প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নেপালের জনকপুরে বরাহবিগা ময়দানে নাগরিক সংবর্ধনা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

Posted On: 15 MAY 2018 2:03PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ মে, ২০১

উপস্থিত সকল মাননীয় ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুল সংখ্যায় আগত আমার জনকপুরে প্রিয় ভাই ও বোনেরা – জয় সিয়ারাম, জয় সিয়ারাম, জয় সিয়ারাম।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

২০১৪ সালের আগস্ট মাসে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নেপালে এসেছিলাম, তখন সংবিধান সভাতেই বলেছিলাম যে, শীঘ্রই আমি জনকপুরে আসব। আমি সবার আগে আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি, কারণ, আমি শীঘ্রই আসতে পারিনি, আসতে অনেক দেরী হয়ে গেছে! কিন্তু মন বলে, সম্ভবত, মা সীতাই আমার জন্য আজ ভদ্রকালী একাদশীর দিনে তাঁকে দর্শনলাভের দিনটি নির্ধারিত করে রেখেছিলেন। এ আমার দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা যে, জগৎ-জননী সীতা মা’কে রাজা জনকের রাজধানীর পবিত্রভূমিতে গিয়ে প্রণাম জানাব। আজ জানকী মন্দির দর্শন করে আমার অনেক বছরের মানোকামনা পূর্ণ হওয়ায় নিজের জীবনকে ধন্য বলে অনুভব করছি।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

ভারত ও নেপাল দুটি দেশ, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব আজকের নয়, ক্রেতা যুগ থেকেই আমরা পরস্পরের বন্ধু। রাজা জনক ও রাজা দশরথ শুধুই জনকপুর এবং অযোধ্যাকে নয়, সমগ্র ভারত, এবং সমগ্র নেপালকে মিত্রতা এবং সহমর্মিতার বন্ধনে বেঁধে দিয়েছিলেন। এই বন্ধন রাম-সীতা, এই বন্ধন বুদ্ধ এবং মহাবীরের শিষ্যদের মধ্যে আরও সুদৃঢ় হয়েছে, এই বন্ধন এমনকি রামেশ্বরমের বাসিন্দাদের টেনে পশুপতিনাথের চরণে নিয়ে আসে, এই বন্ধন লুম্বিনীবাসীদের বৌদ্ধগয়ায় নিয়ে যায় আর এই বন্ধন, এই আস্থা এবং ভালোবাসাই আমাকে আজ জনকপুরে টেনে এনেছে।

 

রামায়ণের কালে জনকপুর, মহাভারতের কালে বিরাটনগর, পরবর্তীকালে সিমরোনগঞ্জ, বুদ্ধকালে লুম্বিনীর সঙ্গে এই সম্পর্ক এতই নিবিড় যে পরস্পরের মধ্যে আস্থা, আপনভা্ব, রুটি এবং বেটির সম্পর্ক বলে পরিভাষিত করা যায়। মা জানকী ছাড়া অযোধ্যা অসম্পূর্ণ।

 

আমাদের মা এক – আমাদের আস্থাও অভিন্ন, আমাদের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি এক, আমাদের পথ ও প্রার্থনাও অভিন্ন। আমাদের পরিশ্রমের সুরভি আর পরাক্রমের প্রতিধ্বনি এক, আমাদের দৃষ্টি আর সৃষ্টি অভিন্ন। আমাদের সুখ ও সমস্যা, আশা-আকাঙ্খা, মন ও ইচ্ছা এবং আমাদের লক্ষ্য এক। এটি সেই কর্মবীরদের ভূমি, ভারতের উন্নয়নগাথায় যাঁদের অংশগ্রহণকে বরাবরই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। নেপাল ছাড়া ভারতের আস্থা অসম্পূর্ণ, বিশ্বাস অসম্পূর্ণ, ইতিহাস অসম্পূর্ণ, ভারতের চারধাম এবং আমাদের পুরুষোত্তম রাম অসম্পূর্ণ।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আপনাদের ধর্ম-নিষ্ঠা সাগর থেকেও গভীর আর আপনাদের স্বভিমান সাগরমাথা এভারেস্ট শৃঙ্গ থেকেও উঁচু। মিথিলার তুলসী যেমন ভারতের আঙিনায় পবিত্রতা, শুচিতা এবং মর্যাদার সুরভী এনে দেয়, নেপালের সঙ্গে ভারতের আত্মীয়তা তেমনই এই সম্পূর্ণ অঞ্চলের শান্তি, সুরক্ষা এবং সংস্কারের ত্রিবেণী দ্বারা সিঞ্চিত।

