জলসম্পদমন্ত্রক

বাঁধ নিরাপত্তা বিল, ২০১৮ : বাঁধের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রচলিত রীতিনীতি এবং সংস্হাগুলিকে শক্তিশালী করা ও মান্যতা প্রদানের এক পদক্ষেপ

Posted On: 21 JUN 2018 12:58PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২০ জুন, ২০১৮

 

      প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা ১৩.০৬.২০১৮ তারিখে সংসদে বাঁধ নিরাপত্তা বিল, ২০১৮ পেশ করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই বিলটির লক্ষ হচ্ছে, একটি সর্বজনীন ও সর্বভারতীয় নীতি ও পদ্ধতির মাধ্যমে দেশে বাঁধগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

      বিগত ৫০ বছরে ভারত বাঁধ এবং সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। বৃহৎ বাঁধের সংখ্যার নিরিখে ভারতের স্হান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরেই তিন নম্বরে। বর্তমানে আমাদের দেশে ৫২৫৪টি বৃহদায়তন বাঁধ রয়েছে এবং আরও ৪৪৭টি এই ধরণের বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন স্হানে হাজার হাজার মাঝারি এবং ক্ষুদ্র বাঁধ-ও রয়েছে।

      যেহেতু এইসব বাঁধগুলি আমাদের দেশের কৃষিতে দ্রুত এবং সুষম বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তাই আমাদের দেশের বাঁধগুলি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে একটি সর্বজনীন আইন ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় জল কমিশন বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠন এবং রাজ্য বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠনগুলির মাধ্যমে এই লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে। কিন্তু এইসব সংগঠনের কোন বিধিবদ্ধ ক্ষমতা নেই এবং তাদের ভূমিকা কেবলমাত্র পরামর্শদাতার।

      যেহেতু আমাদের দেশে বড় বড় বাঁধগুলির প্রায় ৭৫ শতাংশ ২৫ বছরের বেশি পুরনো এবং প্রায় ১৬৪টি বাঁধ ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো, এগুলি যথাযথভাবে দেখভাল করা হয় না, তাই এই ধরনের বাঁধ মানুষের জীবন, গাছপালা, পশুপাখি, সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ এবং পরিবেশের পক্ষে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ভারতে অতীতে ৩৬টি বাঁধ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ১১টি রাজস্হানে, ১০টি মধ্যপ্রদেশে, ৫টি গুজরাটে, ৪টি মহারাষ্ট্রে, ২টি অন্ধ্রপ্রদেশে এবং উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, তামিলনাড়ু ও ওড়িষায় একটি করে এই ধরণের বাঁধ বিপর্যযের ঘটনা ঘটেছে।

      বাঁধ নিরাপত্তা বিল, ২০১৮-র সংস্হানগুলি কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় পর্যায়েই বাঁধ নিরাপত্তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্হার ক্ষমতায়ন করবে, এছাড়া সারা দেশ জুড়ে বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রচলিত ব্যবস্হাগুলির উন্নয়ন ও  এগুলিকে সর্বজনমান্য করে তুলবে। বিলটিতে নিয়মিত বাঁধ পরিদর্শন, জরুরী কর্মপরিকল্পনা, সার্বিক বাঁধ নিরাপত্তা পর্যালোচনা, বাঁধের মেরামতি ও দেখভালের জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের ব্যবস্হা এবং যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত ও নিরাপত্তা ম্যানুয়েলের মতো বাঁধ নিরাপত্তার সমস্ত বিষয়ে সুষ্পষ্ট ব্যবস্হা রয়েছে। এই বিলটিতে বাঁধের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেগুলির মালিকের ওপর বর্তাবে বলে স্হির হয়েছে এবং এর অন্যথায় হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্হারও সংস্হান রয়েছে।

 

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো

      বাঁধ নিরাপত্তা বিল, ২০১৮-ই যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্হান রাখা হয়েছে তা নিম্নরূপ :

 

     বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি

      এই বিলে বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এই কমিটি বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন করবে এবং বাঁধগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিয়মবিধির সুপারিশ করবে।

