প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বিমস্টেকের বর্ধিত অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি (৩০ আগস্ট, ২০১৮)

Posted On: 05 SEP 2018 8:51PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ আগস্ট ২০১

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওলিজি, বিমস্টেক সদস্য রাষ্ট্রগুলির আমার সহ-নেতৃবৃন্দ,

 

প্রথমেই আমি নেপাল সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী ওলিজি-কে এই সফল বিমস্টেক চতুর্থ শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। যদিও এটি আমার প্রথম বিমস্টেক শীর্ষ বৈঠক, কিন্তু ২০১৬’য় ভারতের গোয়ায় আমার বিমস্টেক শীর্ষ বৈঠকের ঘরোয়া বৈঠক আয়োজনের সুযোগ হয়েছিল। গোয়ায় আমরা যে কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলির আধিকারিকরা সে বিষয়ে প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।

 

এগুলির মধ্যে রয়েছে,

 

প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত বিমস্টেকের প্রথম মহড়া

 

সদস্য রাষ্ট্রগুলির জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানদের দুটি বৈঠকের আয়োজন

 

বিমস্টেকের বাণিজ্য সুবিধা সংক্রান্ত চুক্তি বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি

 

বিমস্টেকের বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোগ সংক্রান্ত চুক্তি

 

আমি সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিদলকে এই কাজের জন্য অভিনন্দন জানাই

 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

 

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের দেশগুলির সভ্যতা, ইতিহাস, শিল্প, ভাষা, খাদ্য এবং আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতির দ্বারা যুক্ত রয়েছে। একদিকে যেমন দাঁড়িয়ে আছে উত্তুঙ্গ হিমালয় পর্বতমালা, অন্যদিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর, যা ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি অবস্থান করছে। এই বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল আমাদের উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তাই, এটা অবাক হওয়ার নয় যে, ভারতের ‘প্রতিবেশীরাই প্রথম’ এবং ‘পূবে কাজ কর’ – এই দুটি উদ্যোগই বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলই ঘটে চলেছে।

 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

 

আমরা সকলেই উন্নয়নশীল দেশ। শান্তি, উন্নতি এবং আমাদের সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জন্য সুখ নিশ্চিত করাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কিন্তু আজকের এই সংযুক্ত জগতে কোনও সাফল্যই এককভাবে অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস যে, বিভিন্ন মাত্রায় আমাদের যে সব ক্ষেত্রগুলিকে কাজের বৃহত্তম সুযোগ রয়েছে, তা হল – যোগাযোগ, বাণিজ্যিক লেনদেন, অর্থনৈতিক লেনদেন, পরিবহণ যোগাসযোগ, ডিজিটাল সংযোগ এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ। আমরা এছাড়াও, বিমস্টেক-এর উপকূলীয় অঞ্চলে জাহাজ চলাচল এবং মোটরযান চুক্তির বিষয়ে ভবিষ্যতে মতবিনিময় করতে পারি। আমাদের দেশগুলির উদ্যোগপতিদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত বিমস্টেকের স্টার্টআপ সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুত। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে কৃষি প্রধান দেশ এবং আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার মুখোমুখী হয়েছি। এই প্রেক্ষিতে কৃষি গবেষণা, শিক্ষা, উন্নয়ন প্রভৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য ভারত যে কোনও জলবায়ুতে কার্যকর কৃষি ব্যবস্থা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করবে।

 

ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রে ভারত ইতিমধ্যেই তাদের জাতীয় জ্ঞান সংক্রান্ত নেটওয়ার্কে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালে তৎপরতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে। আমরা মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডকেও এই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে এর কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি। আমি আশা করি, নতুন দিল্লিতে এ বছর ‘ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস’ আয়োজন করা হবে, তাতে বিমস্টেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলি অংশগ্রহণ করবে। এই কংগ্রেসের পাশাপাশি একই সঙ্গে বিমস্টেক-এর মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা বৈঠকেরও আলোচনা করা হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। ভারতে এই অঞ্চলটির উন্নয়নের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলির ক্ষেত্রে প্রসারিত করতে চাই। অনুরূপভাবে, আমরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মহাকাশ প্রযুক্তি কেন্দ্রে বিমস্টেক রাষ্ট্রগুলির গবেষক, ছাত্রছাত্রী এবং পেশাদারদের জন্য ২৪টি স্কলারশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

 