 

মিথিলার সংস্কৃতি এবং সাহিত্য, লোককলা, স্বাগত-সম্মান প্রথাগুলি অদ্ভূত। আর আমার আজকের অভিজ্ঞতা, আপনাদের ভালোবাসাকে অনুভব করছি, আপনাদের আশীর্বাদ অনুভব করছি। গোটা বিশ্বে মিথিলা সংস্কৃতির স্থান অনেক ওপরে। কবি বিদ্যাপতির কাব্যস্রোত আজও ভারত ও নেপালে সমানভাবে অন্তঃসলিলা। তাঁর শব্দাবলীর মিষ্টত্ব আজও ভারত ও নেপালের সাহিত্যে মিশে আছে।

 

জনকপুর ধামে এসে আপনাদের আন্তরিকতার স্পর্শে মনে হয়নি যে অন্য কোথাও এসেছি। সবকিছু নিজের মতো, প্রিয়জনের মতো, এই আত্মীয়তা তো নিজস্বই। বন্ধুগণ, নেপাল চিরকালই অধ্যাত্ম ও দর্শনের কেন্দ্রভূমি। এই পবিত্রভূমিতে ভগবান বুদ্ধের জন্মস্থল লুম্বিনী রয়েছে। বন্ধুগণ, এই মাটি ভূমিকন্যা সীতামায়ের মানবিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের প্রতীক, যা এই দুটি দেশকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে রেখেছে। এই জনকপুরী সীতামায়ের জন্মভূমি, নারী চেতনার গঙ্গোত্রীস্বরূপ। সীতামাতা ত্যাগ, তপস্যা, সমর্পণ আর সংঘর্ষের প্রতিমূর্তি; কাঠমান্ডু থেকে কন্যাকুমারী আমরা সবাই সীতামায়ের পরম্পরার বাহক। তাঁর মহিমা তাঁর আরাধনাকারীরা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন।

 

এই মাটি গোটা বিশ্বকে শিখিয়েছে যে, কিভাবে কন্যাকে সম্মান দিতে হয়। বন্ধুগণ, আমাদের ইতিহাস এবং পরম্পরাকে সঞ্জীবিত রাখার ক্ষেত্রে নারীশক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে। যেমন মিথিলা পেন্টিং-এর পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে আমাদের মা ও বোনেদের। মৈথিলী চিত্রকলা আজ সারা পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ। এই চিত্রকলায় সর্বদাই আমাদের প্রকৃতি চেতনা, পরিবেশ সচেতনতা পরিস্ফুট হয়। আজ যখন বিশ্বময় নরী ক্ষমতায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, সেই সময়ে এই চিত্রকলা বিশ্ববাসীকে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। রাজা জনকের দরবারে সভাসদ ছিলেন গার্গীর মতো বিদূষী আর অষ্টাবক্রের মতো বিদ্বান; এই দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে যে আমাদের পূর্বজরা সুশাসনের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চা ও আধ্যাত্মকে কতটা গুরুত্ব দিতেন।

 

রাজা জনকের সভায় জনকল্যাণকারী নীতিসমূহ নিয়ে বিদ্বানদের মধ্যে বিতর্ক হ’ত। রাজা জনক নিজেও সেই বিতর্কে অংশগ্রহণ করতেন। আর সেই বিতর্ক মন্থন থেকে যে সমাধান বের হ’ত, তা জনসাধারণ এবং দেশের কল্যাণে প্রয়োগ করতেন। রাজা জনকের কাছে প্রজারাই ছিলেন সবকিছু। ঘর-পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে প্রজার স্বার্থকেই তিনি রাজধর্ম করে নিয়েছিলেন। সেজন্য রাজা জনককে বিদেহ-ও বলা হ’ত। বিদেহ মানে হ’ল – যাঁর নিজের দেহ বা শরীর নিয়ে চিন্তা নেই, জনহিতে সবকিছু উৎসর্গীকৃত, লোক-কল্যাণে সমর্পিত।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

