে এই সমৃদ্ধি এসেছে, যা দেশকে বিশ্বে সর্বাধিক দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান বড় দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে।

 

এখন দেশের লক্ষ্য হ’ল – উন্নয়নের হারকে ১০ শতাংশে পৌঁছে দেওয়া। আমরা যে গতিতে এগোচ্ছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা অতিক্রম করে আমরা এই নিকট ভবিষ্যতেই এই লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হব।

 

বন্ধুগণ, সারা পৃথিবীতে ভারতের প্রতি সদ্ভাবনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। আগে বিশ্বে ‘প্রাচীন ভারত’-এর যে গৌরব ছিল, এখন আমাদের ‘নতুন ভারত’-কে সম্মান জানানোর সৌভাগ্য হচ্ছে।

 

দেশের নবনির্মাণের জন্য আমরা হাতে হাত ধরে নিরন্তর এগিয়ে যাব। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি আজকের বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আরেকবার আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সৈয়দনা সাহেব’কে তাঁর পরিবারের সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি সবসময় আপনাদের স্নেহ, ভালোবাসা ও আশীর্বাদ পেয়ে এসেছি। এই আশীর্বাদ আমার সম্পদ, আমার শক্তি। এই শক্তি ও সামর্থ আমি দেশবাসীর চরণে অর্পণ করে আরেকবার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

 

ধন্যবাদ।

 

 

CG/SB/SB…



(Release ID: 1546368) Visitor Counter : 352


Read this release in: English