আমাদের দেশগুলির সম্পর্কের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাদর্শ এবং চিন্তাশীলতা একটি বিশেষ সেতুবন্ধ রচনা করেছে। ২০২০-র আগস্ট মাসে ভারত একটি আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ধর্মাদর্শ সংক্রান্ত সম্মেলনের আয়োজন করবে। আমি বিমস্টেকভুক্ত সমস্ত রাষ্ট্রকে এই সম্মেলনে সম্মানীয় অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের দেশগুলির যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগের উন্নতি ঘটাতে ভারত বিমস্টেক যুব শীর্ষবৈঠক-ও বিমস্টেক ব্যান্ড উৎসব আয়োজন করতে আগ্রহী। একই সঙ্গে আমরা বিমস্টেক যুবগোষ্ঠীর জন্য জল ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়জন করতে চাই। বিমস্টেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির ছাত্রছাত্রীদের জন্য নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০টি স্কলারশিল্প দেওয়া হবে। এছাড়া, জিপমার ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাবিদ্যার উচ্চতর গবেষণার জন্য ১২টি ফেলোশিপ দেওয়া হবে। অন্যদিকে, পর্যটন,  প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিচালন, পরিবেশ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, কৃষি, বাণিজ্য এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন বিষয়ে ১০০টি স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও ভারত করতে চায়। আমরা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্প, সংস্কৃতি, সামুদ্রিক আইন এবং বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বঙ্গোপসাগর চর্চা কেন্দ্র খুলতে চাই। এই কেন্দ্রে আমরা একে অপরের ভাষা সংযোগ বিষয়ে গবেষণা করতে পারি। আমরা আমাদের ঐতিহাসিক ভবন ও সৌধগুলিকে বাঁচিয়ে তুলতে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি। আমাদের সবকটি দেশে ঐতিহাসিক সৌধগুলিকে কেন্দ্র করে পর্যটনের সম্ভাবনাকে বিকশিত করে তুলতে পারি।

 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

 

আমাদের আঞ্চলিক পর্যায়ে অখন্ডতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বিকাশের লক্ষ্যে যৌথ উদ্যোগকে সফল করে তুলতে এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। আমাদের দেশগুলি হিমালয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন। যার ফলে আমাদের প্রায়শই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। কখনও হয়তো বন্যা আবার কখনও সাইক্লোন বা ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের দেশগুলিকে। এই প্রেক্ষিতে একে অপরের মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ত্রাণের ক্ষেত্রে সমন্বয়সাধন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্বের প্রধান সামুদ্রিক বাণিজ্যপথের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া, আমাদের সবকটি দেশের ক্ষেত্রেই নীল অর্থনীতির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। একই সঙ্গে, সাইবার অর্থনীতিও আসন্ন ডিজিটাল যুগে আমাদের দেশগুলির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাই আমি আগামী মাসে ভারতে বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলির বহুজাতিক, সামরিক, তৃণমূল স্তরে প্রশিক্ষণ মহড়া ও সেনা প্রধানদের বৈঠকে আপনাদের স্বাগত জানাই। ভারত বিমস্টেক দেশগুলির জন্য মানবিক সহায়তা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য তিন বাহিনীকে নিয়ে একটি মহড়ার আয়োজন করবে। এছাড়া, বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত বার্ষিক মহড়াও আয়োজন করা হবে। বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমাদের আধিকারিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ভারত নীল অর্থনীতি বিষয়ে বিমস্টেক দেশগুলির যুবকদের জন্য একটি ‘হ্যাকাথন’ আয়োজন করবে। এই প্রতিযোগিতা নীল অর্থনীতিতে সম্ভাবনা ও সহযোগিতাকে তুলে ধরবে।

 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

 

আমাদের এই অঞ্চলের মধ্যে এমন কোনও দেশ নেই, যারা নাকি সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্তপারের অপরাধ ও মাদক চালানের মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়নি। আমরা বিমস্টেক ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে এই মাদক চালান প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুত। এটা খুব পরিস্কার যে, এই সমস্যাগুলি কোনও একটি দেশের আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়। তাই আমাদের যৌথভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। এরজন্য আমাদের দেশগুলির মধ্যে একটি বিধিবদ্ধ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশগুলির আইন প্রণয়নকারী, বিশেষ করে মহিলা আইনবিদদের ভূমিকা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। তাই আমি বিমস্টেক গোষ্ঠীভুক্ত মহিলা আইনবিদদের একটি বিশেষ মঞ্চের প্রস্তাব করছি।

 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

 

বিগত দু’দশকে বিমস্টেক গোষ্ঠী বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের এখনও বহু দূর যেতে হবে। আমাদের এই অঞ্চলটিতে অর্থনৈতিক সংহতিকে গভীরতর করতে আরও বহু সুযোগ আছে এবং এই অঞ্চলের মানুষ আমাদের থেকে এটাই প্রত্যাশা করেন। আমাদের এই দেশগুলির মানুষের আশা-প্রত্যাশা ও ইচ্ছা পূরণে এই চতুর্থ শীর্ষ বৈঠক সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণে এক বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। বিমস্টেকের চতুর্থ শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাপত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সংযুক্ত হয়েছে। এর ফলে বিমস্টেক সংগঠন হিসাবে আরও শক্তিশালী হবে।

 

এর সঙ্গে, এই শীর্ষ বৈঠকের সাফল্য বিমস্টেকের কাজের প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করবে ও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক হয়ে উঠবে বলে আমি আশা করি। এর জন্য আমি আয়োজক দেশের নেতৃবৃন্দ, নেপাল সরকার, ওলিজি এবং সকল সদস্য রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানাই। ভারত ভবিষ্যতেও আপনাদের সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

 

ধন্যবাদ।

 

 

CG/PB/SB…



(Release ID: 1545066) Visitor Counter : 173


Read this release in: English