রাজা জনকের সেই জনকল্যাণের বার্তা নিয়েই আজ নেপাল এবং ভারত এগিয়ে চলেছে। এই দু’দেশের সম্পর্কে রাজনীতি, কূটনীতি, সমরনীতির ঊর্ধ্বে দেবনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি এবং সরকার একের পর এক আসবে-যাবে, কিন্তু আমাদের এই সম্পর্ক আজব-অমর। এখন আমাদের উচিৎ মিলেমিশে সংস্কৃতি, শিক্ষা, শান্তি, সুরক্ষা আর সমৃদ্ধির পঞ্চবটিকে রক্ষা করা। আমি মনে করি, নেপালের উন্নয়নে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নের দূত। ভারত ও নেপালের বন্ধুত্ব কতটা নিবিড় ছিল, তা আমরা রামচরিতমানসের চৌপায়ীগুলির মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝতে পারি।

 

জে ন মিত্র দুঃখ হোহিঁ দুখারী।

তিন্‌হহি বিলোকত পাতক ভারী।।

 

নিজ দুঃখ গিরিসম রজ করি জানা।

মিত্রক দুঃখ রজ মেরু সমানা।।

 

 অর্থাৎ যাঁরা বন্ধুর দুঃখে ব্যথিত হয় না, তাদের দিকে তাকালেই পাপ হয়। আর সেজন্য আপনার দুঃখ পাহাড়ের মতো বিশাল হলেও তাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন না, কিন্তু বন্ধুর দুঃখ ধুলোর মতো হলেও তাঁকে পর্বতের মতো মেনে তাঁর জন্য যতটা সম্ভব করা উচিৎ।

 

বন্ধুগণ,

 

ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, যখন যখন বিপদ এসেছে ভারত ও নেপাল পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়ে মিলিতভাবে তার মোকাবিলা করেছে। আমরা প্রত্যেক সমস্যাতীর্ণ সময়ে পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছি। দশকের পর দশক ধরে নেপালে স্থায়ী উন্নয়নের অংশীদার হ’ল ভারত। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে নেপাল সর্বাগ্রে রয়েছে।

 

আজ ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থ ব্যবস্থা হয়ে ওঠার দিকে তীব্রগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং আপনাদের নেপালও তীব্রগতিতে উন্নয়নের উচ্চতাগুলি স্পর্শ করছে। আজ এই অংশীদারিত্বকেই নতুন প্রাণশক্তি প্রদান করার জন্য আমার নেপাল আসার সৌভাগ্য হয়েছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

উন্নয়নের প্রথম শর্ত হ’ল গণতন্ত্র। আমি আনন্দিত যে, আপনারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তুলছেন। এই তো কিছুদিন আগে আপনাদের দেশে নির্বাচন হয়েছে, আপনারা নিজেদের আশা-আকাঙ্খাকে বাস্তবায়িত করার জন্য ঐতিহাসিক জনাদেশ দিয়ে একটি নতুন সরকার নির্বাচন করেছেনএক বছরের মধ্যেই সাফল্যের সঙ্গে ত্রিস্তরীয় নির্বাচন করানোর জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। নেপালের ইতিহাসে প্রথমবার দেশের প্রত্যেক প্রান্তে প্রান্তিক সরকার গড়ে উঠেছে। এটি শুধু নেপালের জন্যই নয়, ভারত ও এই সমগ্র অঞ্চলের জন্যও একটি গর্বের বিষয়। নেপাল সামাজিক ও আর্থিক পরিবর্তনের জন্য একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছে, যার ভিত্তি হবে সুশাসন এবং সমতার ভিত্তিতে উন্নয়ন।

 