জাতীয়  বাঁধ নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ

      বিলটিতে বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় নীতি, নির্দেশিকা এবং মানক বিষয়ে এক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্হা হিসাবে এই কর্তৃপক্ষ কাজ করবে বলে স্হির হয়েছে। রাজ্য পর্যায়ের বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠন এবং বাঁধগুলির মালিকদের সঙ্গে বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য এবং কাজকর্মের ক্ষেত্রে মান্য ব্যবস্হা বিষয়ে এই কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ রক্ষা করবে। রাজ্য পর্যায়ের বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠনগুলিকে প্রযুক্তিগত এবং পরিচালনগত সহায়তা প্রদানের কাজও করবে এই কর্তৃপক্ষ। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে একটি তথ্য ভান্ডারে দেশের সমস্ত বাঁধ বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ এবং অতীতে দেশে বাঁধ সংক্রান্ত বিপর্যয়ের ইতিহাসও সংগ্রহ করবে। বাঁধের যেকোন ধরনের বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান ছাড়াও বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতি নির্দেশিকা প্রকাশ, নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা সংশোধন এবং নিয়মিত বাঁধগুলি দেখাশোনার জন্য একটি করে চেক লিস্টও তৈরি করবে। নতুন বাঁধ নির্মাণের জন্য তার পরিকল্পনা, অনুসন্ধান সহ অন্যান্য কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনগুলির স্বীকৃতি প্রদান অথবা পরিচিতি জ্ঞাপক শংসাপত্রের ব্যবস্হা করবে। রাজ্য পর্যায়ের দুটি বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠনের মধ্যে কোনও বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তিরও উদ্যোগ নেবে। ভৌগলিক দিক থেকে কোন একটি বাঁধ যদি অন্য রাজ্যের জায়গার মধ্যে পড়ে সেক্ষেত্রে আন্তঃরাজ্য বিরোধের সম্ভাবনা দুর করতে জাতীয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জন্য রাজ্য কর্তৃপক্ষের করণীয় কাজগুলি করবে।

বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত রাজ্য পর্যায়ের কমিটি

      এই বিলে রাজ্য সরকারগুলিকে বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি করে রাজ্য পর্যায়ের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভৌগলিক এক্তিয়ারের মধ্যে সমস্ত বাঁধের বিষয়ে নজরদারি, পরিদর্শন, কাজকর্ম এবং দেখভালের দায়িত্ব থাকবে এই কমিটির হাতে। এছাড়াও প্রত্যেকটি রাজ্যকে একটি করে রাজ্য বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। এই সংগঠন বাঁধের নকশা, জলবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ভূবিজ্ঞান প্রযুক্তি, অনুসন্ধান, যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত কাজকর্ম এবং বাঁধ নির্মাণের ফলে উৎখাত হওয়া মানুষদের পুর্নবাসনের বিষয়টি দেখাশোনা করবে।

 

রাজ্য বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠন

      এই বিলটিতে প্রত্যেকটি রাজ্যের জন্য পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি করে রাজ্য পর্যায়ের বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠন গঠনের সংস্হান রয়েছে।

      রাজ্যের এক্তিয়ারের মধ্যে সমস্ত বাঁধ এই সংগঠনের কাজের আওতায় পড়বে। এই এক্তিয়ারের মধ্যে বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠনগুলিকে বাঁধগুলির ওপর নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারি চালাতে হবে, পরিদর্শন করতে হবে, বাঁধের কাজকর্ম এবং পরিচালনের ওপর নজরদারি তথ্য সংগ্রহ এবং এক একটি বাঁধের বিপদের সম্ভাবনা বিষয়ে জাতীয় বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠনের নীতি নির্দেশিকা অনুসারে শ্রেণী বিভাজন করতে হবে। এছাড়াও বাঁধ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নজরদারি, পরিদর্শন সংক্রান্ত সব রকমের কাজের তথ্য নথিভূক্ত করার জন্য একটি করে লগবুক রাখতে হবে এবং তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। প্রধান বাঁধগুলিতে যেকোন ধরনের ঘটনার রেকর্ড রাখতে হবে এবং বাঁধের মালিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে হবে।