১০ বছর আগে নেপালের নবীন প্রজন্ম বুলেটের পথ ছেড়ে ব্যালটের পথ বেছে নিয়েছে। যুদ্ধ থেকে বুদ্ধের পথে এগিয়ে আসার এই পরিবর্তনের জন্য আমি নেপালের জনগণকে অন্তর থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভারত ও নেপালের প্রাচীন সম্পর্ককে আরও নতুন শক্তি যুগিয়েছে। গণতন্ত্র এমন একটি শক্তি, যা সাধারণ থেকে অসাধারণ সকল মানুষের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ ও অধিকার প্রদান করে। ভারত এই শক্তিকে অনুভব করেছে আর আজ ভারতের প্রত্যেক নাগরিক তাঁদের স্বপ্ন পূরণে উৎসর্গীকৃত। আমি আপনাদের সবার চোখে সেই চমক দেখতে পাচ্ছি যে, আপনারাও নেপালকে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। আমি আপনাদের চোখে নেপালের জন্য এমনই স্বপ্ন দেখছি।

 

বন্ধুগণ,

 

সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় ওলিজিকে দিল্লিতে সংবর্ধিত করার সু্যোগ হয়েছিল। নেপালকে নিয়ে তিনি কি ভাবছেন, তা জানার সুযোগ হয়েছিল। ওলিজি তাঁর ‘সমৃদ্ধ নেপাল, সুখী নেপালী’ স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চান। ভারতও সর্বদাই নেপালের সমৃদ্ধি ও সুখ কামনা করে, ভবিষ্যতেও করবে। প্রধানমন্ত্রী ওলিজিকে তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার প্রক্রিয়ায় আমি ১২৫ কোতি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ভারতও একই ধরণের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

 

ভারতে আমাদের সরকারের মূলমন্ত্র হ’ল ‘সকলের সঙ্গে সকলের উন্নয়ন’। সমাজের কোনও অংশ, দেশের কোনও প্রান্ত যেন এই উন্নয়ন ধারা থেকে বঞ্চিত না হয়, আমরা নিয়মিত সেই প্রচেষ্টাই করে যাচ্ছি। ফলস্বরূপ, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সর্বত্র উন্নয়নের রথ ছুটতে শুরু করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে অঞ্চলগুলিতে উন্নয়নের আলো একদমই পৌঁছয়নি, আমাদের সরকার সেই অঞ্চলগুলির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিশেষ করে, দেশের পূর্বভাগ – নেপালের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলি; উত্তর প্রদেশ থেকে শুরু করে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমকক্ষ করে তোলার সংকল্প নিয়ে আমরা কাজ করে চলেছি। এই অঞ্চলগুলিতে যে উন্নয়নযজ্ঞ চলছে, তার দ্বারা নিশ্চিতভাবেই প্রতিবেশী রূপে নেপাল সর্বাধিক লাভবান হবে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আমি যখন ‘সকলের সঙ্গে সকলের উন্নয়ন’-এর কথা বলি, এই ‘সকল’ শব্দটি শুধু ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সমস্ত প্রতিবেশী দেশের জন্যও আমি একই রকম কামনা করি। আজ যখন নেপালে ‘সমৃদ্ধ নেপাল, সুখী নেপালী’ রূপী আকাঙ্খাকে মূর্ত করার বাসনা দেখি, তখন আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে, ১২৫ কোটি ভারতবাসীর মন আনন্দে ভরে ওঠে। আমার জনকপুরের ভাই ও বোনেরা, আমরা ভারতে একটি বড় সংকল্প নিয়েছি, নতুন ভারত গড়ে তোলার সংকল্প।

 

২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১২৫ কোটি ভারতবাসী নতুন ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য স্থির করেছেন। আমরা এমন এক ভারত গড়ে তুলছি, যেখানে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিও উন্নয়নের সুযোগ সমানভাবে পাবেন। যেখানে উঁচু-নীচু বৈষম্যের কোনও স্থান থাকবে না, প্রত্যেকের আত্মসম্মান বজায় থাকবে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান এবং বয়স্কদের চিকিৎসা সুনিশ্চিত হবে। জীবন সহজ হবে, সাধারণ মানুষকে প্রতিকূল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়তে হবে না। সমাজ হবে দুর্নীতি ও দুরাচার রহিত, ব্যবস্থাগুলি হবে স্বচ্ছ – এমনই নতুন ভারতের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি। সেজন্য আমরা প্রশাসন ও আইনে অনেক সংস্কার এনেছি। প্রক্রিয়াগুলিকে অনেক সরল করে তুলেছি। বিশ্ববাসী আমাদের এই পদক্ষেপগুলিকে প্রশংসা করছে। আমরা রাষ্ট্র নির্মাণ ও গণঅংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তুলছি। নেপালের সাধারণ মানুষের জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে আপনারা যে পদক্ষেপই নিন না কেন, তা ১২৫ কোটি ভারতবাসীকে আনন্দ দেবে – এ ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত থাকুন।

 

বন্ধুগণ,

 

পরস্পরের বাড়িতে আসা-যাওয়া করলেই বন্ধুত্ব আরও প্রগাঢ় হয়। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের অব্যবহিত পরেই আজ আমি আপনাদের মাঝে আসার সুযোগ পেয়েছি। আমি যেরকম বারবার আপনাদের মাঝে আসি, তেমনই উভয় দেশের মানুষ যেন কোনও রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই একে অপরের দেশে আসা-যাওয়া করতে পারেন।

 

হিমালয় পর্বত আমাদের দুই দেশকে জুড়ে রেখেছে। তরাই-এর বিস্তৃত উর্বর ভূমি, কৃষি ক্ষেত্র এবং অসংখ্য কাঁচা-পাকা রাস্তা দু-দেশের মধ্যে রয়েছে। ছোট-বড় কয়েক ডজন নদী নেপাল থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে। আমরা পরস্পরের সঙ্গে উন্মুক্ত সীমারেখা দ্বারা যুক্ত। কিন্তু আজকের যুগে এটাই যথেষ্ট নয়। আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী মহোদয় যতগুলি বিষয়ে আমি সংক্ষেপেই সেগুলি উল্লেখ করছি। আমাদের হাইওয়ে, আইওয়ে, ট্রান্সওয়ে বা বিদ্যুতের সংযোগের মাধ্যমে এবং কাস্টম চেক পোস্টের তদারকিতে রেল, সড়ক, জলপথ ও বিমান সংযোগের মাধ্যমে আরো বেশি করে যুক্ত হতে হবে। এভাবে জল, স্থল ও অন্তরীক্ষ মাধ্যমে পরস্পরের সম্পর্ক আরো নিবিড় করে তুলতে হবে। জনগণের মধ্যে সম্পর্ক যত প্রস্ফুটিত, ফলবান এবং শক্তিশালী হবে, তা যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমরা ভারত ও নেপালের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

 

আজই প্রধানমন্ত্রী ওলিজির সঙ্গে যৌথভাবে আমি জনকপুর ও অযোধ্যার মধ্যে বাস পরিষেবা উদ্বোধন করেছি। গত মাসে আমরা দু’জনে বীরগঞ্জে প্রথম ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টের উদ্বোধন করেছি। এই চেক পোস্ট যখন পূর্ণ শক্তিতে কাজ শুরু করবে, তখন সীমান্ত বাণিজ্য এবং আসা-যাওয়া অনেক বেশি সহজ হবে। জয়নগর-জনকপুর রেলপথের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

এ বছরের শেষভাগেই আমরা এই রেল লাইন চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এটি চালু হলে নেপাল ভারতের বিশাল রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়বে। আপতত আমরা বিহারের রাক্সৌল থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছি। নেপালবাসী যাতে জলপথে সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাসীকে রপ্তানি করতে পারেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে তাদের প্রয়োজন অনুসারে পণ্য আমদানি করতে পারেন, সে ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এই জলপথ কার্যকরি হলে নেপালে বাণিজ্য ও শিল্পোন্নয়ন হবে, কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ গড়ে উঠবে। এই প্রকল্পগুলি নেপালের সামগ্রিক সামাজিক ও আর্থিক পরিবর্তনকে সুনিশ্চিত করবে।

 