এই বিলে বাঁধ কর্তৃপক্ষের করণীয় কাজ বিষয়েও সুষ্পষ্ট নীতি-নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাঁধের দেখভাল এবং মেরামতির জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের ব্যবস্হা করা, রাজ্য পর্যায়ের বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠনের সুপারিশগুলি রূপায়ণ করা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত কাজের তালিক প্রস্তুত করা, বাঁধের বিপর্যয় হলে কি ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে আনুমানিক রিপোর্ট তৈরি করা, অত্যাধুনিক তথ্য পরিচালন প্রযুক্তির ব্যবস্হা করা, বাঁধ নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্হা করা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা যাচাই করা প্রভৃতি রয়েছে। অন্যদিকে বাঁধের নির্মাণ অথবা সংস্কারের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান, নকশা এবং নির্মাণকার্য যাতে স্বীকৃত সংগঠনের মাধ্যমে করা হয় তা নিশ্চিত করার ব্যবস্হা করতে হবে। ভারতীয় মানক ব্যুরোর নীতি-নির্দেশিকা এবং কোড এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। যেকোন ধরনের বাঁধ সংক্রান্ত অনুসন্ধান এবং নির্মানের কাজে উপযুক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন এবং অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদদের কাজে লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে বাঁধ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এবং এর সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের কাজের গুণমান জাতীয় বাঁধ নিরাপত্তা কমিটির নিয়ম মেনে করতে হবে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নতুন বাঁধ নির্মাণ অথবা পুরনো বাঁধের এলাকা বাড়ানোর কাজ করা যেতে পারে। প্রাথমিক পর্বে বাঁধের জল ভরার ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত কাজের পরিকল্পনা প্রনয়ন করতে হবে এবং রাজ্য পর্যায়ে বাঁধ নিরাপত্তা সংগঠন কর্তৃক নিরাপত্তামূলক বিষয়ে পরিদর্শনের ব্যবস্হা করতে হবে।

প্রত্যেক বাঁধ এবং তাদের মালিকদের জন্য বাঁধের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহের বিষয়েও সুষ্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে এই বিলে। প্রাক বর্ষা এবং বর্ষার পর নিয়মিত বাঁধ পরিদর্শন, বন্যা, ভূমিকম্প কিংবা যেকোন ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনার সময় বিশেষ পরিদর্শনের ব্যবস্হা করতে হবে। বর্ষাকালে এবং ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ারদের বাঁধে মোতায়েন করতে হবে। প্রত্যেক বাঁধে জল ও আবহ বিজ্ঞান সংক্রান্ত কেন্দ্র স্হাপন করতে হবে। ৩০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতাসম্পন্ন বাঁধের জন্য ভূকম্পন পরীক্ষা সংক্রান্ত কেন্দ্র স্হাপন করতে হবে।

প্রত্যেক বাঁধের মালিককে প্রত্যেকটি বাঁধের জন্য জরুরি কর্ম পরিকল্পনা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্হা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বাঁধগুলির নিরাপত্তা সংক্রান্ত সার্বিক মূল্যায়নের কথাও এই বিলে বলা হয়েছে। প্রতি ৫ বছর অন্তর এবং তারপর নিয়মিতভাবে এই মূল্যায়নের কাজ চালাতে হবে।

বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মকানুনগুলি লঙ্ঘন করা হলে ব্যক্তি বা সংস্হার কি ধরনের শাস্তি হবে সে বিষয়েও এই বিলে সুষ্পষ্ট নীতি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। যেমন কোন ব্যক্তি যদি বাঁধ নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত কোন আধিকারিক বা কর্মীকে কাজে বাধা দেন, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য পর্যায়ের বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ ও সংগঠনগুলির নির্দেশিকা না মানেন, সেক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা/এবং জরিমানা (জীবনহানি হলে ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড) হতে পারে। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক ও বিভাগীয় প্রধানকে তাঁর জানা সত্ত্বেও নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনার জন্য সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে দোষী বলে ধরা হবে। সংস্হার ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দোষী ধরা হবে। তবে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার অথবা বাঁধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি, সংগঠন বা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ব্যতিরেকে তা আইনগতভাবে গণ্য করা হবে না।

 

CG/PB/NS/…


(Release ID: 1536119)
Read this release in: English