আজ ভারত ও নেপালের মধ্যে সর্বাধিক বাণিজ্যিক লেনদেন হচ্ছে। ফলে, ব্যবসায়ীদের উভয় দেশে আসা-যাওয়া বেড়েছে। গত মাসে আমরা কৃষিতে একটি নতুন বোঝাপড়ার কথা ঘোষণা করেছি। আপনাদের মুখ্যমন্ত্রীও একটু আগে এ বিষয়ে কথা বলছিলেন। এই বোঝাপড়ার মাধ্যমে উভয় দেশের কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে। কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমরা পরস্পরের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। ভারত মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি দেশের অন্যতম। আপনাদের হয়তো মনে আছে যে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আমি যখন প্রথমবার নেপালে এসেছিলাম, তখনই বলেছিলাম, ভারত নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য একটি উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করার কথা ভাবছে। আমার সেই প্রতিশ্রুতি ভারত গত বছরই বাস্তবায়িত করেছে। গত বছর মহাকাশে পাঠানো সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট আজ পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। নেপাল এর দ্বারা সম্পূর্ণ লাভবান হচ্ছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

ভারত আর নেপালের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা পাঁচটি ‘টি’-কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। এগুলি হ’ল –ট্র্যাডিশন, ট্রেড, ট্যুরিজম, টেকনোলজি এবং ট্রান্সপোর্ট; অর্থাৎ ঐতিহ্য, বাণিজ্য, পর্যটন, প্রযুক্তি এবং পরিবহণের মাধ্যমে আমরা উভয় দেশের উন্নয়নের পথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

 

বন্ধুগণ,

 

সংস্কৃতি ছাড়া ভারত ও নেপালের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হ’ল বাণিজ্য। নেপাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কিন্তু ভারত থেকে আজও প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেপালে সরবরাহ করা হয়। সেজন্য আমরা নতুন ট্রান্সমিশন লাইন বিছানোর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

 

বন্ধুগণ,

 

২০১৪ সালে আমি নেপালের সংবিধান সভায় বলেছিলাম যে, ট্রাক বোঝাই করে তেল আনতে হবে কেন? সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আসবে না কেন? আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, আমরা মোতিহারি – অমলেখগঞ্জ অয়েল পাইপ লাইনের কাজও শুরু করে দিয়েছি।

 

ভারতে আমরা ‘স্বদেশ দর্শন’ নামক একটি প্রকল্প শুরু করেছি, যার মাধ্যমে আমরা ঐতিহাসিক মর্যাদাসম্পন্ন আস্থা স্থানগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেখানে যেখানে ভগবান রাম ও মা সীতার চরণ স্পর্শে ধন্য হয়েছে, সেই অঞ্চলগুলিকে রামায়ণ সার্কিটের মাধ্যমে যুক্ত করছি। সেই প্রক্রিয়ায় আমরা নেপালকেও যুক্ত করার পথে এগিয়ে এসেছি। এদেশে যেখানে যেখানে রামায়ণের চিহ্ন রয়েছে, সেই অঞ্চলগুলিকে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে ভক্তদের সুলভে আকর্ষণীয় সফরের আনন্দ দিতে চাই। সেজন্য উভয় দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করতে হবে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

প্রত্যেক বছর বিবাহ পঞ্চমীতে ভারত থেকে হাজার হাজার ভক্ত অবধ থেকে জনকপুর আসেন। সারা বছর ধরে ভারতীয় পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা নেপাল আসেন। এই তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে আমি আজ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, জনকপুর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য নেপাল সরকারের প্রকল্পে ভারত সরকার ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করবে। এই প্রকল্পে নেপালের কেন্দ্রীয় সরকার ও এখানকার প্রভিনশিয়াল সরকারের মিলিত উদ্যোগে ভারত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। সেই রাজা জনকের সময় থেকেই এই জনকপুর ধাম শুধু অযোধ্যাকে নয়, গোটা ভারতীয় সমাজকে পারম্পরিকভাবে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি তো কেবল মা জানকীর দর্শন লাভের জন্য এখানে এসেছিলাম। আর, ভারতের ১২৫ কোটি জনগণের পক্ষ থেকে জনকপুরের জন্য মা জানকীর চরণে এই ঘোষণাগুলি সমর্পণ করে যাচ্ছি।

 

এমনই আরও দুটি কর্মসূচি হ’ল বুদ্ধিস্ট সার্কিট ও জৈন সার্কিট। এগুলির মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর জৈন বিজরিত যত তীর্থ ক্ষেত্র ও ধর্মস্থান ভারতে রয়েছে, সবগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। নেপালেও বৌদ্ধ ও জৈনদের অনেক ধর্মস্থান রয়েছে। এগুলিকে আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট সার্কিটের সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে উভয় দেশের পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের মধ্যে একটি সুন্দর মেল-বন্ধন গড়ে উঠতে পারে। এর ফলে, নেপালের নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি পাবে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আমাদের খাদ্যাভাস এবং ভাষায় অনেক সাদৃশ্য আছে। মৈথিলীভাষী মানুষ ভারতে যত আছেন, নেপালেও প্রায় সমসংখ্যক মানুষ আছেন। মৈথিলী কলা সংস্কৃতি ও সভ্যতার উৎকর্ষ সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত। উভয় দেশ যখন এই মৈথিলীর উন্নয়নে মিলিতভাবে সংহত প্রচেষ্টা চালাবে, তখন এই ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। আমি শুনেছি যে, বেশ কিছু মৈথিলী চিত্র নির্মাতা নেপাল-ভারত সহ কাতার ও দুবাইয়েও একই দিনে মৈথিলী চলচ্চিত্র রিলিজ করবেন। আমি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। এই ধরণের উদ্যোগ যত বেশি হবে, তত ভালো। এখানে যেমন মৈথিলীভাষীর আধিক্য রয়েছে, ভারতেও তেমনই বহুসংখ্যক নেপালীভাষী মানুষ রয়েছেন। সমস্ত ভারতীয় ভাষায় নেপালী ভাষা ও সাহিত্যের অনুবাদ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে। আপনারা হয়তো জানেন যে, নেপালী ভাষা ভারতের সেই ভাষাগুলির অন্যতম, যেগুলিকে ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আরেকটি ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা উভয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ভারতের জনগণ গত চার বছর ধরে সারা দেশে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালু করেছে। আপনারা যাঁরা এখানকার সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্য বিহার বা তৎপার্শ্ববর্তী অন্যান্য রাজ্যগুলিতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন, তাঁরা হয়তো দেখেছেন কিংবা শুনেছেন যে, বিগত তিন-চার বছরের মধ্যেই ভারতে ৮০ শতাংশেরও বেশি গ্রাম উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিক কর্ম থেকে মুক্ত ঘোষিত হয়েছে। ভারতের প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য স্বতন্ত্র শৌচালয় সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আমি শুনে অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনারাও ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ এবং ‘স্বচ্ছ গঙ্গা অভিযান’ – এরই মতো উদ্যোগ নিয়ে জনকপুরের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানগুলিকে পরিচ্ছন্ন করার অভিযানে সফল হয়েছেন। সেজন্য আমি এখানকার মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই। পৌরাণিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থানগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রচেষ্টায় নিযুক্ত যুবসমাজকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

 

মেয়রের সুযোগ্য নেতৃত্বে এখানকার নবীন প্রজন্মের মানুষেরা যেভাবে কাজ করেছেন, এখানকার বিধায়ক ও সাংসদ যেভাবে স্বচ্ছ জনকপুর অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেজন্য আপনাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। ভাই ও বোনেরা, আজ আমি মা জানকীর দর্শনলাভ করেছি। আগামীকাল মুক্তিনাথ ধাম এবং আরেকবার পশুপতিনাথজির আশীর্বাদ গ্রহণের সুযোগ পাব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, দেব আশীর্বাদ এবং জনগণের আশীর্বাদ থাকলে সমৃদ্ধ নেপাল এবং সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তোলার সংকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব।

 

আরেকবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় ওলিজি, রাজ্য সরকার, নগর সরকার এবং এখানকার জনগণকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

 

জয় সিয়ারাম। জয় সিয়ারাম

 

 

CG/SB/SB……



(Release ID: 1532117) Visitor Counter : 519


Read this release in: English